নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

শ্যামাপদ মালাকার





পথ
****

আমি জানতাম,-কালের স্রোত নিংড়ে একদিন তুমি আসবে।
তাই ললাটের পাকে ভাঙ্গাদেহে পড়ে আছি--
তোমার পায়েচলা মেঠো পথটির শেষে।
পথিকের মুখে শুনতাম- এ বরাদ্দে দেহ আমার মজবুত হবে, কিন্তু হয়নি!
ভাগে ক'ধামা ধূলি-- তাতে কি আর দেহ বাঁচে!
ওরাই এখন দেহভাগে দেহ দেয়।
দু'কথা বলে যায় শোন,-শীঘ্রই আমি দেহ রাখব!
রুগ্ন গা প্রাণ ধরতে অরাজি হাঁকছে যে!
স্বার্থপর তৃণের গ্রাসে পথ হারায় কে-- তাছাড়া প্রতিবাদ আজ বড় ম্রিয়মাণ, বাঁচি কার আশে?।
দুই- বুকে কান পেতে শোন, দামালের হাড় চিবানোর শব্দ!
--স্কুল হতে ছেলেটা এখন ফিরেনি!
বিশ্বাস হচ্ছে না? ধূলি সরায়ে দেখ রক্তের দাগ!
রেখেছি প্রমাণ।
বলি- আমার দেহ সারায়ে কাজ কি?--সবার ভিতরে এক-একটি পথ আছে, সেই পথ মেরামতের সময় এসেছে- -
যাবার পথ নয়,
শুধু একটি মাত্র ফেরার পথ!
যে পথে ঝুলিনিয়ে ভিখারিনীর রবেনা পড়ে দেহ--
যে পথে জননী তার পানে চেয়ে রয়--
যে পথে তুলসীবেদীমূলে প্রদপটি জ্বেলে দিতে হয়!।

সুপ্রভাত দত্ত





বিসর্জন
********

               

পেরিয়ে যাবার পথ আটকে কুকুর গুলি--
মাংস নিয়ে লড়াই,  ধুলোবালি,  চিৎকার !
পাশ কেটে চলে যাই, নিজের দিগন্ত চেয়ে--

একতারা কেঁপে ওঠে অসুখ বাউল মেঘে--
গেরুয়া রঙের মন প্ল্যাটফর্ম চিরে ওঠে !
একটা পথের বাঁক, চেনা জানা সংসারে
যেখানে গালাজ মুখী শিশুর সুলভ মুখ
বাবা মায়ে এক হয়ে বিকেল নোংরা করে !

একদিন সব পথ কুকুরের লালা নিয়ে 
একতারা, সংসারে ছাপ দিয়ে চলে যায়- 
দুচোখ নিজে নিজে মুছে যাক,  ক্ষতি নেই!
তৃতীয় নয়ন যদি মুছে যায় কোনোক্রমে, 
তোমার আমার গায়ে বিসর্জন ঠিক নামে-

আবুবকর সরকার







সাহস আছে প্রাণে!
 ****************



তুমি যেমনি হোও,  উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত, কুলি, মজুর, পড়ুয়া, ছোট বা বড়, অবশ্যই অবশ্যই তোমার পছন্দের কেউ এক জন আছেই তোমার প্রাণে।
.
আর সে যেমনি হোক, তোমার সহপাঠী, অফিসে কাজ করা কলিগ, আশপাশের কেউ, চেনাজানা বা অচেনা কেউ। দেখতে সে যেমনি হোক কালো, ফর্সা, শ্যামলা। অবস্থা তাঁর যেমনি হোক ধনী, গরীব, মধ্যবিত্ত। না মিলুক তোমার সঙে তাঁর কুফু! ভাববে এইটুকুই যে, এ তোমার মনে ধরা ভালো মানুষ!
.
সাহস কম থাকায় হয়তো তা তুমি প্রকাশ করতে পারছ না, ঘরে বাইরে এমনকি যাকে পছন্দ করো তার কাছেও না যে তাঁকে তুমি প্রচণ্ড রকম ভালোবাসো! 
.
কিসের এতো ভয়, সমাজ সোসাইটি, পাড়াপড়শি, কাছের বা দূরের বন্ধুবান্ধব, পরিবার পরিজন,  আত্মীয়-স্বজন!  এদের মুখের কথার ভয় পাবার কোন মানে হয়না! এরাই তোমার দুশমন,  এরা সব ক্ষেত্রে তোমার মঙ্গল কামনা করে না বোকা!  এই এরাই বড় স্বার্থপর!
.
শাজাআত থেকে দূরে সরে থাকা তোমার জন্যেই আমার এই লেখা!  প্রাণভরে শ্বাস নাও, ভালোভাবে ভাবো, গভীরভাবে চিন্তা করো, নিজের জীবন নিজেরই। তোমার দুঃখ, কষ্ট, আফসোস এর এক ভাগও নিতে এদের কেউ আসবে না বিনা স্বার্থে।
.
প্রথম প্রথম তাঁর কাছে নিজেকে তুলে ধরো কোন না কোনভাবে,  তাঁর কাছে ভিড়, তাঁর চোখে পড়ার মতো কিছু করো, তাঁর ভালো লাগে এমন কিছু করো। আর কতো দূর থেকে দেখে দেখে মুখ গুঁজে সরে সরে একাকীত্বের অতলে ডুবে ডুবে মরবে  ভীতু!
.
অন্তত একবার,  একবার,  কেবল মাত্র একবার মনের কথা প্রাণের মানুষকে বলে দেখো তাঁর কি অবস্থা,  দেখবে বড় কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না তোমার ! খোদা সাক্ষী আমি তোমার পক্ষেই কথা বলছি, তোমার মঙ্গল কামন করছি, তোমার জীবন সুন্দর থেকে আরও সুন্দরতম করুক বিধাতা! 
.
হতে পারে সেও মনেপ্রাণে তোমাকে কামনা করে, ভালোবাসে নিজের জীবন থেকেও বেশি। হিতে বিপরীত হলেও কিছু ভাববে না, অন্তত এইটুকু জেনে গেলে যে, সে তোমাকে চায় না, ভালোবাসতে পারবে না কখনো! তোমার সারাজীবন আর দ্বিধাদ্বন্দ্বে কাটলো না...

লীনা দাস



দেবতার সৃষ্টি
************


দেবতার সৃষ্টি মানুষের হাতে,
মানুষই দেবতা গড়েছে,
আদিম মানুষ প্রকৃতির
রোষানল থেকে বাঁচতে----
ঝড়-ভূমিকম্প-বন্যা-বজ্রপাত কে
দেবতা জ্ঞানে পূজা করত।

অশিক্ষিত মন জাদুশক্তির শরনা-
পন্ন হয়ে নৈবেদ্য দিয়েছে
পশুবলি,নরবলি দিয়ে,
সৃষ্টি হয়েছে দেবতার।

সভ্যতার পথে অগ্রসর হয়ে মানুষ
গড়েছে সমাজ,রাষ্ট্র।
স্বার্থপর মানুষ সামাজিক শোষ-
ণের জন্য দেব কল্পনাকে কাজে
লাগিয়ে--
প্রচার করেছে মানুষ মরণশীল
দেবতা অমর।

শোন মত্যর্বাসী,দেবতা মানুষের
হাতে তৈরী--
মানুষের হাতেই তাঁর মহিমা কীর্তন নির্ভরশীল।
মানুষের স্বীকৃতি ব্যতীত দেবত্ব
মূল্যহীন।

দূরদর্শনের ধারাবাহিক গল্পের মত ,পরিচালকের হাতে চালিত।
মানুষ মরণশীল,আবার সেই
মানুষই অমর,দুঃখ দহনের মধ্য
দিয়ে,
তার আপন পৌরষ বলে,আপন
শৌর্য-বীর্য,কৃতিত্বে ও কীর্তিতে।

ধীমান ব্রহ্মচারী






বারুদ
---------



শুধু স্থবির হয়ে মানছি হট্টগোল
রক্ত লাশ দেখছি প্রতি ভোরে রোডের ধারে,
রক্তের হোলি পালন হচ্ছে সেয়ানে সেয়ানে
স্তাবক সাবধান।

মাফিয়ারাজ মাফিয়ারাজ 
এখনো লড়াই আমার,তোমার আর আমাদের মধ্যে,লাল চোখ লুটছে মানুষ ভোট...

আমরাও পারি মার খেতে
আমরাও পারি পাল্টা মার,আর কত চলবে
মাফিয়ারাজ মাফিয়ারাজ

রাতের অন্ধকারে আমরাও দেব হানা
আমরাও মুখোমুখি দাঁড়াবো শাসকের স্তিমিত আলোর রোশনায় মহলে

মাফিয়ারাজ মাফিয়ারাজ
আমাদেরও দুহাতে থাকবে এই মৃত্যু দেশের ঝান্ডা আর লোডেড পিস্তল।

রাজিত বন্দোপাধ্যায়






সেদিনের বিসর্জন    
****************




              অনেক দিন পরে নদীর পাড়ে এল দীপ্ত । তার চুলে আচমকাই ঐ কাশ ফুলের রঙ লাগতে শুরু করেছে । আজ দশমী । একটু দূরে ঘাটে একের পর এক প্রতিমা এসে জড়ো হচ্ছে । সেই দিকে চাইতে ইচ্ছে করছে না । এখানে এই দিনটাতে না এলেই বোধকরি ভাল হত । নদীর সামান্য জল স্রোতের দিকে চেয়ে তার মনে হল । আরো দূরে রেল লাইনের অপর পারে নদী ঘেসে পার্বতী ঘাট । সেখানে মাথার উপর ফিকে নীল ধোঁয়ার দাগ । চিতা জ্বলছে ! হঠাৎ আবার সেই দিনটা তার মস্তিষ্কের ভিতর ছাইতে শুরু করল । ডাক্তার এটাকে প্রশ্রয় দিতে বারবার মানা করেছে তাকে । কিন্তু দীপ্ত বহু চেষ্টা করেও বিসর্জনের ঢাকের আওয়জটা কিছুতেই বন্ধ করতে পারল না । আস্তে আস্তে সিনেমার রূপালী পর্দায় ফুটে ওঠার মত স্পষ্ট হতে লাগল তা দীপ্তের ধূসর মগজে !  
-- শালা ! হারামখোর , রাজনীতি করছিস । বলেছিলাম ঐ পার্টিতে তোকে না থাকতে , শুনলি ? এই রামদেও কুত্তা কো ঘসিট কে লা তো ।  
রামদেও গেট খুলে কম্পাউন্ডের ভিতরে চলে এল । সবে মাত্র কোলকাতা থেকে আসা শারদ সংখ্যা খানা খুলেছে দীপ্ত ভট্টাচার্য । এতে তার একটা বড় গল্প ছেপেছেন পত্রিকাটির সম্পাদক মন্ডলী । একটা বেসরকারী কলেজে ইংরেজী পড়ায় সে । রাজনীতিতে খুবই ইনভলবড্ । কিন্তু পাড়াটার জন্য , এলাকার জন্য এত দিনের এত সেবা কাজে এল না এই দূর্গা পূজোর দশমীর সকালে । সবাই ব্যস্ত , কেউ এগিয়ে এলো না । হঠাৎ ঘরের ভিতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এসেছিল উমাবতী । তার বৌ । তাকে রামদেও টেনে হিচড়ে গেটের দিকে নিয়ে যাবার ফাঁকে বারবার পায়ে পড়তে লাগল । কিন্তু গেটের ওপারে দাঁড়িয়ে সরযূ লালা নির্বিকার ! রামদেও দীপ্তর কলার ধরা অবস্থায় হঠাৎ বলে উঠলে ,   
-- অরে বস ইসসে তো আচ্ছা হোগা ইসে না মার কর ইসকা বিবি কো হী লুট লেনা । একদম ঝকাস হ্যায় শালী । হ্যাঃ - হ্যাঃ - হ্যাঃ !!
-- তেরা দিমাগ ভী তো ঝকাস হ্যায় রামদেও । লা , তব উসে হী লা ।  
দীপ্ত কে ছেড়ে উমাবতী কে ধরতেই দীপ্ত ঝাপিয়ে পড়েছিল । রামদেও তাকে একটা নীট লাথি ঝাড়তেই তার মাথাটা ভয়ঙ্কর ভাবে লোহার গেটে লাগল । দীপ্ত জ্ঞান হারাতেই রামদেও ঝটপট উমাবতী কে উঠিয়ে নিল কাঁধে ।   
সমস্ত পাড়া কে স্বাক্ষী রেখে সেদিন প্রকাশ্যে যে বীভৎস ধর্ষণ কান্ডটি হয়েছিল , তা পরের দিন খবর কাগজের প্রথম পাতা দখল করেছিল । বিস্তারিত ভাবে ছেপেছিল দৈনিক গুলো । লোকেরা আড়ালে বলেছিল , একটি বিশিষ্ট রাজনৈতিক পার্টির টাকাই নাকি ছিল এই বিস্তারিত ভাবে খবর টি ছাপার পিছনে ! আসল কথা হল একটা প্যানিক ছড়ানো ।
               জ্ঞান ফিরতে সুমসান রাস্তার উপর উমাবতীর রক্তাক্ত নিষ্প্রাণ দেহটা দেখতে পেল দীপ্ত । তার দু চোখ শুকনো । লাল চোখে সে অতি কষ্টে উঠে গিয়েছিল সেখানে । সকালের আমেজ কেটে তখন সূর্য দীপ্তমান দেখাচ্ছিল । থানা পুলিশ করে যখন দেহটা বেরুল , তখন নিজের দলের গুটিকতক ছেলে ছাড়া আর কাউকে পেলনা সে । তার অনুরোধে কোন মিছিল বা শশ্মানে ভিড় জমালো না তার দল । বড় নেতারা কেবল অত্যন্ত লজ্জাকর ও বেদনার বলেই বিদায় করেছিল সংবাদ কর্মীদের সেদিন ।  
পড়ন্ত বেলায় পার্বতী ঘাটে অস্তি বিসর্জনের সময় অপর পারে আচমকাই বেজে উঠেছিল বিসর্জনের বাজনা ! অত ঢাকের প্রবল আওয়াজে হঠাৎ যেন কী হয়ে গেল দীপ্তর । অস্তির সরা সমেত সে পড়ে গেল খরকাইয়ের জলে । ওপারে আদিত্যপুরের ঘাটে তখন বেজে চলেছে ঢাক মহোৎসবে ।   
দীপ্তর জ্ঞান ফিরেছিল হাসপাতালের বেডে । এর মধ্যে এক সপ্তাহ যে কেটে গেছে সে জানে না । আর তারপরই তার মনরোগটা চাগিয়ে উঠেছিল কানে ঢাকের আওয়াজ শুরু হতেই সেদিনের ছবিটা ক্রমে ক্রমে সিনেমার পর্দার মত ফুটে উঠতে শুরু করত ! রাঁচীতে প্রায় বছর দেরেক চিকিৎসা করানোর পর ক্রমে সুস্থ হল ।  
হঠাৎ একটা পটকার বিকট আওয়াজে গড়ে উঠতে থাকা ছবিটা হারিয়ে যেতেই সচেতন হল দীপ্ত । ওদিকে তখন ঘাটে ঘাটে বিসর্জন শুরু হয়ে গিয়েছে । মা যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন কৈলাসের দিকে । দীপ্ত হঠাৎই দু হাত জড়ো সেই চলে যেতে থাকা মা দূর্গার উদ্দেশ্যে মনে মনে বলতে লাগল , হে মা দূর্গা , এই জঘন্য রাজনীতি , রাজনৈতিক ইস্যু , ঐ মোমবাতির মিছিল , অভিমান , হিংসে , ধর্ষণ সব ,  সব কিছুরই বিসর্জন হয়ে যাক তোর প্রতিমার সাথে । শান্তি , সৌহার্দ , প্রেম আর অহিংসা দে মা , দিয়ে যা এই পতিতালয়ে !