নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আয়ুরেখার আত্মচরিত.. নয়নাভ বিশ্বাস



আয়ু রেখা দ্বিখন্ডিত। সন্ধ্যাবেলায় পথে আমি,
গাড়ির আলো পড়লে চোখে, অচেতনেই থামি।

শ্যাম পার্কের উল্টোদিকের মোড়ের মাথায় চায়ের দোকান,
ট্যাক্সিওয়ালার মুঠোফোনে বাজতে থাকে বব ডিলান।

ধোঁয়া ওঠা চায়ের ভাড়ে চুমুক দিই আর ভাবি,
আকাশের ঐ চাঁদটা আজ কিঅপরূপআর মায়াবী!

অনেক কথা লিখব ভাবি, অনেককিছু লিখেও ফেলি,
ঘাের কাটলে ব্যাকস্পেসে সবটা গিলে, সামনে চলি।

বন্ধুরা সব ব্যস্ত মানুষ, জীবন নামের যুদ্ধে শামিল।
আমিও সামিল আমার মতো, মনের মানুষ বড়ই অমিল।

শহর জোড়া ত্রিফলা আলােয় ক্লান্ত আমি, এ পথ চলি,
লােডশেডিং। চাঁদের আলােয় স্নাত আমার শহরতলি।

শ্রান্ত আমি, পা চলেনা। একটা যদি রিকশা পাই....
আয়ু রেখা দ্বিখন্ডিত। কপাল আমার পাথরচাপা'ই৷৷

চাতক. .. শ্যামল কুমার রায়



         তপ্ত দাবদাহে দগ্ধ ধরণী
         তরুছায়ার খোঁজ কম করেনি।
         স্বস্তি মেলা খুবই দুষ্কর
         রুজিরুটির জন্যে সবাই তৎপর।
         অবলা জীব অসহায় বড়
         শীতলতা শুধু কেন খুঁজে মর।
         বৈভবের আশ্রয় শীতল ঘরেতে,গাড়িতে
         ফকিরের দেখা মেলে মাটিতে, ছায়াতে।
         বৃষ্টির জন্যে চাতক সবাই
         আমীর, গরীবতে কোনো ভেদাভেদ নাই।
         তপ্ত ধরণী শীতল অবশেষে
         বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চারিত আকাশে।
         শীতল বারিধারা নামল শেষে
         ধরণীর মলিনতা মুছল নিমেষে।
            

উপাসনা ,, রহমান জিল্লুর



হৃদয় মনোনীত একমাত্র উপাসনা তুমি।
আমি দ্বীন প্রেমিক, গত জন্ম ধরে
অপেক্ষায় জেগে আছি
মৃত্যুদ্বীপে... 

অকম্পিত বাতাসে ভেসে গেছে আমার
জাহাজ, স্বপ্নের পাল ছিঁড়ে
অসীম সমুদ্রে...

                     কিনারাহীন ভাসছি আমি
এভাবে ভেসে ভেসে আর কতোদূর
আর কতোটা জন্মান্তর পেরিয়ে
তোমার সান্নিধ্য পাবো?

এই ভেবে, নিদ্রার গভীরে চিৎকার করে
একটি ডাহুক। কুঁয়াশার প্রাচীর -
ভেঙে পালাতে চায়...

ঠা ঠা রোদ্দুরে, ভরা ফসলের মাঠে
বাঁকা আলপথ হেঁটে হেঁটে
আঙুল ছুঁতে চায় -
                                      জলের চিবুক।

শুধু একবার,
প্রীতি উদ্বেলিত চোখ
       খুব কাছে থেকে তোমাকে দেখুক।

কক্ষপথ --পিয়ালী ত্রিপাঠী



জীবনের কক্ষপথে ঘুরছি সবাই ,
আবর্তন না পরিক্রমন জানি না !
পথ যতই বিপদসংকুল হোক ,
কোন বাধাই আর মানি না।

জমাট বাঁধা বরফ জানে
মনের গহীন দুঃখরাশি ;
হাসিমুখে সামলে জীবন
আমরা সুখের ভেলায় ভাসি।

বিশ্বাস ভরেছে নীলাভ বিষে,
ভরসাগুলো মৃতপ্রায় !
প্রহসন শুধু মেলছে শাখা,
সবাই কেবল টাকা চায় ।

ঠোঁটকাটা আজ বাস্তবতা,
ঘুরছে সবাই চাকার মত !
হাসছে সবাই অভিনয়ে ;
ঢাকতে চাইছে গভীর ক্ষত ॥

যা ইচ্ছে তা-ই করো...... রুদ্র সুশান্ত




আমাদের সুদীর্ঘ তৃষ্ণাতলে, জোছনার আবরণে ছিলো  রাত্রির স্বর।
একমুঠো প্রণয়ে,মুখোমুখি বসে, বালির সমুদ্রপৃষ্ঠে ঠোঁট ছিলো নিথর।

কখনো তীর ভাঙা, কখনো বালিমাখা কি নিদারুণ সব ঢেউ।
আমাদের গভীরতা,ভালোবাসাবাসি,
জোছনা ছাড়া জানতো না কেউ।

বিশাল হতো সব, বহুমুখী কলরব, জয়গাঁথা  স্মৃতির কুঠরি,
এখনো মন ভাঙে, ভয়ে ডর জাগে,
ক্ষণে ক্ষণে উঠি শিউরি।

মনে হয় তুমি-আমি, মধুমাখা বহুগামী মন্দিরে মোদের শুচিপত্র রয়,
অমূল্য প্রেম মোরে দিতি,এখন তা-সবই স্মৃতি, আমার মন ডেকে আমারে কয়।

ঐ চাঁদ তলে, জোছনা দলেদলে, মহুয়ার ঘ্রাণ দিতে এখনো আমায় ডাকে,
জোছনা নাই জানে, মনটাও না মানে, তুমি নেই তুমি নেই আমার ভরালোকে।

নাই বা রলে তুমি আর, ফিরানোর দাবী যার, একে একে সব নিলাম তোলে,
বেদনার শঙ্খ বাজায়, আমি কেন রব হারায়, সুখের মৃদঙ্গ ছলে।

অপরাজিতা (দুই):দেবব্রত সেন






হয়তো টিনের চালের বাড়ি,দোচালা চৌয়ারি ঘর দুটো ইংরেজি এল এর মতো গঠন। যদিও ঘর গুলো অনেক পুরোনো, তবুও মোটামুটি ভালোই আছে।  আর  ডিতটা সিমেন্টে পাকা করা, বাড়িটা শতকরা অঙ্কের হিসেব করলে পাঁচ  পৌনেপাঁচ কাঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। শহর লাগোয়া তিস্তা পাড়ের গ্রাম। বর্তমান বাড়িটার চেহারা গরীব গরীব বোঝালেও গাছগুলো আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যটা এরকম যে যেকোনো লোক বাড়িটার প্রেমে পড়ে যাবে। আর গ্রামের বাড়ি গুলো একটু ফাঁকা ফাঁকাই সাধারণত হয়ে থাকে।
পূজার মা শচীনকে বারান্দায় একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল, বসো বাবা, বসো। যা গরম পরেছে সহ্য করা যায় না বাবা। একটা টেবিল ফ্যান বের করে শচীনের কাছাকাছি রেখে ফ্যানের সুইচটা অন করে দিয়ে বলল, তুমি বাবা এখানে বিশ্রাম নাও আমি বরং ঠাকুর ঘরে ফুলজল দে আসি কেমন! 
-----ঠিক আছে মাসিমা। যাই বলুন মাসিমা প্রচন্ড রোদ্দুর পড়েছে, এই সময়টা বাইরে বেরোনোটা একপ্রকার সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
পুজার মা ঠাকুর ঘরে গেল, আকাশটা তখন চুপচাপ, শুধু গরম আর গরম!  এই সময় একটা হালকা বাতাস এল, মে জুন মাসে যেরকম লু নামের গরম বাতাস বয় ঠিক সেরকম ভাবে শীতল বাতাস এল, আকাশটা যে দীর্ঘ নিশ্বাস নিল আর কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলি হাওয়ায় বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ল, দুচারটে পায়রা ডানা ঝাপটে আঙিনা থেকে টিনের চালে গিয়ে বসল, দুজোড়া পাশাপাশি!চোখ বিনিময় করছে এরকমটা বোঝাচ্ছে,   মনে হয় যেন তারাও যুগল প্রেম করছে। আর শচীন একা একা সেটা ভোগ করল,  সে ভাবছে ইস যদি আমার জীবনে কখনও  এমন সময় আসে খুব রোমান্স হবে।শচীনের ইচ্ছে হল কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে চেয়ারটা নিয়ে বসি কিন্তু হল না, ততক্ষণে পূজার মা ঠাকুর ঘর থেকে বারান্দায় এল, শচীন একা বসে আছে।
বলল,  তো এখানে কোথায় এসছো ? আমি মাসিমা 
----হুম। 
......জানতেই পাচ্ছেন আমি সাংবাদিকতার মানুষ, খবর সংগ্রহে এখানে ওখানে যেতে হয়। জানো মাসিমা,  আপনাদের পাশে জমিদারপাড়ায় একটা নারী  নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তারই কিছু তথ্য সংগ্রহে এসেছি। তাড়াতাড়ি হয়েগেল তাই ভাবলাম একটু পূজার সঙ্গে দেখা করেই যাই।
-----না না  বাবা বেশ ভালো করেছো। পুজার মুখে তোমার সাংবাদিকতার কথা শুনেছি বাবা, তবে ......
এই বলে চুপ করল।
-----তবে কি মাসিমা? বলেন সংকোচন করবেন না।
আসলে কি, পূজা আর শচীনের মধ্যে যে প্রেম ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল সেটা পূজার মা ভালো করেই আন্দাজ করেছিল, তাই বোধহয় তবে করেই থেমে গেল। আর মনে মনে যাচাই করার চেষ্টা করছে। একটা মেয়ের ভবিষ্যতের বিষয়, এটা ছেলেখেলা নয়। আর যদি ভালোভাবে তাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয়, তাহলে হয়তো কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে,পূজার বাপটা বেচে থাকলে হয়তো তাকে এসব বিষয়ে মাথা ঘামতে হত না।  সত্যিই তো প্রেম ভালোবাসা এরকম জিনিস সেটা উপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না অন্তরের ভিতর প্রবেশ করে বুজে নিতে হয়। এটাই ভাবছে সে।আর এটাও ঠিক মেয়ে ও ওই ছেলেদের তো মন বলে কিছু আছে, সব থেকে বড় কথা কারও মন ভাঙা হচ্ছে  মন্দির ও মসজিদ ভাঙার সমান সমান।
পুজার মা বলল,  বলছিলেম বাবা কোন পত্রিকায় কাজ করো?
---- দৈনিক জনজাগরন পত্রিকায়! 
----আচ্ছা তুমি থাক, আমি একটু  ততক্ষণে লেবু সরবত করে আনি।
-----না না মাসিমা এসবের আবার কি প্রয়োজন?
----ধুর!  চুপ কর!  বসো দেখি
পূজার মা মালতি রায়! পুজা আর শিবু যখন তিন ও দেড় বছর বয়স, তখন তার স্বামী মারা গেছে। পূজার বাবারা ছিল তিন ভাই।কিন্তু তাড়া এখন কোলকাতাতে থাকে হঠাৎ যদি খবর নেয় নেয়, আর না  হলে যোগাযোগ বন্ধ, আসলে কি পুজার মা বিধবা আর ভরন পোষনের ব্যাপার তো রয়েইছে, হয়তো এলে বুঝি টাকা করি কিংবা অর্থ করি দিয়ে সাহায্য করতে হবে এই ভয়ে। আর বেচারা পুজার মা শহরের বাবুদের বাড়িতে কাজ করে আসছে ছেলেমেয়ে দুটোকে তো  মানুষ করতে হবে!সংসারটার ভরন পোষন করতে হবে, ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে হবে! আর অর্থ সাহায্য লাগলে বাবুদের কাছেই নেয়, একটু গায়ে গতরে খেটে দেয়।  এখন ওরা অসহায় ঠিকই এককালে জমিদার ছিল পরিবারটা।   জমিদার বাড়ি মানুষ আজকে বাবুদের বাড়িতে খাটছে ....আসলে বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ---আজকে রাজা কালকে ফকির। ঠিক সেরকম।
পূজা স্নান ছেড়ে বেরিয়ে এল, স্নান করতে করতে সে সব শুনেছে, যে  শচীন তাদের বাড়িতে এসছে ও গল্প করছে!  তবুও সে শচীনকে বলল,  আরে শচীনদা কখন এলে? আসতে অসুবিধে হয়নি তো? 
----আরে না রে পাগলি!  তো কেমন আছিস? কলেজ যাবি বুঝি?
----- আরে বাপরে বাপ কোন ছেড়ে কোনটা বলি। আচ্ছা শচীনদা তুমিই বলো যে কখন এলে।
----- শচীন বা হাতের ঘড়িটার দিকে একবার তাকাল, দেখল দশটা চল্লিশ বাজে তখন। বলল, কুড়ি মিনিট হল রে। 
------ আমি ভালো আছি দাদা। এখন কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।
-------বেশ ভালো তো!
তোমার জানি কিসে অনার্স?
বাংলায়।
এইসময় মালতি, কাচের গ্লাসে লেবু সরবত নিয়ে এল! বলল, এই নাও ধরো বাবা একটু সরবত। খেতে খেতে না হয় গল্প হবে। 
যেহেতু খাটুনি করে বানিয়েছেন মাসিমা তবে কিন্তু না খেলেই নয়, এক চুমু দিতেই বলে উঠল, আহ মাসিমা দারুণ হয়েছে, মনে হচ্ছে এখন একটু তৃপ্তি পেলাম, 
লেবু ও পুদিনা পাতার সরবত। দারুণ লাগছে।। আমরা বাইরে যা খাই মাসিমা। বাড়িতে তো লোক নেই! আর বাপ ভাই  ছাড়া কেউ নেই। মা ছিল,  দুবছর আগে আমাদের ছেলে চলে গেছে। এখন ভাই আমি আর বাবা।
গল্প করতে করতে বেলা গড়াতে চলল, গল্পেই যেন সবাই মজে গেছে। প্রায় ১টাই বাজে, ১২:৪৭ মিনিট। মালতি বলল,  তোরা গল্প কর দেখি, আমি একটু রান্না ঘর থেকে আসি।
এদিকে রান্না হয়েছে পূজাদের বাড়ির কত আগেই । এখন শুধু খাওয়ার পালা। আর খাওয়া সেরে যে যার কাজে যাব রোজকার মতো।  তার মধ্যে বাড়িতে কেউ এলে তাকে তো অতিথি বলাই যায়।
বারান্দার টেবিলে চলে এলো পূজার মা মালতির হাত বেয়ে সাজানো থালা ভরা ভাত আর বাটি ভরা সবজি। সঙ্গে  চুনোপুটি মাছের দুটো পদও!  রসুনপেয়াজ দিয়ে চটচটি আর মাছের টক আম দিয়ে। সে দিন শিবুই গেছে পাড়ার বন্ধুদের সাথে জাল নিয়ে! ভাগাভাগি করে আড়াই /তিনশ গ্রাম মাছ সে ভাগে পেয়েছে।
হয়তো খেতে চাইছিল না শচীনবাবু, ভাবছে চুনোপুটি মাছ, আর মাছের টক!! সে অনেক দিন হল খায়নি!  মা বেচে থাকতে সেই কবে খেয়ে ছিল। এখন দোকানের ভাত তরকারি ছাড়া উদ্ধার হয় না, পেট কামরায়। সব থেকে বড় কথা হল আজকে মায়ের মতো হাতের রান্না পেয়েছে সে, খেতে রাজি হল। এদিকে অতিথি যে তাই না খেয়ে ওঠা, এটা একরকম খারাপ ছাড়া কিছুই নয়।
সময় গড়াল অনেকটা,  তাই আর কারও কোথাও যাওয়া হল না, এতক্ষনে হয়তো পুজা কলেজে যেত, আর তার মা শহরেবাবুদের বাড়িতে থালাবাসন মাজা কিংবা রান্নার কাজে লেগে যেত, আর শিবুটা স্কুলে।


(চলবে..)