নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

"আজ-কাল" : রিফাত ফাতিমা তানসি







কাল ছিল;
ঝলসানো জোৎস্নামালার সাথে লুটোপুটিতে রাত লুকানোর দিন!
কাল ছিল;
পড়ার ছলে বায়োলজি খাতার ভাঁজের গোলাপপাতার গন্ধ শোঁকার দিন!
কাল ছিল;
উদোম পায়ে সাগরতীরে সোনা বালির সাথে কানামাছি খেলার দিন!
কাল ছিল;
বদরাগী ভুতুমপ্যাঁচার সাথে নাকি নাকি ঢঙ্গীসুরে ইটিশপিটিশ করার দিন!
কাল ছিল;
কব্জি ডুবিয়ে তোমার ক্যানভাস মূর্তিতে ইচ্ছেমতো রঙ ভাসানোর দিন!
আর আজ!
আজ যে বড্ড মন খারাপের দিন!
আজ যে আমার মন পালানোরও দিন!
আজ আমার একলা পথের একলা পথিক হওয়ার দিন!
আজ আমার মনের ঘরে তালা লাগিয়ে চুপটি করে বসে থাকার দিন!

এসরাজের সুরে : রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়





রাতের শরীরে আঁসটে গন্ধ ৷ তোমার রোজকার আকাঙ্ক্ষিত চুম্বনে , রমণের ঘ্রাণজ বাষ্প ভিজিয়ে দিয়ে যায় আমার পাহারতলি , উপত্যকা ৷ জ্বরে পুড়তে পুড়তে অরন্তুদ মুহুর্তগুলো ছেঁকে , ছুঁড়ে দিই নিভন্ত সূর্যের বাঁকে ৷ সোহাগী আতরে ঠোঁট ডুবিয়েছে অমার বেলোয়ারি  গমক ৷ আমার শরীরে ডুবতে ডুবতে সন্ধ্যা প্রসব যন্ত্রণায় লেপে দেয় বিছানার সুখ ৷ 

যাপনের ঘ্রাণে মসগুল উষ্ণতা কোথাও এসরাজের সুরে বেজে চলে বিলম্বিত লয়ে শরীরী আঙ্গিয়ায়

অটোওয়ালা : রাণা চ্যাটার্জী





অটোওয়ালার হাতে সত্তর টাকাটা এমন ভাবে গুঁজে দৌড় দিলেন পালবাবু  যেনো আর বেশি চাইতে পারার অবকাশ না পায় চালক ! অবশ্য অন্য কারণটাই প্রধান,ওই যে স্টেট বাসটা ছেড়ে যাচ্ছে সেটাকে  কোনরকমে ধরতেই হবে আজ । 

প্যাচ প্যাচে কাদায়,ভিড় ভাট্টার মধ্য দিয়ে ততক্ষণে এই একমাত্র অবলম্বন বাসটি গড়াতে গড়াতে গতি নিচ্ছে । 'আরে দাঁড়াও দাঁড়াও করতে করতে অফিস ব্যাগ ,বগলে ছাতা নিয়ে ড্রাইভারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবেন কি তখনও রাস্তা ক্রশ করে উঠতে পারেন নি বাইক ,অটো ওলাদের লাগাতার  লাইনে। ভিড় যতো বাড়ছে , বাসটা না পাবার গ্লানি ভ্রু কুঞ্চনে ততো  ধীর্ঘ হচ্ছে  ইরিগেসন দপ্তরের পাল দার ! আর থামে প্যাসেঞ্জারে  উপচে পড়া বাস ! ভুঁড়ি মোটা ট্রাফিক পুলিশ , দুবার লাঠির বাড়ি মারতেই চাকা গতি বাড়িয়ে এলাকা ছাড়ার প্রস্তুতি । তবুও ছুটেই চলেছেন যদি সামনের মোড়ের যানজটে, আর একটু দাঁড়ায় বাসটা ! 

"আরে ও দাদা, ও দাদা দাঁড়ান দাঁড়ান ছুটবেন না "আশ্চর্য্য তো ,  সেই ছেড়ে আসা অটোওয়ালাটার গলা না ! " আচ্ছা বজ্জাত তো ,উঠে থেকে আশি টাকা নেবার কথা বলে আসছিল" কিন্তু সত্তরের বেশি এক পয়সা দেবো না জিদ করে ছিলো পাল দা , নেমে দিয়েওছে সেটা,তবুও কিনা পিছু ধাওয়া ! ছুটতে ছুটতে এই কথা গুলো ভাবছিলো আর নাহ্,  পারছি না ,ছেচল্লিশ টা বসন্ত পার করা পালদার বুকের ভেতর টা ধরাস ধরাস করছে ,এই বুঝি হৃৎপিণ্ড ছিটকে বেরিয়ে আসবে ! বাসের আশা ছেড়ে চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে পড়তেই সেই অটো ওয়ালার সক্কাল সক্কাল এক মুখ পান বজবজে গলা ! 

"আরে কি হয়েছে কি তোর ! তোকে তো ভাড়া মিটিয়েই এলাম "একটু ক্ষেকিয়েই কথা গুলো বলে ফেললো  পালদা  ! সকাল থেকেই তার মেজাজটা খিচড়ে দিয়েছে অফিসের বড়ো বাবুর একটা ফোন "হটাত নাকি ইন্সপেকসন আসছে , দশটার আগে অফিস আসতেই হবে !" অন্যদিন খেয়েদেয়ে , সাড়ে নটায় বেরিয়ে, পরের বাস ধরে পৌনে এগারোটায় পৌছানো অভ্যাস , তাই আজ এই ৮-৫০ এর স্টেটটা ধরার এত্তো তাড়া ছিলো , ! 

"আরে দাদা তুমি খামোখাই রাগ করছো আমার ওপর" হাতে খৈনি ডলতে ডলতে উজ্জ্বল মায়াবী চোখে তাকিয়ে কথা গুলো বললো অটোওয়ালা ছেলেটা । কিংকর্তব্যবিমূঢ় পাল ঘাড় উঁচু করে ওর দিকে তাকাতেই সে বললো , 'দাদা বসো , আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি তোমায় , আরে চিন্তা করো না দাদা বসো ,কোথায় তোমার অফিস শুধু সেটা বলো "
অলরেডি সকালে চৌদ্দটাকার  পরিবর্তে সত্তর খসেছে , আবার অটোতে মিনিট চল্লিশের পথ মানে মিনিমাম দুশো ! এই চিন্তায় বিভোর হওয়ার আগেই অফিস ব্যাগটা ধরে , "আরে এসো তো , সে আমায় না হয় কিছু দিতে হবে না "বলে অটোতে বসিয়ে স্টার্ট দিলো ! 

চিরটা কাল এই সংখ্যাতত্বের আঁকিবুঁকি হিসাবে সংসার চালানোর মতো কঠিন কাজে  জর্জরিত, পা টিপে চলা  মধ্যবিত্ত এই ছাপোষা মানুষ পালদা।  আর না করেন নি মুখে , করার উপায় ও খুব একটা ছিলো না । এটাই তাকে স্বস্তি দিয়েছে যে বেশি টাকা লাগলেও , দশটার আগে অফিস পৌঁছে গেলে অন্তত তার ইমেজটা ঠিক থাকবে অথরিটির কাছে । এই ভাবতে ভাবতেই ক্যাঁচ করে আমতলা মোড়ে আটকে গেলো অটোটা , সামনে তীব্র জটলা , ভিড়ে থিকথিক করছে ! অটোওয়ালা ছেলেটি ,  নেমে পরিস্থতি বুঝে এসে জানালো, কেলো হয়েছে , একটু আগে স্টেটবাস টা এক পথচারি কে ধাক্কা মেরেছে , স্থানীয়রা পথ অবরোধে সামিল ! 
হে ভগবান , কি যে আছে কপালে একথা ভাবতেই অটোওয়ালার নিশ্চিন্ত অভয়বাণী "দাদা সবে নয়টা বেজে সতের মিনিট ঘড়িতে , আমি ভেতরের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি  আপনাকে , বিন্দাস বসুন চিন্তামুক্ত হয়ে ! "

"আচ্ছা কপালের গেরো লেগেছে তো আজ !তবে তো ওই স্টেট বাসটা না পেয়ে ভালোই হয়েছে ! অফিস পৌঁছানোর বারোটা 
বেজে যেত ,"এসব সাত পাঁচ ভাবনা ভাবতে ভাবতে গলি ,গলি তস্য গলি দিয়ে এগুতে লাগলো অটো।
কাউকে পেমেন্ট দিতে হলে ,সে বাস,ট্রেন অটো যাকেই হোক না কেনো ,অনেক আগে থেকে কিছুটা টাকা বের করে জামার পকেটে রেখে দেবার বহু পুরনো অভ্যাস পাল দার ।কিন্তু একি কাণ্ড ! প্যান্টের পকেটে  মানি ব্যাগ হাতড়ে তো চক্ষু চড়ক গাছ !কেবল রুমাল টা !তবে কি আনেন নি !উঁহু তা হয় কি করে ,সকালে নিজে ওখান থেকে সত্তর টাকাটা নিয়ে  মিটিয়েছেন ! তবে কি রাস্তায় পরে গেলো ! চুরি নয় তো ,আরে কি সর্বনাশ আজ ছাব্বিশ তারিখ,এল আই সি প্রিমিয়াম ৫৪৩৫ টাকা গুনে কালরাতে গুনে  মানিব্যাগে রেখেছেন ! এই সব স্বগতোক্তির মতো বিড় বিড় করছেন আর কল কল করে ঘামছেন পাল দা !

ইশ এই অটোওলাকেই কি বলবে !এত্তো হয়রানি করে বেচারা নিয়ে আসছে ।লজ্জায় ,সংকোচে কাঁচুমাচু মুখ করে থম মেরে বসে রইলো কিছুক্ষণ ভেতরে !

"আরে ও দাদা ,ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি ! আরে দেখুন এসে গেছি আপনার অফিস "বলে হাত ঘড়িটা পেছন করে দেখালো নয়টা বেজে আটচল্লিশ ! ছেলেটির স্বগর্ব ঘোষণায় আরো যেন থমকে গেলো পালদা ,ওকে কি যে উত্তর দেবে ! নিচে আড়ষ্ট ভাবে নেমে আমতা আমতা করে দু হাত জড়ো আর  মাথা নিচু করে পালদা বলছেন ,'ভাই আমার খুব বিপদ হয়ে গেছে ,মানি ব্যাগটা খোয়া গেছে " যেই এটা বলা শেষ হয়েছে "আরে মশাই একি করছেন দাঁড়ান দাঁড়ান ,এই নিন আপনার মানি ব্যাগ !আপনি সকালে নেমে যেতেই দেখি পেছনের সিটে ফেলে গেছেন ,আর সেই জন্যই আপনাকে পিছু পিছু "ও দাদা ,ও দাদা করে হেঁকে অস্থির হয়েছিলাম ।"এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে থামলো অটোওলা ! 

ব্যাগ টা হাতে নিয়ে পাল দা তখনও কল কল করে ঘামছেন ,যেন তিনি স্বপ্ন দেখছেন !কেয়ারটেকার চাবির গোছা নিয়ে অফিসের মেন গেট খুলছে ,আর সামনে যেন সাক্ষাত ভগবান রূপে অটোওলা । একটা ৫০০ টাকা জোর করে হাতে গুঁজে দেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন নাছোড়বান্দা অটোওয়ালার কাছে ,কিছুতেই সে বেশি নেবেনা ।ছেলেটি দেড়শো নিয়ে বাকিটা ফেরত দিতে বাধা পেয়ে ,অবশেষে পাল দার পকেটে জোর করে ভরে দিলো বাকি টাকাটা ।অটো টা স্টার্ট দিতে দিতে বললো ,দাদা একটু সাবধানে হাঁটা চলা করবেন ,আর পারলে টিভি বাবু দের কাছে আমাদের ভালো দিকটাও অল্পবিস্তর বলবেন গো "

অফিসে নিজের টেবিলে পৌঁছে এক বুক শ্বাস নিলেন পাল দা ,হাত ঘড়িতে তখন নটা বেজে সাতান্ন মিনিট । রাত্রে গদ গদ হয়ে বড়ো বাবু মিত্র ফোনে খুশির খবর দিলো ,"ভায়া পার্টি দিচ্ছ কবে ,কতৃপক্ষ তো তোমার প্রমোশন দিচ্ছে শিগগিরি !"

জীবন যেমন : গার্গী লাহিড়ী





সবকিছু তেমনই চলছে , যেমন আগে চলত -
যখন তুমি আমার পাশে ছিলে !
আজও মাথা নত করে রাত আসে ,
চোখ বন্ধ করে জেগে থাকে ,
রাতের আকাশে তারারা মহেফিল বসায় ;
ভোরের আলো ফুটতেই ঘরে ফিরে যায় ,
আজও হাঁফাতে হাঁফাতে দিন আসে ;
চোখ কচলাতে কচলাতে জেগে থাকে ,
অলস দুপুর ফেরি করে জীবন !
সূর্যকিরণ ঘরের পথ ধরলে
ক্লান্ত দিন তার ঝাঁপি গুটায়,
আজও কর্তব্য জড়িয়ে থাকে অষ্ঠেপৃষ্ঠে !!
ঘড়ি টিক টিক করে সময় জানায় ,
সব কিছু তেমনই চলছে যেমন আগে চলত ;
যখন তুমি আমার পাশে ছিলে !
ভেবেছিলাম সব রসাতলে যাবে তুমি না থাকলে ;
দাউ দাউ আগুন জ্বলবে চারিদিকে ;
প্রতিটি শ্বাসে ধোঁয়া বেরোবে ;
চেনা চারিধার অচেনা মুখোশে ভরে যাবে ;
কিন্তু সব কিছু তেমনই চলছে যেমন আগে চলত ,
যখন তুমি ছিলে পাশে !
এখন কারণে অকারণে তোমার ছবির সামনে দাঁড়াই ;
ফিস ফিস করে কথা বলি ;
সবার সামনে চোখের বাষ্প গোপন করি ;
কাগজ পত্রে একাই সই করি ;
আর হ্যাঁ , প্রতি রাত্রে নিয়ম করে ঘুমের ওষুধ খেতে হয় !!
বাকী সব কিছু তেমনই চলছে যেমন আগে চলত ,
যখন তুমি আমার পাশে ছিলে !!

কবিতার চারপাশ : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






গত রাতেও আমার কবিতায় এসেছে
একটা চড়ুই, দক্ষিণের দুটো হলুদ বারান্দা,
একটা বিষন্ন নদী, বর্ষার বৃষ্টিতে ভেজা একলা রাস্তা
আজ সকালে তারা কোথাও নেই
কবিতার পথ ধরে আমি তাদের চিনি নি
তারা এমনই আসত নিজের নিজের গান নিয়ে
আমিও যে তাকে দু'একটা শোনাইনি তা নয়

নদী বিষন্ন না হলে ঢেউ চাইব কার কাছে ?
চড়ুই ছাড়া সকালের ক্যানভাসে কোনো রোদ নেই
বর্ষার একলা রাস্তার কাছেই তো জেনে নেব
বাকি রাস্তা হেঁটে যেতে কতবার বসতে হবে

হঠাৎ করে এতটা ফাঁকা জায়গা দেখি নি তো আগে
বুঝতে পারছি না, ঠিক কোথায় দাঁড়াব
এরা সবাই আমার চারপাশে ছিল
আমরা যে খুব কথা বলেছি তা নয়
তবুও ওরা ছিল ওদের মতো করে ------- থাকতেই হয়, 
তা না হলে চোখ রাখব কোথায়?

এপার ওপার: দেবযানী ভট্টাচার্য্য








এত সাজছ কেন! -সবকিছু ভীষন  মানানসই - -আমার সহ্য হয়না- জানইতো-
যেখানে যেমনটি হবার কথ- পোশাক, অলংকার ,রং, ভঙ্গিমা, কেশবিন্যাস , আহ্লাদীপনা -। কেমন নিষ্ঠুর দেখাচ্ছে  তোমাকে- যেন প্রিয় কবিতাটিকে ধর্ষণ করত এগিয়ে আসছে কোন মেলোড্রামাটিক বাচিকশিল্পী। উদ্ধত গ্রীবায় এখনো আটকে আছে শাওয়ারের জলজ আদর । আয়নার কাঁচে  প্রত্যার্পিত একলক্ষ নার্সিসাস চুমুর রিফ্লেক্শনে আমার দুর্বল দৃষ্টি হেরে যাচ্ছে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
সেইসব অলীক আদর গায়ে জড়িয়ে এ নিয়ন শহরে বিজ্ঞাপিত হবার অমোঘ চুম্বকে কাবুলি  বেড়ালের গরগরে সুখ সুখ নম্রতায় এবার তোমার গোড়ালি ছুঁয়ে নেবে পেনসিল হিলের দাম্ভিক  শিখর, হাতের নাগালে এনে দেবে এলিট কাঁধের পেশল উচ্চতায় অনায়াস স্পর্শ !

   একটু আগেই--যখন সোনালী   বিকেলটা নিভন্ত আঁচে ঝিমিয়ে পড়ছিল--সেই পাখিটা আজও এসেছিল -বোধহয় আমার মতই সন্ধ্যেগুলোের আসন্নতায় ও ফেরার পথ হারিয়ে ফেলে--আমি তখন সুগন্ধ পাচ্ছিলাম , প্রসাধন  শেষে ছড়িয়ে দেওয়া শ্যানেল ফাইভের-তুমি কি বেরোবার আগে আসবে একবার! বেডরেস্টটা আর একটু তুলে দিয়ে যাবে কি ! জানলা দিয়ে দেখতাম কোন গাড়ি আজ- কি পোশাক সংগীর। বোধহয়  পাঁচটা বাজে--রোদ্দুর বসন্ত বিকেলের পলাশ রঙ মেখে ছুঁয়ে নিচ্ছে জাললায় রাখা ক্যাকটাসের কর্কশ ত্বক। মৌটুসি পাখিটিও এবার বেশ চঞ্চল-ওর ডিউটি শেষ--এবার তিরতিরে ডানা ওকে ফিরিয়ে দেবে কি প্রিয় কোন পরিসরে!
যাও পাখি--একা থেকোনা- ফিরে যাও আনন্দ কুলায়- অন্ধকার আমার একাকী  জানলায় রেখে দিয়ে চলে যাও।

এবার ফিরবো আমি এগারো বছর- যখন
তোমার চুলে কচুরিপানার তিরতির কোমল প্রশ্রয় অনাঘ্রাত সৌরভ নামিয়ে জলোচ্ছ্বাসের মত ভেঙে পড়তো বুকের দামাল অববাহিকা  জুড়ে--যখন তোমার চোখে শ্রাবণ আকাশ জড়ো হলে ফুসফুস বাতাস হারাতো- যখন দক্ষিণ বাতাস বসন্তের খোঁজ নিয়ে এলে কোন্ সে পাগল করা টানে নিরুদ্দেশ- নিরুদ্বেগ-- ঘরের মধুকাল ভুলে বাউল জ্যোৎস্না  কিংবা পলাশ দুপুরে ঘাসে ঘাসে শরীরী আগুন । তখন জারুল রঙা তাঁতের শাড়ি,
তখন হঠাৎ  এলো খোঁপা ভেঙে গেলে ঝিমধরা সুগন্ধী আঁধার- তখন স্বর্ণাভ ত্বকে সহজ বৈভব-চোখের নিজস্ব  ঝিলে তখন নৌকাডুবি -তোমার পরাগরেণু মেখে নেওয়া তীব্র অসময়-।
তখন স্বল্পাহার , ধুলোমাখা গৃহস্থালি  , অভাবের অনিবার্য দিন -।তখন বেসামাল পরিযায়ী ডানার উড়ান- তবুও অজস্র  রাত একত্র উষ্ণ চুমুকে পার হত কবিতায় গানে । আকাশের রঙ ফিকে হয়ে এলে ঘুঘুর মত নরম বুকে মুখ ডুবিয়ে আসতো চন্দনগন্ধী ভোর-।

 যদি জানতাম একটি ডিসেম্বরের ভোরে আমার জীবন থেকে চিরতরে মুছে যাবে কস্তুরী  ঘ্রাণ--বড় কষ্টে সংগৃহীত সামান্য একত্র ভ্রমনপাথেয় অর্থহীন হয়ে যাবে--পাহাড়ী কুয়াশায় পিছল বাঁকে আমি হারাবো আমাদের ধুলোমাটি জীবনের সুখ--আমার চোখের সামনে তিরতিরে কচুরিপানা মুছে নেবে সকরুণ  রঙ- আমাকে ফিরিয়ে দিতে নিরক্ত জীবন অনায়াস ঝাঁপ দেবে লেলিহান
আগুনে ঝর্নায়-!

পরমান্ন  পরমায়ু থেকে চলে গেছে এলাচের ঘ্রাণ-।
হঠাৎই তাকিয়ে দেখি -পড়ে আছি পরাজিত
ঘৃণ্য সরীসৃপ -ক্রমশই ডুবে যাচ্ছি  স্তব্ধ প্রলয়ে।
এই যে অসহ প্রাণ , তবু দেখ অনিঃশেষ লোভ- তোমাকেই  শাপ দিচ্ছি -তোমাকেই পিষ্ট করে তবু পড়ে আছি পরগাছা এক-
স্মৃতির গন্ধটুকু মৃত্যুগামী শরীরে বিছিয়ে-।