নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

জীবন যেমন : গার্গী লাহিড়ী





সবকিছু তেমনই চলছে , যেমন আগে চলত -
যখন তুমি আমার পাশে ছিলে !
আজও মাথা নত করে রাত আসে ,
চোখ বন্ধ করে জেগে থাকে ,
রাতের আকাশে তারারা মহেফিল বসায় ;
ভোরের আলো ফুটতেই ঘরে ফিরে যায় ,
আজও হাঁফাতে হাঁফাতে দিন আসে ;
চোখ কচলাতে কচলাতে জেগে থাকে ,
অলস দুপুর ফেরি করে জীবন !
সূর্যকিরণ ঘরের পথ ধরলে
ক্লান্ত দিন তার ঝাঁপি গুটায়,
আজও কর্তব্য জড়িয়ে থাকে অষ্ঠেপৃষ্ঠে !!
ঘড়ি টিক টিক করে সময় জানায় ,
সব কিছু তেমনই চলছে যেমন আগে চলত ;
যখন তুমি আমার পাশে ছিলে !
ভেবেছিলাম সব রসাতলে যাবে তুমি না থাকলে ;
দাউ দাউ আগুন জ্বলবে চারিদিকে ;
প্রতিটি শ্বাসে ধোঁয়া বেরোবে ;
চেনা চারিধার অচেনা মুখোশে ভরে যাবে ;
কিন্তু সব কিছু তেমনই চলছে যেমন আগে চলত ,
যখন তুমি ছিলে পাশে !
এখন কারণে অকারণে তোমার ছবির সামনে দাঁড়াই ;
ফিস ফিস করে কথা বলি ;
সবার সামনে চোখের বাষ্প গোপন করি ;
কাগজ পত্রে একাই সই করি ;
আর হ্যাঁ , প্রতি রাত্রে নিয়ম করে ঘুমের ওষুধ খেতে হয় !!
বাকী সব কিছু তেমনই চলছে যেমন আগে চলত ,
যখন তুমি আমার পাশে ছিলে !!

কবিতার চারপাশ : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






গত রাতেও আমার কবিতায় এসেছে
একটা চড়ুই, দক্ষিণের দুটো হলুদ বারান্দা,
একটা বিষন্ন নদী, বর্ষার বৃষ্টিতে ভেজা একলা রাস্তা
আজ সকালে তারা কোথাও নেই
কবিতার পথ ধরে আমি তাদের চিনি নি
তারা এমনই আসত নিজের নিজের গান নিয়ে
আমিও যে তাকে দু'একটা শোনাইনি তা নয়

নদী বিষন্ন না হলে ঢেউ চাইব কার কাছে ?
চড়ুই ছাড়া সকালের ক্যানভাসে কোনো রোদ নেই
বর্ষার একলা রাস্তার কাছেই তো জেনে নেব
বাকি রাস্তা হেঁটে যেতে কতবার বসতে হবে

হঠাৎ করে এতটা ফাঁকা জায়গা দেখি নি তো আগে
বুঝতে পারছি না, ঠিক কোথায় দাঁড়াব
এরা সবাই আমার চারপাশে ছিল
আমরা যে খুব কথা বলেছি তা নয়
তবুও ওরা ছিল ওদের মতো করে ------- থাকতেই হয়, 
তা না হলে চোখ রাখব কোথায়?

এপার ওপার: দেবযানী ভট্টাচার্য্য








এত সাজছ কেন! -সবকিছু ভীষন  মানানসই - -আমার সহ্য হয়না- জানইতো-
যেখানে যেমনটি হবার কথ- পোশাক, অলংকার ,রং, ভঙ্গিমা, কেশবিন্যাস , আহ্লাদীপনা -। কেমন নিষ্ঠুর দেখাচ্ছে  তোমাকে- যেন প্রিয় কবিতাটিকে ধর্ষণ করত এগিয়ে আসছে কোন মেলোড্রামাটিক বাচিকশিল্পী। উদ্ধত গ্রীবায় এখনো আটকে আছে শাওয়ারের জলজ আদর । আয়নার কাঁচে  প্রত্যার্পিত একলক্ষ নার্সিসাস চুমুর রিফ্লেক্শনে আমার দুর্বল দৃষ্টি হেরে যাচ্ছে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
সেইসব অলীক আদর গায়ে জড়িয়ে এ নিয়ন শহরে বিজ্ঞাপিত হবার অমোঘ চুম্বকে কাবুলি  বেড়ালের গরগরে সুখ সুখ নম্রতায় এবার তোমার গোড়ালি ছুঁয়ে নেবে পেনসিল হিলের দাম্ভিক  শিখর, হাতের নাগালে এনে দেবে এলিট কাঁধের পেশল উচ্চতায় অনায়াস স্পর্শ !

   একটু আগেই--যখন সোনালী   বিকেলটা নিভন্ত আঁচে ঝিমিয়ে পড়ছিল--সেই পাখিটা আজও এসেছিল -বোধহয় আমার মতই সন্ধ্যেগুলোের আসন্নতায় ও ফেরার পথ হারিয়ে ফেলে--আমি তখন সুগন্ধ পাচ্ছিলাম , প্রসাধন  শেষে ছড়িয়ে দেওয়া শ্যানেল ফাইভের-তুমি কি বেরোবার আগে আসবে একবার! বেডরেস্টটা আর একটু তুলে দিয়ে যাবে কি ! জানলা দিয়ে দেখতাম কোন গাড়ি আজ- কি পোশাক সংগীর। বোধহয়  পাঁচটা বাজে--রোদ্দুর বসন্ত বিকেলের পলাশ রঙ মেখে ছুঁয়ে নিচ্ছে জাললায় রাখা ক্যাকটাসের কর্কশ ত্বক। মৌটুসি পাখিটিও এবার বেশ চঞ্চল-ওর ডিউটি শেষ--এবার তিরতিরে ডানা ওকে ফিরিয়ে দেবে কি প্রিয় কোন পরিসরে!
যাও পাখি--একা থেকোনা- ফিরে যাও আনন্দ কুলায়- অন্ধকার আমার একাকী  জানলায় রেখে দিয়ে চলে যাও।

এবার ফিরবো আমি এগারো বছর- যখন
তোমার চুলে কচুরিপানার তিরতির কোমল প্রশ্রয় অনাঘ্রাত সৌরভ নামিয়ে জলোচ্ছ্বাসের মত ভেঙে পড়তো বুকের দামাল অববাহিকা  জুড়ে--যখন তোমার চোখে শ্রাবণ আকাশ জড়ো হলে ফুসফুস বাতাস হারাতো- যখন দক্ষিণ বাতাস বসন্তের খোঁজ নিয়ে এলে কোন্ সে পাগল করা টানে নিরুদ্দেশ- নিরুদ্বেগ-- ঘরের মধুকাল ভুলে বাউল জ্যোৎস্না  কিংবা পলাশ দুপুরে ঘাসে ঘাসে শরীরী আগুন । তখন জারুল রঙা তাঁতের শাড়ি,
তখন হঠাৎ  এলো খোঁপা ভেঙে গেলে ঝিমধরা সুগন্ধী আঁধার- তখন স্বর্ণাভ ত্বকে সহজ বৈভব-চোখের নিজস্ব  ঝিলে তখন নৌকাডুবি -তোমার পরাগরেণু মেখে নেওয়া তীব্র অসময়-।
তখন স্বল্পাহার , ধুলোমাখা গৃহস্থালি  , অভাবের অনিবার্য দিন -।তখন বেসামাল পরিযায়ী ডানার উড়ান- তবুও অজস্র  রাত একত্র উষ্ণ চুমুকে পার হত কবিতায় গানে । আকাশের রঙ ফিকে হয়ে এলে ঘুঘুর মত নরম বুকে মুখ ডুবিয়ে আসতো চন্দনগন্ধী ভোর-।

 যদি জানতাম একটি ডিসেম্বরের ভোরে আমার জীবন থেকে চিরতরে মুছে যাবে কস্তুরী  ঘ্রাণ--বড় কষ্টে সংগৃহীত সামান্য একত্র ভ্রমনপাথেয় অর্থহীন হয়ে যাবে--পাহাড়ী কুয়াশায় পিছল বাঁকে আমি হারাবো আমাদের ধুলোমাটি জীবনের সুখ--আমার চোখের সামনে তিরতিরে কচুরিপানা মুছে নেবে সকরুণ  রঙ- আমাকে ফিরিয়ে দিতে নিরক্ত জীবন অনায়াস ঝাঁপ দেবে লেলিহান
আগুনে ঝর্নায়-!

পরমান্ন  পরমায়ু থেকে চলে গেছে এলাচের ঘ্রাণ-।
হঠাৎই তাকিয়ে দেখি -পড়ে আছি পরাজিত
ঘৃণ্য সরীসৃপ -ক্রমশই ডুবে যাচ্ছি  স্তব্ধ প্রলয়ে।
এই যে অসহ প্রাণ , তবু দেখ অনিঃশেষ লোভ- তোমাকেই  শাপ দিচ্ছি -তোমাকেই পিষ্ট করে তবু পড়ে আছি পরগাছা এক-
স্মৃতির গন্ধটুকু মৃত্যুগামী শরীরে বিছিয়ে-।

উষ্ণতা বিষয়ক কালকূট : তন্ময় চৌধুরী







এরপর উষ্ঞতা
সব উষ্ঞতার ভেতর তলপাড় হয়
এমন কথা  নয়
বহুবিধ উপকরণ সাজানো
যেমন একটি গাছের আজুহাত
"আমি হীন মৃত্যুসয়ংবর "


চলো লাফায় সমঝতা করি
এর দুয়োর তার দুয়োরে ঘুরে অশ্বক্ষুরে বেঁধে দিই দ্রুততা

উষ্ঞতা ,বাতাসের সুরে ম্রীয়মান হোক
চলো লাফায় গণিতের মেরুদণ্ডে |


তোলপাড়  , দর দর ঘামের হৃদয় লুকানো
যজ্ঞ চলুক অভিমানের অভিযজ্ঞ

দুটি হাতের উপর মনাকুল

এও তো উষ্ঞতা

ছুঁয়ো না
কেমন যেন লাগছে |

নারীজন্ম : নবনীতা সরকার





শরীর থেকে খসে পড়া লাবণ্যের 
সবটুকু মেদ,
রোদচশমার আড়ালে লুকিয়ে রাখে
আমার সার্থক নারীজন্ম। 

মাটি ছোঁয়া থেকে মাটিতে শোয়ার যাত্রাপথ,
ক বর্গ থেকে শ বর্গ পর্যন্ত হাজার একটা জন্মান্তর

একটাই আক্ষেপ ,
এ জন্মে ভালোবেসে
এক থালা ভাত বেড়ে খাওয়াতে পারিনি কাউকে। । 

আর কিছুদিন :তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়








অনেকসময় ব্যয় করেছি বৃথা কাজে।
অপচয় ও অনেক আছে।
সময় বোধহয় রাগ করেছে।
বসন্ত ও বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
যাবার সময় বলেছিলো-" থেকো ভালো"।
এখন আমি তাদের খুঁজি ধূসর রাতে।
সব অঙ্কই শূন্য দেখি ধারাপাতে।
তাও যখন বাতাসে আজ ছাতিম ফুলের গন্ধ ভাসে।
আঁধার ফুঁড়ে চাঁদের আলোর জোছনা আসে।
মন দোতারায় ঠিক তখনই আনন্দেরই সুরটি বাজে।
তখন আমি নরম ঘাসের বুকেই আমার দুঃখ রাখি।
দিই মেলে ওই অলীক ডানা আকাশপথে।
আরো কিছু "সময়" থাকুক।
থাকুক মনে বসন্তদিন।
আর কিছুদিন।।