আজব পুরাণের গপ্প
****************
( ১)
সে আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগের কথা । তখন দুর্গা ঠাকুর বসন্তকালে সিংহের পিঠে চেপে বাপের বাড়ী আসতেন । সময়টাও ছিল খাসা । বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি হরেকফুলে সেজে উঠত । মা মেনকা আর অন্যান্য সখীরা নানা ফুল তুলে এনে কত রকম সাজ বানাতেন । আহা কৈলাস দেখো , চারিদিকে বরফ আর বরফ ! কী আর করা বাপ-মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শীতের দেশে বিয়ে দিতে বাধ্য হন । সে যাইহোক যা হওয়ার হয়ে গেছে । বছরে এখন একটিবার মেয়েকে কাছে পেয়ে কত আদর করে , চুমু দেয় । আর দাদু প্রাচীনবর্হি সে তো আনন্দে দিশেহারা ।
একদিন সকালবেলা আঙুরের রস পান করতে করতে দেবী দুর্গা তার দুই বোন কদ্রু আর বিনতার সাথে সাধের ফুল বাগিচায় ঘুরছেন । দুর্গাকে কাছে পেয়ে ফুল গাছেদের শরীরেও খুশী । দেবীও তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন । কিন্তু কেন জানি না আজ সকাল থেকেই পার্বতীর মনটা কেন জানি না খারাপ । বড় বোন মশকরা করে জিজ্ঞেস করেন , “ হ্যাঁ রে পার্বতী ভোলানাথের জন্য মন খারাপ নাকী ?” দেবীর মুখে হাসি কিন্তু মনের কোথাও কী যেন না থাকার দুঃখ । এই বাগানেই বাসা বেঁধে থাকে নীলকণ্ঠ দম্পতি । পার্বতীর মনের কথা বুঝতে পেরে তারা টুঁই টুঁই করে গান গাইতে গাইতে বলে –
“ বাসন্তীর মনে বসন্ত নেই-
তাই তো মা হারিয়েছে খেই ।
শ্যামদেশে আছে এক বৃক্ষ-
ফুটলে ফুল যাবে সব দুঃখ ।”
২
প্রজাপতি দক্ষ চিন্তায় আকুল । কী এমন গাছ যা তার বাগিচায় নেই ? আর শ্যামদেশ সেটাই বা কোথায় ? সুপ্রাচীন দাদু প্রাচীনবর্হি নাতনীর মনের দুঃখের কথা জানতে পেরে প্রপিতামহ ব্রহ্মার আশ্রম ব্রহ্মলোকে যান । ব্রহ্মা বলেন “ দেখো বাছা প্রাচীনবর্হি আমি বিশ্বের সকল কিছু সৃষ্টি করলেও বয়েসের কারনের বর্তমানে কিছু স্মৃতি বিলোপ ঘটেছে । তুমি বরং বিষ্ণুলোকে যাও ।”
প্রাচীনবর্হি সেখানেও যান । কিন্তু ভগবান বিষ্ণু তখন অনন্ত শয্যায় , ঘুম ভাঙানো যাবে না । অবশেষে নারদমুনির পরামর্শে ভারতবর্ষের পূর্ব দিকে শ্যামদেশ (বর্তমানের থাইল্যান্ড) থেকে আনা হয় শেফালি ফুলের গাছ । পরম যত্নে তা লাগানোও হল , কিন্তু ফুল বসন্ত শেষেও আর ফোটে না । এ যে বড় বিড়ম্বনা ।
৩
এদিকে রাবণের আক্রমনে সকল দেবকুল চিন্তিত । ভগবান বিষ্ণু তখন রাম অবতারে ধরায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণপ্রিয় সীতাকে উদ্ধারের আশায় । কিন্তু পরাক্রমশালী রাবণকে বধ করা যে সহজ নয় তা জেনেই শরৎকালের এক সকালে কালিয়াদহের পাড়ে বসে একাগ্র চিত্তে দেবী দুর্গার অকাল বোধন করে বসেন । এই সময় দেবকুলের ঘুমানোর সময় । কী আর করা দেবীকে রামের কাছে পাঠানো হল পরম শক্তি দেওয়ার জন্য । রাম দেবীকে একশো আটটা নীল পদ্মে পূজা দিলেন । একেই ঘুমের সময় কিন্তু একটা মিষ্টি গন্ধে দেবীর মুখ পরম আনন্দে ভরে উঠলো । তিনি দেখলেন , অনেক ফুলের মাঝে শ্বেত-স্বর্ণ কান্তি ক্ষুদ্র কিছু ফুল । দেবী শ্রীরামের কাছে জানতে চান , “ বৎস এহেন মধুর ফুল কোথায় পেলে ?” করজোড়ে রাম জানায় , “ দেবী এ ফুল এ দেশে কেবল আপনার পিতার বাগানে শরৎকালেই ফোটে । আপনার পিতামহ এনেছিলেন ।”
এরপরের ইতিহাস সকলেরই জানা । শোনা যায় এরপর থেকেই দেবী দুর্গা কেবলমাত্র প্রিয় শেফালি ফুলের জন্যই শরৎকালে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়ী আসেন । রামকে আর সেই নীলকণ্ঠ পাখীকেও আশীর্বাদ করেন । ফলে রাম যুদ্ধে জয়ী হন আর নীলকণ্ঠ পাখী শরৎকালের দুর্গাপূজায় মায়ের সাথে খানিকটা পূজা পেয়ে থাকে ।
গপ্প শুনে আমার ভাগ্নী পটা তো দিব্যি খুশী । আমাকে বলল “ মামা এ গল্প কোথায় পেলে ? বন্ধুদের বলতে হবে তো ।”
আমি বললাম , “ খবরদার ! এ শুধু তোর আমার গপ্প , ‘ আজব পুরাণে ’এসব আছে লেখা ।।”