নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রণধীর রায়



রাধা
****


আজ না হয় বাঁশি বাজিয়ে গেল রাধা-
চৌরাস্তা ধরে সোজা;
 বাঁ-দিক ঘেষে নর্দমা আর নন্দনকানন।
চিবুক বেয়ে নোনা জল তখন
মাথার ওপর ঘনশ্যাম মেঘ
বাঁশি বাজিয়ে গেল রাধা-
বেনারসের গঙ্গায় ডুব দিয়ে করাচির ফুটপাথ;
মাথায় ঝুরিতে কিছু কাঁটাতার আর মৃত ধর্ম। 
 সিরিয়ার কিছুটা বারুদ নিল মাথায়,
রক্তের দাগ লেগে ছিল যে স্কুলটির দেওয়ালে 
খসে যাওয়া লাল ঢুন, কবরের মাটি
মস্কো থেকে ইউক্রেন খালি পা, শান্ত। 
বাঁশি বাজিয়ে গেল রাধা-
প্যালেস্টাইনের রেস্তোরাঁর বাইরে 
বন্দুকধারী শান্ত শিশুটি তখনও শান্ত 
 ট্রিগারে আঙুল দেয়নি সম্ভবত এক রাত
"বোবা হও" শেখাচ্ছিল নর্থ কোরিয়ার স্কুলটি, 
সুদানের রাস্তায় রেকর্ড হচ্ছিল জেহাদ। 
বাঁশি বাজিয়ে গেল রাধা-
সিলেটের চা বাগান থেকে চীনের পাঁচিল 
আফ্রিকার আদিবাসী থেকে নন্দনের বুদ্ধিজীবী 
স্তম্ভিত সকাল থেকে ধর্ষক রাত 
মারমুখী মেট্রোর প্রৌঢ়দল অথবা অবাক প্রেম 
যেখানে যার ধর্ম ঠিক ছিল আগে থেকে... 

ধর্মগুলি মূহুর্তে পেল প্রান
ধর্ম শুধু মানবতা মানুষের জয়গান।

সুশান্ত সৎপতি





নিয়ম
******

(১)


গাছের ছায়ায়   ঘাসের উপর
বসে আছি আর ভাবছি
অন্তহীন চিন্তা স্রোত যেখানে খুশি নিয়ে যাক ।সংসার থেকে এক দুটো দিনের
ছুটিকে আর নিয়মে বাঁধতে চাই না।
বালিহাঁসের পাঁখায় মুক্তি লেখা আছে
নদীর জলে সাঁতার।আর ঐ
শাল মহুয়ার শাখায়,পাতায়
জীবনের অন্তহীন গান।
ক্ষীণ আয়ু মানুষ -আর কী চাইবো।
এতো ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে
পৃথিবীর ধূলি মাটিতে!


               (২)

ক্রমশ চশমা পরা লোকের সংখ্যা বাড়ছে
দৃষ্টিশক্তি কমতে কমতে একসময়
পৃথিবীর রূপ দেখার জন্য
কোনো মানুষের চোখ কী থাকবেনা।কিন্তু
এ নিয়ে আক্ষেপ করার সময় এখনও আসেনি।যাদের হৃদয় বিবর্ণ হয়ে
আর এক ধরনের অন্ধকার নিয়ে এসেছে মাটির উপর,তাদের সংখ্যা বাড়ছে
পোকাদের নিয়মে।সংসারে এত অনিয়মের
মধ্যে  আশ্চর্য ভাবে এই নিয়ম কার্যকর!

অনাদি রায়





কল্পনা ও আমি :
 ---------------------

সদ্য ভেজা শরীরের পাশেই কল্পনা

ও আমি :
মিহি শ্বাসে ভরা ল্যাম্পপোস্টের নিচে
বিগড়ে ওঠা পাতলা পথ বেয়ে
বালকের সঙ্কুচিত গোঁফের মতো
অবুঝ একটি নদী-----

নদীর ত্বক ছুঁয়েই কল্পনা।।

কোকিলের কুহুকুহু মাঠ বরাবর
একনাগাড়ে অহম্ ছড়িয়ে দিয়ে
লাজুক কুয়াশায় আবৃত সেই

শাদা বাসনার মেঘ থেকে
অযথা লাল চিৎকার
ঐকুসুমের মতো কল্পনার সরু গলি দিয়ে আমি
গ'লে যাচ্ছি

সুদীপ্ত বিশ্বাস





অভিলাষ
*********




তুমি যখন নদী হলে
আমার চোখে আলো
সাঁতরে ভাঙি উথালপাথাল ঢেউ
অনভ্যস্ত গহীন গাঙে
আনাড়ি এই মাঝি
তুমিই জানো, আর কি জানে কেউ?
ঠিক সে সময় ঝাপুরঝুপুর 
বৃষ্টি যদি নামে
আকাশ জুড়ে গলতে থাকে মেঘ
সুখ সাঁতারে শ্রান্ত আমি
ঘুমিয়ে যদি পড়ি
জানবে আমার কেটেছে উদ্বেগ।
ঘুম ঘুম ঘুম ঘুমের দেশে
স্বপ্নমাখা চোখে
দুহাত দিয়ে জাপটে ধরি নদী
বাঁচতে রাজি অযুত বছর
আলোকবর্ষ পারে
ভালবাসা, তোমায় পাই গো যদি।
সহজ তুমি সহজ হয়েই
থেক আমার পাশে
গ্রীষ্ম দিনে,দারুণ মরুঝড়ে;
বুকের পাশে নরম ওমের
পালক হয়ে থেক
শীতের রাতে বরফ যদি পড়ে।

সীমা দে




অকাল মৃত্যু
***********






মৃত্যু মানেই শোকস্তব্দ পরিবেশ
ভাষা হারিয়ে যায় সবার , বলার মতো কিছু থাকে না।
আর সেই মৃত্যু টা যদি অকাল মৃত্যু হয় , 
অকালে যদি কেউ প্রাণ হারায় ,তবে যেনো পাহাড় ভেঙে পড়ে সেই পরিবারের উপরে।
পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ,কষ্ট যেনো এসে পড়ে,সেই পরিবারের উপরে।
এমনিই এক ঘটনা-------
আমাদের পাড়ার ছেলে ,রমেশ খুবই ভালো ছেলে ,
রমেশ থাকতো ওর মাকে নিয়ে;
জীবনটা কাটছিলো তাঁর বেশ ভালোই মাকে নিয়ে।
সাত কূলে ওদের আর কেউ ছিলো না।
রমেশ টা একটা ছোট কোম্পানিতে জব করত আর তার সাথে সমাজ সেবার মতো কিছু কাজ করত,
 কেউ যদি বিপদে পড়তো ,সে যে কোনো ধরনের বিপদ হোক না কেনো,
সবার আগে ছুটে যেত রমেশ। 
এমনি কারোর বিপদে, কাল দূপুরে রমেশ যখন খেতে বসেছিলো সবে----
মুখে খাবার তুলতেই ,কয়েক জন বন্ধু এসে ডাক  দিলো রমেশকে;
রমেশ মুখের অন্ন ফেলে রেখে দিয়ে ,দিলো ছুট বন্ধুদের সাথে।
তখন রমেশের  মা, রমেশকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো -----
খাবার ফেলে কোথায় যাছিস রে?
মুখের অন্ন ফেলে যেতে নেই ,
তা হলে মা লক্ষি  রাগ করে।
রমেশ হেসে তাঁর মাকে বলে----
মাগো জরুরি কাজে বেড়াতে হবে,
চলে আসবো খুব শিগগিরি;
এখন তবে যাই মা,এই বলে রমেশ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
দিন থেকে রাত শেষ হলো রমেশ এখনো ফিরলো না ঘরে,
এমনি করে মাঝ রাত্রি হয়ে এলো;
তবুও রমেশ আসলো না ফিরে।
চিন্তায় চিন্তায় ঘুম নেই তার মার চোখে,
রাত জেগে বসে আছেন উনি ঠাকুরের সামনে,
মনে মনে ভাবেন তিনি, সেই দূপুর বেলায় বেরিয়েছে খোকা এই আসছি বলে,এত রাত হয়ে গেলো কখন আসবে খোকা ফিরে।
রাত যখন দুটো ত্রিরিশ, তখন একজন এসে দরজায় কড়া নাড়ে------
দরজাটা খুলতেই এক অল্পবয়সী ছেলে রমেশের মাকে ডেকে বললো------
মাসীমা আপনার ছেলে আর বেঁচে নেই।
কারা যেনো ওকে গুলি করেছে,
পরে আছে পাশের পাড়ার গলিতে।
খবরটি শুনে এক নিমিষের মধ্যে রমেশের মা মাথা ঘুরিয়ে পরে গেলো ঘরের মেজের ওপরে,
যখন উনার জ্ঞান আসে ফিরে,দেখে ঘর ভর্তি লোকজন উনাকে ঘিরে আছে।
সবাই উনার দিকে চেয়ে কেঁদে যাচ্ছে ফুঁপিয়ে, ফুঁপিয়ে।
উনি বলে উঠলো ওদের সবাইকে ,তোরা সব অলক্ষনী কান্না বন্ধ করে এখনি,
কি হয়েছে তোরা সবাই মরা বাড়ির মতো  কাঁদছিস কেনো বসে বসে?
আমার খোকার কিছু হয়নি তো,
ও যাওয়ার আগে বলে গেছে আমাকে-----
ফিরে আসবে খুব শিগগিরী।
এমন সময় চার কাঁধে করে ছেলের মৃত দেহ আসলো ঘরের উঠোনের সামনে;
তা দেখে রমেশের মা বলে ,এ আমার ছেলে হতে পারে না ।
ছেলে আমার মিথ্যে কথা বলে না কোনোদিনও,
সে বলে গিয়েছিলো আসবে সে ফিরে খুব শিগগিরী;
এমন তো কথা ছিলো না,আসবে সে ফিরে চার দোলা কাঁধে করে।
তবে তোমরা এ কাকে নিয়ে এসেছো চার দোলা কাঁধে করে আমার ঘরে?
আর এ কেমন সাঁজে এনেছো তাঁকে,
যেনো মনে হয় বিয়ের সাঁজে শুয়ে আছে।
তোমরা ফিরিয়ে নিয়ে যাও ,আমার সামনে এনো না তাকে।
জোর করে যখন রমেশের মাকে দেখানো হলো  তাঁর খোকার মুখ,
রমেশের মা তো হতবাক হয়ে ,চেয়ে রইলো তাঁর খোকার দিকে।
বললো ,এই প্রথম মিথ্যে কথা বললি তুই আমাকে,
ফাঁকি দিলি আমাকে -----
আসার কথা ছিলো তোর ফিরে,
এলি ও ফিরে তবে চার কাঁধে করে।
গিয়েছিলিস খাবার ফেলে
বললি এসে খাবার খাবি,
তবে এখন কেনো তুই শুয়ে আছিস?
উঠ নারে খোকা তুই ,
আমি খাইয়ে দিই তোকে ,আমার নিজের হাতে;
তুই থাক একশো বছর বেঁচে,তোর বদলে নিক ভগবান আমাকে তুলে।
এমনি করে বলতে বলতে হঠাৎ দেখি ,রমেশের মা উঠলো আর্তনাদ করে।
বললো ,কি দোষ ছিলো আমার খোকার ?
কোন অপরাধে মরতে হলো আমার খোকা কে?
কেনো নিলি আমার খোকার প্রানটি কেঁড়ে?
কেনো খোকা চলে গেলো আমাকে ছেড়ে?
কেনো আসলো তাঁর জীবনে অকাল মৃত্যু ধেয়ে?
এই প্রশ্নের জবাব আমায় এবার কে দেবে,কে দেবে??
সত্যি এমনি করে রোজ কত না রমেশ এই ভাবে যাচ্ছে অকালে এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে,
আর আমরা নীরব হাজার প্রশ্নের ভিড়ে নিজেদের কে আবদ্ধ করে রেখে দিচ্ছি নিজেদের মধ্যে।
সত্যি এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে??


শাল্যদানী






ইচ্ছাচার
*********




কিছুদিন হয়েছে সময়মত ভোর হচ্ছে
স্বেচ্ছাচার আর সুবিচার কুংফু শিখছে,
সামনেই যে ধোঁয়ার সাথে যুদ্ধ।
নিকোটিন পুড়ছে


চায়ের সাথে সকাল জমিয়েছে ভৈরবীরাগ
বেতারের ইথারজনিত অবহেলা সামলেছে গলি গলি পাকস্থলী
এখনো জাবর কাটছে
হজম হচ্ছে না


আটার লুচি যারা খায় তারা অমানুষ -
এ ভাবনা আমার। তাই লুচি-ঘুগনি ময়দা মেখে
ভেংচি কাটছে
একটু নীচু হয়ে বৌঠান ছানার জিলাপি দিলেই
আসমান মাটিতে নামে পুরুষের বুকে
খাদির পাঞ্জাবি ভেদ করে


দুপুরবেলা স্নানের ঘরে অনেক সাদা ভেসেছি
এবার পুষ্টিকর খাদ্য চাই।
পাঁঠার মাংস আর গরম দেরাদুন।
আমি পরক্ষে তৃণভোজী জীবনে বাঁচি।
ভাত ঘুম আমার যোগনিদ্রা


গরম চায়ের সাথে এলাচের চুমু ঠোঁটে সন্ধ্যা আহ্নিক
আচমনে গরম চপ আর বেগুনি।
আরো দুটো, আরো দুটো
আর স্মৃতিরা চুরমার হয়ে ভেঙে পড়েবে
ঝরে পড়বে ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে


এর পরেরটা কৌলীন্য
রাতে রাত চেপে বলছি
ও আমার ব্যভিচারী সময়।
চুমুর মতোই অথেনটিক