নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আমার গল্প লেখা এখনো শেষ হয়নি :রীনা চৌধুরী




আমার গল্প লেখা এখনও.... শেষ হয়নি। সেই প্রথম শুরু ছিল গল্প লেখার,আর আজও লিখে চলেছি। তারপর থেকে কেবল গল্প লিখেছি.... কেবল গল্প! যেই গল্পে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি.... শান্ত নদী,বিশাল বিশাল সব পাহাড়,কিছু মনোহরন করা জঙ্গল,সে আরও অনেক দৃশ্য আছে,অনেক রকম ঘুরে বেড়ানোর পথ.... এই ধরো যেমন পথ খুঁজতে বাঁক এসেছিল কত্ত। সেদিনের গল্প লেখার শুরুতে পথের দিশা দেখিয়েছিল কোনো এক আগন্তক। আর ঠিক সেখানে,সেখানেই... সমাপ্তির সূচনা ছিল অহেতুক। বোঝার ভুল?নাহ্ জানিনা কার। শুধু জানি  একজন আগন্তক ছিল সে,যার আগমন আর নিমেষেই উঁধাও সম্ভব। ঠিক যেমনি করে নৌকাডুবি ঘটেছিল কোনো এক ঝড়ের রাতে।  দেখো আমার গল্প লেখা এখনো...শেষ হল না।আর হ্যাঁ গল্প....আমি লিখবোই। তা সে হোক না,অল্প অল্প করে একটা গল্প লেখার চেষ্টা; ঠিক যেমন বিন্দু বিন্দু তে সিন্ধু গড়ে ওঠে।  আমিও লিখবো, গড়ে তুলবো একটা মন মতো গল্প। তা হোক না সেই গল্পে...পাহাড় এর রঙ এক্কেবারে ফিকে,রঙচটা। হোক সেখানে নদীর উচ্ছ্বাস কোনো এক মোহনার কাছে মাথা নত করে শান্ত হয়েছে। অথবা ধরো যে জঙ্গল,বনভূমি আমার মন কেঁড়ে নিতো এক  লহমায় সেটাও এখন ব্যার্থ;তা কেবল শূন্যতা পরিপূর্ণ,ধূঁ ধূঁ করছে ওই ফাঁকা স্থান টা। তাহলেও কোনো ক্ষতি নেই।  আর,হ্যাঁ সর্বোপরি আমাদের সেই...হাতে হাত না রেখে হেঁটে যাওয়া সেই সমুদ্র টা হোক উথ্থাল.... তার উন্মাদনা....কেবল প্রশ্রয় পাক আজ। আর আমাদের সাজানো গল্পটা না লেখাই হয়ে থাক।। 

একশো আট :অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য




গুহা চিত্র, প্রদোষ মিত্র, বাসে ভর্তি লেডিস সিট
ইয়ে দোস্তি, খাটে মস্তি, প্রেমে পড়তে কঠিন গিঁট ।

যা নিষিদ্ধ, অকাল বৃদ্ধ, আহা বৌদি পাড়ার ক্রাশ
অতি শান্ত, কি বৃত্তান্ত? কাশি কমতে চবনপ্রাশ !


যথা ইচ্ছে, জানান দিচ্ছে, জ্যামে আটকা আরাম যান
হেবি ফরসা, গুরুই ভরসা, বেবি ধরতে শারুক্ষান !

জমে যুদ্ধ, লাফিং বুদ্ধ, দামে তুঙ্গ বাজার হাট
যাহা দৃশ্য, পুরো নিঃস্ব, গোটা লাইফে একশো আট ।

রেখে উহ্য, দারুণ বুঝছো, ছবি ও সই, মানুষ ক্লোন
এত কান্ডে, এ ব্রহ্মান্ডে, একা হচ্ছে অনেক জন !

জানতে চাও: অভিষেক কর





জানতে চাও, আমার আর কি ইচ্ছা করে?
কাঁদতে। হ্যাঁ খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে।
আমাদের রোজ না-দেখা-হওয়ার জন্য কাঁদতে ইচ্ছা করে।
প্রত্যেকটি বন্ধুর বাড়ির নিমন্ত্রণে একসাথে যেতে না-পারার জন্য কাঁদতে ইচ্ছা করে,
আমাদের ব্যাপারে সবাই মানে এই পৃথিবীর সব্বাই কে জানানো-হয়নি বলে কাঁদতে ইচ্ছে করে।
তোমায় চুমু খাওয়ার ইচ্ছে হয় আর তখন তোমায় না-পেলে কাঁদতে ইচ্ছে করে;
তোমার জ্বর হলে, তুমি কোথাও হোঁচট খেলে, তুমি বিষম খেলে—
কাঁদতে ইচ্ছে করে।
তোমার মাথা-ব্যথা হলে, মনখারাপ হলে, তুমি কোথাও ঝামেলা করে এলে,
তুমি ভীষণ মদ খেলে বা মিছিলে পুলিশের মার খেলে—
আমারও কাঁদতে ইচ্ছে করে।

যেমন ভাবে মন-শরীর-হাসি বা কামরস— প্রেমের অজুহাতে তোমার নামে লিখে দিয়েছি...
তেমনই আমার চোখ বেয়ে নামা প্রতিটি মুক্তধারা তোমায় উৎসর্গ করতে চাই।

নাঃ তোমাকে দোষী করে কান্নাকাটি করব না
তোমায় প্রেম করে, তোমার কষ্টগুলো অর্ধেক-অর্ধেক করে ভাগ করে নিতে চাই।
ব্যথা দরুন কান্না আমার হোক, স্বস্তির অধিকারী তুমি হয়ো। প্লিজ!

দুই পৃথিবী ও ভারতবর্ষ :কৃপা বসু





নাসির দার মা মারা গেছেন আজ তিনদিন হলো, সুইসাইড করেছেন, বাড়ির বাগানে আগাছা ঘাস পোকামাকড় পরিষ্কার করার বিষাক্ত কালো তেল খেয়ে। নাসির দার মাকে জানতে গেলে আমার কিশোরী বেলায় যেতে হবে আপনাদের, অর্থাৎ যখন আমার বয়স ষোলো কি সতেরো, সেই সময়ে, রাজি? চলুন টাইমমেশিনে করে ঘুরে আসি....

"মা ওই বাড়ির বউটা, ওইযে নতুন এসেছে গো, কি ভালো মাংস রান্না করতে পারে, কি ভালো গন্ধ বেরোয়, আহা! তুমি কেন পারোনা"

"বউটা কিসব ভাষা! জেঠিমা বলে ডাকবি"।

আমাদের পাড়ায় একটা রেওয়াজ ছিল যে ফ্যামিলি নতুন আসতো পাড়ায়, তারা মোটামুটি আশেপাশের বাড়িগুলোয় কোনো এক সন্ধেবেলায় গিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতো চপ মুড়ি চা সহযোগে।

 এই ধরুন ফেসবুকে মিত্র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নতুন বন্ধুরা ইনবক্সে যেমন হাই, হ্যালো পাঠায়, তারপরেই কথা বলতে বলতে অনেকেই বন্ধু হয়ে ওঠে, অনেকে হয়না তেমনই ব্যাপারটা...

যাকগে নাসির দার মাও এভাবেই এলো, শুরু হলো গল্প, একটা প্রেমের গল্প, একটা রাজনীতির গল্প, একটা ধর্মের গল্প, একটা ডিপ্রেশন, আর নাসির দার মার মারা যাওয়ার গল্প....

জেঠিমা প্রথমবার বাড়িতে এসেছিলেন এক বাটি গরম গরম মাংস নিয়ে, আমি মনে মনে ভাবলাম "আরে এই বউটা আমার মনের খবর কেমন করে জানলো! বউটা কি জাদু বিদ্যা জানে?"

এরপর মাঝেমধ্যেই জেঠিমার বাড়ি যাওয়া শুরু করলাম, বেশিরভাগ সময় তিনট কারণে যেতাম। এক, না পড়তে বসার কারণে মা বকাঝকা করলে কিংবা মারলে নাসির দার বাড়ি ছুট দিতাম। জেঠিমা আমায় কাছে ডাকতো, মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের ছোটবেলার, গ্রামের বাড়ির গল্প শোনাতো।

জেঠিমাকে কয়েকবার ভুল করে মা বলে ডেকেছিলাম, আমায় কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরেছিল, বলেছিল "আমার কোনো মেয়ে নেই, তুই আমায় মা বলেই ডাকিস কেমন"...

এক একসময় নিজের মায়ের থেকেও দ্বিগুন কাছের মনে হয়েছে নাসির দার মাকে, এটা সত্যি বলছি বাই গড।

দুই নাম্বার কারণটিতে আসা যাক জেঠিমার বাড়ি যাওয়ার। নতুন নতুন খাবার টেস্ট করতে।

 আর তিন...আর তিন নম্বর কারণ অফকোর্স নাসির দা!

জেঠিমার ছেলে নাসির দা! যাকে দেখলেই আমি ঘেমে যেতাম, যার নাম শুনলে খাট থেকে ডিগবাজি খেয়ে নীচে আছড়ে পড়তাম, একটুও লাগতো না আমার। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভিজে যেতাম, ভেতর ভেতর কিরকম যেন একটা হতো, বলে বোঝাতে পারবো না, গায়ের লোমগুলো খাড়া হয়ে যেতো।

 তখন তো ফ্রক পরতাম, সারারাত জেগে পায়ে পা ঘষতে ঘষতে কোমরের উপর উঠে যেত ফ্রক, চোখ নামিয়ে নিতাম, গাল দুটো লাল হয়ে যেত, কি লজ্জা পেতাম! এই অবস্থায় যদি নাসির দা আমায় দেখে ফেলে, তাহলে কি করবে আমার সাথে! বারবার ঢোক গিলতাম, জল খেতাম,বাথরুমে যেতেও ভয় পেতাম, যদি নাসির দা দাঁড়িয়ে থাকে বাথরুমে।

সপ্তাহে দুটো দিন নাসির দার বাড়ি অঙ্ক করতে যেতাম, সেই প্রথম ফেয়ার এন্ড লাভলি কিনলাম, 5টাকার পাউচ। চোখের তলায় কালি ঢাকতে জনসন বেবি পাউডার ভরসা ছিল, পড়তে যাওয়ার পার্টিকুলার দিনগুলোয় ফেয়ার এন্ড লাভলি ঘষে, আঙুলের ডগায় মার লিপিস্টক থেকে লাল রং নিয়ে ঠোঁটে ডলে নিতাম...

ওরা কালিপুজোয় টুনিলাইট লাগাতো, আর ঝুলনযাত্রায় ওদের বারান্দায় রাধা কৃষ্ণ সাজাতাম।

কিন্তু শবেবরাতের দিন বাবা আমায় মোমবাতি জ্বালাতে দিত না, নাসির দা ওদের ঘরে মোমবাতি জ্বালাতো, কি পবিত্র আহা! ফ্যালফ্যাল করে দেখতাম, আমার কান্না পেতো, খুব কান্নাকাটি করায় বাবাও পারমিশন দিয়েছিল মোম জ্বালানোর।

 আমি ঠাকুর ঘরে দেশলাই ঘষে ঘষে মোম জ্বেলেছিলাম, আমার নাসির দা যেন সেদিন থেকেই ঠাকুরের আসনে ঠাকুরের পাশে বসে রোজ প্রসাদ খেতো, আমি দেখতাম, দেখতে দেখতে আমার চোখ পুড়ে যেত, আহা কি শান্তি!

স্কুল থেকে ফেরার সময় একদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম নাসির দা তপস্যা দিকে চুমু খাচ্ছে, সেদিন আর ফুচকা ঘুগনি কিচ্ছু খাইনি বাড়ি ফেরার পথে। সোজা বাড়ি এসে দুটো জুতো দুদিকে ছুঁড়ে মারলাম, চুলের বিনুনি টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেললাম, ভাত খাওয়ার জন্য মা কানের কাছে সমানে ঘ্যানঘ্যান করছিল, রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ভাতের থালাও টেনে মাটিতে ছড়িয়ে দিলাম।

মা দুমাদুম সাত পাঁচ না ভেবেই পিঠের মধ্যে কয়েক ঘা বসিয়ে দিলো। সেদিন আর আদর খেতে জেঠিমার কাছে যাইনি, খটখটে রোদ ভাঙা ছাদের কোনায় হাঁটু গেড়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলাম।

তখন থেকে চাইতাম ওই মেয়েটা মরে যাক, ওর রূপ নষ্ট হয়ে যাক, ও নষ্ট হয়ে যাক, তপস্যা দিকে সামনে পেলে মাথায় শিল নোড়া দিয়ে মেরে চিবিয়ে খেয়ে নেবো...

কিন্তু হঠাৎ একদিন ঝড় উঠলো, দিনে দুপুরে ঘোর অন্ধকার নেমে আসলো। জেঠিমার বাড়ির সামনে কান্নার রোল উঠলো, জেঠিমা ঘরের ভেতর শুয়ে আছে, চোখের জায়গায় চোখ নেই যেন কোনো শিল্পী নিখুঁত ভাবে তিনকোনা কেটে দুটো পাথর বসিয়ে দিয়ে গেছে।

তপস্যা দি কাঁদছে, মাথা ঠুকে ঠুকে কাঁদছে, বুক চাপড়ে চাপড়ে কাঁদছে, আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে তপস্যা দিকে জড়িয়ে ধরি। ওর মাথায় লাগছে তাইনা! ওর মাথা আমার কোলে নিয়ে বলি...

 "ও তপস্যা দি আমি আর কোনোদিনও তোমার খারাপ চাইবো না, এই তোমার গা ছুঁয়ে প্রমিস করছি, আমি চাইবো না কখনো তোমার রূপ নষ্ট হয়ে যাক। তুমি প্লিজ কেঁদো না। আমি ভালো হয়ে যাবো, খুব ভালোবাসবো তোমায়, তুমি দেখো"...

তপস্যা দির কান্নার কারণ!!!

নাসির দা মারা গেল দুম করে, মাছ আনতে যাচ্ছিল সেদিন, বাজারের ব্যাগ ঝুলিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিল মেইন রোডের উপর দিয়ে, সেই সময় জেঠু ফোন করেছিল, "ছেলের শেষ চিৎকার, সাইকেল ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাওয়ার শব্দ তার বাবা শুনেছিল ফোনে।

আমার নেমন্তন্ন ছিল দুপুরে জেঠিমার বাড়ি। আর কোনোদিনই জেঠিমার বাড়ি খেতে যাইনি আমি। জেঠিমা আর কোনোদিন কাঁদেনি, পেঁয়াজ কাটতে কাটতেও না, আঁশ বটিতে হাত চিরে ফালাফালা হয়ে গেলেও না। তিনবছর হলো জেঠু মারা গেছেন ক্যান্সারে, জেঠিমা তখনও কাঁদেনি, শুধু নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল চিরকালের জন্য।

পেনশনের টাকায় জেঠিমার কোনোমতে কেটে যাচ্ছিল। আমি মাঝেমধ্যে বিকেল করে ঘুগনি কিনে নিয়ে যেতাম জেঠিমার কাছে, জেঠিমার চুলে তেল দিয়ে আঁচড়ে দিতাম, গালে গাল ঘষে ঘুগনির বাটি জেঠিমার মুখের কাছে ধরতাম। খেতে চাইতো না বুড়ি, মুখ ঘুরিয়ে নিত, আমি ইচ্ছে করেই বারবার মা বলে ডাকতাম সেইসব মুহূর্তগুলোকে।

সাইকোলজিতে বলে কিছু ডাক কিছু গলার স্বর আমাদের সাবকনসাস মাইন্ডে চিরকালের জন্য গেঁথে যায়, সেই আওয়াজ গুলো শুনলে আমরা তৃপ্তি পাই...

 সারাদিন ঝাঁঝালো রোদ্দুরে বাগানে বসে থাকতো আকাশের দিকে মুখ করে জেঠিমা, কি জানি কি ভাবতো!

তিনদিন হলো জেঠিমা সুইসাইড করেছেন, ডিপ্রেশনের শিকার, বহু বছর ভুগছিলেন কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। যা হোক এতদিনে নাসির দার সাথে জেঠিমার আলাপ হবে, জেঠিমা হয়তো আজ স্নান করে হেঁসেলে ঢুকবে, মাংস রাঁধবে, সিমাই, লুচি, আরো কত কি!....

নাসির দা খুব খেতে ভালোবাসতো কিনা!

নাসির দা চলে গেছে অনেক বছর হলো, এখন এই মুখটাও ভালো করে মনে পড়েনা, শুধু তপস্যা দি আর নাসির দার চুমু খাওয়ার দৃশ্যটা এখনো ভেসে ওঠে, আমি কেঁপে উঠি যখন শীর্ষ আমায় চুমু খায়।

 শীর্ষের গায়ে খুব চেনা চেনা একটা গন্ধ আছে, যেটা নাসির দা যখন পাশে বসে উপপাদ্য করতে বলতো, ভুল হলে না বকে বুঝিয়ে দিতো, মুখ টিপে হাসতো, তখন পেতাম। শীর্ষর চুলগুলো ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া, গায়ের রং তামাটে, নাক লম্বা, হালকা দাঁড়ি গোঁফ আছে, এক্কেবারে নাসির দার মতো দেখতে শীর্ষ।

রাতে যখন নিজের রুমে শুয়ে শীর্ষকে ভাবতে ভাবতে গায়ের জামা সরিয়ে ফেলি, নিজের হাতে নিজের বুক চেপে ধরি, তখন শীর্ষ কেমন করে যেন নাসির দা হয়ে ওঠে। আমি শীর্ষের ভেতর নাসির দাকে দেখছি আবার নতুন করে....

আমার চোখের সামনেই শীর্ষ নাসির দা হয়ে উঠছে, আমি আটকাতে পারছিনা...

(ধর্ম আনার পেটের ভাত যোগায় না, আমার নিজের পেটের ভাত জোগাড় করার ক্ষমতা আমি রাখি। তাই আমি নিজে কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নৈ, মানবধর্ম ছাড়া)




আমাদের দেখা হয়েছিল :ইন্দ্রাণী






একটা বিচ্ছিরি বিকেলে আমাদের দেখা হয়েছিল।

মে মাসের শেষের দিকে, এক প্যাচপ্যাচে ঘেমো ভিড় বাস।
রাস্তায় তখন শাসক দলের বিজয় মিছিল, ট্র্যাফিক বড্ড স্লো,
থেমে থেমে বাস এগোচ্ছে। তোমার চোখ আটকে ছিল মোবাইলের স্ক্রিনে। আর আমার, তোমাতে
রুবি আসতেই হন্তদন্ত হয়ে নেমে পড়লে, জানলা দিয়ে দেখলাম ফুলের দর করছ;
এরপরের কয়েক দিন আর দেখিনি তোমায় বাসের লেডিস সিটে।

বোধ হয় সপ্তা খানেক পর, আগের বাসটা মিস করে স্ট্যান্ডে বসে আছি
ঘড়ির কাঁটা ছয়ের ঘর পেরিয়ে গুটিগুটি পায়ে সাতের দিকে এগোচ্ছে
কমলা রঙের কুর্তি এসে বসল পাশে। আড়চোখে দেখলাম, 'তুমি'
আমতা আমতা করে বললাম, 'তা সেদিন, ফুল কিনলেন শেষমেশ?'
'আমায় বলছেন?' বড় বড় চোখে জিজ্ঞেস করলে।
"হ্যাঁ, মানে ঐ যে, গত শুক্রবার আপনি রুবি তে নেমে রজনীগন্ধা দাম করছিলেন না.. সেদিনের কথা বলছি"

পরবর্তী চৌত্রিশ সেকেন্ড তুমি কটমট করে আমার দিকে চেয়েছিলে।
অতঃপর, 'কোনো কাজ বাজ নেই না? মেয়েদেরকে ফলো করে বেড়ান, হ্যাঁ...?'
আরও অনেক কিছু বলে যাচ্ছিলে... আমার শোনা হয় নি।
আমি শুধু দেখছিলাম, রেগে গেলে তোমার চিৎকারের সাথে সাথে দুচোখ দিয়ে জলও নেমে আসে, কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই।
তুমি ক্লান্ত হয়ে থামলে, বললাম, "কান্নাটা শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী, আমিও মাঝে মাঝেই কেঁদে থাকি"
ভেবেছিলাম নির্ঘাত একটা চড় জুটবে এবার, কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তুমি ফিক করে হেসে ফেললে।

বাসে উঠে পাশাপাশি বসল, কালো শার্ট আর কমলা কুর্তি।
আলাপ দীর্ঘায়িত হল। জানলাম, সেদিন রজনীগন্ধাই কিনেছিলে, তোমার মায়ের প্রিয় ফুল।
কবিতা ভালোবাসি শুনে হাতে ধরিয়ে দিলে 'পূর্ণেন্দু পত্রী'।
রুবি এসে গেল। নামার আগে বললে, 'বইটা ফেরত দেবেন কিন্তু'
ঐ অব্দি বলেই মিশে গেলে রাস্তার ভিড়ে; কীভাবে, কোথায় বইটা দেব, কিছুই না বলে। খেয়াল পড়ল নামটাই যে জানা হয়নি এতক্ষণেও...
বইটা খুলে দেখলাম তার প্রথম পাতায় লেখা আছে, "লাবণ্য মুখার্জি, 720817****"

বাস এগিয়ে চলল, আমি মনে মনে বললাম," আমাদের আবার দেখা হবে, কোনো এক বিচ্ছিরি বিকেলে।।"


তুমি নেই বলে:তপন কুমার মাজি






তুমি নেই বলে...
ক্ষয়ে গেছে তিলে তিলে স্বপ্নময় জীবন,
দিনে দিনে পাল্টে গেছে জীবনের প্রতিটি মৃত্যুর ধরণ--

তুমি নেই বলে...
রাতজাগার পরিধিটা বাড়তে বাড়তে অনেকটাই গেছে বেড়ে,
একে একে সুখেরা পালিয়েছে পিঞ্জর ছেড়ে--

তুমি নেই বলে...
জীবনের যত গল্প রয়ে গেছে অসমাপ্ত,
দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণারা এসে ভিড় জমিয়ে বাড়িয়েছে একাকীত্ব--

তুমি নেই বলে...
চোখের কোণে শোনা যায় অবিরত
অশ্রুদের নীরব চিৎকার
গোছানো ভাবনারা হয়ে গেছে এলোমেলো, একাকার--

তুমি নেই বলে...
সময়ের ঘেরাটোপে মুহূর্তেরা উঁকি মারে স্মৃতির জানালায়,
রঙিন ছবিরা সব মুছে গেছে হৃদয় হতে
বেঁচে আছে শুধু মনটা
বোবা কান্নায় !