নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আলো ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়




।। তেইশ ।।



          মানুষ মুখে বলে এক, আর যখন কাজ করতে যায় তখন করে সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজ। এটা দিনের বেশিরভাগ সময় করে বলে এটা তার একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। কিছু করার নেই। চেষ্টা করলেও সেখান থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারছে না। কারণ তার ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক। ছোটবেলা থেকে সে এইসবেরই অনুশীলন করেছে। কিন্তু যখন সে বাইরে আসছে, মানুষের সঙ্গে মিশছে তখন সে নিজের একটা অন্যরকম ভাবমূর্তি তৈরি করতে চাইছে। আসলে সে তো জানে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। আসলে বাড়িতে যে জামাই পড়ুক, বাইরে একটা অন্যরকম ছাল দরকার হয়ে পড়ে। এটাও ঠিক সেরকম। খুব ঘনিষ্ঠ জন যখন এটা করে তখন এটা খুব কষ্ট হয়।
আমরা অসহায়। কিছু করার নেই। বাঁচতে তো হবে। তাই এসব মানুষদের নিয়েই পথ চলতে হবে। জীবন থেকে বাদ দেওয়ার উপায় নেই, তাহলে তো ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।



।। চব্বিশ ।।


          প্রায় ত্রিশ বছর লেখালিখির সঙ্গে ঘর করার পর মনে হল, আমি লিখতে পড়তে দুটোই ভালোবাসি। লেখা ছাপানোর থেকে লেখা লিখতেই আমি বেশি খুশি হই। আমি সবসময় বলি, লিখে আমি যে আনন্দ পাই, সেই আনন্দ আমাকে কেউ কোনদিন দিতে পারবে না। এতদিন সাহিত্যের সঙ্গে ওঠাবসা করার পর বুঝতে পারলাম, এটা একটা এমন জগৎ যেখানে থাকে সম্পূর্ণ নিজের একটা পৃথিবী। দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা যেখানে প্রবেশ করতে পারে না। ঠিক পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসা যায়। কে কত বড় কবি সে তো সময় বলবে। কিন্তু একটা জিনিস পেয়েছি ------- হাজার না পাওয়ার মাঝেও নিজের মধ্যে পরিপূর্ণতার একটা স্বাদ। এজন্য সাহিত্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

সকাল: অজাত শত্রু




মিঠে আলো ,কে ছুঁলো? রোদ ভিজেছে জানালা।
ঘুম ভাঙা গান,হারানো পাখির কলতান,মুখ ছুঁয়ে যায় ওড়না ।।

বেহাসাবি দিনযাপনে ,দৌড়ঝাঁপময়।হাতছানি'র সময় ।
আজ চেনা মুখ কাল মুখোশ'এ ,বাঁচার অভিনয় ।।

হদ্দ বোকার মত আমিও গিলছি আবেগে
ভাঙছে ,ভাঙছি নিজেই নিজে,চোখ ক্লান্ত হলে ।।

তারপর দীর্ঘ মৃত্যুর উপভোগ।নিথর শরীর
চোখ খুলে দেখি ,একা নই, অনেক মাছির ভিড় ।।

আলো - ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। একুশ ।।




          একদিন এক কবিসম্মেলন থেকে রাতের ট্রেনে ফেরার সময় মনে হল, কতদিন বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা হয় নি। কথাও হয় নি কতদিন। এরকম মাঝে মাঝেই মনে হয়। এমন নয়, কবিতা লেখার একটা ঘোরার মধ্যে আছি তাই এমন একটা ইচ্ছা জেগে উঠেছে। এই মনে হওয়াটা ভীষণই স্বাভাবিক। নিজের মধ্যেই কেমন যেন একটা তালগোল পাকিয়ে যায়। কিছুতেই সেই জট ছাড়াতে পারি না। ভেতরে ভেতরে এত অস্থির হয়ে উঠি যে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারি না। জন্মগ্রামে থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টা দূরে থাকি। মনে হয় এক্ষুণি দূরত্বটা পেরিয়ে যাই।
          যে কথা মাকে বলা যায় তা তো আর কাউকে বলা যায় না। হয়ত বলা যায় কিন্তু শুনবে কে মায়ের মতো অত ধৈর্য্য ধরে ? কার অত সময় আছে ? তাই বলতেও পারি না। বুকের মধ্যে জমা হয়ে থাকে কত কথা। হঠাৎ যেদিন সন্ধেবেলা বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় সেদিন বই পড়তে, কবিতা লিখতে কিছুই ইচ্ছা করে না। চোখের সামনে ভাসে,  মা রান্না দুয়ারে বসে ভাত রান্না করে। ভাত ফোটার আওয়াজ শুনতে পাই। খিদে বাড়তে থাকে। রান্না দুয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকি। লম্ফর আলোয় মায়ের মুখের ঘাম চকচক করে। একসময় মা ভাত খেতে ডাকে। গরম ভাতের গন্ধ আর মায়ের মুখের হাসি। আমি ভাত খাই আর মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কত বছর কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি। তাই মাঝেমাঝেই মাথাটা খুব ভারি হয়ে যায়, কিছুতেই তুলতে পারি না।



।। বাইশ ।।


          রথ এলেই মেজ জেঠিমার কথা খুব মনে পড়ে। আমাকে রথ দেখতে দিত পঞ্চাশ পয়সা। আর ছোটো ঠাকুমা দিত পঞ্চাশ পয়সা। তবে মেজ জেঠিমাই এই নিয়ম প্রথম চালু করে। আমার একটা মন আছে আর সেই মনও আনন্দ চায়। তাই কোনো মেলা উপলক্ষে আমার মতো একটা ছেলেকে পয়সা দেওয়া যেতেই পারে। এই এক টাকা নিয়ে আমি সেদিন রথের রাজা। আজ বড় হয়ে গিয়ে কত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পয়সা দিতে হয় কোনো মেলা উপলক্ষে। খুব আনন্দ পাই এসব দেওয়াতে। তবুও আজ খুব পেতে ইচ্ছা করে। আমি চাই কেউ মেলা উপলক্ষে আমাকেও পয়সা দিক। তবে এসব কথা তো কাউকে ভুলেও বলা যাবে না। কারণ খুব সহজেই সে আমাকে পাগল বলে চিহ্নিত করবে। মনে পড়ে, তখন মহাশ্বেতা দেবীর "বর্তিকা" পত্রিকাটি দেখাশোনা করি। বিকেল হয়ে গেছে। কাজ শেষ করে বাড়ি আসব এমন সময় দিদি আমাকে ঘরে ডেকে দশটা টাকার একটা নোট হাতে দিলেন বইমেলায় যাবার জন্য। আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম সেদিন।  সত্যিই আজ আমার জীবনে পয়সা দেবার মতো কোনো মানুষ নেই।




অশ্রুবারি : মান্নুজা খাতুন



কিছুক্ষণ আগেই এই শহরের বুক ছেয়ে নেমে এল
বজ্র-বিদ্যুৎসহ ঘন কালো মেঘ
বজ্রের ধাক্কায় ভেঙে পড়ল মনের অর্গল গুলো
আঁখি পল্লবের বাঁধ ভেঙে নিমেষে নেমে এল
বাঁধ ভাঙার বন্যার জলের ধারা
সাজানো স্বপ্ন গুলো নিমেষে ভাসিয়ে নিয়ে গেল
তপ্ত জলের দুর্গম ধারা
তবু! তবুও বেচে ওঠার লড়ায়ের খেলায় মেতেছে স্বপ্নরা
তরবারি হাতে নেমেছি আমি ভীষণ রণোন্মাদনায়।।

সংকোচিত প্রেম : শুভঙ্কর বিশ্বাস




অস্মিতা,
ভাবো,হেসো ওঠো,কেউ নেই ভালোবাসার
সন্ধ্যাতারার গায় মুছে ক্লান্তি,জাগো আবার
এতদিন রক্তে পথ চলা ,ঠোঁট রাখার আশ্বাসে
স্তম্ভিত বুক ফুরে সূর্য ওঠা যৌবন,অবাক কেন?

অস্মিতা,
গাঢ় সবুজে রক্তিম ঠোঁট ঠোঁট আবেগ
দেওয়াল ভাঙা ,ঘুলঘুলি বাওয়া আলোয়,
তপ্ত মরুতে বাষ্পিক অশ্রু জলীয় প্রতিশ্রুতি
আন্দোলিত পাতে ঘরবাঁধনে আপন স্বপ্ন মিথ্যা।

অস্মিতা,
দ্বাদশ নং চিঠি,হতাশা উত্তর ,তোমার প্রথম কান্না
অষ্টাদশে অপেক্ষার বালুচর,বিনিদ্র নদীর পথ খোঁজ
কি সমাজ!মানল না চিরন্তন স্বপ্ন,কেন বলো তো?
প্রশ্ন একটাই বিনুনি করে আজও কি হাসো?

আজো ভুলিনি : বারেক উল্লাহ





আজো স্মৃতিতে স্মরণে বারেবারে দেয় হানা বাহান্ন সনের কাহিনী,
ভাষার তরে রক্ত দিয়েছিল যারা তাদের আজো আমরা ভুলিনি।
পাকিস্তানি শাসক,দালাল  কেড়ে নিতে চায় যখন মুখের ভাষা বাংলা আমারি,
তখনি গর্জে উঠে  বাঙ্গালী রাজ পথ মুখরিত করে তুলে মিছিলের সারি।
এদেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চায় যখন পাকিস্তানি  কুশাসক,
তখনি বাংলার জনগণ জাতীয়তাবাদে হয়ে উঠে আস্তে আস্তে  সচেতন।
বাঙ্গালীদের দমিয়ে রাখতে পাকিস্তানি শাসক যখন জারি করে ১৪৪ ধারা,
বাঙ্গালী তা ভঙ্গ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লে পাক হানাদার নির্বিচারে গুলি চালায়।
রক্তে তখন রঞ্জিত হয়ে শহীদ হলেন সালাম,বরকম,রফিক সহ আরো অনেক বীর সৈনিকেরা।
তাদের রক্তের বিনিময়ে ফিরে পেলাম বাংলা আমার মাতৃভাষা।