নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আমাদের দেখা হয়েছিল :ইন্দ্রাণী






একটা বিচ্ছিরি বিকেলে আমাদের দেখা হয়েছিল।

মে মাসের শেষের দিকে, এক প্যাচপ্যাচে ঘেমো ভিড় বাস।
রাস্তায় তখন শাসক দলের বিজয় মিছিল, ট্র্যাফিক বড্ড স্লো,
থেমে থেমে বাস এগোচ্ছে। তোমার চোখ আটকে ছিল মোবাইলের স্ক্রিনে। আর আমার, তোমাতে
রুবি আসতেই হন্তদন্ত হয়ে নেমে পড়লে, জানলা দিয়ে দেখলাম ফুলের দর করছ;
এরপরের কয়েক দিন আর দেখিনি তোমায় বাসের লেডিস সিটে।

বোধ হয় সপ্তা খানেক পর, আগের বাসটা মিস করে স্ট্যান্ডে বসে আছি
ঘড়ির কাঁটা ছয়ের ঘর পেরিয়ে গুটিগুটি পায়ে সাতের দিকে এগোচ্ছে
কমলা রঙের কুর্তি এসে বসল পাশে। আড়চোখে দেখলাম, 'তুমি'
আমতা আমতা করে বললাম, 'তা সেদিন, ফুল কিনলেন শেষমেশ?'
'আমায় বলছেন?' বড় বড় চোখে জিজ্ঞেস করলে।
"হ্যাঁ, মানে ঐ যে, গত শুক্রবার আপনি রুবি তে নেমে রজনীগন্ধা দাম করছিলেন না.. সেদিনের কথা বলছি"

পরবর্তী চৌত্রিশ সেকেন্ড তুমি কটমট করে আমার দিকে চেয়েছিলে।
অতঃপর, 'কোনো কাজ বাজ নেই না? মেয়েদেরকে ফলো করে বেড়ান, হ্যাঁ...?'
আরও অনেক কিছু বলে যাচ্ছিলে... আমার শোনা হয় নি।
আমি শুধু দেখছিলাম, রেগে গেলে তোমার চিৎকারের সাথে সাথে দুচোখ দিয়ে জলও নেমে আসে, কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই।
তুমি ক্লান্ত হয়ে থামলে, বললাম, "কান্নাটা শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী, আমিও মাঝে মাঝেই কেঁদে থাকি"
ভেবেছিলাম নির্ঘাত একটা চড় জুটবে এবার, কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তুমি ফিক করে হেসে ফেললে।

বাসে উঠে পাশাপাশি বসল, কালো শার্ট আর কমলা কুর্তি।
আলাপ দীর্ঘায়িত হল। জানলাম, সেদিন রজনীগন্ধাই কিনেছিলে, তোমার মায়ের প্রিয় ফুল।
কবিতা ভালোবাসি শুনে হাতে ধরিয়ে দিলে 'পূর্ণেন্দু পত্রী'।
রুবি এসে গেল। নামার আগে বললে, 'বইটা ফেরত দেবেন কিন্তু'
ঐ অব্দি বলেই মিশে গেলে রাস্তার ভিড়ে; কীভাবে, কোথায় বইটা দেব, কিছুই না বলে। খেয়াল পড়ল নামটাই যে জানা হয়নি এতক্ষণেও...
বইটা খুলে দেখলাম তার প্রথম পাতায় লেখা আছে, "লাবণ্য মুখার্জি, 720817****"

বাস এগিয়ে চলল, আমি মনে মনে বললাম," আমাদের আবার দেখা হবে, কোনো এক বিচ্ছিরি বিকেলে।।"


তুমি নেই বলে:তপন কুমার মাজি






তুমি নেই বলে...
ক্ষয়ে গেছে তিলে তিলে স্বপ্নময় জীবন,
দিনে দিনে পাল্টে গেছে জীবনের প্রতিটি মৃত্যুর ধরণ--

তুমি নেই বলে...
রাতজাগার পরিধিটা বাড়তে বাড়তে অনেকটাই গেছে বেড়ে,
একে একে সুখেরা পালিয়েছে পিঞ্জর ছেড়ে--

তুমি নেই বলে...
জীবনের যত গল্প রয়ে গেছে অসমাপ্ত,
দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণারা এসে ভিড় জমিয়ে বাড়িয়েছে একাকীত্ব--

তুমি নেই বলে...
চোখের কোণে শোনা যায় অবিরত
অশ্রুদের নীরব চিৎকার
গোছানো ভাবনারা হয়ে গেছে এলোমেলো, একাকার--

তুমি নেই বলে...
সময়ের ঘেরাটোপে মুহূর্তেরা উঁকি মারে স্মৃতির জানালায়,
রঙিন ছবিরা সব মুছে গেছে হৃদয় হতে
বেঁচে আছে শুধু মনটা
বোবা কান্নায় !

হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি: মো.রফিকুল ইসলাম






ভোরের প্রভাতে শুনতে পাই তোমার সুরে
আর্তমানবতার ধ্বনি ।
তোমার সুরে ভেসে উঠে আকাশে
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
দানবের মরণ ফাঁদের বিরুদ্ধে তুমি
প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি ।
রাজপথে মুখরিত শ্লোগান তোমার সুরে
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
জালিমের বিরুদ্ধে ধারালো তলোয়ার
তোমার তরঙ্গের গতি আজ ।
মেহনতি মানুষের আওয়াজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
শোষণ-বজ্ঞণা মজলুমের বিরুদ্ধে
অসহায় মানবের সম্মোহনী ।
অশুভ শক্তির ধ্বংসের সৈনিক তুমি অগ্নি
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
দিন-মুজুরি শ্রমিকের আর্তনাদের হাহাকার
দিশাহারা মানবের সৈনিক তুমি ।
তোমার সুরে বাতাসে বহে মুক্তির গান
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
সাম্যের প্রতিকী নৃত্যের প্রাঙ্গণে
বীরঙ্গণা মায়ের আর্তনাদ ।
তোমার কন্ঠে রাজপথ আজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
তুমি বিপ্লবীদের , বিপ্লবী কন্ঠস্বর
তোমার আওয়াজে মুখরিত ভূমি
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
জোসনার আলোয় রজনী সন্ধ্যায়
আলোর দিশারী তুমি ।
অন্ধজনের স্বজন আজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।

স্বপ্নাভিষেক: জয়ন্ত দত্ত





দারুণ স্রোত...
পায়ে পায়ে এগিয় যাওয়ার 
দাঁড় টানা...

সোনালী গোধূলি পেরিয়েও যে
 শঙ্খ শব্দের সন্ধ্যা-গান আসে...তারপর যৌবন রাত্রি বুড়ো হলেও কখনো
থামে  না...

প্রতি রাতের কোলে জন্ম নেওয়া
 সকাল ফুলের সৌন্দর্যে সৌন্দর্যে
 যে গল্প উপন্যাস মালা গাঁথে....

যেন
কানে কানে সেই অভিষেকের গান
শুনতে আমি পাই...

পলাশ:প্রভাত মণ্ডল






শৈত‌্য আদরে সন্ত্রস্ত
         ঝরা পাতার রুক্ষতা
                 তবু তোর অপেক্ষায় আমি
                          জানি তুই আসবি বসন্তে
                                দিগন্ত জোড়া করে রাঙা।
                                                     

রক্তক্ষরণ : অভিজিৎ পাল








১.
অনেক মিথ্যাকে ভালোবাসেন আপনি। অনেক মিথ্যাচারকেও। আপনি হয়তো জানেন না একটার পর একটা মিথ্যে আপনার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আপনি কুয়োর ব্যাঙের মতো উপুড় হয়ে আকাশ দেখে ভাবছেন, পৃথিবীতে এই কুয়োটাই একমাত্র সত্য। ভরসা রাখুন। আপনাকে কুয়ো থেকে বের হয়ে আসতে আমি আর অন্তত অনুরোধ করছি না।

২.
সারাজীবন শিল্প শিল্প বলতে বলতে ওরা ভেবেছিল, সাজানো মিথ্যাগুলোকে একদিন সত্যি করে দেবে। কোনোদিনই ভাবেনি একদিন আগুন আসবে ভেতর থেকে। নিজের জ্বালা থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসতে চাইবে দগদগে ব্যথা। না, আমি তোমার আত্মদহনের প্রার্থনা করিনি এখনও।

৩.
মুঠোর ভেতরে লাল ফিতে বাঁধা সার্টিফিকেট ধরে হয়তো ভেবেছো ওটাই তোমার দারুন একটা অ্যাচিভমেন্ট। আমরা হাসিনি ওসব দেখে। আমরা জানতে পেরেছিলাম কীভাবে দুয়ে দুয়ে মিলে চার সাজানো যায়। সাজানো যায় আপসেট হওয়ার নাটক। এরপরও আমরা সব জেনে বুঝে তোমার ওপর হাসিনি। এটুকু বলতে পারি, একদিন তোমার খেলাঋদ্ধ অ্যাচিভমেন্টটাই তোমার দিকে তাকিয়ে হাসবে, আমরা আজকের মতো সেদিনও চুপ করেই থাকব।

৪.
একে একে দূরে যাবে সবাই। কেউ কেউ নয়, সবাই। জীবনের অর্থ আমাদের কাছে নেই। শেখায়নি যিনি শিখিয়েছেন স্বার্থপর হয়ে ওঠার একের পর এক পাঠ। পাপ ছাড়ে না, ছাড়ছে না আপনাকে। কুমীরের চোখ দেখে এখন ছেলেমেয়েদের হাসি পায়। ওদের ছেলেবেলা থেকেই শেখানো হয়েছে রাখাল ছেলের গল্পটা। এবার তোমাকে সত্যি বাঘে ধরেছে। আমরা আর ফিরে তাকাচ্ছি না।

৫.
আমি দেখেছিলাম তাকে। সেই ছেলেটাকে। যাকে তোমরা বিনা কারণে অপমানিত করিয়েছিলে। ওর হাসিটা মুছে দিতে চেয়েছিলে হিংসায়। পেরেছিলে তোমরা। একা নও, অনেকে মিলে! কেউ বলেছিল, কেমন দিলাম! কেউ বলেছিল, হিপ হিপ হুররে! আমি সেদিনও চুপ ছিলাম। দুঃখগুলো ওর থেকে কেড়ে নিতে পারিনি বলে আজ আমাকে রক্তক্ষরণের মধ্যে দিয়ে আত্মশুদ্ধি করতে হবে।