*দীপাবলি*
শাল্যদানী
এই আলোতে নিয়নলাইট
আঁধারিয়া উৎসুক
কালো আলো লাগে ভালো
সিগারেট ছাই ছায়া দোলে।
রংমশাল
আলাপন মেহেন্দি আঁকা হাত
তাতে আমি লেখা।
এই আমিটা আলোর দিন
এই আমিটা হাওয়াই
এই আমিটা ল্যাম্ফো জ্বালা
এই আমিটা নাই
এদিনে মিষ্টিমুখ হয়ে যাক। কিন্তু
একটা আলোর বলি লেপ্টে থাকে
কান্নাখেকো রাতে আসে যায়
সে এবং তার আলো
আলেয়া
আলোর রাত।
দীপ।আ।বলী
জ্যোতির্ময় মুখার্জি
দলাপাকানো আঁশটে রোদের মশারি বেয়ে
ক্রমশ নিভৃত অন্ধকারে
অ্যাসিডিক ক্রোমোজোমের নীলাভ আয়নায়
আঠালো।চ্যাটচ্যাটে।আত্মঘাতী
কিছু আলো
বারুদপোড়া চামড়া আর রক্তের মাঝে
স্প্রিংয়ের মতো জড়িয়ে আমাদের
শান্তিতে ও শ্রান্তিতে
অর্থ খুঁজে নেয়
এ-তে-গন্ধ-পুষ্পে…..।
দীপাবলি
সঙ্গীতা পাল
আশ্চর্য শূন্যতায় ভরেছে সময়
চারিদিকে টুনির রোশনাই
এখন আর কেউ মাটির পিদিম জ্বালেনা।
চারিদিকে মানুষ চায়নিজ ফানুস উড়ায়
বিদেশি পটকা বাজীতে আকাশ মুখরিত হয়।
কোন ক্লাব কত টাকার খেলায় মাতবে,
সবাই সবার প্রতিদন্দী আলোর স্ফূরণ।
বন্ধু লক আউটের চা বাগানের শ্রমিক দল
হাড়িয়ার গন্ধে বিভোর হয়।
বধুনি এক্কা বা ফুলমনি ওড়াও দের মাদল নৃত্য শুরু হয়।
~*** আলো জ্বেলো "মা" ***~
মনিকান্ত সর
হালকা শীতের আমেজ গায়ে, কুয়াশা ভেজা ভোরে,
শ্যামা মায়ের পূজা আজ, ভুত চতুর্দশীর পরে ।
শহর গ্রামের নেইকো ফারাক, মিলেমিশে এক সবাই,
আজ মাতবে ছেলে, মাতবে বুড়ো, মায়ের আরাধনায়।
মোমবাতি আর মাটির প্রদীপ, জ্বলবে সবার ঘরে,
আলোয় আলোয় কাটবে আঁধার, অনেক দিনের পরে।
পুড়বে বাজি, জ্বলবে মশাল, আকাশে রঙের মেলা,
চোখ জুড়াবে টুনি আলোয় আর ঝাড়বাতির খেলা ।
বিষাদ যেন না থাকে আর, তোমার আশীষ পেয়ে,
আঁধারগুলোকে মুছিয়ে দিও, যাবার আগে ধুয়ে ।
চাওয়া বলতে মায়ের কাছে, শুধু একটি দিন নয়,
আলো যেন সবার জীবনে প্রতিটা দিন রয় ।
অন্ধকারের আলো
জয়তী দাস
এভাবেই পুড়ে যাও কালিমা ঘুচাতে,
কতটুকু আলো জ্বলে মাটির সরাতে!
বিছানো আসন, সামনে কলাপাতা
চাল কলা মেখে, পরমান্ন এক হাতা
কোথাও হাসছে শোক কলিঙ্গের মাঠ
কোথাও কান্না ছাপায় ভরানদী থাক ।
কেউ ডাকে চিন্ময়ী, কেউ জানে মৃন্ময়
আমি তো দেখি তার জলেতেই ক্ষয় ।
জবারা রাতেই ফোটে, তুমিও তো চেনো
শিউলিকে না ঝরিয়ে বুকে রাখো বলো !
কানা বলে যাকে ডাকি, সেকি আমায় জানে
দিইনি জানলা খুলে, ঢাকা অন্তরালে ।
ভাত বলে যাকে জানি,সেতো আমার খিদে
ছড়িয়ে খায় কাক, কাদের কাদের দিলাম সিধে !
জ্বালাতে পারলাম কই দীপালীর আলো ,
প্রদীপের শিখা জানে কে রাত,আর কে কালো ।।
দীপাবলী
মৌসুমী ভৌমিক
শ্যামা মায়ের আশীষে জ্বলুক দীপাবলীর আলো
আলোর প্লাবনে আঁধার শেষে উদিত হোক ভালো।
তমসাচ্ছন্ন পৃথিবীর হাজার যন্ত্রণায় জমেছে গভীর ক্ষত
হৃদয়ে হৃদয়ে গ্লানি কলুষতা, মানবতার ক্ষয় অবিরত।
ভবতারিণীর শুভেচ্ছায় গৃহ আলোকিত, আনন্দের দীপ জ্বালি
প্রাণেতে বাজুক সুর, অন্তরেও বিকশিত হোক দীপাবলী।
কিছু প্রদীপ
কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর
আজ একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে দাও--
ফসলের দাম না পেয়ে আত্মঘাতী চাষির,
ছবির নিচে।
কালশিটে পিঠ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া ছেলেটার
মাথার পাশে।
প্রতিরাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়া আমার মায়ের
বিছানার পাশে।
প্রচণ্ড যন্ত্রনায় ককিয়ে উঠেও ছাড় না
পাওয়া,নিশ্চিন্ত ঘুমে,আমার বোনটার
পাশে।
একটা প্রদীপ জ্বেলে দাও--
জল না পড়া দাওয়ার কোনটায়।
ফেনভাতের উপরে।
স্কুলের গেটের সামনে।
বাকিসব প্রদীপ তোমাদের।
তোমরা সাজিয়ে দাও সারা আকাশ ।
কাঠের ফুল
অসীম মালিক
সোনাঝুরি গাছের খাটে ঘুমিয়ে সমাজ l
আশার আলো নিয়ে জেগে ,
কাঠমিস্ত্রির করাত ,ছেনি ,রাঁধা ,হাতুড়ি ...
আর রংমিস্ত্রির তুলি l
কাঠগোলায় বসন্ত আসেনি ,
শাল ও মেহগিনি গাছের গুঁড়িতে গুঁড়িতে লেগে আছে
কোকিল পাখির পায়ের ছাপ l
করাত কলের বাতাসে উড়ছে ,
মিহি মিহি কাঠের গুঁড়ো l
গোলায় ফুটেছে করাত ফুল ...
পলাশ ফুলের কবিতা কণ্ঠে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে
কতশত রঙিন প্রজাপতি l
কিন্তু তারাও খাটের পায়ায় শিকড় ছড়াতে পারেনি ,
তাই ঘরময় ফুটেছে কাঠের ফুল l
জানালাটা খুলে দাও ,
ভেসে আসুক সোনাঝুরি গাছের অক্সিজেন l
কালো-আলোময়
ইন্দিরা ব্যানার্জী
করালবদনা; মুক্তকেশী; চতুর্ভুজা; মুণ্ডমালা বিভূষিতা।
ত্রিনয়না; বরমুদ্রা-অভয়মুদ্রা প্রদানকারী; খড়্গ হস্তশোভিতা।।
শুম্ভ-নিশুম্ভ বিনাশকারী; চণ্ড-মুণ্ডের মুণ্ডদ্বয় খণ্ডিতা; চামুণ্ডা; শিষ্টের পালন দুষ্টের দমনে সিদ্ধহস্তা।।
স্বামীর বুকে রাখেন পা; শ্মশানে অবাধ বিচারিতা; তন্ত্র সাধনায় তুষ্টা দেবী; পূজার দিন আলোর সাজে জগৎ সাজে দ্বীপান্বিতা।।
আরাধনায় মাকে অহংবোধ ঘোচে; রিপুদমনে জাগে আত্মনিবেদন।
তনু-মন এক করি ভেদাভেদ ভুলি আত্মশুদ্ধিতে সার্থক জীবন।।
"জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী; দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমস্তুতে।।"
শ্যামাঙ্গি মা আসে
কাকলী দাস ঘোষ
আজ জ্বলে দ্বীপ হাজার জড়য়া অলংকারে ,
আজ গলে মোম হাজার কাঁচের ঝাড়ে ,
মুখরিত আজ আলোয় আকাশ
মাটির দাওয়া -কুটির -বাতাস ,
ফুলঝুড়ি জ্বলা লক্ষ্য ফুলকী হীরক ঝিলিকে হাসে ;
কোটি হাসির রঙ মশালে
আমার শ্যামাঙ্গি মা আসে l
নজরুল স্মরণে
- অভিজিৎ পাল
মসজিদে বাজাই শ্যামার গান
বন্দনা গাই নামাজের সুরে
আনমনে হেঁটে চলেছেন দুখু
ডাবড় চোখে তার অদ্ভুত স্বপ্ন
এখানে কোথাও ক্লান্তি নেই
নতুনতর সীমারেখা নেই
অবিচ্ছেদ্য একবাচক নব্য অদ্বৈতবাদ
নতুনতর চেতনায় জেগে ওঠেন
রুদ্রনীলাভ নজরুল ।
= * অনু-রাধা প্রাণে * =
তপন সত্পথী
ইচ্ছে ডানায় ভেসে চলি দিনরাত
মন খেয়ালেই ঘুরিফিরি ভিন দেশে ,
সবুজ ভূমির শান্ত চরণ চুমি
দিগদিগন্তে উড়ি মেঘ গায়ে ভেসে ।
সরু পথে আছে ঘাসের মেঠো আল
নদী নালা মিশে সাগরের জল ছুঁয়ে ,
দেখো দিকে দিকে আমার সকল চিহ্ন
নিষ্পাপ চোখে দূরে আছি পথ চেয়ে !
যে কোনো গ্রামের শান্ত ছায়ায় এসো
রাখালিয়া বাঁশি ভরাবে হৃদয়খানি ,
কিংবা কোথাও শাল পিয়ালের বনে
ঝিঁঝিঁ পোকা সুরে আমার পদধ্বনি ।
শীতের সকালে শিউলির ঝরা ফুলে
ভিজা ঘাস ছুঁয়ে নীরব সবুজ প্রাণ ,
সূর্যের আলো পড়বে ঘাসের 'পরে
প্রভাত ক্ষণেই পাবে তুমি চেনা ঘ্রাণ ।
বেলা বয়ে যাবে নিয়মের পথ ধরে
নিখিলের মাঝে সজীব প্রানের রেশ ,
ঠিক অবেলায় গোধূলির লাল আভা
তোমার দুয়ারে সীমানার হবে শেষ !
নিঝুম প্রদোষ উৎসুক চুপি মন
অনু-রাধা প্রাণে আলোর অকুলান ,
অকথন যত প্রকাশ নীরব ভূমে
স্থির কনীনিক অশ্রুতে রবে ম্লান !
বহু পুরাতন কোন নির্জন স্থানে
জোনাকি আলোয় রাত হবে চুপ চাপ
ফিরে দেখো তুমি আঁধারের মুখ পানে
উজ্জ্বল হাসি নেই কোনো অনুতাপ ।
উদযাপনে দীপাবলী
অনন্যা রায়
গোধূলীর শেষ আলোটাও
লেপে নেয় দিনান্তের সুখ আঁচল ভরে ।
আর তারাদের কানাকানিতে শোনা যায় পূর্ণ ইশারা ।
একে একে জ্বলে ওঠে আকাশপ্রদীপ
চোখের বারান্দায় সুখী ম্যানিকুইন
আর জীবনের সেতু বাঁধে আলোর খেয়া ।
আমার কুসুম রঙা টিপ উৎসবের বাতিদান
বিকিকিনির জীবনে নিঃশর্ত ভালোবাসার বর্ণমালা।
নিবেদনের রাজপথে যাপন মোম হাতে
হেঁটে চলে উৎসবের ভোর
তোমার চোখে উদযাপনের স্বপ্ন দেখবে বলে।
আলো রে, জ্বালো রে
গোলাম কাদের
সেই-দিনটাই ভালো ছিল।
বাল্যের সোনাঝরা দুষ্টুমির অমোঘ টানে
বৃষ্টির মতো ফুলকি ঝরতো
পুকুরের প্রান্ত বরাবর,
শুশতানির মাঠ হয়ে রমাদের বাঁশঝাড়
পরিব্যাপ্ত টুকরো টুকরো আলো
পাড়াময় হয়ে জ্বলতো নিঃসীম অন্ধকারে ।
অশরীরী উৎপাত মনে হলেও
মা-মাসির কন্ঠে ভালোবাসার রেওয়াজ ছিল।
বড়োদের বকাঝকা, কাঁচা কঞ্চির স্বাদ
খুশিময় এপাড়া থেকে ওপাড়া
কাঠি সাজিয়ে আলোর বিক্ষিপ্ত নিশান ।
সে-দিনটাই ভালো ছিল।
দরজায় দরজায় কড়া লাগানো ঘরে
আলোর গভীরতা,
মাপা সহজ নয়
সম্পর্কের রোশনাই ফিকে হচ্ছে ।
অবোধরা অভিশাপ আঁকছে প্রত্যহ।
কষ্টের নীরবতা বাল্যসখীর মতো আনমনা ।
কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি দিনরাত!
সীমাবদ্ধ ঘরে ছাত্ অবধি বিচরণে ক্লান্ত
ঐশ্বরিক টানে দিশেহারা স্মৃতিদের হাত ধরে
ঘরে ঘরে আলো খুঁজছি ।
সেই-দিনটাই বড্ড বেশি ভালো ছিল
যেদিন খুব সহজেই -
কাঁচা আগুনের খোঁচাই পুড়িয়ে ফেলতে পারতাম
অশুদ্ধ, অশুভ অন্ধকারকে!
অমা
জয়দীপ রায়
আলো মাখা অমা নিলয় ফুটে ও পজিটিভ
রেয়ার রক্ত জমা
শ্যামবর্ণ মেয়েটি পান আঁকা তার মুখ
গরিব হলেও কয়লা ভেঙে,কিনত কিছু সুখ
আলো আঁকা রোয়াক থেকে রকেট উড়ল শেষে
মিথ্যে নয় রুপকথা নয় আর্ফিয়ুসের দেশে l
মৎস্য কন্যা
তাপসকিরণ রায়
তুমি খেয়ে প’রে ভাল আছ,
সুখে থাকতে থাকতে সময় কাটে না তোমার
ভাবো, এই কি জীবন ? শুধু খাওয়া পরা ?
সময় ও বাতাসের মাঝে দিন গড়িয়ে যাচ্ছে
কখনও মনে হয়, আমি বেঁচে আছি তো ?
নড়েচড়ে দেখি, হ্যাঁ, কিছু দুঃখ তো নেই ?
তা কি করে হয়,
শ্রাবণ দিনের বিয়োগ ব্যথার কথা সে তো ভুলবার নয়
এসো তার কথা ভাবি, পথ হারা শিশুটার কথা,
তার ভিক্ষা পেটারার কথা ভাবি।
তারপর একদিন তুমি ঝাঁপ দিলে জলে
কাপড় শূন্য হল তলদেশ
নাসা রন্ধ্রে ঢুকে গেলো এক মৎস্য কন্যার কথা ও ঘ্রাণ।
একাধারে তোমার রসনা ও দেহ উথলে উঠলো।
--কি করে পাবে তাকে ?
বুকের দড়ি ফাঁস খুলে তুমি জাল পাকালে
ঘূর্ণন সৃষ্টি করে ডেকে নিলে সেই কন্যাকে
আপাত সে মাছের আঁশ ছেড়ে গেলো,
তুমি জলের ধারে বসে চমৎকারী খেলা খেলছো !
তাও কিছু যেন ভাল লাগছে না --
তাকে একদিন ব্যঞ্জনায় পেয়ে যাবার ঢেক তুললে
ভারী পেটে হজমি গুলি খেয়ে
শেষে আপাত পালক-শয্যা গ্রহণ করলে।