নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

।।যাপন ।। অরূপ সরকার




    রাত শেষ হচ্ছে বিলম্বিত লয়ে,
বালিঘড়ি ও ক্লান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ,
দূরে কোথাও হচ্ছে দেবীর থানে ওঠার আবাহন 
সময় চক্রে খন্ডিত হওয়া ব্রহ্ম নাভি  জানাচ্ছে দেবীর আগমন।
মুছে গেছে সব হিংস্রতা, আজানের সুরে জেগেছে মানুষ,
হ্যাঁ হ্যাঁ মানুষ,সকলেরই তো মা এসেছেন,
সকলের সুরই মিলে গেছে চন্ডী পাঠে,
ধুনোর গন্ধ গায়ে মেখে নিয়ে নাচছে ওই কুতুবউদ্দিন,
ঈদের তো বাকি আর মাত্র কয়েক দিন।
সমস্ত বেড়া দ্রাঘিমা ও অক্ষ পুড়ে গেছে  মণিকর্ণিকার  ঘাটে,
কোনো ফারাক আর নেই গীতা আর কোরানে,
না প্রয়োজন নেই কোনো পান্ডা বা ঈমামের

জিভ নিজেই স্বয়ংক্রিয়,উচ্চারণ  করতে জানে ।
গীতা ও কোরান দুই আত্মীয় পাশাপাশি শুয়ে থাকে ।

।।একটা নদীর গল্প।। জিয়া




দরজার কোনে উঁকি দিয়ে দেখতাম সিনেমা
মায়ের কালসিটে বেয়ে গড়াতো রক্ত,
ছুটে পালাতাম ছাদের কোনে চুপিসারে
সব চাপা দিয়ে হতে হবে বাবার ভক্ত।

দিন পনেরো কাটতো পেতাম না কোল
মায়ের স্তন অনাহারে গেছিলো শুকিয়ে,
দুধ না পাওয়ায় শুরু হতো অত্যাচার
কাঁদতাম আড়ালে., মায়ের চোখ দিতাম মুছিয়ে।

চাকরির পরীক্ষা আসে যায় পোড়ে বইপত্র
বাবাও কিন্তু চাইতোনা মায়ের হোক আয়,
পাছে স্বনির্ভরতায় সে বিচ্ছেদ চেয়ে বসে
মানসিক যন্ত্রণা দিতো,সাফল্য পাওয়া দায়।

দাদা একটু বড় হলো বুঝতে শিখলো সব
ঘরবন্দি মাকে মারতে দেখে সপাটে দিলো থাপ্পড়,
প্রতিবেশীদের হাসাহাসি সম্মান হলো নষ্ট
দাদার পায়ে পড়লো কোপ ঠান্ডা হলো চড়।

মা ভীষণ অভিমানী দেওয়ালে ঠেকলো পিঠ
আমার বয়স তিন কি চার কিছুই বুঝিনি,
সিলিংয়ে ঝুলছিলো মা চারিদিকে হাহাকার
বোবার মতো দেখছিলাম চোখ মুছিনি।

দাদা বড্ডো শান্ত হলো বাবার মুখে হাসি
আমার মা আমাকে আর সোনা বলে ডাকেনি,
নিজে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ি ঘরের এককোনে
দাদার মুখে সিগারেট আর ঘরে ফেরেনি।

নতুন মা আগলায়নি বাসেনি একটুও ভালো
বাবাও আর বরাবর চায়নি কাছে আসেনি,
অন্য দাদা আপন হলো মেয়ে ঘাড়ের বোঝা
সব হারিয়ে নিঃস্ব, ওরা কেউ কথা রাখেনি।

অন্য দাদা যখন পড়লো ঝাঁপিয়ে.,বয়স নয়
শরীরে কত রক্ত ছিল ব্যাথা পেয়েছিলাম খুব,
দিনে দিনে বাড়লো ব্যাথা কেউ জানতে আসেনি মায়ের কাছে এলাম, দিয়ে নদীর স্রোতে ডুব।।

বিয়োগচিহ্ন: রুনা দত্ত



মনে হয় হারিয়ে যাচ্ছি
বা ফুরিয়ে যাচ্ছি
তাও শব্দরা হারায় না

শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে
লিখে যাই ....

জীবনের কথা আমার কথা
বা তোমার আমার কথা।

এইভাবেই ফিরে যেতে যেতে
বারবার ফিরে আসি
চেতনে বা অবচেতনে
আমার নৈসর্গিক পৃথিবীতে ....

যেখানে আমার জন্য
আজও অপেক্ষায়
অজস্র সাদা কালো শব্দ

তাই আবার কলম তুলেনি
মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়ে
সৃষ্টি করে চলি ...
জীবনের শব্দরূপ বা রূপকল্প

যা কবিতা হয়ে ফুটে ওঠে
বাস্তবের পটভূমিতে
শেষ বিয়োগচিহ্নের মতো


|| এক বৃষ্টি রাতের ভোর || শুভঙ্কর গড়াই



- আচ্ছা , তোমার বৃষ্টি ভালো লাগে ?
- হুম , ভালো লাগে । রাতের বৃষ্টিটা বেশি পছন্দের,
আর তোমার ?
- আমার ! ,  আমার কাছে বৃষ্টি অনেকটা নেশার মতো,
বৃষ্টির ছন্দে নিজেকে মাতাল বলে মনেহয় ।
- দেখেছো বৃষ্টির দাপট যেনো আরো বাড়ছে ।
- হুম , মনেহয় বৃষ্টি আমাদের কথাগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছে ।
[ হঠাৎই প্রচন্ড মেঘ ডাকার শব্দ ]
- এভাবে কষে চেপে ধরলে যে , একি আমার প্রতি ভালোবাসা নাকি মেঘের গর্জনে ভয় ?
- হুম , আমার ভীষণ ভয় করে ।
- একি , এই যে বললে বৃষ্টি ভালোবাসা , তাহলে মেঘের শব্দে এত ভয় ?
- ও তুমি বুঝবে  না , সব ভালোবাসায় একটা ভয় ও থাকে ।
- আচ্ছা , তাই নাকি ? তা  এইযে তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো , তাহলে এই ভালবাসাতেও বুঝি ভয় আছে তোমার ।
- হ্যাঁ, আছে তো , খুব ভয় পাই ।
- সে কি , আমি কি তোমাকে ভয় দেখায় নাকি ?
- ধুর বোকা !  এ ভয় সে ভয় নয় ।
- তবে ?
- তবে , তবে এই পাগলটাকে সারাজীবন আগলে রাখতে পারার  ভয় ।
- মানে ?
- মানে , তুমি যখন বর্ডারে যাও তখন ভীষণ ভয় করে জানো !
- ধুর পাগলি , এতো কিসের ভয় । তোমার ভালোবাসা কি আর আমাকে মরতে দেবে ।
- এই একদম উল্টো পাল্টা কথা মুখে আনবেনা ।  একটা রাত তোমাকে কাছে পেয়েছি , কাল থেকে আবার দিন গোনা শুরু হবে ।
- তোমার এই খোলা চুলের গন্ধটা আমাকে পাগল করে জানো । সত্যিই আমি বড়ো অভাগা জানো , দিনের শেষে তোমাকে ছুয়ে দেখার জন্য অন্তরাত্মা টা ছট্ফট্ করে ।
- শুধুকি তোমার , আর আমার করেনা বুঝি ।
- এই তুমি কাঁদছো কেন ?
- ও কিছুনা , চোখে একটু জল এসেছে এই যা ।
- এই দেখো বোধ হয় কারেন্ট অফ হয়ে গেল । ড্রয়ারে একটা মোমবাতি আছে , দাঁড়াও ওটা জ্বেলে আসি ।
- দাঁড়াও , অন্ধকারে নেমো না , আমি ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বলছি ।
- কি দেখছো অমন করে , আরে ফ্ল্যাশটা অফ করো আমার তো মোমবাতি জ্বালা হয়ে গেছে ।
- ফুলের বাগান দেখছি প্রিয় । বহু দিনের কাঙ্খিত আমার একান্ত ফুলের বাগান ।
- উফফ , কি যে বলোনা তুমি ।
[ ফ্ল্যাশটা অফ করতেই সমস্ত ঘরটা মোমবাতির অগ্নিশিখার সোনালী আলোয় মেতে উঠলো ]
- দেখেছো বৃষ্টিটা কেমন নিজের তেজ সমান তালে ধরে রেখেছে ।
- হুম , হয়তো আমাদের এই মুহূর্তটাকে আরো ভালোবাসায় ভরিয়ে তোলার জন্য। হয়তো বৃষ্টি ও রাতের আকাশের সাথে প্রেমে মেতেছে ।
[ এর পর এক স্তব্ধতা , এই স্তব্ধতা যেনো দুটো শরীরের হাজার হাজার কথোপকথনের  একান্ত গোপণ পথ ।এই স্তব্ধতায় দুটি শরীরের আত্মা , দুটি শরীরের হৃদয় যেনো মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠেছে , দুটি ঠোঁটের এই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখে যেনো মোমবাতির অগ্নি শিখাও লজ্জায় কেঁপে উঠছে । মোমবাতির আলোয় ঘরে এক অদ্ভুত মায়া সৃষ্টি হয়েছে , সেই মায়ার বাঁধনে দুটো শরীর অদ্ভুতভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দুটি শরীরের এতদিনের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা সমস্ত ভালোবাসার ক্ষুধা যেনো পাকে পাকে গর্জে উঠছে । এই গর্জন বৃষ্টি ভেজা রাতের গর্জনের শব্দকে হার মানিয়ে আবার ঠোঁটের মিলনে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে । ঘরের দেওয়ালে মোমবাতির আলোয় যেন দুই নগ্ন দেহের ভালোবাসা মাখা আলপনা সৃষ্টি হয়েছে । ]

- তোমাকে এভাবেই আমার অন্তিম নিশ্বাস পর্যন্ত কাছে পেতে চাই । বলো , এভাবেই থাকবে তো আমার পাশে । থাকবে তো আমার হয়ে !

- হুম কথা দিচ্ছি অন্তিম নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার পাশে থাকব ।

[ অনেকটা রাত পেরিয়ে এসেছে , বৃষ্টির প্রতি ফোঁটা হীরক টুকরোগুলো ধীরে ধীরে আকৃতিতে ছোটো  হয়ে তেজ কমাচ্ছে । মেঘের দূর প্রান্ত থেকে মৃদু মৃদু আওয়াজ ভেসে আসছে ! ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই । কিছুক্ষণ পরেই  বৃষ্টি ভেজা পাখিগুলো ভোরার আলোয় কিচির মিচির শুরু করে দেবে । মেঘের বুক চিরে দূর প্রান্তে মৃত নদীর মতো ভোরের আলো উকি দিচ্ছে ।]

- এই তোমার পিঠের তলায় বোধহয় আমার ব্লাউজ টা আছে , একটু  পিঠটা তলোতো ।
- হুম , এই নাও ।
- এই শুনছো ঘড়িতে পৌনে পাঁচটা বাজে । আমি তোমার ব্যাগ রাতে গুছিয়ে রেখেছি , তোমার তো সাড়ে ছটায় ট্রেন আছে , তুমিও উঠে পড়ো এবার , আমি তোমার জন্য চা করে আনছি । ।


বুঝতে পারছি: জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি






বুঝতে পারছি,


বেশ বুঝতে পারছি ফেসবুকে আটকে গেছে কলম

লাইক ও কমেন্ট

হাত তুলে, হাত বাড়িয়েও

তবু আসছি, তবু লিখছি


সুন্দরীরা ফেসবুকে ভিড় করে আছে

আমাকে আসতেই হয়

লেখালেখি শুরু ফেসবুকে, আমাকে লিখতেই হয়


লিখি, পোস্ট করি

পোস্ট করি, লিখি

‘এক বাঁও জল, দু বাঁও জল’

কখনও তরতরিয়ে, কখনও বেশ ধীরে

পাল তুলে, চালিয়ে পানসি বেলঘরিয়া


ক্রমশ সরে সরে যাচ্ছে দৃশ্য

দ্রুত, অতি দ্রুত

তালে তাল মিলিয়ে আঙুল ছাপিয়ে তরতর

বিজ্ঞাপনের ভাষায় যারে কয়, টু মিনিটস্ নুডুলস্

মন ভরে, পেট ভরে কিন্তু শরীরে লাগে না


দেখি, যদি পারি আসব যাব

নোঙর ফেলব মাঝ দরিয়ায়

ভেসে ভেসে, আর জল ভালো লাগে না







রাণা চ্যাটার্জী'র গুচ্ছ কবিতা





স্বপ্ন সন্ধানী
                 

একটু অন্ধকারের বড় দরকার,
    চারদিকে শুধু আলোর ঝলকানি,
      মুহুর্মুহু ক্যামেরার ফ্ল্যাশ।
মাঝে আমি, আমি পিঠ চাপড়ানো শব্দ...

মুক্তির অলিন্দে খুঁজে নিতে চাই,
             অন্ধকারের মায়া বেষ্টনী ।
কাউকে চাই না, বিদায় হোক সব
নিয়ন আলো,গেজেট -ল্যাপি আবর্ত..

পারলে দু-চারটা জোনাকি ছেড়ো
        নিকষ কালো আঁধারে....
আলোর তীব্রতা মুক্ত,অদ্ভুত প্রশান্তির
কোমল স্পর্শে,পাহাড় ঘেরা উপত্যকার
                   নিস্তব্ধতায় এক গামলা ঘুম ।





               পুনর্বাসন
           

অনেক তো হলো এবার না হয়
     একটু একা থাকা শুরু করি
             নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ডুবে ...

অনুভবে তোমার মনের গহনে
পাট্টা পাওয়া জমিতে অজান্তেই
         গড়েছি সাত মহলা প্রাসাদ।

মন্ত্রী-সেপাই,বরকন্দাজ ভিড়ে
     দখিনের খোলা বারান্দায়
         নিজেকে দিয়েছি পুনর্বাসন।
লাগোয়া অলিন্দে,দুধসাদা পর্দা,
মখমলি সোফায়, তুমি তুমি আতর গন্ধে
                বেঁচে থাকার নির্যাস।