নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আলো-ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। পনের ।।

গরমকালের ভোরবেলা একটা ঠাণ্ডা হাওয়ার পরিবেশ। মা ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে থাকত। আমি আস্তে আস্তে উঠে বাইরে পালাতাম। তখন সবেমাত্র একটু একটু আলো ফুটছ। উদ্দেশ্য আম কুড়ানো। কিন্তু সেটাই একমাত্র নয়। আসলে ভোরের আকাশ, ঠাণ্ডা বাতাস আর চারপাশের নির্জনতা আমাকে ভীষণভাবে টানতো। তাই যখন আমবাগানে গিয়ে দেখতাম আমার অনেক আগেই অনেকে আমতলা খুঁজে ফেলেছে তখন এতটুকু মনখারাপ হতো না। ভোরবেলা বাইরে আসতে পেরেছি এটাই যেন অনেক আনন্দের। কোনো কোনো দিন আমবাগানের ভেতরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম। চারপাশের মানুষজনদের আস্তে আস্তে জেগে ওঠা, পাখির ডাক ----- এসব কিছুর মধ্যে ভাসতে ভাসতে কখন যেন আমের কথা ভুলে যেতাম।



।। ষোল ।।


সন্ধে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ আস্তে আস্তে নির্জনতায় ডুবে যাওয়া, বাসায় ফেরা পাখিদের চিৎকার চেঁচামেচি। ঠিক এর পরেই কানে আসত কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। আর কান পেতে শুনতাম সন্ধের আবহসঙ্গীত। একটু পরেই শুরু হতো সন্ধের আরতি। দেখতাম মা হাতজোড় করে ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কোনো দিন দেখতাম মা ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কাঁদছে। আজও যখনই কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ কানে আসে তখনই ভেতর থেকে আমাকে কে যেন টেনে ধরে। সন্ধের আবহসঙ্গীত আবিষ্ট হয়ে পড়ি। পার্থিব জগৎ থেকে আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই।


(ক্রমশ...)

রূপবান মৃত্যু : মাধব মণ্ডল


যাও পা পা করে, খোঁড়ামণি
দেখ মৃত্যু ছুঁড়ছে কারা

মৃত্যুকে একবেলা ভেজে চারবেলা খাই
কতো অপমান করতে হয়েছে গাদা

শ্যাওলাও মৃত্যুকে কাছে বসায়
আমি অভিন্ন মন হয়ে হাসি হি হি

কার কি ছোঁড়ার আছে আর
এই তো এখানে আমি আজও পড়াই

শিঙির কাঁটার যন্ত্রণা ঘিলুর ভাঁজে ভাঁজে
মৃত্যু রূপবান হয়ে নাচো নাচো আরও জোরে

বর্ণহীন প্রভাত : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

 

জেগে উঠে দেখি --     
বসন্তের প্রভাত রঙে ঢাকি       
রেখে গেছে ভাল লাগা ভোর !     
আমার জীবন ব্যাপী --     
কেবলি অনিশ্চিতের কঠিন খোল ,       
জীবনেরে অশান্ত করে অর্থনীতি       
ঢেলে দেয় বাঁচার এক তিক্ত লড়াই ।   
নিরন্নের সারিতে বৃদ্ধি --     
চারিদিকে মেহনতের নেই কোন বোল !   
এমন দেশের চালক --   
জীবনেরে দেখায়ে ঝলক কেবলি বিজ্ঞাপনে     
বসন্তেরে করেছে মলিন হতবাক !   
তবু চায় তারা আরো সমর্থন --     
বুকের পাটার দেয় নির্লজ্জ মাপ   
অথচ কাজের বেলায় দেখি  ফাঁক !   
বসন্তে জেগে থাকি যদি --   
বর্ণহীন হোক তবে তাহাদের হাত ,     
মারছে , মারুক যদি ভাত ।   
বসন্তের অঙ্গীকারে হয় যদি হোক     
তাহাদের বর্ণহীন প্রভাত ।     



প্রিয় দুশমন :হেমন্ত সরখেল


যখনই এভাবে বলো
মনে হয়
আমায় হেরে যেতে বলছো।

উৎসাহ হত হলেই মৃত্যু, স্তব্ধতা, বর্তমানহীন
মাটি ঠেকা পিঠে।

এভাবেই অজান্তে দুশমন হয়ে ওঠো।
আরো বেশী ভালোবেসে ফেলি তোমাদের।

তুমিই এসো।
চরম সত্যে-
তোমার আগে তো ওকেও চাওয়া যায় নি!
                          

মন খারাপের বসন্ত : প্রলয় কুমার বিশ্বাস



কেন জানি না এ বসন্ত
কবি মনে দাগ কাটেনি তেমন একটা।
একটা শূণ্যতা,  স্বজন হারানো বেদনা।

আগুণ ঝরা ফাগুনের মধুমাসে
অশোকেও শোক ছিল!
পলাশও কেঁদে গেছে লাশে!

লাল রঙা শিমুল কিংবা শুভ্র সজিনাও
সে অস্থিরতাকে দূর করতে ব্যর্থ।
সুমিষ্ট কোকিলের কুহুতানও পারেনি
সে শোক মেটাতে বিন্দুমাত্র।

শুধু, চোখে ভাসছে ভাইয়ের লাশ,
বাসন্তীর চোখে জল.....!!
           

কাঁচ : সুপ্রভাত দত্ত



জলের উপর অজানা হাঁসের আঁচড়,
কত ছায়া কত আকাশ ভাঙে..
ভেঙে যায় পুরোনো কোনো প্রহর,
নতুন এক প্রহরের সন্ধানে!

মুঠোর ভিতর শিউরে ওঠে রেখা।
মুঠো, তুমি বাস্তবতায় ভরা...
একটি মন চোখের উপর লেখা
চোখের জলে কেঁপে ওঠে তারা।

একলা পথে কাতর হয় স্মৃতি,
অন্ধকারে বুক কাটে কাঁচে...
কাঁচের ভিতর জমা সহানুভূতি,
কান্না গুলো শূণ্যতাতে বাঁচে।