নোটিশ বোর্ড
চৈত্রী ঘোষ হাজরা
ভগবান
*******
ছোট থেকেই প্রশ্ন ছিল ভগবান কোথায় থাকে?
এই প্রশ্ন করে করেই জ্বালিয়ে খেতাম মাকে।
মা বলতেন, ভগবান? তাঁর তো হিমালয়ে বাসা।
নেমে আসেন ধরাধামে, পূরণ করতে আশা।।
সত্যি করে, ভক্তিভরে, ডাকিস যদি, তবে।
দেখবি ঠিক তোর জন্যও নেমে আসবেন ভবে।।
সেই থেকে যখনই বিপদে কাঁপত আমার মন।
দুরুদুরু বক্ষে করতাম ঈস্বর স্মরণ।
কিন্তু আমায় অবাক করে উনি আসতেন না।
সব বিপদে, সবসময়ে, পাশে থাকতেন - মা।।
পেনের ঢাকনা হারিয়ে গেছে? জামাকাপড় পাচ্ছিনা?
মন ভেঙেছে? আরকি আমি আঘাত পেতে চাচ্ছিনা?
সব বিপদে মুখ লোকাতাম গিয়ে মায়ের কোলে।
আমার বিপদ হারিয়ে যেত কোন এক মন্ত্রবলে।।
কিন্তু আমার মা তো মানুষ, ভগবান তো নন।
কেমন করে বল উনি অজেয়, অমর হন!!?
ওনারও তো ভাঙছে শরীর, চোখের কোলে ভাঁজ।
এখন আর আগের মত পারেননা তো কাজ।।
বয়স বেড়ে আমার মাকে ধরল জরা যেই।
দেখি হঠাৎ চক্ষু মেলে, মা যে আমার নেই।।
কাঁদছি দেখে সবাই এসে দেয় যে স্বান্তনা।
মা তো তোমার নশ্বর জীব, ভগবান তো না।।
পাশ কাটিয়ে যাই যে চলে পূজার উপাচার।
মা তো নেই, এসবের আর কিই বা দরকার!!
এই যে শরীর, এই যে জীবন সবই তোমার দান।
যে যাই বলুক মাগো, তুমিই আমার ভগবান।।
শিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়
********
কাশফুলে ভরে গেছে মাঠ, নৈঋত হাওয়া ছুঁয়ে দিলেই রেনু ছড়িয়ে পড়েছে আহ্লাদী কিশোরীর হাসির মত।
ছুঁয়ে দেখিনি আজও, শহরে ফোটে না কেন কাশ? বন্ধু বলেছিল কোন এক শারদপ্রাতে উপহার দেবে, প্রিয় কাশফুল। সে এখন গ্রাম ছাড়িয়ে, জন্মভূমি ছাড়িয়ে, মাতৃভূমি ছাড়িয়ে অনেক অনেক দূর -- বন্ধু , তোর ওখানে কাশফুল ফোটে? কাশফুল তোর এন আর আই বুকে আগমনী বার্তা পাঠায়? আমার প্রতিটি শরৎ-সকাল কল্পনার কাশফুল ছুঁয়ে, স্পর্শসুখে ভেসে যায়...
নীলাকাশ ক্যানভাস জুড়ে জমাটবদ্ধ মেঘ কখনও বিশাল পুরুষের অবয়বে ঘনীভূত, কখনও কুচি-কুচি শুভ্র মেঘ দুরন্ত বালিকার চঞ্চল রূপে নৃত্যরত, কখনও বা বিষাদ ঘনিয়ে আসে কালো মেঘের ছায়ায়... যেন দক্ষ কোন শিল্পীর আশ্চর্য ব্রাশিং এ চিত্রিত মোহময় শারদ আকাশ ।
দ্যাখো দ্যাখো! কি উজ্জ্বল রঙে পাপড়ি মেলছে পদ্মকুঁড়ি ...প্রতিটি পাপড়িতে দৃঢ় প্রত্যয়, তুমি আসছো হে সারদ লক্ষ্মী! কৃষ্ণের মোহন বাঁশির সুর মন্দ্রিত
আকাশে-বাতাসে।
নবীন শিশির ছুঁয়ে ফুটে ওঠা শিউলির সুগন্ধে বিহ্বল চরাচর , সোনারোদ গায় মেখে ঝরে পড়ে, শিউলি কুড়োনো আঁচল হাওয়ায় ছড়িয়ে দেয় আগমনীসুর। সেই মিহি সুরের মূর্ছনায় ভেসে যেতে যেতে উমা, ভেসে ওঠে তোর প্রিয় মুখ -- অধীর ব্যাকুল জননী হৃদয় মিনতি জানায় গিরিরাজে--
"যাও যাও গিরি আনিতে গৌরী উমা নাকি বড় কেঁদেছে/ দেখেছি স্বপন নারদ বচন
উমা মা মা বলে কেঁদেছে ।"
ব্রহ্মা, বিষ্ণু,মহেশ্বর, ইন্দ্র আরো বহু দেবতার তেজরশ্মি হিমালয় এর সুউচ্চ শিখরে অবস্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সম্মিলিত হয়ে মহিষাসুর বধের জন্য যে দশপ্রহরনধারিনী দেবী দুর্গার সৃষ্টি সে হয়ে উঠল পৃথ্বীকন্যা।
তাই তো উমা আসবে বলে মাঠে ঘাটে কাশের আয়োজন, আকাশ সেজে ওঠে উজ্জ্বল নীল রঙে, দীঘি ভরে ওঠে পদ্মফুলে। বকুল কুড়োনো হাত শিউলি কুড়িয়ে মালা গাঁথে। সে আসবে বলে নবীন ধানের মঞ্জুরী আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। নতুন পোশাকে, দেওয়ালে নতুন রঙে, পর্দায় ছড়িয়ে পড়ে আগমনী সুর -- মায়ের অবুঝ মন, নিজেকে প্রবোধ দেয়--
"এবার আমার উমা এলে আর উমা পাঠাব না/ লোকে বলে বলুক মন্দ, কারো কথা শুনবো না ।"
উমা আসবে বলে আমার মায়ের হাতদুটি কেমন সেজে ওঠে একজোড়া নতুন শাখা-পলায়, সেখানেও আগমনী সুরে সুরে উমা আসবার আনন্দ বার্তা ছড়ায়।।
চিরঞ্জিত সাহা
অ্যাবোরশন
**********
প্যালেট আজও রং মুছেছে শেষ টানেতে এসে ,
মধুর তরী যায় তলিয়ে তীরের কছে ভেসে ;
হঠাৎ বারিশ!দেয় গুঁড়িয়ে খেলনা কাদাবাড়ি ,
তুই আর আমি বোধ হয় তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি ।
মধুর তরী যায় তলিয়ে তীরের কছে ভেসে ;
হঠাৎ বারিশ!দেয় গুঁড়িয়ে খেলনা কাদাবাড়ি ,
তুই আর আমি বোধ হয় তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি ।
সিঁড়ি ভাঙার অঙ্কসারি যেই খাতে উতরায় ,
জীবনখাতা শেষের পাতায় ঋণাত্মকই পায় --
রেসের মাঠের ক্লান্ত ঘোড়া বগ্গা হতে চায় ,
ছিন্ন পাতা জোড়ার নেশা, স্মৃতির বড়ো দায় ।
জীবনখাতা শেষের পাতায় ঋণাত্মকই পায় --
রেসের মাঠের ক্লান্ত ঘোড়া বগ্গা হতে চায় ,
ছিন্ন পাতা জোড়ার নেশা, স্মৃতির বড়ো দায় ।
সটান সুতো , মসৃণ টান , ডরহীন এক কাঁচি ,
স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা , তবুও বেঁচে আছি ।
মন ভাঙনের শাস্তি যখন ব্যর্থ কিছু শ্লোক ---
প্রতারণার ফল সেখানে অ্যাবোরশনই হোক ॥
স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা , তবুও বেঁচে আছি ।
মন ভাঙনের শাস্তি যখন ব্যর্থ কিছু শ্লোক ---
প্রতারণার ফল সেখানে অ্যাবোরশনই হোক ॥
জয়ী সামসুল
জগদ্ধাত্রী পুজো ও শাঁখ সন্দেশ
শুভলক্ষ্মী উবাচ :
চাটুজ্জ্যেবাড়িতে তখন জগদ্ধাত্রী পুজো চলছে মহাসমারোহে ! সেদিন পুজোয় নবমী, তাই ঠাকুর দালানেও তিলধারণের জায়গা নেই। আত্মীয় কুটুম্ব বন্ধুবান্ধব সকলের দৃষ্টি দেবীপ্রতিমার দিকে। আর দালানের প্রতিটি থাম, ঝাড়বাতি, প্রদীপ, কলাপাতা যেন সেই আনন্দে ভাগ বসাতে চাইছে। খুশিতে ঝলমল করছে তারাও! এটা আমার মাসির বাড়ির পুজো, কাজেই আমার আনন্দের শেষ নেই। আসলে যে কোনো উৎসব আনন্দ করার উপলক্ষ্য মাত্র। আর চাটুজ্জ্যেবাড়ির পুজো মানেই দেদার খাওয়াদাওয়া, হৈচৈ, আনন্দফুর্তি আর "এক্স ফ্যাক্টর" বিশ্বজয়! আমার মাসির দেওরের ছেলে; সম্পর্কে আমার কাজিনই হবে। ওর ওপর আমার ক্রাশ সেই কবে থেকে!
আজ আমি লাল-সাদা জামদানি পরেছি, যাতে আটপৌরে বঙ্গললনা লাগে,
কানে ঝুমকো নয়, চাঁদবালি ! যাতে মাটির কাছাকাছি লাগে,
পায়ে নুপুর পরেছি যাতে রুনুঝুনু শব্দে ও ফিরে তাকায়; যদি আনমনা হয়েও চলি , ওর যেন নজর পরে ।
চোখ কাজল পারিনি, যাতে চোখের স্বাভাবিক কথার না হারিয়ে যায়; যাতে দেখা যায়, আমার চোখে কালো চক্র নেই, নেই বেদনার মালিন্য !! যে চোখ নীল/ হলুদ আইশ্যাডো মাখে, সে তো আসলে অনেক কান্না বোতলবন্দি করে রাখে!
কিন্তু ঠোঁটে লাগিয়েছি লাল কমলার মাঝামাঝি রঙের এক ওষ্ঠরঞ্জনী; যাতে ঠিক পান খেয়েছি মন হয়!
এতো সবকিছু তো ওই বিশ্বজয়ের জন্যই! ইচ্ছে করে ওকে সবটা বলি ...কিন্তু কিসের যে এতো বাধা ..
বিশ্বজয় ভীষণ আড্ডাবাজ আর সবসময়ই আড্ডাচক্রের মধ্যমণি। আজ হলুদ পাঞ্জাবিতে কি ভীষণ হ্যান্ডসাম আর সপ্রতিভ লাগছে ওকে ! ওর এতো বন্ধুবান্ধব, আমাকে তো দেখেও দেখছে না...কিন্তু আমি ওকে দেখছি, কাছ থেকে একটু দূরে।
বিশ্বজয় উবাচ :
আজ মহারানীকে একদম আসল জগদ্ধাত্রী লাগছে ! ; হাসছে, খেলছে, ঘুরছে ফিরছে, আমার দিকে তো ফিরেও তাকান না, যেন আমি এক্সিস্টই করি না...আর আমি কিনা ওকে দেখে জীবনধারণ ধারণ করি ...
কতদিন পরে তোমাকে আবার শাড়িতে দেখছি ! আমি পরখ করে বলতে পারি যে জগদ্ধাত্রীর পুজো করছি সে তোমার থেকে বেশি সুন্দর নয় ! আমি এমনি কি আর কবি লিখেলেন, "দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়রে দেবতা"...সরি, ওটা প্রিয়া হবে !! আজকাল অবশ্য জেন্ডার ব্লেন্ডারের যুগ!
ইচ্ছে করছে ছুট্টে গিয়ে তোমার হাতটা ধরি; একবার নাড়িয়ে দিই তোমার ঝোলা দুলটা. তোমার লাল-সাদা শাড়িতে ছোট্ট ছোট্ট হলুদ বুটি; আমার হলুদ পাঞ্জাবিতে ছোট্ট ছোট্ট লাল-সাদা বুটি...আমার একসাথে হাঁটলে কি দারুন মানাবে বল !!
তোমার চোখগুলো এমনিই এতো সুন্দর যে কাজল/ আইলাইনার পরার দরকার নেই; এতক্ষন ধরে বন্ধুবেষ্টিত হয়ে বসে আছি , অথচ আজ এখনো পর্যন্ত একবার চোখাচোখিও হলো না । ওই কয়েক সেকেন্ডই আমার কাছে চিরন্তন ; স্বর্গ তো পৃথিবীর বুকে কিছুক্ষনের জন্যই নাম ! এই যেমন এক প্লেট বিরিয়ানি , গরমের দুপুরে একবোতল কোক , মনকেমনের বিকেলে কালবৈশাখী , ছুটির দিনে আকাশভাঙা বৃষ্টি ...যা : কিসব ভেবে যাচ্ছি ...
মহারানী কি ইচ্ছে করে উদাসীনতার ভাণ করছেন ? ঠিক আমি যেমন করি ? আজকের স্পেশাল পাঞ্জাবি আর ট্রিম করা দাড়িটা তো ওনার জন্যই ...
ওকে গিয়ে বলে দেই মনের কথা ? না থাকে ! শেষে হয়তো স্বাভাবিক কথাবলা টুকুও বন্ধ হয়ে যাবে ! আমি কি ওকে চিরকাল নিজের মতো করে ভালোবেসে যাবো , ও জানতেই পারবে না !
শাঁখ সন্দেশ উবাচ :
এরা দুজনেই সমান ; দুজনেরই বুকে তোলপাড় হয় তবু মুখ ফোটে না ! আমাদেরই যা করার করতে হবে । “অরে ঐতো বড়গিন্নী তো এদিকেই আসছেন” কাঁসার থালার মধ্যে থেকে বলে ওঠে একজন ।
“হা তাইতো ”
“ওরে শুভলক্ষ্মী , অভিনন্দা, অভিলাষ তোরা কোথায় গেলি ...মিষ্টির থালা গুলো যে সব এখানেই পরে আছে ; নে সবাইকে দে !” চেঁচিয়ে বলতে থাকেন বড়গিন্নী ।
এগিয়ে আসে শুভলক্ষী ! অনভ্যস্ত হাতে তুলে নেয় এক থালা সন্দেশ . ধীরে ধীরে সবার হাতে দিতে থাকে সন্দেশ ; আর আমি প্লেটের মধ্যে থেকে মজা দেখতে থাকি...
শুভলক্ষী এগিয়ে যায় যেদিকে বিশ্বজয় আর তার দলবল বসেছিল সেদিকে! "আমাকে দুটো দাও, আমি শাঁখ সন্দেশ খুব ভালোবাসি" বলে ওঠে বিশ্বজয়ের এক বন্ধু সৌম্য। "হ্যাঁ হ্যাঁ, নাও" শুভলক্ষী ওকে সন্দেশ দেয়; আর বাকিরাও নিজের ইচ্ছে মতো সন্দেশ তুলে নিতে থাকে থালা থেকে; বিশ্বজয় আর থাকতে না পেরে বলে ওঠে, "আরে আমিই তো এখনো পাইনি" ।।
"তোমার বাড়ির পুজো, তুমি নাহয় একটু পরে খেও, বাকিরা আগে দেই" দুষ্টুমির হাসি ছড়িয়ে বলে শুভলক্ষী ! সবাই নেবার পর দেখা গেলো, থালায় একদুটি ভাঙা সন্দেশ অবশিষ্ট আছে; দেখে ভারি রাগ হলো বিশ্বজয়ের। সে সবসময় সবকিছু আগে পেয়ে এসেছে; ঠাকুমার বড়নাতি হিসাবে...সে মাছের মাথা হোক বা প্রথম পিঠে! সে মুখ কালো করে চলেই যাচ্ছিলো, হঠাৎ তার পথ আটকাল বন্ধুনি বাসন্তিকা।
"সামান্য মিষ্টির জন্য এতো রাগ করছিস?? তুই তো মিষ্টি খেতে ভালোবাসতিস না" বাসন্তিকার কথাগুলো বিশ্বজয়কে জ্বালিয়ে দিলো, তবু মুখে অল্প হাসি রেখে বলল, "এখন আমি মিষ্টি ভালোবাসি"
"তাহলে আমার থেকে নে; দেখ এখনো আমি খাইনি"
"না না তুই খা"
"কেন খা না"
"বলছিতো আমি এখন খাব না, কেন আমার মাথা খাচ্ছিস?" তবু বাসন্তিকা সন্দেশ টা খাইয়ে দিতে গেলো বিশ্বজয়কে! সন্দেশ মুখ অব্দি পৌঁছনোর আগেই কোথাথেকে সেখানে শুভলক্ষী এসে হাজির !! হাতে একটা ছোট প্লেটভর্তি মিষ্টি !
"দেখ, শাঁখ সন্দেশ, মাছ সন্দেশ, চমচম, ক্ষীরকদম, রাজভোগ, আরো কত কি এনেছি; এটা শুধু তোমার" মিষ্টির থালা ওর দিকে এগিয়ে দেয় শুভলক্ষী, "মাসি পাঠালো তোমার জন্য"। মহারানী একদম ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় হাজির । দেখে আমার নাচতে ইচ্ছে হল।
অতঃপর মিষ্টির দিকে দৃষ্টিপাত করল বীরপুরুষ।
বিশ্বজয় তো শুধু মিষ্টি দেখল না, দেখল, সে এখনো বাড়ির সবার প্রথম প্রায়োরিটি; তার কথা কেউ তাহলে ভাবে ! শুভলক্ষ্মীর ওপর হওয়া রাগ তখুনি গলে জল হয়ে গেল !! খুব রাগ অভিমানের পর যদি প্রেমিকার হাতের খাবার পাওয়া যায়, যেমন লাগে আর কি ! শুভলক্ষ্মী শান্তভাবে ওর হাতে মিষ্টির প্লেট দিল.শুভলক্ষীর হাত থেকে মিষ্টি নেবার সময় আঙ্গুল ছোঁয়াছুঁয়ি হলো একটু; তাতেই বিদ্যুৎ খেলে গেল দুজনের শরীরে ! বিশ্বজয় অনুভব করল বুকের ভেতর কে যেন হাতুড়ি পিটছে ! আর শুভলক্ষ্মী...সে তো লজ্জায় লাল !
এখন রাত একটা; বেশিরভাগ আত্মীয় অতিথি অভ্যগতই ঘুমিয়ে পড়েছে, নয়তো চলে গেছে। শুধু শুভলক্ষ্মী-বিশ্বজয় এখনও বসে আছে ঠাকুর দালানের এককোণে! বিশ্বজয় বসে আছে একটি থামে হেলান দিয়ে আর ওর কাঁধে মাথা রেখে শুভলক্ষ্মী ! ওদের ভালোবাসাবাসি এখনও শেষ হয়নি, ঘুম নেই কারো চোখেই...হয়তো আজ সারারাত ওরা এভাবেই বসে থাকবে।
যাইহোক, আমার দুষ্টুমিটা এখনো বলা হয়নি তোমাদের ! শুভলক্ষ্মীর হাত থেকে মিষ্টি নেওয়ার সময় বিশ্বজয় সরাসরি তাকাল ওর চোখের দিকে; তাকিয়ে তো বীরপুরুষ আর চোখ ফেরাতে পারেন না ! শুভলক্ষ্মীও যেন কিসের মন্ত্রবলে তাকিয়ে ওর দু'চোখের দিকে...শেষে মিষ্টির প্লেট পড়ার উপক্রম হলো, তখন দুজনেরই সম্বিৎ ফিরল; বিশ্বজয় তড়িৎগতিতে ধরে নিলো প্লেটটা...আসলে প্লেট থেকে আমরা কয়েকজন ঝাঁপ দেবার উপক্রম করেছিলাম, ওরা সেটা বুঝতে পারেনি !!
ঝাঁপ দেবার উপক্রম করলাম বলেই বাবাজির মুখে বুলি ফুটল, সে কোনক্রমে শুভলক্ষ্মীকে বলল, "এভাবেই আমায় সবসময় মিষ্টি এগিয়ে দিও আমার মনখারাপ হলে !"
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)