।। ছত্রিশ ।।
আজ ব্যানার্জী কেবিনে বসে আছি। হঠাৎ একটা কথা কানে এলো। কেবিনের শম্ভুদা একজনকে বলছে, "আপনার যদি দরকার হয় তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলে নিন না।" শম্ভুদার কথা শুনে লোকটির মন্তব্য ----- "সত্যি শম্ভু, তোর যেমন বুদ্ধি ! আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে একজন রঙমিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলতে যাব ! তুই ওকে বল আমার বাড়িতে এসে একদিন কথা বলে যেতে।" দুজনের কাউকেই আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না। শুধুমাত্র শম্ভুদার গলা চিনি বলে এতক্ষণ বুঝতে পারছিলাম যে ওটা শম্ভুদার গলা। এবার পিছনে ঘুরে না তাকিয়ে পারলাম না। হ্যাঁ, লোকটাকে আমি চিনি। কিন্তু ওনার যে এতবড় একটা গুণ আছে আমি জানতাম না।
সত্যি মানুষ এখনও এসব ভাবে ! অনুপাতটা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। নিজের প্রয়েজনে একটা মানুষ আর একটা মানুষের সঙ্গে কথা বলবে তাও তার কত ভাবনা ! সত্যি, আমরা আর মানুষ হলাম না !
।। সাঁইত্রিশ ।।
মহাশ্বেতা দেবীর একটা কথা খুব মনে পড়ে, "অকাজে ঘুরে না বেড়িয়ে বাড়িতে পড়বি, অনেক কাজ দেবে।" এখন এটাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। ছাত্র পড়িয়ে যতটুকু সময় পাই পড়ি আর লিখি। কবিতা লিখতে এসে কত মানুষের সঙ্গে তো মিশলাম। শিক্ষকতার ত্রিশ বছরে আরও অনেক অনেক মানুষ। যাকেই নিজের মনে করে একটু কথা বলতে যাচ্ছি সে-ই ঘুরে গিয়ে নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিচ্ছে। তাই এখন নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়ে এসেছি। তবে অবশ্যই নিজেকে অন্যের থেকে উন্নতমানের মনে করে সরে আসা নয়। বরং ঠিক উল্টোটাই। আমিই ঠিক সকলের যোগ্য নই। তা না হলে সবাই হেসে খেলে কথা বলে দারুণভাবে বেঁচে থাকতে পারছে আর আমি পারছি না কেন ?