নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অর্ঘদীপ পানিগ্রাহী

আনকোরা বনবাসী
*******************



অনাবৃত শব্দপুঞ্জে হারাতে গিয়ে -
দিগন্তের অনাবিল আলোর মেলায় -
মধুমালতীর ছায়ার সঙ্গোপনে ,
ঝরে পড়েছি শিউলী বেলায়...
অধরা ঘুমপাড়ানি সজীব মিঠে হাওয়ায় -
একরাশ স্বপ্ন বুক চুপকথায়.....,
এ অভাগী মন ফিনিক্সের ক্ষুধার্ত ঠোঁটে -
উষ্ণ আবহের গালিচায় একান্তে গুমরে মরে -
অনাস্বাদিত উড়ো প্রেমের তর্পণে -
শ্যাওলা ভেজা কোন এক কাক ভোরে -
আড়ষ্ট একবিংশীয় অবিন্যস্ত প্রহরে...,
প্রানহীন ইঁট পাথর আর কংক্রীটের -
কান্নাভেদী বাড়তি নেশায় - চিরকল্পিত শহরে ,
ভালো থাকার স্বল্পমেয়াদী সুদ আসলের -
অমলিন জটিল প্যাঁচের , অসম্পূর্ণ গর্ভ দ্বারে ,
তোর আলতো ছোঁয়ায়, শতপদী কেন্নো মন..
আবার ও খুঁজে নেয় সব হারিয়ে হারানোর কারণ...

জয়দীপ রায়

কল্প দুপুর 
*********



আমার এক চিলেকোঠা রদ্দুর
মসৃণ আম্রফলকে পোহাচ্ছিল
এক ঝিমানো দুপুরে
বড্ড লোভী ওই দুপুর পোড়া রোদ
দড়িতে টাঙানো আঁচলটা
ঘুম চোখের মারীচকে
ধরবে বলে পার হয়েছিল
সাবধানীর গণ্ডি
আর ফেরেনি
মার্কেন্ডীয় মতে ওটা এক কল্পনা
একটা দুপুর রোদের ।

কাজী জুবেরী মোস্তাক

 আজ আমি কাল তুমি 
**********************




আজকে যেমনটা তুমি ঘুমিয়ে আছো
আগামীকাল আমিও ঘুমিয়ে থাকবো ,
আজকে যেমনটা আমি আছি প্রেসে
আগামীকাল তোমার সংবাদ থাকবে ৷

যেমনটা তুমি জেগে ওঠোনি আজকে
আগামীকাল তুমিও পাবেনা কাউকে ,
আজকে যেমনটা অসহায় এই আমি
আগামীকাল তেমনটাই থাকবে তুমি ৷

আজকে যেমন চলেছো পাশ কাটিয়ে
আগামীকাল তোমাকেও যাবে এড়িয়ে ,
আজকে যেমন আমি চলছি একাএকা
আগামীকাল তুমিও থাকবে একাএকা ৷

আজকে যেমন আমাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে
আমার ভাইকে রক্তাক্ত ফেলে রেখেছে ,
আগামীকাল তোমার বোনটাকে খাবে
আর ভাইকে আবিষ্কার করবে ডোবাতে ৷

আমার সাথে অন্যায় তবু তুমি চুপচাপ
আগামীকাল তুমিও পাবেনা কোন মাফ ,
তাই সময় থাকতে প্রতিবাদী হয়ে ওঠো
আঁধার ভেদিয়া আলোক মশাল জ্বালো ৷

রবীন সাহানা

বিদারণ
 *******
              


দিশাহীন সীমাহীন আকাশের পানে চেয়ে
কেটে গেছে কতো নিদ্রাহীন রাত্রিবেলা।
পেরিয়েছে কত কম্বল মোড়া রাত।
গগনের কালো গায়।
দেখেছি উজ্জ্বল আভা কুমকুম
দিগন্ত প্রান্তরেখায়।

 বহুকাল কেটে গেছে,
মিহিয়ে গেছে কত খই
   মধ্য রজনী বুকে।

কেটে গেছে কত শত ঋতু
   বয়ে গেছে বহু কাল।
এ যেন নতুন শতাব্দীর বছর।
  দেখেছি অচেনা কিছু।
এ যেন আগের মতো নয়।

যেদিন রঙিন হোরিখেলা হলো
কেমিক্যালে ভেজা ,পেটে কেমিক্যাল
 কটা মুখ...
ভেসেছিল বসন্তের স্তম্ভিত হাওয়ায়।
কেঁপেছিল বুক।
কাঁটা এসেছিল গায়
সেবেলা ছিলনা শীত ,ছিলনা
 কিছু হারানোর ভয়।

যুগের হাওয়ায় বুঝেছি কত জোর।
নারীরা যৌবনে বিভোর
পুরুষের লালসায় দৃঢ় পেশিজোর।
বুকে দেয় শিশু ধোঁয়া
এ জগৎ ধর্মের ডোরে বাঁধা ,
চারদিকে হানাহানি ,শোরগোল।

সকলে ভুলে গেছে মানবতা
ভুলে গেছে বিবেকানন্দ,কালাম |
চূর্ণ হল কী শান্তির বাণী
রাজনীতির দলাদলে?

আসছে নতুন বছর, আসছে নবীন সুর
মুছে দিয়ে যাক মলিনতার লজ্জা।
প্রানে বাঁধুক প্রেমের গান বাজুক ছেঁড়া তানপুরা।
মিলনের ঐক্যে হউক ব্রতী।
নয় ধর্মের স্লোগান ,নয় কোন রাজনীতি
কাঁপুক পৃথিবী মানবের ডাকে
আমরা মানবজাতি |

সোহান আহমেদ

একদিন 
********



একদিন সবকিছু ভেংঙে-গড়বো নতুন করে,
রাখবো না আর-কুসংস্কার আমার জগতে।
থাকবে না সেখানে গণতন্ত্রের নামে কুমন্ত্রণা!
সৃষ্টিশীল পৃথিবী গড়বো নতুন সৃজনধারায়,
,
মানুষের পৃথিবীতে-থাকবেনা কোন অমানুষ,
ক্ষমতার লোভে হবেনা কেউ- বিশ্বাস কসাই!
মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করবে সবাই-বিবেক,
শান্তিনীড়ে পরিণত হবে জগত-মুক্তমন্ত্র সব।

দেব চক্রবর্তী

অমরেশ 
*****



গতকাল অমরেশ এসেছিল -
রুক্ষ চুল , ক্ষয়াটে চেহারা , অগ্নিভ চোখ....
যেন সবকিছু ছিনিয়ে নিতে চায় ও । 
ওর মভ রঙ্গের ফাটা পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বার করলো এক টুকরো হারানো স্বপ্ন । 
আমাকে দেখিয়ে বললো , 'খবর আছে ! '
আমি কোনও উত্তর দিই না । 
দেওয়ার মতো সাহসও আমার নেই । 
তারপর মুচকি হাসি মেখে অগ্নিগোলক চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এলো , ' একটা বিড়ি দে তো ! ' 
আমি তাকে সিগারেটের ঠাসা প্যাকেট এগিয়ে দিই । 
' ও , আজকাল বিড়ি খাচ্ছিস না বোধহয় ! ' 
বিড়ি-পোড়া ঠোঁটে বিস্ময়কর প্রশ্ন । 
দুরন্ত ইংরেজী বলা ঠোঁট হটাৎ শুয়ে পড়ল আমার ডিভানে আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো জন কিট্স । 
আমার নিশ্চুপ থাকাটা ওকে আরও বিস্মিত করে তুলল -
' কিরে , কিছু বলছিস না যে ! ভুলে গেছিস নাকি ! ' 
' না.....মানে.....' 
সিগারেটের ধোঁয়া কুন্ডলী পাকাতে পাকাতে অবশেষে মেঝেতে শরীর দিল ছেড়ে । 
কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ঘাড় ঘুরিয়ে নিল ক্লান্তিতে । 

অমরেশ , আমার বন্ধু 
শৈশব , যৌবন পার করে আজও....
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী ট্পার । 
বুকে ছিল পাহাড় উপড়ে ফেলার শপথ 
ভূমধ্যসাগরে দুর্গমের অভিযান করার উন্মত্ত পাগলামি 
আর মননে ছিলো প্রিয় রবীন্দ্রনাথ , কীটস , কাফকা আর চে' র মতো চিন্তাবিদরা । 
গনগনে আগুনের মতো তেজ আর নেই । কিছুটা নির্লিপ্ত । 
তবু পোড়া কাঠের মতো দেহ শ্বাপদ খুঁজে বেড়ায়....
খুঁজে বেড়ায় ধারাশ্রাবণ । 
চিরকুটটি পড়ে দেখলাম , ' তুমি শিলিগুড়ি থেকে ফিরে ফোন কোরো  ' 
নীলা 
ওর 'ভার্সিটির বন্ধু 
ওদের আড্ডায় মাঝেমধ্যে থাকতাম আমিও । 
চা-গুঁড়ো মেশানো গরম জল খেতে খেতে কাফকা পড়ে শোনাতো । 
কতবার যে নীলা ওর ঠোঁট থেকে কেড়ে নিয়েছিলো বিড়ি-তা মনে নেই । 
হিমালয়ের কাঁপন ধরানো কন্ঠে হঠাৎ গেয়ে উঠতো নীলার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ অথবা মহীনের ঘোড়াগুলি । 

দীর্ঘ সতেরো বছর পর ফিরে এলো স্মৃতি....ফিরে এলো কেডি স্যারের ইন্দ্রনাথ....আমার অরাজকতার সংসারে....দশ বাই বারোর জীবনযুদ্ধে....যেখানে আলো পরে না প্রখর সূর্যের , ছোঁয় না কোনও পক্ষের চাঁদ । 
সেখানে শুধুই অন্ধকার আর ধ্বংসের গাঢ় শীত 
' আর চারিদিকে অদ্ভুত আঁধার এক ' ॥