নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বিকেলের রামধনু :রিনা চৌধুরী



 সেই শেষ বারের মতো বর্ষা নেমেছিল,
সেই শেষ বার তুমি বর্ষণ দেখেছিলে,তারপর থেকে তোমার আর বর্ষা দেখা হয়নি।সেই যে শেষবার মেঘের গর্জন শুনেছিলে;থামিয়ে দিতে চেয়েছ বারেবার। কিন্তু মেঘ......? মেঘ ততক্ষণ গর্জে ছিল যতক্ষণ সে বারিধারা হয়ে ঝড়তে পারেনি।তারপর.....তারপর শুনলাম নাকি বর্ষণও থামাতে চেয়েছিলে। তবে আজ আথ শোনো না কেন মেঘেদের গর্জন?কেন দেখতে পাওনা আজ ইর মন খারাপের মেঘলা আকাশ?কেন মেঘ আর তোমার থামিয়ে দেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা কে উপেক্ষা করে বৃষ্টি ঝড়িয়ে দেয় না?
   তবে কি তুমি ঠিকানা বদলেছো?বদলে গেছে তোমার আকাশ?বদল হয়েছে কি তোমার আবহাওয়ার পূর্বাভাস?
           যেখানে আমি বারবার চেষ্টা করি মেঘের মন খারাপ টুকু পড়ে নিয়ে,এক লহমায় বৃষ্টি ঝড়িয়ে দিয়ে, মন খারাপ টুকু কে  ~গোধূলি আকাশে  বৃষ্টিভেজা বিকেলের মতোই রামধনু তে মিশিয়ে দেওয়ার।।

বিশ্ব প্রকৃতি মা : নাহার নাসরিন




স্নেহের আসনে আমি তোদের রেখেছি বসিয়ে
ফ্যালনা ভেবে তোরা আমায় দিলি সরিয়ে।
যেই কোলেতে আমি তোদের রেখেছিলাম আগলে
আজ তোরা সেটাই দিলি আবর্জনায় ভরিয়ে।
সুস্থ পরিবেশ,  সুস্থ হাওয়া
 তোদের আমার কাছে পাওনা।
একবারও কি ভেবে দেখেছিস
আমায় তোরা কি দিয়েছিস?
দিন দিন আমি যাচ্ছি ভরে
আবর্জনা আর আস্তাকুঁড়ে।
উনুনের ধোঁয়ায়,  গাড়ির ধোঁয়ায়
দিন দিন আমি যাচ্ছি সর্বনাশায়।
তারপরে তো কলকারখানার ধোঁয়ার
সবার উপরে স্থান যে তার।
শব্দ দূষণের পর্যায় তো হায়
উচ্চ থেকে উচ্চতরে যায়।
ক্ষতি তোদের হচ্ছে জেনেও
মেতে আছিস ধ্বংসের খেলাই।
তারপরও চুপ কি করে থাকি
বিশ্বমাতা যে তোরাই বলিস
আমি যে তোদের মা
বিশ্ব বাংলা,  বিশ্ব প্রকৃতি মা।।

ভোরের প্রথম চিঠি স্মৃতির ঠিকানায় মান্নুজা খাতুন



ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে  ছুটে গিয়ে লেখার খাতাখানি কোলের পরে নিয়ে পাতার পর পাতা লিখে যেতে। কিন্তু লিখব টা কি? অভিমান? সে তো লিখে শেষ  করা যাই না!  তবে কি কস্ট গুলো লিপিবদ্ধ  করে সাজিয়ে দেব তোমার অর্ঘ্য  হিসেবে? তুমি কি তাতে তৃপ্তি পাবে! আদ্য কি তুমি আমার লেখার  সব টা পড়বে? যদি দুঃখ ময় সুখের কথা লিখি তুমি কি আমার পানে চাইবে? আমার বিবশা বিবর্ণা কালিমাময় মুখের পানে  দৃষ্টি তুলে চাইবে? নাকি! সরিয়ে দেবে সম্মুখ হতে?

 আচ্ছা আমি যদি আমার কস্ট গুলো লুকিয়ে রেখে মিথ্যে সুখের খেয়া তরীটি নিয়ে তোমাদের গ্রামের খেয়াঘাটের অশ্বত্থের নীচে উপনিত হই তুমি কি আমার সেই ছদ্মবেশী সুখ দেখে তৃপ্তি পাবে? তবে তাই হোক প্রিয়! আমি ছদ্মবেশেই আসব তোমার খেয়াঘাটে যে ঘাটের একপাশে রয়েছে আমাদের ফেলে আশা হাজারো স্মৃতির সাক্ষী  বড় অশ্বত্থের গাছটি, যে ঘাটে এখনো মেয়ে বউরা বাসন মাজে , ঝুপঝাপ জলে পড়ে জল ছিটিয়ে  স্নান করে ছোট ছেলেমেয়ে গুলো, দূরে গাছের আড়ালে অপেক্ষায় থাকে কোনো বিরহী প্রেমিক প্রিয়তমার ঘাটে আসার পথ চেয়ে, যে ভাবে তুমি থাকতে আমার পথ চেয়ে।   আজ যদি সেই ঘাটে ফিরে যাই, তুমি কি আসবে? পুরনো দিনের মতো একরাশ বন কলমি হাতে কিংবা কদম্ব ফুল হাতে বরণ করতে। তুমি কি এগিয়ে আসবে?পরিচিত হাসি নিয়ে এক পা দু পা ফেলে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আসবে কি প্রিয়?  সেই নির্জন নদীর কিনারে যেখানে ঘনঘন হতো আমাদের শুভদৃষ্টি। ফিরবে কি?  সেই স্মৃতির রাজ্যে।

আজ বড্ড মন কেমন করছে। মিশে যেতে ইচ্ছে করছে মাটির সাথে, যে মাটির বুকে রয়েছে তোমার-আমার নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়া প্রেমের রেনু, যে মাটির বুকে রয়েছে আমাদের হাজারো স্মৃতির পদচিহ্ন। আজ তার বুকে মিশে গিয়ে তোমাকে না পাওয়ার বেদনা ভুলতে চাই, ওই এক মুঠো ধুলো হাতে তুলে নিয়ে সারা অঙ্গে মাখতে চাই,  আমি চিৎকার করে বলতে চাই, এ ভাবে চলে যাওয়াটা বড় অন্যায় হয়ে গেছে তোমার;  চিৎকার করে বলতে চাই অনুপম!  তোমাকে হারিয়ে আমি একদম ভালো নেই, বড় অসহায় আমি! বড় একাকী। অসহায়ত্বের সেই আগুনে আজ দ্বগ্ধ হয়ে মাটির সাথে মিশে যেতে চাই। মিশে যেতে চাই স্মৃতিময় সেই ঘাটের পঙ্কিলকে বক্ষে ধারন করে।

অনুপম! এই আজ শেষ লেখা লিখলাম, অভিযোগের ঝাঁপি বন্ধ রেখে, আমার বুকের কস্ট গুলোকে বোতল বন্দি করে শুধু আকুতি টা লিখেছি। এই লেখা পেয়ে অহংকারের জোয়ারে ভেসে যেও না প্রিয়? প্রেয়সীর সাথে মশকরা করো না এ লেখা নিয়ে ! বড় আঘাত পাব প্রিয়; উপহাস করো না, ব্যাঙ্গাত্মক কটু কথার ফলায় বিদ্ধ করে আনন্দ পেও না যে ভাবে ব্যাধ পায় আনন্দ। এই শেষ লেখা লিখলাম প্রিয়, গত দিন হয় তো পাবে না খুজে আমার অস্তিত্ব। যদি ভালোবাসো আমায়,  খুজতে বেরিও না পথে, আমি নিমজ্জিত হলাম অসহায়ত্বের পঙ্কিলে, রেখে গেলাম শুধু ক্ষীনতম পরিচয়, আর আমার অবুঝ প্রেমের হাহাকার।

কবিতারা বড়ো আত্মহত্যাপ্রবণ : অর্পন দে



যে কবিতাগুলো তোমার উদ্দেশ্যে লিখেছিলাম
পূর্ণতা পাবার বিশ্বাস নিয়ে
আজকাল ব্যর্থ হয়ে তারা বড়ো আত্মহত্যাপ্রবন ।

যে শব্দগুলো তোমার হাসির সঙ্গতে অজান্তেই মর্মের জমিন খুঁজে আসতো চাঁদের আলোয় ।
তুমি সংগোপনে সঙ্গ ছাড়ায় তারা আজ প্রতিবন্ধকতায় আরষ্ঠ ।
প্রতিটি অক্ষরও তাই পৃথক পৃথক রঙ নিয়ে বাঁচে !!!
ওই সুবাস রঙগুলির আপাতকোণে মিশে থাকে একরাশ অন্ধকার ...

প্রতি পংক্তির অভিনিবেশ যে কল্পনার উপকূল দিয়ে তোমার মনের আলাস্কা ছুঁয়ে এসেছিল ....
সেই খণ্ড খণ্ড অবশেষ জুড়ে নেমে আসে হাহাকারের অপচ্ছায়া ...
তাই শেষ লগ্নে কবিতারা অপূর্ণতার কারণ বিশ্লেষণ করে ...
উত্তর হয়তো ফোড়নের সন্ত্রাস নতুবা তোমার সৌন্দর্যের মহাকাশে তা নিত্যন্তই মূল্যহীন !!!

ইদানিং কোনো অজ্ঞাতনামা কবি তাই ইনসোমনিয়ায় কবিতার বদলে কষ্ট আঁকে সকলের অগোচরে ...
বোধহয় কষ্ট আড়ালকে ভালোবাসে বলে ...

বৃষ্টির ধ্বনি : মৌ সাহা




ক্লান্তিহীন শুনশান শহরের বুকজুড়ে বিষাদময় প্রহর,
অবিরাম গতিতে ছুটেচলে নির্দিষ্ট সময়।
ল্যাম্পপোস্টের ক্ষীণ আলোয় অচেনা ঝিঁঝিঁ পোকাদের শোরগোল,
ভেসেআসা করুণস্বরে সাইরেনের সুর।
শ্রাবণধারায় ভিজে পরিশ্রান্ত নীড়হারা পাখি।
আনমনে ভাবে মন কত অলীক কল্পনা,
মৃদু আলোয় বৃষ্টির ফোঁটায় অবারিত প্রশ্নের ধারাপাত।
ঘুমন্ত শহরের বুকজুড়ে মানবতার আর্তনাদ ভেসে আসে।
ভেজা শরীর বেয়ে নেমে যায় অতৃপ্ত বাসনা,
কারা যেন ফিসফিস করে বলে তুমি নিষ্পেষিত।
ধোঁয়াহীন কফির মগে উষ্ণতার ছোঁয়া জাগে।
খুঁজেফেরে বিশ্বস্ততার ছায়াশীতল পরশ মাখা ভোর।

আলো-ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। উনিশ ।।

নদীর পাশে এসে একবার দাঁড়ালেই হলো। কত কথা যে মনে পড়ে যায়। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, আমার সব হারানো অতীত নদীর শাখাপ্রশাখার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বরং এর উল্টোটাই। কিন্তু তবুও নদীর হাত ধরে আমি অনেক অনেক দূরে চলে যাই। আমার ফেলে আসা পথ। আসলে আমার জীবনের বেশিরভাগটাই নদীকে পাশে নিয়ে কেটেছে। ঠিক একইভাবে গাছের পাশে দাঁড়ালেও আমার অনেক কিছু মনে পড়ে যায়। এক একটা পাতা খসে পরে আর আমিও একটু একটু করে পিছনে চলে যাই। আসলে গাছ নদী ----- এসবই এক একটা প্রবাহ। ঠিক মতো পা মেলাতে পারলে আমরা যেখানে খুশি উড়ে যেতে পারি।


।। কুড়ি ।।

আমাদের ছাত্রজীবনে আমরা শীতকালের পুরোটাই ঘুড়ি উড়িয়ে কাটাতাম। নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে আমাদের বাৎসরিক পরীক্ষা হয়ে যেত। এরপর দুপুর বিকেল জুড়ে চলত আমাদের ঘুড়ি ওড়ানো। একসঙ্গে অনেকজন মিলে নয়। দুজন কি চারজনে আমরা কিছু খেয়েই বারোটা নাগাদ ধান কাটা মাঠে নেমে পড়তাম। একটু দূরে দূরে আমরা বসে পড়তাম যে যার নিজের নিজের ঘুড়ি নিয়ে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে, আমরা ঘুড়ি ওড়াতাম অথচ কাটাকাটি খেলতাম না। এইভাবেই আমাদের মনে ছোটবেলা থেকেই কেটে দেওয়া, ছিঁড়ে দেওয়া প্রভৃতি বিষয়গুলো স্থান পায় নি।