নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

শ্রী(জুঁই) ঘোষ

বৈশাখ
*****



ওর শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে। ভ্রূক্ষেপও নেই যে পাঁচ মাইল পেরিয়ে এসেছে সে। পা দুটো যেন অবশ হয়ে আসছে। তৃষ্ণা নেই, ক্ষিদেও পায়না। চোখে ঘুম নেই। একটা সময় ওর খেয়াল হয়, সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে "মা" বলে চিৎকার করতে যায়। পারে না। কেউ কি দেখতে পাচ্ছে না তাকে? নাকি সে জনবসতি থেকে দূর দূরান্তে পাড়ি দিয়েছে?কোথায় চলেছে সে? পায় না কেউ দেখতে। এসব ঘটনা কেউ দেখেও দেখে না। কুমারীর শরীর রক্তে ভাসা মানে সমাজে আলোড়ন তোলা। যেন কোনো সুনামির উৎপত্তি হয়। সৃষ্টিস্থল কিনা নারীশরীর। নারীখাঁজ।



আজ চৌঠা বৈশাখ।
হ্যাঁ, আজকের দিনেই তো শৌর্য্য জানিয়েছিল তার মনের কথা কমলিকা কে। বৈশাখেই ভরা শ্রাবণ উঁকি দিয়েছিলো দুজনের মাঝে। তোলপাড় হয়েছিল দুটো হৃদয়। কালবৈশাখীর ঝড় তাদের নিয়ে গিয়েছিল কোনো এক অদূর ভবিষ্যতে। কোনো এক আদরবাসায়।
 পেরিয়ে গিয়েছিল চারটে বছর। স্বামী, সন্তান... ভরা সংসার কমলিকার।

আজ শৌর্য্যর জন্য উপহার কিনতে গিয়েছিল কমলিকা। শরৎ সমগ্র।


বইটা হাত থেকে পড়ে গেল। জন্মদিনে শৌর্য্যর উপহার দেওয়া ময়ূরপঙ্খীরঙা শাড়িটার অর্ধেক অংশ মাটিতে পড়ে আছে। রাস্তার ধূলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। কমলিকার পরনে শুধু সায়া ব্লাউজ আর  শাড়ির অর্ধেক অংশ। ওর উন্মুক্ত শরীরের প্রতিটা খাঁজ ওরা চাখছে। স্বাদ জানেনা। তবু চাখে। নারীশরীর বলে কথা।

ওদের মধ্যে রয়েছে সৌভিক। কমলিকার পুরোনো বন্ধু। প্রেমপ্রস্তাব দিয়েছিল কোনোকালে।

কাউকে না পাওয়ার যন্ত্রণা যে মানুষকে এতো দূর টেনে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলে দিতে পারে, তার অভিজ্ঞতা ছিলো না কমলিকার।

একটা গুদাম ঘরে নিয়ে গিয়ে ওরা সবাই মিলে কমলিকা কে ছিঁড়ে খায়। ও পারে না আটকাতে। অবশেষে সকলের চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়ে আসে এই জনবিরল এলাকায়। হ্যাঁ জনবিরল। বাজার একটা। তবুও জনবিরল। সবাই যে অন্ধ। কেউ কমলিকা কে দেখতে চায় না। পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

কমলিকার চোখ দুটো শুধু খুঁজে চলে সেই বাড়িটা। যার প্রতিটা ইঁটে সাজানো সংসারের গন্ধ লেগে আছে। পুরোনো সংসারটায় আর ফিরে যেতে পারে না। লজ্জায়, ভয়ে, সঙ্কোচে। সে যে নষ্ট মেয়েমানুষ। বোশেখী ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া গাছের মতো।

কোন মন্তব্য নেই: