নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

শান্তনু দে এর প্রতিবাদী কবিতা

     
               
                      লজ্জা



দেখলে বড় লজ্জা লাগে , আমার পাশের পাড়ায় ।
ধর্মকে শুধু সাক্ষী করে হাজার বাড়ি জ্বালায় ।।
দেখলে হয় মাথা নিচু নাবালক যে ছেলে ।
ধর্মের শুধু দোহাই দিয়ে বন্দি হলো জেলে ।।
কিসের জন্য পূজা পাঠ আজান কিসের জন্য ।
আজকে যদি রক্ত মেখে মানুষ সাজে অন্য ।।
কোনো ধর্মে আছে কি লেখা ? মানুষ মারার কথা ।
তবে কেন বইতে হবে স্বজন হারার ব্যথা ।।
সব ধর্মেই দেখায় যদি আপন পথের দিশা ।
তবে কেন হিংসা ছড়াই ভুলে ভালোবাসা ?
কেন র‌্যাপের টহলদারি পাড়াটা শুনশান ?
তবে কেন কুস্তি করি হিন্দু মুসলমান?
খিদে ভুলে অস্ত্র তুলে হানাহানি ক্ষয় ?
চেনা মানুষ পথে ঘাটে দেখলে লাগে ভয়?

তখনই বলতে ইচ্ছে করে  এ দেশ আমার নয় ।
চাই না আমার নাগরিকত্বের কোনো পরিচয় ।।

মণিকান্ত সরের দুটি কবিতা

~*** মেরো না আমায় ***~

              
"মেরো না আমায় " মাঝপথে......

মাঝে মাঝেই আঁতকে উঠে বলতে থাকে কন্যাভ্রূণ,
ভয়ার্ত সে, অনিশ্চিত তার পরিনতি ।
অস্ফুটে বলে যায় বারবার........
আমিও দেখতে চাই নতুন ভোরের আলো,
দেখতে চাই তোমাদের বিষে ভরা সুসজ্জিত সমাজ,
একটা জীবনচক্রে অনুভব করতে চাই---
বেঁচে থাকার ভালোলাগা খারাপলাগা ।

কেন ভুলে যাও......
তোমার সন্তানের জন্মদাত্রী একজন কন্যা,
আমিও তো পেতে চাই, মাতৃত্বের স্বাদ ।
কেন ভুলে যাও বারেবার...
তোমার পূজিত দেবতার অনেকেই কন্যারূপী।
প্রশ্ন জাগে মনে --
সত্যিই কী ভুলে যাও, নাকি...................??

কে বলতে পারে ------
একদিন আমিই হবো না, দেশ অথবা জাতির মাথা,
আমিও তো চালাতে পারি বিমান,
খেলতে পারি মেঘেদের সাথে, অথবা
গায়ে তুলে নিতে পারি সৈনিকের কড়া পোষাক ।
আমার পরিচয়েই তো একদিন
             পরিচিত হতে পারো তোমরা।
সেদিন তো বড্ড বড়াই করে বলবে--
        কাদের মেয়ে দেখতে হবে তো..!!
ফ্ল্যাশ লাইটের ঝলকানিতে টিভির পর্দায় রাখবে মুখ।

অথচ আজ.........??
আজ মেতেছো কী ভীষণ এক ধ্বংসলীলায়,
অচিরেই হত্যা করছো এক নব দূর্গার আগমন।
উন্মাদ চিন্তা আর অপার্থিব চাহিদায়
           চাপা পড়ে যায়, তার কাতর আবেদন,
কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, বর্বর সমাজ
                              শুনেও শুনলো না কানে।
অগত্যা তার সজল নয়নে করুণ মিনতিই সম্বল,
আর একান্ত নিভৃতে বলে চলা --
        
                  " মেরো না আমায় মাঝপথে...... "
               হোক না জন্ম আর একটা দূর্গার ।।




~*** কথা তো দিইনি ***~




            
কথা তো দিইনি................  যে
দাঁড়িয়ে থাকবো তোমার পথ চেয়ে,
চোখ রাখবো পশ্চিমের খোলা জানালায়,
তাকিয়ে থাকবো শূণ্য আকাশের দিকে, নির্জনে
কিংবা হেঁটে যাব বিষন্ন মনে, দূর -- বহুদূর ।

কথা তো দিইনি............... যে
তোমার অনুভব অনুভূত হবে, তোমার না থাকায়,
স্পর্শগুলো আনমনা করবে, কোনো একাকী মুহুর্তে,
স্বপ্নগুলো চোখ ছুঁয়ে যাবে, নিয়মকরে প্রতি রাতে,
কিংবা একলা চাঁদ এসে নিয়ে যাবে তোমার খোঁজ ।

কথা তো দিইনি............... যে
পেরিয়ে যাওয়া সময় আবার ডাকবে হাত বাড়িয়ে,
ঝরেপড়া ফুল সাজিয়ে রাখবে গাছ, কুয়াশা ভোরে,
দিগন্ত ছাড়িয়ে পথ বেঁকে যাবে আকাশের টানে,
কিংবা রামধনু এসে খবর দেবে তোমার বৃষ্টিভেজা চুলের ।

তুমিও তো দাওনি কথা.....................

তবুও রোজ দাঁড়িয়ে থাকি তোমার পথ চেয়ে,
জানালায় চোখ রেখে তাকিয়ে থাকি শূণ্য আকাশে,
তোমার অনুভবও অনুভূত হয় প্রতিদিন,
প্রতিটা নির্ঘুম রাতে স্বপ্নেরা চোখ ছুঁয়ে যায়, আজও।

------------------- অথচ, কথা দিইনি কেউ'ই ।।

জ্যোতির্ময় মুখার্জী এর তিনটি কবিতা

  
জ্যোতির্ময় মুখার্জী এর তিনটি কবিতা 


                   চৌকাঠ টু ফুটপাথ


             কিছু একটা কেলেঙ্কারি হয়েই যাক.....
                         আর ভাল্লাগছে না
                     কাক ভেজা রাত গুলো
               পোয়াতির মতো হেঁচকি তোলে
    একটা মাঠ, দুটো ডাস্টবিন তিনটে তালগাছ আর চারটে চড়াই নিয়ে আর কুমির ছানাগুনতে পারছে না
                       এই ফোকলা দাঁত
           
                চিঁড়ে ভেজা পেট হোক বা
                    সেতার শুখনো কান
                     ফাঁকটা বেড়েই যায়
                      চৌকাঠ টু ফুটপাথ ।



                    ময়ূর কাঁদলে...



                      মনে রাখিস তুই
                     ভূবনডাঙ্গার মাঠ
                        মনে রাখিস
                      আমি আসবো
             হাঁড়িয়া খাবো...মাতাল হবো....
                         বন-পলাশী
                    তোর সাথে রোজ
                   মাদল ভেঙ্গে নাচবো



               ইঁট + ইঁট = ঘর বেঁধেছে
                        এ শহর
                  শহুরে ঘরে খিল
                একা + একা = দুই
                    মানুষের বাস
                 সবার ঠোঁটে আঙুল
                        চুপ.... চুপ......
                       ময়ূর কাঁদছে
            ময়ূরীর পেট ফুলবে এবার।
                               



               ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি 





       নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমি ধর্ম মানি না
                               ঈশ্বরও
                   এখন তুমি আমার বুকে
                         ছুরি বসাতে পারো
                                   বা
                     হাতে রাখতে পারো হাত
                             তারপর চলন্ত
                            কিছু কোলাজ….
                          রক্তের আঁশটে গন্ধ
                                       বা
                                   মানুষের

পিয়ালী সাহা এর কবিতা


     




           ঘর পোড়া দিওয়ালি




অভিমানের পাহাড় চূড়ায় বসে কখনো ঝর্ণার গান শুনেছ?
শুনেছ বৈকি তুমি তো গান শোনো।
আমি উপলব্ধি করি।
জানো, ওগুলো কিন্তু কোনো গান নয়,ওই পাহাড় টার কান্না।দেখলে তো এবারও ভুল করলে।
জোনাকি কে তারা আর সুর্য কে প্রদীপ তো তুমি সব সময় ভাবো।
সেই তফাৎ টুকু বোঝোনি বলেই যেদিন নিজের ঘরে আগুন লাগলো সেই আগুন কে দিয়ালির রোশনাই করে নিলে।
আজও সেই পোড়া ছাই গুলো বড্ডো চোখে পড়ে।অন্ধকার হয়ে যায় চারদিক।
                                    

অভিজিৎ পাল এর কবিতা

  
      


               জোকারমঙ্গলকাব্য



১. 
উনি দৃঢ়স্বরে শিখিয়েছিলেন নিজের উপর হাসতে দিতে নেই। আমি তাঁকে লিখেছিলাম পৃথিবীতে জোকার হওয়াই কঠিন কাজ...
২.
বিবাদ বেঁধেছিল বড় মাপের। কথায় কথা কাটছিল। শব্দ জমছিল অনেক বেশি। আমি সুযোগ বুঝে তাঁর কথার উপর হেসেছিলাম। তিনি এবার আমার উপর হাসতে চেয়েছিলেন।
৩.
আমি তাঁকে হাসতে দিয়েছিলাম। তিনি হেসেছিলেন। আমিও আমার উপর হাসাহাসি করলে তিনি রেগে বলেছিলেন 'ইডিয়ট'!
৪.
আমি আমার উপর আবার হেসেছিলাম। তাঁর মুখ গম্ভীর হয়ে উঠেছিল। বলেছিলাম, মনে রাখবেন এখন তৃতীয় বিশ্বের দেশে জোকার হওয়াই সবচেয়ে কঠিন কাজ। 
৫.
তিনি আজ দর্শকাসনে বসে নতুন করে বুঝতে শিখছেন। একজন জোকারই সর্বোচ্চ কাঁদাতে পারে। শুধু একজন সফল জোকারের কান্না দেখার সাহস আমাদের নেই...।।

জয়তী দাস এর দুটি কবিতা

           

                মধ্যস্থতা




  জানি ঘড়িতে এখন সাড়ে আটটা বাজে..
  তবুও একবার নয় বারবার তাকাই ঘড়ির দিকে !
  উঠতে হবে, কর্মযজ্ঞে হাতে হাতে সুর ধরতে হবে,
  জানিনা আবার কখন এপারে সাঁতার দিয়ে উঠবো
  তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে জানি, ঢেউগুলো কতবার
  একূল ওকূল দুইকূলের মধ্যস্থতা করবে....
  তোমাকে বোঝাবে " আর বেশীক্ষণ লাগবে না আসতে,
  আমাকে বলবে " আর কতক্ষণ ! তোমার জন্য তাকে
  অপেক্ষায় রেখেছি, এবার সারো তাড়াতাড়ি হাতের কাজ"...
  ছুটতে চাইছি খুব তাড়াতাড়ি, সব হয়ে ওঠে পন্ড
  একই বৃত্তের মধ্যে কুন্ডলি পাকিয়ে যাচ্ছে অসমাপ্ত কাজ
  শেষের তলানিতে হাত ঢুকিয়ে বারবার দেখি জল হয়ে যাওয়া দ্রবণ
  কিছুতেই পারছিনা সবটুকু পরিপাটি করতে, অগোছালো
  তুমি এভাবে জন্মজন্মান্তর প্রতিক্ষায় থাকবে আমার !
  আমারও তো কম অপেক্ষা ছিলো না, তোমার কাছে যাবার !
  শুধু ঢেউগুলো মাঝেমাঝে তাড়া দিয়ে যায়....।



    আমার অদেয় শব্দমালা




মাঝেমাঝে ভাবি,
সারাদিনের সব কথা গেঁথে নেবো মালিকায়
দিনান্তে পরাবো তোমার গলায় ,
আমার প্রিয় কবিতার ঘর....
কিন্তু সবকিছু তো যায়না ঢাকা ছেঁড়া কাপড়ে,
অথবা ধরো, গাইলাম কোন গান আনন্দে বিহ্বলে..
তার রেশটুকু যে তাৎক্ষণিক !
তোমাকে কিঞ্চিৎ মাত্র দিতে,মনে রাখি না।
এমন ভাবেই দিন যায়, দিন যায়
ফুটন্ত জলের চাল, কলিংবেলের টুং টাং আসা-যাওয়া,
দিনব্যাপী চলে যাপনের বোঝাপড়া..
তোমাদের মাঝেই আমার শব্দ হারায়,
যা কিছু আগলে রাখি মনের মণিকোঠায়
বহু স্বেদবিন্দুর অশ্রু ভেজানো আঁচলের প্রান্ত
দুর্মূল্য হয়ে ওঠে পশ্চিমের অস্তরাগ সাগরের ফেনায়
কিছুটা ঢাকি, কিছুটা রাখি তোমার শব্দের ছায়ায়।।