নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

গোদের উপর বিষফোঁড়া : আসামুদ্দিন সেখ


কাল খুশির ঈদ। অথচ গুটিকয়েক লোক ছাড়া কেউই খুশিতে নেই। কাবিলের বাবা কাল রাতে এসেছে সাতশো কিলোমিটার হেঁটে। বেচারা আর দাঁড়াতে পারছে না । প্যাকেট বন্দী জলের মতোই তার পা দুটি ফুলে আছে ‌। যেখানে কথা ছিল টাকায় পকেট ভর্তি থাকার , সেখানে কাবিলের বাবা এনেছে পকেট ভর্তি দুঃখ, হাহাকার, রক্ত ভেজা শরীর।

তিনমাস আগে কাবিলের ছোট বোন তার বাবাকে বলেছিল - বাবা এ বছর ঈদে একটা নতুন টু-পার্ট  কিনে দিও?
কাবিলের বাবা বলেছিল -  দেবো
তারপর বিদেশ যাত্রা । কিছুদিন যেতে না যেতেই পরিকল্পনাহীন লকডাউন। কাজ বন্ধ। কিছুদিন কাজ করে যা  টাকা হয়েছিল সেগুলোও সব শেষ হতে বসেছে সঞ্চিত রেশনের মতো।কি করবে কাবিলের বাপ, দিশাহারা পথিক এর মত একটা রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করে। কোনো পথ নাই ! তারপর কিছু সঙ্গী সাথীদের সঙ্গে বাড়ির পথে হাঁটা। দীর্ঘ বারো দিন মরুভূমির বেদুইনদের মতো হাঁটার পর  স্বপ্নের বাড়িতে আসা।

কিন্তু এ আরেক বিপদ !  পরশুদিন কাবিলদের ছাদের চালা প্রচন্ড ঝড়ের তীব্র আস্ফালন এর সামনে পড়ে , ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত অবস্থা এখন কাফিরদের।
তার বাবারও স্বাস্থ্যের  অবনতি হয়েছে !

প্রলয়াতঙ্ক : আরিফ মন্ডল ( পেঁচা)


অর্ধ জাহান আজ ভয়ে কম্পিত,
মৃত্যুর ভয়ে আজ সবাই ইতস্তত।
ভাঙতে হবে সমস্ত ঝড়,
ধূলিকণা ও হওয়ার প্রবাহ কে উপেক্ষা করেই।
সামনে আসুক যত বাঁধা বিপত্তি,
জাগ্রত এ ধ্বংস রুপীর অহংকার শেষ করবো অচিরেই।
বুদ্ধির বলিয়ানে দেবো বলিদান
প্রতিষ্ঠিত করবো আবার মোদের আত্মসম্মান।

হারানো সেই দিন : মাসুদ হাসান



আমাদের একটা সুন্দর ভোর ছিল,
তবু প্রতিদিন
আমরা একটি আরও সুন্দর ভোরের খোঁজ করতাম।

আজ পৃথিবীর বড়ো অসুখ করেছে,
চারিদিকে শুধু বিষাক্ত নিঃশ্বাস
শ্বাস নিতেও ভয় হয়।

নুতনের আশায় পুরাতন অজান্তেই হারিয়ে গেছে।
আমরা আজ আবার হারানো সেই দিনের খোঁজে।

পৃথিবির বুকে মৃত্যু মিছিল
শসান ঘাটে নির্জীব মানুষগুলির নীরব আর্তনাদ।
ম্যানচেস্টার, সবুজ নগরী, রাজধানী আপনাতে বাঁধ দিয়েছে।
পোপের শহর এখন শসান!
কসাই ডাক্তারগুলো ছাড়া স্বয়ং ঈশ্বরও ভীত স্তম্ভিত।

জারি হয়েছে অদৃশ্য এক দানবের শাসন ।
আমরা যেন এক সাজা প্রাপ্ত আসামী,
তীর্থের কাক আমরা চেয়ে আছি
শাসন মুক্ত এক অবাধ ভোরের দিকে ।

কবে আবার প্রাণ ছুবে মুক্ত বাতাস
হাত ছুবে তোমার জরাগ্রস্থ হাত,
হাঁটব আবার পায়ে দোলে শিশির ভেজা ঘাস।
          *********

শরীর : জয়তোষ ঘোষ



ঈদ উপলক্ষে বাজারে গিয়ে রফিকুল বাবু স্ত্রী ও একমাত্র কন্যার জন্য ভালো পোশাক কিনে ছিল । ফেরার পথে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা অর্ধ উলঙ্গিনী নারী ও মাতৃ স্তনপানরত উলঙ্গ সন্তানকে দেখে সেগুলো দিয়ে দেয় ।বাড়িতে তার সন্তান অপেক্ষারত নতুন পোশাকের জন্য , রাস্তার অর্ধ উলঙ্গিনী শিশুটিকে জামাটি পরিয়ে দিয়ে নিজের শরীর ঢেকে নেয় নীরবে ।

তুলনা : প্রীতি কর্মকার




বছর চারের ছোট্টো শিশু হাঁটছে শত মাইল পথ,
ফিরতে হবে আপন গাঁয়ে পায়না খুঁজে বাঁচার পথ। 
আমার ছেলে সোনা মানিক এই তো বসে শোফায়,
মরে মরুক মজুরের পো, তাতে কি কিছু আসে যায়?

আরাম নেই, বিরাম নেই, হাঁটছে কেবল হাঁটছে,
কে বলেছিল অতো দূরে যেতে, কাজ কি নেই কাছে?
আমরা না হয় উচ্চ শিক্ষিত, বিদেশ মোদের ভাতঘর,
দেশে ফিরি বিমান চড়ে, আমরাই তো ভবিষ্যতের কারিগর।

আমার ছেলে লিটল স্টার, যত্নে মানুষ, ব্রাইট ফিউচার,
মজুরের ছেলে মজুর ছাড়া কি আর হবে, ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ার?
ওরা তো রেললাইনেই ঘুমিয়ে পড়ে, বিপদ ওদের পদে পদে,
তাতে কি? আমি আমার ছেলে তো আছি বেশ নিরাপদে।

দুবেলা তো ভাত জোটেনা, বস্তিজুরে শুধু হাহাকার,
কাজ চাই, খাবার চাই, ওরা কি সবাই বেকার!!
মরলে বেকার করব কি আর, বেঁচেই বা ওরা করবে কী?
আমরাই তো বাঁচাই দেশ, আমরাই তো দেশ গড়ি।

মিছিমিছি জনসাধারণ মিছিল করো রাস্তা জুরে,
দুর্যোগে আর দুর্ভিক্ষে অমন কতই তো মানুষ মরে!
তাই বলে কি আমাদের তুলনা চলে ওদের সাথে?
আমরা আছি, আমরা থাকব, টাকায়, সুখে নিরাপদে।।

আমরা কি চা খাব না : শিশিরবিন্দু দত্ত



"আমরা কি চা খাবো না, খাবো না আমরা চা"----একই প্রশ্ন বা,  কথাকে দু'ভাবে বলার রীতিই তো অলংকার। আই মিন, সাহিত্যে যে #অলংকার পরানো যায় তা কোনো পার্থিব জুয়েলারি দোকানে পাওয়া যায়নি,যায় না কখনও। সে যাই হোক,  #মৃদুল_দেও কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে  এক উল্লেখযোগ্য ফিগার অফ স্পিচ। সদর্থকভাবেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন এই কথাটা মুখ ফসকে বলার কারণে।
          বাঙালির চা খাওয়াটা একটা দৈনন্দিন #স্টার্ট অফ আ ডে। দিন শুরুই হয় না চা না খেলে।

           বিশ্বে সর্বপ্রথম চা পানের প্রচলন করেন চীনের সম্রাট  #শেন_নাং প্রায় দুশো খ্রীস্টপূর্বাব্দে ।  কথিত আছে যে , একদিন তিনি বাগানে বসে গরম জল খাচ্ছিলেন। তখন একটি বুনো গাছ থেকে কিছু পাতা এসে  পড়ে ঐ জলের ওপর এবং সঙ্গে সঙ্গে জলের রঙ লালচে হয়ে যায়। তারপর তিনি সেই জল পান করেন। এভাবেই নাকি পানীয় জগতের মঞ্চে  উদ্যমী আবির্ভাব  ঘটে চায়ের।

            তবে এটাও শুনেছি, এই বাঙালির চা খাওয়া শেখাটা ব্রিটিশদের কাছ থেকে ।  'বোস্টন টি পার্টি' বলে একটা  কথা পড়েছিলাম  হিস্ট্রি বইতে। তবে এটা ঠিক যে,  দার্জিলিংয়ের চা তার আগেই উৎপন্ন হতো কিন্তু সেই চায়ের স্বর্গীয় স্বাদ বাঙালিরা  এখনো সেই ভাবে পাওয়া হয়নি । কারণ,  দার্জিলিংয়ে  উৎপাদিত চা মোস্টলি বাইরের দেশে চলে যায়। #ছিটেফোঁটা যা পড়ে থাকে তা-ই   চোখ বুজে পান করে বাংলার  'সহনশীল' বাঙালিরা  দুধের স্বাদ ঘোলে মেটায়।

       চা খায় না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।  বাঙালির কাছে এমন একটি অমূল্য রসিক পানীয় যা শীত -গ্রীষ্ম -বর্ষা- সকাল-  বিকেল -সন্ধ্যা , এমনকি  দুপুরে বা,  #মাঝরাতেও কেউ কেউ চা খেতে পছন্দ করেন । তবে বেশিরভাগ লোকের কাছেই প্রভাতী চা সারাদিনের উদ্যম কর্মক্ষমতা ও #অনুপ্রেরণা বটে। সকালের চা না হলে আবার চা যদি মনপসন্দ না হয়,  তাহলে মনে হয় সারাটা দিন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়।

           আমাদের চা খাওয়াটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাইরে ঘটে।  সে সকাল হোক বা সন্ধ্যায়।  বাজারের চায়ের দোকান  দিয়েই আমাদের প্রাত্যহিকী শুরু করতে হয়  । #সৌমেন,  বিক্রম, বিপ্লব বা সুরজিৎ -শুকদেব ---চা পানের বিভিন্ন চরিত্র, নানারকম সঙ্গত। কখনো কখনো #আশিসদা,শ্যামলদা অথবা কমলদা চায়ের আড্ডা দিতে চলে আসে আমাদের ধূমকেতু কক্ষে। চা পানে পাই যেমন নানা রকম মানুষ রেগুলারলি, #চা-চরিত্র ও বিবিধ। আগে  লিকার চা,   যাকে বলে  র - চা এবং দুধ চা ছিল। এখন গ্রিন টি , লেমন টি , ব্ল্যাক টি,  ইনস্ট্যান্ট টি,  স্পাইস টি------ওহ্ যেন একান্নবর্তী  ফ্যামিলি অফ টি ।

              সে যাই হোক না কেন,   প্রত্যেকের চা পানের একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে  ।  প্রতিদিন একটি চা দোকানে একই মুখের সমারোহ। কেউ  #সিগারেট জ্বালিয়ে চা পান করেন। কেউ জোরে শব্দ করে চা পান করেন। কেউ  বাবু স্টাইল তো কেউ  #হাবু স্টাইল। কেউ পর পর দু'কাপ। মজার ব্যাপার হলো, চায়ের দোকানদার সব খদ্দেরদের  চা-চরিত্র  এক নিমেষে বলে দিতে পারেন ----- কে চায়ে  বেশি চিনি খান, কার কম চিনির চা চাই,  কার ডায়াবেটিস আছে  বা, কার হার্টের প্রবলেম । একবার এক #অভিভাবক আমাকে তাঁর বাড়িতে #চাপ্যায়ন করেছিলেন। এমন মিষ্টি দিয়ে চা বানিয়ে আমাকে পরিবেশন করেছিলেন যে সেখানেই আমি #দু'লাইন লিখে ফেললাম : এ তো চা নয়,  খাচ্ছি যেন দধি,  আমি চায়ে মিষ্টি বিরোধী।

             চায়ের স্বভাব চরিত্র যাই হোক না কেন, স্বাস্থ্যের দিক থেকে চা যথেষ্ট #উপকারী । নিয়মিত চা পান করলে শরীরে চনমনে ভাব আসে। শরীর-মনজুড়ে  ক্লান্তি দূর করে চায়ে বিদ্যমান ক্যাফেইন। এ ছাড়া, চায়ে অনেক বেশি #অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ।  তবে বিভিন্ন চায়ের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা।
কবীর সুমনের একটি  বিখ্যাত গান আছে : এক কাপ চায়ে আমি #তোমাকে চাই । চায়ের সাথে টা- র  একটা চিরন্তন প্রেম  রয়েছে।  কিন্তু  এই চায়ের সাথে বিশেষ 'তোমাকে ' চাওয়ার কী কোনো উচ্ছ্বাস আছে ---তা আমার এক উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন।

       #পরিশেষে বলি, বাঙালি  যত  আধুনিক ফ্যাশনে নিজের অস্তিত্বকে বিসর্জন দিক  বা সো কলড্ আপডেট করুক, চা-প্রীতি বাঙালীর কাছে চিরন্তন সত্য হয়ে থাকুক----- যা দেখে অন্তত এই বিশ্বখ্যাত জাতিটাকে এক ঝলকে চিনতে পারে আসমুদ্রহিমাচল।