- আচ্ছা , তোমার বৃষ্টি ভালো লাগে ?
- হুম , ভালো লাগে । রাতের বৃষ্টিটা বেশি পছন্দের,
আর তোমার ?
- আমার ! , আমার কাছে বৃষ্টি অনেকটা নেশার মতো,
বৃষ্টির ছন্দে নিজেকে মাতাল বলে মনেহয় ।
- দেখেছো বৃষ্টির দাপট যেনো আরো বাড়ছে ।
- হুম , মনেহয় বৃষ্টি আমাদের কথাগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছে ।
[ হঠাৎই প্রচন্ড মেঘ ডাকার শব্দ ]
- এভাবে কষে চেপে ধরলে যে , একি আমার প্রতি ভালোবাসা নাকি মেঘের গর্জনে ভয় ?
- হুম , আমার ভীষণ ভয় করে ।
- একি , এই যে বললে বৃষ্টি ভালোবাসা , তাহলে মেঘের শব্দে এত ভয় ?
- ও তুমি বুঝবে না , সব ভালোবাসায় একটা ভয় ও থাকে ।
- আচ্ছা , তাই নাকি ? তা এইযে তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো , তাহলে এই ভালবাসাতেও বুঝি ভয় আছে তোমার ।
- হ্যাঁ, আছে তো , খুব ভয় পাই ।
- সে কি , আমি কি তোমাকে ভয় দেখায় নাকি ?
- ধুর বোকা ! এ ভয় সে ভয় নয় ।
- তবে ?
- তবে , তবে এই পাগলটাকে সারাজীবন আগলে রাখতে পারার ভয় ।
- মানে ?
- মানে , তুমি যখন বর্ডারে যাও তখন ভীষণ ভয় করে জানো !
- ধুর পাগলি , এতো কিসের ভয় । তোমার ভালোবাসা কি আর আমাকে মরতে দেবে ।
- এই একদম উল্টো পাল্টা কথা মুখে আনবেনা । একটা রাত তোমাকে কাছে পেয়েছি , কাল থেকে আবার দিন গোনা শুরু হবে ।
- তোমার এই খোলা চুলের গন্ধটা আমাকে পাগল করে জানো । সত্যিই আমি বড়ো অভাগা জানো , দিনের শেষে তোমাকে ছুয়ে দেখার জন্য অন্তরাত্মা টা ছট্ফট্ করে ।
- শুধুকি তোমার , আর আমার করেনা বুঝি ।
- এই তুমি কাঁদছো কেন ?
- ও কিছুনা , চোখে একটু জল এসেছে এই যা ।
- এই দেখো বোধ হয় কারেন্ট অফ হয়ে গেল । ড্রয়ারে একটা মোমবাতি আছে , দাঁড়াও ওটা জ্বেলে আসি ।
- দাঁড়াও , অন্ধকারে নেমো না , আমি ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বলছি ।
- কি দেখছো অমন করে , আরে ফ্ল্যাশটা অফ করো আমার তো মোমবাতি জ্বালা হয়ে গেছে ।
- ফুলের বাগান দেখছি প্রিয় । বহু দিনের কাঙ্খিত আমার একান্ত ফুলের বাগান ।
- উফফ , কি যে বলোনা তুমি ।
[ ফ্ল্যাশটা অফ করতেই সমস্ত ঘরটা মোমবাতির অগ্নিশিখার সোনালী আলোয় মেতে উঠলো ]
- দেখেছো বৃষ্টিটা কেমন নিজের তেজ সমান তালে ধরে রেখেছে ।
- হুম , হয়তো আমাদের এই মুহূর্তটাকে আরো ভালোবাসায় ভরিয়ে তোলার জন্য। হয়তো বৃষ্টি ও রাতের আকাশের সাথে প্রেমে মেতেছে ।
[ এর পর এক স্তব্ধতা , এই স্তব্ধতা যেনো দুটো শরীরের হাজার হাজার কথোপকথনের একান্ত গোপণ পথ ।এই স্তব্ধতায় দুটি শরীরের আত্মা , দুটি শরীরের হৃদয় যেনো মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠেছে , দুটি ঠোঁটের এই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখে যেনো মোমবাতির অগ্নি শিখাও লজ্জায় কেঁপে উঠছে । মোমবাতির আলোয় ঘরে এক অদ্ভুত মায়া সৃষ্টি হয়েছে , সেই মায়ার বাঁধনে দুটো শরীর অদ্ভুতভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দুটি শরীরের এতদিনের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা সমস্ত ভালোবাসার ক্ষুধা যেনো পাকে পাকে গর্জে উঠছে । এই গর্জন বৃষ্টি ভেজা রাতের গর্জনের শব্দকে হার মানিয়ে আবার ঠোঁটের মিলনে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে । ঘরের দেওয়ালে মোমবাতির আলোয় যেন দুই নগ্ন দেহের ভালোবাসা মাখা আলপনা সৃষ্টি হয়েছে । ]
- তোমাকে এভাবেই আমার অন্তিম নিশ্বাস পর্যন্ত কাছে পেতে চাই । বলো , এভাবেই থাকবে তো আমার পাশে । থাকবে তো আমার হয়ে !
- হুম কথা দিচ্ছি অন্তিম নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার পাশে থাকব ।
[ অনেকটা রাত পেরিয়ে এসেছে , বৃষ্টির প্রতি ফোঁটা হীরক টুকরোগুলো ধীরে ধীরে আকৃতিতে ছোটো হয়ে তেজ কমাচ্ছে । মেঘের দূর প্রান্ত থেকে মৃদু মৃদু আওয়াজ ভেসে আসছে ! ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই । কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি ভেজা পাখিগুলো ভোরার আলোয় কিচির মিচির শুরু করে দেবে । মেঘের বুক চিরে দূর প্রান্তে মৃত নদীর মতো ভোরের আলো উকি দিচ্ছে ।]
- এই তোমার পিঠের তলায় বোধহয় আমার ব্লাউজ টা আছে , একটু পিঠটা তলোতো ।
- হুম , এই নাও ।
- এই শুনছো ঘড়িতে পৌনে পাঁচটা বাজে । আমি তোমার ব্যাগ রাতে গুছিয়ে রেখেছি , তোমার তো সাড়ে ছটায় ট্রেন আছে , তুমিও উঠে পড়ো এবার , আমি তোমার জন্য চা করে আনছি । ।