নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সোমা দাস






আদিম
*****



তাল তমালের বন, মাঠ ঘাট -
পিছনে ফেলে উদভ্রান্ত আমি 
ছুটে চলেছি আদিমতার পথে. . 

তোমরা আধুনিকতার নামে -
ছুঁয়ে থাকো শিশুর যোনি ! 
রাজনীতি নিয়ে খেলো পাশা! 

আমি আদিমতাকে ছুঁতে চাই. . . . 

তোমরা আধুনিকতার নামে -
ভাঙো লেনিনের মূর্তি , 
খেলো রক্তের হোলি ! 

আমি আদিমতাকে ছুঁতে চাই. . . 

উদভ্রান্ত আমি ছুটে চলি
সব পথ পিছনে ফেলে 
গুহা পথের মশাল জ্বেলে ! 

স্বরূপা রায়






বিসর্জনের সুর
*************




"কি রে, আজ তোকে খুব খুশি খুশি লাগছে।" ত্রিদীব বললো অংশুমানকে।
"ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেছে, বাড়ি যাচ্ছি ভাই।" খুশি হয়ে বললো অংশুমান।
"তাই নাকি? আমার পরশুদিন থেকে।"
"তোদের তো নবরাত্রী আর দশেরা। আমাদের তো মহালয়া থেকে পূজো পূজো রব শুরু। প্রতি বছর মহালয়া থেকেই কত ব্যস্ত থাকতাম পাড়ার প্যান্ডেলে। এবার তো তাও সপ্তমীতে যাচ্ছি।"
"আমাদের নববাত্রী নয়দিন ধরে বাড়িতে পালন হয়। বাড়িতে এই সময় পরিবেশই আলাদা থাকে। এইবার প্রথম শেষদিন গিয়ে উপস্থিত হবো বাড়িতে।"
"আমাদের দায়িত্ব যে আজ দেশ ভাই!"
"সেটাই! একদিকে ভালো হয়েছে। নাহলে এই নয়দিন মাম্মি কত যে কাজ করায়!" বলে হেসে দিল ত্রীদিব। অংশুমানও হেসে ফেললো।
"তা ঠিক বলেছিস। আমার তো বাবা নেই। আর কোনো দিদি বা বোনও নেই। তাই মা বাজারে যেত দুর্গাপূজার আগে আমাকে নিয়েই। নিজের জামা কেনার সময় ঠিক আছে। বাকি সময় খুব বিরক্ত লাগতো!"
"সত্যি রে!"
"কিন্তু কষ্টও লাগে ভাবলে, এবার মাকে একা একাই সব করতে হয়েছে। আমার কথা তো সারাক্ষন ভাবেই।"
"আমাদের পরিবারের কষ্ট আমাদের থেকেই দ্বিগুন।"
"সেটাই!"
"আমার সেই গম্ভীর পাপা তো ফোন করলেই শুধু কাঁদে ফোনে।"
"আমার মাও তাই। তখন আরোও খারাপ লাগে।"
"আসলে আমাদের এক বছর মাত্র হয়েছে তো তাই অভ্যেস হয়নি বাবা-মায়ের। আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর জিনিসপত্র গোছানো শেষ?"
"হ্যাঁ ভাই।"
"কখন বেরুবি?"
"এই আধ ঘন্টার মধ্যেই।"
"থোরা সা ভি হিলনা মাত।" একজন বন্দুকধারী মুখে কালো কাপড় বাঁধা জঙ্গী ত্রীদিব আর অংশুমানের পেছন থেকে মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে বললো।
সাথে সাথে অংশুমান আর ত্রীদিব হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়লো। ওদের বুঝতে অসুবিধে হলো না যে, ওদের সেনা ক্যাম্পে জঙ্গীহানা পড়েছে।
অংশুমান চালাকি করে হাত বাড়িয়ে পাশে রাখা বন্দুকটা নিতে গেলে জঙ্গী টের পেয়ে যায়, আর সাথে সাথে এক সেকেন্ডেরও দেরী হলো না। জঙ্গীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল অংশুমানের তাজা প্রাণ।
তেরো ঘন্টার জঙ্গী আর সেনার লড়াইয়ে পাঁচজন সেনার মৃত্যু ঘটলো। অংশুমানের মতো ত্রীদিবের তাজা প্রাণটাও অকালে চলে গেল।
দেবীর বিসর্জনের দিন অংশুমান আর ত্রীদিবের সাথে আরোও তিন জন শহীদ যুবকের মৃতদেহ এসে পৌঁছালো ওদের বাড়িতে। যেখানে মানুষ ব্যস্ত দুর্গামা চারদিন বাপের বাড়ি থাকার পরে ফিরে যাওয়ার দুঃখ নিয়ে। সেখানে পাঁচ মায়ের কোল খালি করে চলে গেল ছেলেগুলো।
আমাদের দেশে যেখানে একজন সেনার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, সেখানে উৎসব না মানানোটাই ভালো। আমরা যখন নতুন জামা কার কয়টা হলো, কার এখনো জুতো কেনা হলো না, কার অফিস এখনো বোনাস দিল না, কার সেল্ফিটা ভালো উঠলো না, পূজোর চারদিন বৃষ্টি হবে কিনা, দুর্গাপূজায় ঘোরার জন্য বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড পাবো কিনা বা কোন দুর্গা প্যান্ডেলের থিমটা ভালো, এই নিয়ে ব্যস্ত। তখন আমাদের দেশের সেনা পরিবার থেকে দূরে সীমান্তে দেশকে পাহাড়া দিচ্ছে। যাদের জন্য আমাদের বাড়িতে উৎসবের আলো ফুটছে৷ তাদের বাড়িতেই ছেলে বা মেয়ের শহীদ সংবাদে বাজে বিসর্জনের সুর।


কামরুল বসির





বাইফোকালে রাত্রিবিভ্রম
**********************



তিনটি নি:সঙ্গ পাতা আর একটি নিকশ কালো আকাশ, ছায়া হয়ে- বয়ে যাওয়া নিরব হ্রদের চৌহদ্দিতে ব্যথার মতো নিরবতা ঢালছিল- মাঝরাতে। আমার পরনে আদ্দিকালের প্লাস্টিক, মাথায় জুবোথুবো শুষ্ক চুলের ঢেউ; চোখে নির্ঘুম বাতাসী পরাগ। বাইফোকালের অস্পষ্ট তারায় নি:প্রভ নক্ষত্রের মৃত্যাদেশ-

তিনটি পাতার একটি বোধের লহমায় সৌম কুন্তলীর আত্মিয়স্হানীয়, অন্যটি ইকুয়েডরের প্রান্তিক গিরির দলিত লতা; অবশিষ্টে হাইডপার্ক উল্টে আছে বিচিত্র শৈলশিরায়- আমি হ্রদের নিরাবতায় আমার মাথার শুষ্কতা ভিজিয়ে দু’টো এ্যাসপিরিন গুলিয়ে দিলাম। যেমন কেউ কেউ পকেটে হাত রেখে স্রাগ করে বলে: জীবন বইছে এখন সেন্ট্রাল লাইনের সপ্তম কামরায়! অথবা ক্যাপাচিনোর ফেনা ততটা ফেনিল নয় আজকাল! আমি যেন তার বাহুতে হাত রেখে সমার্থনের সবকটা শব্দ নি:শেষ করে বললাম- তুমি প্রাগে যেতে পারো, সেখানেও তিনটি পাতার হ্রদে মাঝরাত এখন।

হঠাৎ দমকায় বাইফোকালটি উডে গেল।
শুনশান হেমন্তে হলুদ ট্রাকটি ছডিয়ে দিল অপেক্ষার গুঙানি- মনান্তরে শেষ হয়ে এলো আশ্চর্য্য একপেশি মাঝরাত। 

নক্ষত্রের মৃত্যাদেশ নিয়ে আমি লোহার চেয়ারে নি:শ্চল- কোন মানুষ এখানে আসেনি আজও, শুধু কিছু কিছু দ্বিপদ কখনও আলিঙ্গন করেছে বহুতল লালসার জনপদে- এ জনশ্রুতিতে বিভেদের শরীরে না হয় একটু জমুক স্বেদ, যেখানে আমি নিয়তির  
টিস্যুতে নিয়ত মুছছি বাইফোকালের লেন্স।

যতীন্দ্র নাথ মণ্ডল(অতিথি)

   
           
  


              কবিতার নিলাম 
               :::::::::::::::::::::::::


                       
নিষিদ্ধ খেয়ালে আমার কবিতা আজ;
সম্মান বিক্রির নিলাম ডেকেছে।
সভ্যতার শবচ্ছেদে,লাশকাটা ঘরে।
চারিদিকে রক্তের দাগ,
কলমে;কফিনে;অন্তর্বাসের লজ্জায়--
প্রতিবাদী মুখগুলি সব পরজীবী।
চক্রান্তের আবার সংক্রান্তি!
পৌষ-ভাদ্র-কালরোগ।
রক্তমৈথুনে ব্যস্ত কালের শিখণ্ডীরা।
অলক্ষ্যে শকুনির পাশা চলছে,
উৎসবের সিংহাসনে কালশিটে দাগ।
সবাই অভিমূন্য,কালপূরুষের শিষ্য।
উগরে দিচ্ছে সব...
আমিও কবি,হাতে নিয়ে মোমবাতি;
হাজির স্মরণ সভার মৌনমিছিলে।
কবিতা বেচবো বলে।

টিংকু রঞ্জন মিত্র





অলক্ষ্মী "গয়নার বাক্স"
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,




আজ ধরণীর শান্তির সাদা আকাশ ছেয়ে গেছে ;
অশনি সংকেতের শোকাকালো স্তরিত মেঘের গোছে।
সূক্ষ্ম অনাচার চতুর্দিকে, রক্তিম খুনোখুনি,
                                                     নারী বধূ নির্যাতন ;
কামুক অসুরেরাও করিছে, আলো আঁধারির
                                                ধরা'তে মা'দের ধর্ষণ।


হে ঈশ্বর !!
তুমি ধরণীতে ফেরো, ফেরিরূপে মনিহারির বেশে,
চুনি হীরা পান্নার বহুমূল্য,
                             অশুভ শক্তি'র রত্ন পূর্ণ বাক্সে ;
লয়ে কাঁধে,,,,
                 অচিন সাগরে করো কালের বিসর্জন ;
অলক্ষ্মী "গয়নার বাক্স",,,,
                      পিছুটানে নাহি পাক পুনরুজ্জীবন।

অজন্তা রায় আচার্য্য





অপেক্ষারা
------------------------

রাত ছুঁই ছুঁই সন্ধ্যা
       আগেই দিয়েছে পাড়ি
এই নিঃশব্দ উপত‍্যকা 
        এখন শুধু আমারই
ধ‍্যান মগ্ন রাত্রির কোলে
        একলা মন কথা বলি
শুভ্র তুষার আভরণে
        কি সাধনে পাহাড় মৌনি
এক সূর্য দহন শেষে
       শীতল আজ কতখানি
নিঃসঙ্গ আছি দাঁড়িয়ে 
           নির্লিপ্ত নিঃস্পৃহ আমি
আঁকা বাঁকা পাকদন্ডী বেয়ে
          সব খুঁজেছি আঁতি পাঁতি
কোনো পাথরের গায়ে 
          ঠিকানা লিখেছ নাকি

এখানেই কি সমাপ্তি 
        গল্পের আরো আছে বাকি
অপেক্ষারা হয়ে যাবে নদী
         তোমার ইচ্ছে গুলো যদি
কখনো সকালের রোদ হয়
         একবার উষ্ণ ছুঁয়ে যায়।।