নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রিয়াজুল হক সাগর একগুচ্ছ কবিতা



১.
এই সময়ে

এ খন রাত এসেছে অন্ধকার
সত্যের বিজয় নিশান উড়ছে,
এই বাংলায়, সাহস রেখ আগামির
পথে পথে, এই হোক অঙ্গিকার।
সমাজের চিত্র বদলে গেলেও
বদলায়নি মানুষের চরিত্র,
আবার একটি পলকে বদলাতে
পারে মানুষ নামের অমানুষ ।
এই মানুষ যেতে হবে বহু দুরে
অচিনপুরের একটি গ্রামে,
সেখানে হবে বিচার তোমার
থাকবে শুধুই তুমি নামের একমাত্র আমি।

২.
যা….রে করোনা --

দুরে চলে যা হে করোনা
কোথা হতে আসলি রে তুই,
তোর কাছে সবাই মাথা নত
অতি শক্তিশালী তোর প্রলয়।
তুই কি তাকিয়ে দেখেছিস,
কত লাশের মিছিলের ধিক্কার
তোকে শুনতে হয়েছে
কোটি কোটি প্রাণের চিৎকার।
এই করোনা কি করিলি?
দুনিয়া জুড়ে দেখছে তোকে
তাকিয়ে তাকিয়ে, তোর ভয়ে।
লকডাউনের যাতা কলে এখন
পৃথিবী মানব শুন্য দেখা মেলে না
অতি আপনজনের, এই করোনায়
হে করোনা তুমি চলে যাও দেশ হতে।

৩.
নালিশ

করিতে নালিশ
করবে আমায় পালিশ,
মামলা দিয়ে
করতে চায় হালিস।
চোরদের দাপট
চোখে পরার মত,
আনাচে কানাচে দেখা যায়
বৃক্ষ রাজির মত।
সত্যের বিজয় জেনেও
আজ নিচ্ছুপ,
বিবেক নামের
সেই স্বত্বা আমার হারিয়ে গেছে।

৪.
নাইরে দিন

দিন গেল তোর আগে ভাগে
একলা দিনের মত,
আজে বাজে স্বপ্ন দেখে
 হাজার কথা শত ।
মিষ্টি মেয়ের দৃষ্টি পড়ে
ঝাকড়া চুলের দিকে,
রাখাল ছেলের বাশিঁর সুরে
মাঠ গেছে হায় পিকে।
এই দিনের কাছে
সেই দিনের হার,
নদীর বুকে ঢেউয়ের খলাৎ খলাৎ
ডাকু শুনে আমিও দিলাম পার।


৫.
ভাতের লাগিয়া…

দু..দিন গেল পেটে ভাত পরে নি
কেটে গেল বেলা,
অবুঝ শিশুর চোখের পানি
স্বপ্ন করে খেলা।
বাবা যে তার কাজে গেছে
আনবে কিনে খাবার,
পাইনি কাজ বাবা তাহার
দিন শেষে পেলনা আহার।
এই করোনার ভয়ে ভয়ে আজ
দিশেহারা গরীব মানুষ,
লুট করে খেল সব
ফিরলো না তাদের হুস।

কোভিড-19 : রাহুল শীল


বুকের ভেতর ভীষণ ভয়ের বাস
নিরাপদ শুধুই কোয়ারেন্টিন,
মায়ের মুখেও একটা শুধু শব্দ
বিপদের নাম কোভিড-19।

আকাশ ফাটে।খাঁচার ভিতর মানুষ
করোনা নামে চিনা ভাইরাস,
পাশের বাড়ির কাকার হাই প্রেশার
ইতালিতে থাকে ছেলে পলাশ।

খবর কাগজ, মৃত্যু মিছিল গুনে
কানের কাছে করে ফিসফিস,
নিউজ চ্যানেল বার্তা পাঠায় শুধু
করোনা আক্রান্তের মিলল হদিশ।

ভিড় এড়াতে সতর্কতার বাণী,
এক মিটার দূরে পথ চলুন।
নিজামুদ্দিন বাড়ালো আক্রান্ত সংখ্যা
কার কথা কে শোনে বলুন।

যে জনগণ মৃত্যু দেখে শেখেনা
তাদের জন্য কিছু করার নেই,
ঘরে বসেই মৃত্যু মিছিল দেখুন
করোনা হতে বাঁচবেন এভাবেই।।
                 

বারুদ : The Elixir of Life : প্রীতম বিশ্বাস


" Life always wants to sustain itself, if possible then eternally. "

       'অল-ইকসির' অর্থাৎ আশ্চর্য বস্তু। সময়টা সপ্তম শতাব্দী, তার আগে 'Elixir' শব্দ টা আসেনি। যদিও শব্দ দুটো ৫২-৫৩, তবুও এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে ঔষধি বস্তু আর আশ্চর্য বস্তু এক জিনিস নয়। কিন্তু ওষুধ টা যদি অমরত্বের বা চিরযৌবনের হয় ? কি ? হোঁচট খাচ্ছেন তো ! এগোতে থাকুন আরো খাবেন।
       জীবনের শুরুর সময় থেকেই আশ্চর্য বস্তু খোঁজ এখনো অবধি অবিচল আছে বরং বেড়েছে কয়েকশো গুণ। প্রোক্যারিওটস্ থেকে শুরু করে এখনো অবধি জীবন যে কোন উপায়ে অমরত্ব পেতেই চায়। তার বিভিন্ন উপায়ে অবশ্য জীবন ইতিমধ্যে খুঁজে ফেলেছে। মানবজাতি সেটা বুঝতে আজও অক্ষম, কারণ মানুষ জীবনের থেকে অনেক পিছিয়ে। আর ঠিক সেই জন্যই অমরত্ব বলতে যা আমাদের মাথায় আসে তা হল অমৃত, philosopher's stone, আব-ই-হায়াত্ , ochimizu ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকমই একটা নাম "The Elixir of Life", যার মানে অমরত্বের বা চিরযৌবনের একটা সিরাপ ।

       প্রশ্ন আসছে নিশ্চয়ই এসবের সাথে বারুদ এর কি সম্পর্ক ! খুব স্বাভাবিক। আসুন তবে;
পুরাকালে 'অমৃতের খোঁজে হলাহল' , বা philosopher's stone এর জন্য অসংখ্য মৃত্যু - এসব জানে অনেকেই। তবে তা নিছক রূপকথা এমন দাবি করতে আমার দ্বিধা নেই। কিন্তু রূপকথা সত্যি হবে না এমনও তো কোনো মানে নেই।

       " Accidents are normal in life." , এই কথাটায় আমি খুব বিশ্বাস করি। দেশটা চীন, সময়টা তখনও আন্ত-সাম্রাজ্য যুদ্ধের। বহু রোগ-ব্যাধি-ক্ষত এসবের উত্তর খোঁজা চলছে বিশ্বব্যাপী, এবং চীনেও। বহু ওষুধে সালফার, পারদ এর ব্যবহার অপরিহার্য। এর মাঝেই জীবনের চির চাহিদা মেনে নিয়ে কিছু মানুষ খুঁজছিল 'Elixir of Life' । বিভিন্ন মিশ্রণ, তাতে সালফার, পারদ, চারকোল এসব থাকতো।  প্রথম শতকের অর্ধেকের দিকে তারা সন্ধান পান সল্টপিটার এর, এক ধরনের জারক লবণ। 'টাও' নামে এক জনজাতি, তারা এসব মিশিয়ে রোগমুক্ত, জড়ামুক্ত, মৃত্যুমুক্ত জীবন খুঁজছিল। যদিও তা পাওয়ার একটা পথ গৌতম বুদ্ধ বহুকাল আগেই বলে গিয়েছেন, তবুও ওই যে "যত মত তত পথ" । এরকম খোঁজের এক মিশ্রণে ছিল সালফার, পারদ, চারকোল, সল্টপিটার এসব। সালফার আর চারকোল জ্বালানী অন্যদিকে সল্টপিটার জারক। ব্যাস ঘটে গেল 'magical accident' । মন্থনে উঠে এলো 'বিষ', নাম পরল 'huoyao' অর্থাৎ 'fire medicine' ‌। খেয়াল করুন শব্দ দুটো fire এর সাথে medicine । হ্যাঁ, একটা Taoist লেখা অনুযায়ী, 'huoyao' was an accidental by product from the experiment seeking to create the Elixir of Life .

       এই huoyao আর কিছুই নয়, যাকে আপনি বারুদ বা gunpowder বলে থাকেন। তারপর এর দৌলতে যে কাল সাম্রাজ্য এখনো চলছে বিশ্বব্যাপী তাতে আমার 'black powder' নামটা বেশি প্রযোজ্য বলে মনে হয়।
       Elixir of Life পাওয়া যাবে কিনা সে নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র সংশয়ে আচ্ছন্ন নই, কারণ জীবন তার অমরত্বের পথ খুঁজে ফেলেছে কোটি বছর আগে। কিন্তু অবিরাম মন্থনে এই যে সব 'বিষ' উঠে আসছে, তা গলায় ধারণ করার জন্য গাঁজাপেয়ী পাগলের যে খুব দরকার, আর বিশ্বের হিরোশিমায়ন বা নাগাসাকি-করণ হওয়ার আগেই দরকার ।

ভবিতব্য : অনিন্দ্য পাল


ভবিতব্য
কয়েকটা প্রশ্ন করি তোমায়
কে সৃষ্টি করেছিল তোমায়?
তুমি অতীত না ভবিষ্যৎ?
তুমি কি সবার?
নাকি শুধুই ভ্রম আমার?
ভবিতব্য তোমার ও কি আছে ভাগ্য
ওই ভেসে যাওয়া অসহায় মাকড়ের মত?

উত্তর পাবোনা, জানি
জানি সেই ভবিতব্য নেই আমার
ছিল কি কখনও?
সত্যিই কি ঘটেছে কিছু?
কোন ঘটনা অথবা ধংস অথবা সৃষ্টি?
নাকি সবটাই ভ্রম আমার?
যেমন নিজেই আমি!
====================

মানুষ তুমি মানুষ হও : কাজী জুবেরী মুস্তাক



সারা পৃথিবী আজ বাঁচার জন্য লড়ছে
ঈশ্বরের সামনে নতজানুই বসে থাকছে ;
সকলে থাকতে চায় মহাবিশ্বের উপরে
মুখোশের উপরে আরেক মুখোশ পড়ে ।

ক্ষমতার দম্ভ নেই আজ পৃথিবীর বুকে
অহিংসা পরম ধর্ম বাণী সকলের বুকে ;
কাঁধে কাঁধ রেখে বাঁচার স্বপ্নটা দেখছে
ব্রহ্মাণ্ডের এমন দৃশ্য কে কবে দেখেছে ?

পৃথিবী জুড়ে আজ শুধুই মানুষ মরছে
হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ভেদাভেদ ভুলেছে  ;
আলোর অপেক্ষায় পৃথিবীটাও বহমান
জ্বালো আলো ঈশ্বর ;আল্লাহ ;ভগবান ।

যুদ্ধ দাঙ্গা ভুলে মানবতা এক কাতারে
মহানুভবতা থমকে যায়নি কাঁটাতারে ;
মানুষ আজকে মানবতা ফেরি করছে
সব ভুলে ভালোবাসাটাও বিলি করছে ।

ভেঙে চুরে গেছে আজ সব অহংকার
ভাগাভাগি করে করছে সবাই আহার ;
কিসের এতো দম্ভ জীবনটাইতো ছোট
মানুষ তুমি আবারও মানুষ হয়ে ওঠো।

স্নেহ : শুভঙ্কর রাহা



পাঁচ বছর হলো সে বাড়ি আসেনি। এই পাঁচ বছরে না এসেছে একটা ফোন, না এসেছে কোনো চিঠি, না কোনো খবর। প্রথম দিকে বেশ কয়েক মাস ফোনে চেষ্টা করা হতো, এখন সেই চেষ্টা প্রায় নেই বললেই চলে। এখন তো দেখছি বৌদি ঠিকঠাক সিঁদুর টুকুও মাথায় দেয় না।
জ্যাঠা আগে একাই চাষ করতো। একই জমির একদিকে লাগাত মুশুরি, একদিকে আলু আর পিঁয়াজ। আলু উঠলে পাট হতো। অন্য জমি গুলোতে ধান চাষ করতো। এখন আর পারে না। ছেলের চিন্তায় কিছুটা অকাল বার্ধক্য এসেছে। এখন বেশিরভাগ টা ভাগচাষী রাই চাষ করে, ফসল উঠলে ফসলের ভাগ আর টাকা মিলিয়ে যা হাতে আসে তাতে ওদের তিনজনের সংসারে বিলাসিতা না থাকলেও ভাতের অভাব নেই। জেঠি বরাবর ঘর-গৃহস্থালি, গরুর গোয়াল নিয়েই ব্যস্ত ছিল, আজও তাই। তবে গরু টা আর নেই তাকে বিক্রি করে একটা ছোটো ছাগল নিয়েছে, আর বাকি টাকা টা ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাখা আছে। ছাগল টাকে জেঠি আর বৌদি মিলে দেখা শোনা করে। বৌদি রোজ নিয়ম করে কাঁঠাল পাতা খাওয়ায় ছাগল টাকে।

বিকাল হলে বৌদি ছাদে ওঠে। আমাদের ছাদ আর বৌদি দের ছাদের মাঝে একমানুষ দূরত্ব। প্রথম প্রথম বৌদির ছাদে ওঠা টা আমাকে উৎসাহ দিত একরকম adrenaline rush বলা চলে। বৌদিকে দেখিয়ে দেখিয়ে ১০-২০ টা স্কিপ বেশি করতাম, পুশ আপের সংখ্যাও বেড়ে যেত। বৌদি সেটাকে কেমন ভাবে নিত তা আমার জানা নেই। কিছুদিন পর থেকে আর এমনটা করতাম না, আড়চোখে তাকিয়ে দেখতাম বৌদি কিছু বলতে চেয়েও ইতস্তত বোধ করে। তাই আমিই একদিন বৌদির কাছে জ্যেঠির শরীর স্বাস্থ্য কেমন আছে জানতে চেয়ে কথা শুরু করার চেষ্টা করলাম। পাশের বাড়ির জেঠিমার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার মতো বোকা বোকা প্রশ্ন দিয়ে কথা বলার অজুহাত দেখে বৌদি তো আমাকে নিয়ে বেশ ঠাট্টা করলো। আমিও ব্যাপারটা উপভোগ করলাম।
তারপর থেকে রোজ বিকালেই বৌদির সাথে কথা হতো, নানান রকম কথা। সে কথা কত ডালপালা বিস্তৃত করে, আমি নিজেকে সামলে নিই। পাড়ার বয়জেষ্ঠ্য রা বাঁশ পেকে ট্যাস ট্যাস করার আগে তাকে কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়ে যায় জ্যাঠা কে। বন্ধুরা আমাকে ভ্রু তুলে,  মাথাটা হালকা বাঁ দিকে বেঁকিয়ে ইশারা করে। পাড়ার টাইম কলে জল আনতে গিয়ে শুনলাম ' ছেলেটার কি দোষ? ওই মেয়েছেলে টাই ফুসলেছে। আসল ব্যাপার হলো অভাবে স্বভাব নষ্ট। বাড়ির রোজগেরে পুরুষ যদি বাড়িতে না থাকে তাহলে যা হবার তাই হচ্ছে।'
আমি জলের জায়গাটা ভরে একবার থুতনি টা তুলে আবার সেটাকে নামিয়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।