নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

মৃত্যুহীন পিকাসো :জয়দীপ সেন







সাধু প্রস্তাব, রাজি হয়ে যাও পিকাসো
বিষয় যখন নির্লিপ্ততা
সাবধানে ঘরে চাবি দিয়ে চলে এসো বৃষ্টির ভিতর
বহু কাঙ্খিত না ভিজলে মানবো কেন তোমার শ্রম?
আহা নেমে এলে বৃষ্টিতে, তুমি বলছ বৃষ্টি নয়
দুঃখ ফোঁটা ধারালো, কেটে ছিঁড়ে নেবে ব্যবধান
তাই সই 
রটনা হোক, আমার পছন্দ কোথাও রেখো আপাদমস্তক ভদ্র কিন্তু গোপনে বেড়াল
রেখো ছবিতে, আচ্ছা আচ্ছা এই নাও দুধ একবাটি
মাছ নাও কামড়ে 

জানা যায় না তোমার ছবি ইতস্তত কতবার
উনি প্রতিবেশী, ঘুমের ব্যাঘাত হয়
স্টুডিওর আলো চক্রী
উনি সদ্য উৎসুক পুরুষ
কি উপলক্ষ কি দেহস্রোত ইত্যাদি খবর নিয়েছেন
ভালো ক'রে বাড়িওলা
যা দিনকাল
উনি এসব জানেন না, উনি ঘুমতে চান
ঘুমে চিরকাল দেখতে পান
চোর--কাঁদছে 
এক থালা ভাতে কান্নার জল...আর বেড়াল ব'সে
ওকে বন্ধু করো, জড়িয়ে ধরে বলো নীলরং তুমি কেন এত খুলে দিয়েছ

আমার গুলিয়ে দেয়া স্বভাব
তুমি নিশ্চিন্তে তুমি অবিরত তুমি একা
পিকাসো
ছবি শেষ করো
বিষয় যখন নির্লিপ্ততা।

উড়ান : হেমা পাল বর্ধন





ছায়ার প্রতি একতরফা টান ছিঁড়ে ফেলে নিজেকে মেলে ধরতে চাই উন্মুক্ত আকাশে, 
নিজের মধ্যের সব নীল ছড়িয়ে দিতে চাই দীঘির জলে ।
সময় এসে গেছে শীতের পরশ টুকু কাটিয়ে ওঠার, 
আমার থেকে চিরন্তন 'আমি'কে পৃথক করার ।
সবুজ ঘাসে নগ্ন পা ফেলে যেতে চাই নতুন এক পৃথিবীর বুকে, 
যেখানে সবকিছু শর্তহীন, বন্ধনহীন, 
যেখানে নারীর পোশাক খুলে রেখে শুধু মানুষ হয়েই বাঁচা যায় ।
ছুঁতে চাই সেই আকাশ, যেখানে জাজ্বল্যমান রয়েছে  আমার অভীষ্ট ধ্রুবতারা ।

বিদ্যাসাগর,, তোমায় প্রণাম :অনোজ ব্যানার্জী




  ‎
ওরা কালো শকুনি,,চেনে শুধু ভাগাড়ের পচাগলা মাংস,, হীরের মর্ম কেমন করে বুঝবে? জহুরী তো নয়,যে জহর চিনবে! ওরা অসুর, ওরা নররাক্ষস, ওরা অর্থলোভী নরপিশাচ,,।। রাজনীতি,,    মানবকল্যানের নীতি।ওরা,, রাজনীতির কী জানে?? মানবজাতির কলঙ্ক ওরা,,কে ওদের মানে??
তাই ওরা স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে,,আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে করে সবকিছু ছারখার। তাই ওরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরষ্কার করেছে চুরি। ভেঙে দিয়েছে নির্মমভাবে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মূর্তি। আগুন ধরিয়ে করেছে কত স্ফূর্তি। যে বিদ্যাসাগর  মহাশয়ের কৃপায় আমরা শিখেছি বর্ণমালা। যিনি বন্ধ করেছেন ঘৃণ্য সতীদাহপ্রথা। যিনি চালু করেছেন বিধবাবিবাহ। কোন দুর্নীতির কাছে কোনোদিনও তাঁর মাথা করেননি নিচু।
তিনি করুণাসাগর,,তিনি বিদ্যাসাগর। তিনি বাংলামায়ের প্রকৃত বীরসন্তান।বীরসিংহের সিংহশিশু। ভারতমাতার গর্ব। উচুমাথা তাঁর আমৃত্যু রেখেছিলেন উঁচু। গরীবের দুঃখে,কাঁদত তার কোমল হৃদয়। করতেন সেবা,অনাথ,,দীনহীন মানুষদের। বিদেশী ইংরেজদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন রুখে, বীরবিক্রমে। সমাজসংস্কারক, মহান পুরুষ তিনি। প্রকৃত সৎ,ভদ্র,,বজ্রের মত কঠোর,,কুসুমের মত কোমল ছিল তাঁর চরিত্র।
প্রকৃত ঈশ্বর তিনি।,,দেবতা,,ভগবান,
উপার্জিত অর্থের বেশিরভাগই দুহাতে করেছেন দান।  এই যুগে এই পৃথিবীতে কে আছেন এমন সুমহান??নারীশিক্ষা করেন প্রচলন  , করেছেন কত স্কুল,,কলেজ স্থাপন। দানসাগর তিনি,করেছেন কতকিছু অকাতরে দান।



ভারতমায়ের এই চরমতম দুর্দিনে,,হে ঈশ্বর,,হে ভারতরত্ন,,  হে সত্য-ধর্ম -মানবতার পূজারী,, তুমি এসো আবার ফিরে, এই ধরণীমায়ের কোল আলো করে। আমরা আছি বসে
তোমার অপেক্ষায়,। কবে আসবে তুমি??

সেই রাতে বৃষ্টি এসেছিল : দীপঙ্কর ঘোষ









আমি গ্রামের একটি হাইস্কুলে চাকরি করি।বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব আঠারো কিমি।কিন্ত সমস্যা হল স্কুলে যাওয়ার কোনো বাস রুট নেই।অগত্যা আমাকে ছুটতে হয় আমার দু চাকায় ভর করেই।শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা,ওই দুই চাকাই ভরসা।যাবার পথে প্রকৃতি যেন ডানা মেলেছে তার আপন খেয়ালে।আগে ছিল কাঁচা মেঠো পথ।সম্প্রতি ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী গ্রামীন সড়ক যোজনায় পাকা রাস্তা হয়েছে।সেই কংক্রিটের রাস্তায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে অধঘন্টায় পৌঁছে যাই গন্তব্যে।রাস্তার দুপাশে কোথাও আনারস,কোথাও চায়ের বাগান।কোথাও সারি সারি বাঁশ বন।আর কোথাও কোথাও দেখা যায় মরসুমি বিভিন্ন শস্যের চাষ।

সেই বছর শীতকাল।মাঘ মাসের কনকনে শীতের দিন।খুব জাঁকালো শীত পড়েছে।এরই মধ্যে পরে গেল স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।ওইদিন সকাল ন'টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছে গেলাম।সারাদিন দারুণ ব্যস্ততার মধ্যে কাটল।খেলাধুলা,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সবশেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল।আমরা শিক্ষকরা স্কুল থেকে বের হবো, ঠিক সেই সময় এলে ঝেপে বৃষ্টি।শীতকাল।এইসময় বৃষ্টি প্রায় হয় না বললেই চলে।সুতরাং কারো কাছেই রেইন কোর্ট নেই।উপায় নেই, দাঁড়িয়ে যেতে হল।বৃষ্টি কখন থামবে?বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমরা।কিন্তু বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।মেঘের গর্জন বাড়তে লাগলো ক্রমশ।শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি যখন থামল,তখন ঘড়িতে রাত নয়টা।

বেরিয়ে পড়লাম।ভিজে রাস্তা।অন্ধকার,চারদিক শুনশান।একটা কুকুর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।কোথাও একবিন্দু আলোর চিহ্ন নজরে পড়ছে না।একলা নির্জন পথে একা চলছি এতরাতে।এতবছর চাকরি হয়ে গেল,কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম।বাইক ছেড়েছি প্রায় আশি কিমি/ঘন্টা গতিতে।পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তিস্তা ক্যানেলের কাছে চলে এলাম।দূর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম ক্যানেলের ব্রিজটা যেখানে শেষ,সেই জায়গায় একটা আবছায়া,একটা ফ্যাকাসে মূর্তি।বুঝতে পারলাম কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।কাছাকাছি আসতেই হেড লাইটের আলোয় দেখলাম একটি কুড়ি-একুশ বছরের অপরূপ সুন্দরী একটি মেয়ে।মেয়েটা এতই সুন্দর যে,এই ঘন অন্ধকারের মধ্যেও ওর গায়ের উজ্জ্বল রঙ একটা আলাদা মাত্রা এনেছে।মুখে যেন হাজার ওয়াটের আলোর ঔজ্জ্বল্য।কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগল,এই অন্ধকার নির্জন পথে একাকিনী একটি মেয়ে এখানে কি করছে?কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলল, একটু লিফট পেতে পারি।এর পর আমাদের মধ্যে যে কথপোকথন হল তা এই প্রকার--
--এত রাতে আপনি একা এপথে?কোথা হতে এসেছেন আর যাবেনই বা কোথায়?
--আর বলবেন না ,গিয়েছিলাম কলেজে।রাস্তায় একটা পথ দুর্ঘটনায় প্রায় তিন ঘন্টা আটকে পড়েছি।সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ পৌচ্ছেছি এখানে ওই যে পেছনে যে বাজারটা সেখানে।কিন্তু তারপর শুরু হল বৃষ্টি,আর এতক্ষনে থামল।এতরাতে এই পথে   যাবার মতো কোনো মাধ্যম নেই।তাই হাটতে শুরু করেছি।
--যাবেন কোথায়?
আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মেয়েটি আমাকেই জিজ্ঞাসা করলো–-আপনি কোথায় যাবেন,?
-- বিধাননগর যাবো।
শুনে মেয়েটি উৎফুল্ল হয়ে বলল,--
তাহলে আমি আপনার সাথে পারি।
--পারেন অবশ্যই।কিন্তু আপনি কোথায় যাবেন সেটা তো বললেন না?
এবার মেয়েটি বলল,--চলুন না,আপনি নাম বললে চিনবেন না।
--বলেই দেখুন।
--দেরামারি মোড় থেকে...
আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম--এটা না চেনার কি আছে,এই জায়গাটা তো আমার ফেরার পথেই পরে।
মেয়েটা কিছু বললাম না,শুধু মুখে দেখলাম একটা হাসি খেলে গেল।তারপর বাইকের পিছন সিটে উঠে বসে বললো---চলুন ,এখানে আর দেরি করবেন না।রাত অনেক হয়েছে।রাস্তাটাও ভালো নয়।
আমি বাইকে স্টার্ট দিলাম।ভিজে রাস্তা।অন্ধকারও আরো ক্রমশ গভীর হচ্ছে।ধীরে ধীরে বাইক চালাচ্ছি।আমি কৌতূহলের সঙ্গে মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম যে,আপনি বললেন রাস্তাটা ভালো নয়।কেন?
সে কিছুই বললো না।কিছুক্ষন পর বললো শুনেছি এই রাস্তায় মাঝে মাঝেই ডাকাতি-খুন ইত্যাদি হয়ে থাকে।আর আপনি তো অনেক দূর যাবেন,শুনেছি এই রাস্তায় ভূতেরও উপদ্রব আছে।
আমি জোরে জোরে একচোট হাসলাম তারপর বললাম যে আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এসেও আপনি এই ভূত প্রেতে বিশ্বাস করেন?
মেয়েটি কিছুই বললো না ।
আমি এবার বললাম যে, হ্যা শুনেছি এই রাস্তায় ডাকাতি,-ফাকাতি হয়।তবে আমার কাছে কি-ই বা আছে।এই বলে হো হো করে হাসলাম।তবে মনের মধ্যে এতক্ষনে একটা ভয় উঁকি দিতে শুরু করেছে।শেষে না আবার ডাকাতের পাল্লায় পরি।গল্পে গল্পে প্রায় দুই-তিন কিমি পথ এগিয়ে গেছি।অনেকক্ষণ হলো মেয়েটা কোনো কথা বলছে না।কি ব্যাপার কিছু বলছেন না যে...
কোনো উত্তর এল না।
--ভয় পেলেন নাকি?
না কোনো সাড়া নেই।আমি ঘাড়টাএকটু ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম।আমি তো অবাক!মেয়েটি কোথায়?
ব্রেক করলাম ।বাইক থেমে গেল।চারদিকে চেয়ে দেখলাম ।না,কেউ কোথাও নেই।আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।কি মনে হল বাইকটা ইউ-টার্ন করে আবার যে পথে এতক্ষন আসছিলাম,সেই দিকেই চললাম।মনের মধ্যে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে লাগলো--মেয়েটি কোথায় গেল?
সন্দেহ হল পরে-টরে গেল নাকি?
আবার ভাবলাম বাইক তো খুব বেশি গতিতেও চালাইনি কিংবা এত বড় একটা মেয়ে পেছন থেকে পড়ে যাবে আর আমি বুঝতে পারবোনা--এও কি সম্ভব!যাইহোক,কিন্তু মেয়েটি কোথায়?এইগুলো ভাবতে আবার ক্যানেলটার সামনে পৌছালাম।অবাক কান্ড!যেখান থেকে মেয়েটিকে বাইকে তুলেছিলাম,মেয়েটি সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।আমি মেয়েটির সামনে গিয়ে বাইক থামিয়ে বললাম;-
আপনি এখানে কি করে এলেন?
--মানে?মেয়েটি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
--কিছুক্ষন আগে আপনি আমার বাইকে চড়লেন, বললেন আপনার বাড়ি সামনেই কোথায় যেন?আপনি লিফট চাইলেন।তারপর যেতে যেতে কত কথা হল!
মেয়েটি যেন আকাশ থেকে পড়লো আমার কথা শুনে!তারপর বলল--আপনার কাছে আমি লিফট চেয়েছিলাম সত্য,কিন্তু আপনি তো বললেন আপনি ওই পথে যাবেন না।আপনি চলে গেলেন।আর এখন আবার ফিরে এসে কি পাগলের প্রলাপ বকছেন।আমার মাথাটা কেমন যেন হয়ে গেল, সবকিছু এলোমেলো মনে হতে লাগলো।কেমন যেন সব তাল পাকিয়ে যাচ্ছে।
আমি শান্তভাবে আবার বললাম--আপনিই তো বললেন এই রাস্তায় ডাকাত,ভুত কত কি!আর এখন বলছেন---
আমার কথা শেষ হতেই মেয়েটি হি হি করে হেসে উঠলো।আমি রাগত স্বরে বললাম--
যেতে চাইলে চলুন নয় তো থাকুন এখানে।এই বলে আমি গাড়ি স্টার্ট দিতেই মেয়েটি এসে বাইকে বসলো।

আবার চলতে শুরু করলাম।আকাশ ঘন মেঘে ছেয়ে গেল।বাজ পরা শুরু হয়েছে।অন্ধকার যেন গিলে ফেলতে চাইছে।এক কিমি এগোতেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামলো।কিন্তু দাঁড়ানোর মতো কোনো জায়গা দেখতে পাচ্ছি না।বৃষ্টির বড় বড় ফোটায় বাইক চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।কোনো ক্রমে কয়েকশ মিটার এগিয়ে গেলাম।চা বাগানের একটা ছোট্ট টং ঘর দেখতে পেলাম।ইতিমধ্যেই ভিজে গেছি দুজনেই।ঠান্ডায় কাঁপতে লাগলাম।ওই ঘরেই আশ্রয় নিলাম।অনেকক্ষন হল সিগারেটের খুব নেশা হয়েছে।পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম আছে একটা।কিন্তু দেশলাইটা জলের ছাটে ভিজে গেছে।অনেক কষ্টে সিগারেটটা ধরলাম।মেয়েটি একটু অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো।বললো ফেলুন।ফেলে দিলাম।অপেক্ষা দীর্ঘ হল।মেয়েটি অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললো--
জানেন এই রাস্তায় রাতের অন্ধকারে একটি খুব সুন্দরী মেয়েকে দেখতে পাওয়া যায় বলে অনেকে বলে থাকেন।লোকে বলে,আসলে ওটা নাকি একটা ভূত!
একথা শুনে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।কেঁপে উঠল সারা শরীর।আমার মনে একটা কুচিন্তা এসে ভর করলো।এখন রাত আর আমি  একটা অত্যন্ত রূপসী একটি মেয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি জনশূন্য এক চা বাগানের টংঘরে।তাহলে কি?!!তীব্র শীতের মধ্যেও আমি ঘামছি। আমি হতভম্বের মতো মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।মেয়েটা বললো ,আমার দিকে এমন করে চেয়ে আছেন কেন!আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম আপনিও তো যথেষ্ঠ সুন্দরী।তাহলে...।আমার কথা শেষ না হতেই মেয়েটা  হা হা করে হেসে উঠল।বললো-আপনি কি আমাকে!আরে মশাই...
নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,না না তেমন কিছু ভাবছি না।একটু মজা করছিলাম আর কি!আপনি কেন... ইতিমধ্যেই বৃষ্টি থেমে গেছে আমি খেয়াল করিনি।মেয়েটি বললো,কি ব্যাপার, এখানেই থাকবেন নাকি?চলুন...
হ্যাঁ, চলুন বলে বাইকে এসে বসলাম দুজনে এবং চলতে লাগলো বাইক কখনো ধীরে, কখনো একটু জোরে।মাঝে মাঝে রাস্তার পাশের গাছ থেকে জল ছিটকে গায়ে এসে পড়ছে।ঠান্ডা লাগছে খুব।মেয়েটিও দেখছি ঠান্ডায় কাঁপছে এখন।কারো মুখেই কোনো কথা নেই।হঠাৎ একটা শব্দ হল।কিন্তু  কিসের বুঝতে পারলাম না।কিছুক্ষন যেতেই আবার একই শব্দ হল।এবার মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, শব্দটা কিসের,আপনি কিছু বুঝতে পারছেন?উত্তর পেলাম না।কিন্তু কাঁধে মেয়েটির হাতের স্পর্শ পেলাম।কি ব্যাপার ঘুমিয়ে গেলেন নাকি?না, তবুও কোনো উত্তর পেলাম না।বাইক থামিয়ে দিলাম।একি ব্যাপার আবার কোথায় গেল মেয়েটা!?ব্যাপারটা ভালো লাগছে না।!কি হচ্ছে আমার সাথে!আমি ঘাবড়ে গেলাম।মনে মনে ভাবতে লাগলাম যে,কোনো ভুতের খপ্পরে পড়লাম নাকি?ভাবছি মেয়েটাকে খুঁজতে যাবো, না চলে যাব সোজা।প্রথমে ভাবলাম চলেই যাই, যা হয় হোক।কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল এত রাতে এই নির্জন পথে একা একটি মেয়েকে ফেলে যাওয়া উচিত হবে না।অতঃপর আর সময় নষ্ট না করে বাইকটাকে ইউ-টার্ন করলাম।সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে কানে ভেসে এল--কি হল!আবার বাইক ঘোড়ালেন কেন!
আমি তো এবার একেবারে থ!নিজের চোখ না নিজের কান--কাকে বিশ্বাস করবো।পিছনে ফিরে দেখি মেয়েটা বাইকের সিটেই বসে আছে।আমি নিজের চোখ কচলে বললাম যে,আমি যে আপনাকে কতবার জিজ্ঞাসা করলাম ,শব্দটা শুনতে পেলেন!ওটা কিসের শব্দ!আপনি কোনো উত্তর দিলেন না।আর তারপর দেখলাম আপনি বাইকের সিটে নেই!
মেয়েটি যেন বিরক্ত হল আর বললো, কি যে হয়েছে আপনার!সেই থেকে কি সব আবোল তাবোল বলছেন।আমি আপনার সঙ্গেই বসে আছি আর আপনি আমাকে খুঁজতে যাচ্ছেন.... হা হা হা...
কি আর বলবো।চুপ করে গেলাম।কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটা ছোট্ট গ্রামে এসে পৌছলাম।জিজ্ঞাস করলাম, আপনি তো এখানেই নামবেন বলেছিলেন?
--না।
--এই গ্রামেই তো আপনি থাকেন বলেছিলেন।
--না,মানে ঠিক এই গ্রামে না।
--তবে কোথায়।
--এখান থেকে তিন কিমি আগে যে বাঁশ বন আছে, ওই খানে।
--ওখানে তো শুধু বাঁশ বন।কোথাও তো বাড়িঘর দেখিনি।
--আছে,ওই বাঁশ বনের পেছন দিকে।আপনি হয়তো খেয়াল করেননি।
--হয়তো।
পাঁচ-সাত মিনিটেই বাঁশ বনের কাছে চলে এলাম।মেয়েটি বললো--আমাকে এখানে নামিয়ে দেন।চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম,কোনো বাড়িঘরের কোনো চিহ্ন নেই।আশেপাশে কোনো গ্রাম আছে বলেও মনে করতে পারছি না।চারদিক যেন অন্ধকারের সমুদ্রে ডুবে আছে।মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।একটা তাঁরাও দেখা যাচ্ছে না।আমি ওকে বললাম, এখানে কোথায় যাবেন?এখানে তো....
আমার কথা শেষ না হতেই বললো, আরে আছে ।আমি তো এই বাঁশ বনের পেছনেই থাকি।বললাম তো গ্রাম আছে ওখানে।এদিক থেকে দেখা যায় না।এই যে সামনে পথটা দেখতে পাচ্ছেন,ওই পথেই...
সামনে একটা পায়ে হাটা পথের চিহ্ন দেখতে পেলাম।
মেয়েটি নেমে গেল।কয়েক পা এগিয়ে গেল।তারপর থমকে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবলো।তারপর আবার ফিরে এলো।আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম।বললো,একটা কথা বলবো?
--বলুন
অনেক রাত হয়ে গেছে।আমি মেয়ে মানুষ একা যেতে একটু ভয় করছে।আর তাছাড়া, সামনে একটা মোড় আছে যেখানে রাতে মাতালদের আড্ডা বসে।তাই বলছিলাম যে,অনেকটাই তো সাহায্য করলেন যদি আর একটু করতেন।যদি আমাকে আমার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন,তবে খুব উপকার হত।
আমারও জায়গাটা ভালো লাগছে না।আর আমার প্রথমেই মনে হয়েছিল যে, এই এত রাতে মেয়েটিকে এই বাঁশ বনে ছাড়া ঠিক হবে না।তাই দাঁড়িয়ে ছিলাম।মেয়েটি নামার পর চলে যাইনি।সূতরাং, বাইকটা রাস্তার ধারে রেখে, লক করে আমি সেই হাঁটা পথে বাঁশ বনের ভেতরে যেতে লাগলাম।কোনো আলো নেই,কোনো শব্দ নেই।শুধু মাঝে মাঝে বাঁশ গাছের জল পড়ছে তার টুপটাপ শব্দ।আর আমাদের দুজনের পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেল হাঁটছি।কিন্তু না এখনো কোনো গ্রাম বা বাড়ি দেখা যাচ্ছে না।আমি মেয়েটিকে বললাম,কোথায়,আর কতদূর তোমার বাড়ি!
--সামনেই।
তারপর আবার আমরা চুপচাপ হাটতে থাকলাম।তারপর মেয়েটি বললো, আচ্ছা আমরা প্রায় দুঘন্টা একসাথে আছি অথচ আমরা কেউ একে অপরের নাম-পরিচয় জানি না।আপনার নামটা বলবেন?
--হ্যাঁ, অবশ্যই।আমি রাতুল।বিধাননগরে থাকি।এই হাপতিয়াতে স্কুলে চাকরি করি।
--ও আচ্ছা।আমার নাম বৃষ্টি।তারপর হঠাৎ বললো আচ্ছা, আপনি তো তখন পুরো গল্পটা শুনলেন না...
--কোন গল্পটা?
--ওই যে সুন্দরী মেয়ে!
--থাক, এই জঙ্গলের মধ্যে এখন আর ওগুলো শুনবো না।
--কেন!ভয় পাচ্ছেন?বলে হা হা করে অট্টহাসিতে বাঁশ বন কাঁপিয়ে দিল।
আমার আত্মসম্মান আহত হল।আমি বললাম ভয় পাবো কেন?ওই সব ভূত-টুতে আমি বিশ্বাস করি না।আচ্ছা, বলুন...
এরপর মেয়েটা বলতে শুরু করলো--
ওই যে সুন্দরী মেয়ের কথা বলেছিলাম শুনেছি প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে ওই হাপতিয়া ক্যানেলের ধারে ওকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।পুলিশের অনুমান ছিল তাকে খুন করা হয়েছিল।কেননা তার দেহে অজস্র ধারালো অস্ত্রের আঘাত  চিহ্নিত হয়েছিল।কিন্তু পুলিশ খুনিকে ধরতে পারেনি।এমনকি মেয়েটার মুখ এমন ভাবে থেতলে দেওয়া হয়েছিল যে প্রায় ১৫ দিন লেগেছিল ওই লাশ চিহ্নিত করতে।পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল,কিন্তু প্রমাণের অভাবে আদালত তাদের সম্মানের সঙ্গে নির্দোষ ঘোষণা করে।শোনা যায় ওই মেয়েটাই নাকি তার হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে রাতের অন্ধকারে ওই অপরাধীদের খুঁজে বেড়ায়।হয়তো শুনে থাকবেন ,এই সপ্তাহ দুয়েক আগে এই পথে একটা খুন হয়েছিল?
--হ্যাঁ, শুনেছিলাম বৈকি।যে খুন হয়েছিল তাঁর দেহেও নাকি অদ্ভুত এক ধরণের ক্ষত ছিল এবং তার মাথাটা নাকি থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল?পুলিশ তো এখনো খুনির সন্ধান পায়নি।
--পাবেও না।
--কি বললেন?
--কিছু না।
--না,আপনি কি করে বললেন পুলিশ খুনির সন্ধান পাবে না?
--কি করে পাবে?কোনো মানুষ খুনি হলে তো পুলিশ খুঁজে পাবে।
--এর মানে?আমি চমকে উঠে বললাম।
--মানে কিছু না।
--আপনাকে বলতেই হবে কি বলতে চাইছেন।
--আমি কিছুই বলতে চাইছি না।আসলে লোকজন তো বলে থাকে ওই মেয়েটাকে যারা খুন করেছিল খুন হওয়া লোকটা তাদেরই একজন এবং সেই মেয়েটাই নাকি তাকে হত্যা করে বদলা নিয়েছে।

আর এটা কি জানেন লাশটা কোথায় পাওয়া গেছে?
--না ।
--ঠিক এখন আমরা যেখানে আছি।এই এখানেই লাশটা পাওয়া গিয়েছিল।
আমি আঁতকে উঠলাম।কি বলেন?
--আচ্ছা, আপনি যদি কোনোদিন ওই সুন্দরী ভুতের পাল্লায় পড়েন?
--কথাটা শুনে আমার তো ঘাম ছুটে গেল?সামনে একটা ছোটো পাথর ছিল,তাতে হোঁচট খেয়ে পরে গেলাম।
এটা দেখে মেয়েটা এত জোরে  খিলখিল করে হেসে উঠল যে,বাঁশ বনের নিস্তব্ধতা ভেঙে যেন সেই হাসির অনুরণন হতে লাগলো বারবার।মেয়েটি হাসি থামিয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।ওই ভাবে হঠাৎ পরে যাওয়ায় পায়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম।মেয়েটার হাত ধরে কোনো মতে উঠে দাঁড়ালাম।তখনও যেন সেই হাসির শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি।
মেয়েটি বললো চলুন।কিন্তু আমার এতটাই ব্যথা হচ্ছে যে,আমি ভালো ভাবে দাঁড়াতেই পারছি না।চলব কি করে!
আমি বললাম,আমি আর যেতে পারবো না।আপনি যান।আমি এখানেই আছি।আর কতদূর?
--এই তো প্রায় চলে এসেছি।
--তাহলে আশা করি আপনি এখন যেতে পারবেন?
--না,আমার ভয় করে।ওই যে বললাম না মাতালের দল...তারপর কাছে এসে বললো দেখি আপনার কোথায় লেগেছে...এই বলে আমার ব্যথার জায়গাটায় হাত দিল।কি অদ্ভুত কান্ড!মিনিট খানেকের মধ্যেই আমার ব্যথা উধাও।আমি হা করে মেয়েটির দিকে চেয়ে রইলাম।তারপর বললাম, ঠিক করে বলুন তো আপনি কে?
মেয়েটি তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জবাব দিল, আমি বৃষ্টিইইইইই।সঙ্গে সঙ্গে বাঁশ বনের ভেতর থেকে অনুরণিত হতে লাগল,আমি বৃষ্টিইইইইই......আমি বৃষ্টিইইইইই......
--আপনি যদি সাধারণ কেউ হন,তাহলে আপনি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার ব্যথা কমে গেল কি করে?
মেয়েটা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে এবার বললো, আমার এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে,আপনার মাথাটা গেছে।শুনুন আপনি খুব শীঘ্রই কোনো সাইকাটিস্ট দেখান।বুঝলেন!!!আবার হেসে উঠল...আবার অনুরণন...
আমি বললাম,ঠিক আছে চলুন তাড়াতাড়ি।অনেক রাত হয়ে গেল।বাড়িতে সবাই চিন্তা করবে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত বারোটা হয়ে গেছে।হাঁটতে হাঁটতে এতটা সময় চলে গেছে কখন বুঝতেই পারিনি।মনে হল বাড়িতে একটা ফোন করা দরকার।মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি পঁচিশটা মিসকল।কল করতে গেলাম।নেটওয়ার্ক নেই।ধুর ছাই বলে মোবাইলটা পকেটে রেখে দিলাম।
তারপর এগিয়ে যেতে লাগলাম।কিন্তু এখন কিছু অদ্ভুত শব্দ কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বারবার।শব্দটায় আমার হৃদকম্পন যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।আমার শরীর আর চলছে না।কিন্তু মেয়েটার এদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।সে আপন মনে এগিয়ে চলছে।দেখে মনে হচ্ছে ওর কোনো ভয়ডর কিছু নেই।এই যে এতরাতে একটা অচেনা অজানা মানুষের সঙ্গে জঙ্গলের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে, তবুও ও যেন নিশ্চিত।মনে মনে ভাবলাম,একটা মেয়ে এতটা সাহসী কি করে হতে পারে!
আমি বললাম,কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছেন?
--না তো।কোথায় কোনো শব্দ তো নেই।
আমি চুপ হয়ে গেলাম।
আর একটু যাওয়ার পর মেয়েটি বলে উঠল, ওই যে সামনে বাড়িটা দেখতে পাচ্ছেন, ওটা আমার বাড়ি?
--কোথায়?আমি তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না?
--আপনার চোখও গেছে!চোখটা ভালো করে মুছে, একবার বন্ধ করে,তারপর খুলুন এবং দেখুন।
আমি তাই করলাম।কি আশ্চর্য।এই তো কাছেই মোড়ের মাথায় কি সুন্দর একটা বাড়ি।কি অপূর্ব মায়াবী পরিবেশ।কি দূর্দান্ত!বাড়ি তো নয় যেন কোনো রাজপ্রাসাদ।কত আলোর খেলা।তাহলে কি আমার চোখটা গেল না কি?এত আলো তবুও আমি বাড়িটা দেখতে পাচ্ছিলাম না।কিন্তু আশেপাশে আর কিছু দেখা যাচ্ছে না কেন?আর, আশেপাশেও তো কোনো বাড়িঘর দেখতে পাচ্ছি না।
বললাম,আচ্ছা আর তো কোথাও কোনো বাড়ি দেখতে পাচ্ছি না?
--থাকলে তো পাবেন?
--মানে?নেই..
--না
--আপনারাই শুধু এখানে থাকেন?
--শুধু আমি।
আমি যারপরনাই অবাক হয়ে বললাম,আপনি একা এই জঙ্গলের এই বিশাল প্রাসাদে থাকেন?আপনার কোনো অসুবিধা হয় না।আর আপনিই তো বললেন যে, মোড়ের মধ্যে মাতালের উৎপাত।আপনার ভয় লাগে?
--ধুর ছাড়ুন তো ওই সব কথা।
এই কথা বলে মেয়েটি আমার সামনে সামনে হাটতে লাগলো।,পাঁচ মিনিট হাঁটার পর দেখি, বাড়িটা যতদূরে ছিল এখনো ততটাই দূরে।আমার মাথা ঘুরতে লাগলো।সেই ভয়ঙ্কর শব্দটা আবার ফিরে এল এবং আমার কান ঝালাপালা হতে লাগলো।আমার সমস্ত শরীরে যেন কিসের শীতল স্পর্শ পেলাম।কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না।পায়ের সানে দিয়ে একটা ইঁদুর দৌড়ে গেল।আমি ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।মেয়েটি অনেকক্ষণ কিছু বলছে না।শুধু হেঁটেই যাচ্ছে।আমিও তার পিচুপিছু হেটে চলেছি।যেন কোনো সুচতুর জাদুকরের জাদু আমার ওপর ভর করেছে।আমি শুধুই মেয়েটিকে অনুসরণ করে যাচ্ছি।কোনো কথা বলতে পারছি না।কথা বলতে গেলেই আমার কন্ঠ থেকে যেন একটা গোঙানি বেরিয়ে আসছে।কিছুক্ষন মেয়েটি দৌড়াতে শুরু করলো।আমিও তার পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলাম।কতক্ষন যে দৌড়ালাম কিছুই বুঝতে পারলাম না।কিন্তু যতই দৌড়াই দেখি বাড়িটার দূরত্ব কোনোভাবেই কমছে না।একসময় আমার সারা শরীর অবশ হয়ে গেল।আমি আর দৌঁড়াতে পারলাম না।আমি বসে পড়লাম চোখ বন্ধ করে।কতক্ষণ যে চোখ বন্ধ করে ছিলাম বুঝতে পারলাম না।যখন চোখ খুললাম দেখি আমি সেই রাজপ্রাসাদের একটা স্বর্গীয় সৌন্দর্যে ভরপুর একটা ঘরে শুয়ে আছি।পাশে বসে আছে সেই মেয়েটি।আমার শরীরে কোনো ক্লান্তি নেই।আমি উঠে বসলাম তারপর মেয়েটি বললো এখন কেমন  লাগছে শরীর?বাড়ি যেতে পারবেন না কি এখানেই রাতটা পার করে কাল সকালে বাড়ি    যাবেন?
আমি বললাম,না আমাকে বাড়ি যেতে হবে।তারপর বিছানা ছেড়ে মেয়েটির থেকে বিদায় নিয়ে আবার সেই বাঁশ বনের পথে বের হলাম।
কিছুটা এগিয়ে পিছন ফিরে তাকালাম।আমার চক্ষু তো ছানাবড়া!কোথায় সেই রাজ প্রাসাদ?আমি চারদিকে চেয়ে দেখলাম।না,কোথাও কিছু নেই।চারদিকে শুধু বাঁশ বন আর সবটাই গভীর অন্ধকারে ঢাকা।আমার শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল।ভয় যেন আমার গ্রাস করলো।আমার সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপতে লাগলো।ক্রমশ যেন আমি অন্ধকারের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।তারপর  যখন আমার চোখ আবার আলো দেখলো তখন আমি হসপিটালের বেড়ে।জানতে পারলাম আজ সকালে কয়েকটি লোক আমাকে বাঁশ বনে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পায় এবং আমাকে চিনতে পারে।বাড়িতে খবর দেয়।বাড়ির লোক আমাকে উদ্ধার করে এই হসপিটালে নিয়ে আসে।

তারপর যা শুনলাম তাতে আমার পরান মাঝি বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়।বাঁশ বনের যে জায়গা থেকে আমাকে উদ্ধার করা হয়,সেই জায়গা এবং আমার বাইক যেখানে রাখা ছিল সেখানে নাকি রক্ত দিয়ে লেখা ছিল--
আমিই সেই সুন্দরী মেয়ে যাকে এমনই এক বৃষ্টির দিনে চারজন মাতাল নৃশংস ভাবে আমাকে ধর্ষণ ও  হত্যা করেছিল।তারপর ফেলে গিয়েছিল ওই ক্যানেলে।আমি বদলা চাই।তাই বৃষ্টির রাতে আমি সেই ক্যানেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি।খুঁজি সেই অপরাধীদের।কিন্তু গতমাসে যে লাশটা পাওয়া গিয়েছিল এই বাঁশ বনে,সে আমার হত্যাকারী ছিল না।সেই রাতে আমি যথারীতি দাঁড়িয়ে ছিলাম শিকারের জন্য সেই সময় সে এই রাস্তায় আসে এবং নিজেই আমাকে লিফট দেয়।কিন্তু এই বাঁশ বনের সামনে এসে সে আমাকে একা পেয়ে আমার শ্লীলতা হানি করার চেষ্টা করে।আমি বিনিময়ে তাঁকে মৃত্যু দিই।তাই আজও পুলিশ খুনির সন্ধান পায়নি।আর কোনোদিন পাবেও না।
আজও শিকারের সন্ধানে ছিলাম।আপনার থেকে লিফটও নিলাম।কিন্তু কিছুটা পথ যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম যে আপনি অন্যরকম।আপনি তাদের মতো নন,মেয়ে দেখলেই যাদের জিভ লকলক করে।তাই একসময় আপনার বাইকে আমাকে দেখতে পাননি।তারপর যখন আপনি আবার ফিরে এলেন তখন মনে হল আপনি প্রকৃতই ভালো মানুষ,আপনাকে আমার কথা বলা যায়।তাই এতক্ষন....।যান আপনি বাড়ি ফিরে যান।আপনার কোনো ভয় নেই।তবে আমি তাদের কখনোই ছাড়বো না,যারা নিরীহ মেয়েদের একা পেয়ে নিজেদের জৈবিক ক্ষুধা মেটাতে জানোয়ার হয়ে যায়।

অসম : কৃপাণ মৈত্র







    মাঝি নদীতে ঝাঁঁপ দিতে পারিস?মোটা বকশিশ দেবো।
    নদীতে ষাঁঁড়াষাাঁড়ি বান ।পাক খেয়ে এক স্রোত  অপর স্রোতের পেটের মধ্যে সিঁধিয়ে যাচ্ছে ।আবার কখনও কখনও পৃথিবীর বুক ঠেলে লাভা স্রোতের মতো লাফিয়ে ফুলে উঠেছে। দক্ষ মাঝি ছাড়া এমন বানে কেউ নৌকা বাইতে সাহস করে না ।বাবুর শখ হয়েছে বানে নদী কেমন উত্তাল হয় দেখেন।মাঝি কোন কৌশলে ঢেউএর ফনাগুলোকে বসে এনে তাদের মাথায় নাচে তা দেখেন  ।দাঁড় বাওয়া   আর হালের কেরামতি  যেন কোন  ধ্রুপদী সংগীতের তালে তালে  নৃত্য।   বাড়িতে অসুস্থ ছেলে। কেঁদে কেঁদে মায়ের চোখের কোণে কালি পড়ে গেছে । দিগন্তে সূর্যটা ডুবলে মোহন মাঝির মন খারাপ হয়ে যায়। মহাজন' মাছের অর্ধেক ভাগ নেয়। বাকিটা তিনজনের মধ্যে ভাগ হয়। কয়েকশো জাল ভেদ করে কতটুকুই বা তাদের জালে ধরা পড়ে। বখরা পয়সায় প্রতিদিনের চাল ডাল সবজি ও কেনা হয়ে ওঠে না।
     মোহনমাঝি শক্ত করে কোমরে গামছা বাঁধে।
     -বাবু কত দেবেন?
     একটা পাঁচ'শ টাকার নোট দেখিয়ে বাবু বলেন, উঠে এলে আরো দেবো।
      মতিন এবং রাঘব  মোহনকে বাধা দিয়ে বলে, তোর বউ বাচ্চার কথা  তো একবার ভাব।
          মোহন স্থির দৃষ্টিতে বাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, বাবু, যদি না ফিরি তো ওদেরকে দিয়ে দেবেন। বাচ্চাটা হয়তো বেঁচে যাবে।
   সূর্য তখন পাটে বসেছে ।সূর্যকে প্রণাম করে মোহন মৃত্যু গহ্বরে  ঝাঁপ দিল ।
      মতিন  এবং রাঘবের ঘৃণিত দৃষ্টির সামনে  বাবু তখন  শূন্যে সিগারেটের রিং বানাচ্ছেন ।

প্রেম প্রিজম : মহঃ ওলিউল ইসলাম






চিমনির ঠোঁটে জমে থাকা আরমান শুয়ে|
অভিমানের ধোঁয়ায় মিশে যাবে আকাশের পর্দায়|
ঠান্ডা আগুন তোমার ভালোবাসায়|
তারল্যের তোড়ে,
দৈর্ঘ্য বাড়াও তুমি|
তুমি আগুন চেয়েছো,--- ঠান্ডা আগুন পোড়াতে|
একটি গভীর যন্ত্রনার কোলে চাওয়া-পাওয়ার কৈশোর অভুক্ত,
তবুও দামাল|
পাতলা প্রাচীরে আটকে আছে
ক্ষমতার উষ্ণতা |
ফিরিঙ্গি সেজে ক্লান্ত তোমার যৌবন
ভালোবাসার তালিমে মুন্সীয়ানা নেই|
বৃদ্ধ ভাবনা ক্লান্ত এখন,
--চঞ্চলতার ঘরে|