।। ঊনত্রিশ ।।
বছর পাঁচেক আগের কথা। আনাজ বাজারে মৃণালদার সঙ্গে দেখা। আমার বাজার করাটা যেন একটা যন্ত্রণার মতো। শুরু থেকেই শেষ হওয়ার কথা ভাবি। মৃণালদা কিন্তু ঠিক এর উল্টো। উনি বেশ ধরে ধরে সময় নিয়ে বাজার করেন। কি একটা বিষয়ে কথা হতে হতে আমি হঠাৎ বলে বসলাম, " আচ্ছা মৃণালদা, শেষ কবে মনের কথা কাউকে বলছেন ? "দেখলাম মানুষটা কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেলেন। খুব কাছে দাঁড়িয়েও আমি যেন তাকে ছুঁতে পারছি না। " ঠিক বলেছ ভাই, অনেক দিন হলো কাউকে মনের কোনো কথা বলতে পারি না। " মনে হলো, উনি আরও কিছু বলতে চান। আমি আরও দু'একটা কথা বললাম, " একবার ভেবে দেখুন, বৌদির কোনো কথা বলার ইচ্ছা হলে আপনাকে বললেন। ভাইপো, ভাইঝির কোনো কথা বলার দরকার হলে ওরা আপনাকে বলবে। কিন্তু আপনি ? কোনো সুযোগ নেই। আপনাকে সব কথা বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখতে হবে। " দেখলাম, মৃণালদা চোখ বুজে। একটু পরেই দেখি উনি কাঁদছেন। আমি তো বেশ সমস্যায় পড়ে গেলাম। ভাবতেই পারি নি, কথাটা ওনাকে এতখানি আঘাত করবে।
।। ত্রিশ ।।
রোজই ভাবি, আজকের রাতটা আর ঘুমাব না। সারাটা রাত লিখে পড়ে কাটিয়ে দেব। কিন্তু পারি না। ছ'টা বাজলে উঠতেই হবে। ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো থাকে। রাত চিনেছি মায়ের কাছ। মাকে পড়ে কিছুতেই সন্তুষ্ট করা যেত না। পড়তে পড়তে কত রাত হয়ে যেত। মা তবুও রাতের খাবার দিত না। এইভাবে পড়তে পড়তে অনেক রাত হয়ে যেত। এই যে রাত জাগার অভ্যাস আজ পর্যন্ত তার সামান্যটুকুও কমে যায় নি বরং আরও অনেক বেড়ে গেছে। আসলে রাত হলে আমি নিজেকে যেন খুঁজে পাই। রাত আমাকে আমার কাছে এনে দেয়।
(চলবে..)