নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

একটি অশ্লীল কবিতা: রমা সিমলাই







শুধুমাত্র একখানি অশ্লীল কবিতা লিখবে বলে
ঈশ্বর রাত জুড়ে নগ্ন করেছে নগর-সভ্যতাকে!

মর্গের বরফ-চাদর সরিয়ে মৃত শরীরের হিম-শীতল
নগ্নতাকে পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দিয়ে ওয়াক টেনেছে!

নির্বিকার ঔদাসীন্যে  সূচবিদ্ধ করেছে বছর চারেকের কোমল অঙ্গ,আর্তনাদে যে এখনও নারীই  হয়ে ওঠে নি!

সশরীরে হেঁটে গ্যাছে রক্তপাত, ভ্রূণ - হত্যা, ধর্ষণ, আমিষ বা নিরামিষ অণু থেকে পরমাণু পাপের শরীরে!

তারপর কোনও এক অবিশ্বাস্য দুপুরে
ঈশ্বরের ক্যানভাসে মুদ্রা ভাঙা ছবি ;

 মৃত কোনো মানুষীর বুক থেকে সুধারস পান করে জীবনের মুখোমুখি নগ্ন শিশুটি অনায়াস যুদ্ধজয়ে সেনাপতি সাজে!!

হে পরমপূজ্য বিধাতা !

                    শুধুমাত্র 
একখানি অশ্লীল কবিতার জন্মদাতা হবে বলে, 
এতখানি অশালীন হওয়া তোমাকে সাজে না !!

দানবের অহঙ্কার পরাজিত হয়, তাও কি বোঝো না !!


পৃথিবী থেকে দূরে :নাহার নাসরিন



ওহে শুনছো,
হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাই বলছি।
কোথা  হতে আসছো তুমি পথিক?
নিয়ে যাবে আমায় তোমার সঙ্গে?
ওই সাত সমুদ্র পারে নদীর তীরে?
যেখানে কেউ থাকবে নাকো থাকব তুমি আমি
দেখব আমি দু- চোখ ভরে পৃথিবীর হাত ছানি।
পৃথিবী আমায় বলবে ওরে ফিরে আয় হাত ধরে
আমি বলব যা হতভাগা আমার থেকে দূরে।
সুখে আছি শান্তিতে আছি হয়ে তোর থেকে দূরে
তুই যে বড় অভাগারে থাকব তোর থেকে দূরে।


কখনো জানা হয় নি:মান্নুজা খাতুন



বহুদিন পরে একপেয়ালা বিষাদের স্রোতে
ভেসে গেলাম আমি।
ভাসতে  ভাসতে ঠেকেছি গিয়ে স্মৃতির দোরগোড়ায়
যেথা রচে ছিলাম মোরা স্বপ্নের খেয়াতরী।
 লোনাজলের প্রতিটি বিন্দুর ফোকাসে
 ভেসে উঠছে অস্পস্ট হয়ে স্মৃতি গুলো।।

দুরত্বের  বেঁড়াজাল ভেঙে
চুপিচুপি  করেছিলে পদার্পণ  আমার শহরে
করেছিলে চুরি হৃদয়ের সোনারকাঠি
হরণ করেছিলে মনের শান্তি।।

তথাপি
কখনো জানা হয় নি আমার
কোন স্বার্থের লীলাখেলায় ভাসিয়েছিলে আমায়?
কোন কস্টের প্রতিহিংসার খেলায় খেলিয়েছিলে আমায়?


বিবর্ণ ছবির সাথে : রাজিত বন্দোপাধ্যায়



কেন এমন টা হয় !   
আটপৌঢ়ে জীবনের খাতায় ?   
সমস্ত সুখ --- চাওয়া পাওয়া যেন --     
বন্ধ করতলের আঙ্গুলের ফাঁক গলে   
কোথায় কোথায় যেন হারিয়ে যায় ।   
আর এখানে পড়ে থাকা --   
ইট কাঠ সিমেন্টের তলে     
আটটা - সাতটা প্রাত্যহিক ছুটন্ত জীবনের তলে --   
কোথায় কোথায় চাপা পড়ে থাকে   
তোমার বিবর্ণ ছবির সাথে হায় !!     


আলো-ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। সতের ।।


সেইসময় ক্লাস ফোর কি ফাইভ পড়ি। এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। নাম সৌমিত্র প্রসন্ন সরকার। বাবার বদলির চাকরি। তাই এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতে হয়। বাবার সঙ্গে পরিবারও। সৌমিত্র আমাদের স্কুলে ছিল একবছরেরও কম। প্রচণ্ড অস্থিরে। যা মনে করত তাই করত। কারও কথা শুনত না। শিক্ষকের হাতে এইজন্যে তাকে প্রায়ই প্রচণ্ড মার খেতে হত। আমার সঙ্গেও তার বিশেষ কোনো যোগ ছিল না। তবুও তাকে মনে আছে আমার। যে আমি কত কত কথা মুহূর্তে ভুলে যাই, সেই আমি কি করে সৌমিত্রকে মনে রাখলাম! মনের কোন কোণে সে এতদিন পর্যন্ত বন্দি আছে। আর কেনই বা আছে? একটা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। আমাদের প্রাইমারি স্কুলের সামনেই একটা দোকান ছিল। আমরা টিফিনবেলায় সেই দোকানে থেকে কুলের আচার কিনে খেতাম। একদিন টিফিনে আমি কুলের আচার খাচ্ছি। সৌমিত্র হঠাৎ এসে হাজির। আমি ওকে কুলের আচারের ভাগ দিলাম। এরপর সৌমিত্র বলেছিল, " আমি জানি তোর ভাগ আমি পাবই।" কেন বলেছিল তাও জানি না। আমার ওপর তার এমন কিছু জোর ছিল না যেখান থেকে সে এটা বলত পারে। তবে সৌমিত্রকে দেখে মনে হত সে কারও সঙ্গেই সম্পর্ক গভীর করতে চায় না। যেহেতু সে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় তাই তার কোথাও শিকড় গাড়া উচিত নয়। মনে হতো এটা সে রক্ত দিয়ে বিশ্বাস করত। এই মনে থাকাটা আমার কাছে সত্যিই রহস্যময়। হয়ত এটাই নিয়ম। কত কত কান্নার মধ্যে বর্ষায় রাস্তার ধারের একটা ফুটপাতে একটা কুকুরের কান্না যে কারণে আমৃত্যু মনে থাকে, সৌমিত্রও সেই কারণে আজও আমার মনে অমলিন।



।। আঠারো ।।

আরও একজনের নাম মনে আছে। যাকে আমি জীবনে কখনও চোখে দেখি নি, ছেলে কি মেয়ে তাও জানি না। নাম ওডোনেল ডিকস্টা। একজন পোর্তুগীজ। একটি পত্রিকার তরফ থেকে মাইকেলের জন্মদিনে তার কবরে কবিতা পড়তে গেছি। যখন কবরস্থানে গিয়ে পৌঁছলাম তার একটু আগেই একজনকে কবর দেওয়া হয়েছে। মাটি তখনও কাঁচা। বোর্ডে তার নাম লেখা। ওই নামটুকুর মধ্যে দিয়েই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। কবিতা পড়তে পড়তে আমি কেবলই পিছন ফিরে তার দিকে তাকাচ্ছি। মনে হচ্ছে সে যেন আমার কবিতা শুনছে। মনে হচ্ছে এযেন তার অনেক দিনের ইচ্ছা। হয়ত সে মাইকেলের ভক্ত। তার জন্মদিনে তো আর জন্মানো হল না। অবশ্য জন্মেছে কি না তাই বা কে জানে। তাই মাইকেলের জন্মদিনে মরে সে গুরুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। কবিতা শুনবে বলেই আজকের এই বিশেষ দিনে তার মরে যাওয়া। হয়ত এই স্বতন্ত্রতার জন্যেই ওডোনেল ডিকস্টাকে আমার পঁচিশ বছর পরেও মনে আছে


(ক্রমশ..)

আঁকা মানুষ :অনিন্দ্য পাল


শেষ হয়ে যাওয়া সময়টুকু পেরিয়ে এসেছি সবে
সব নাম-বেনাম বেরিয়ে গেছে শেষ নিঃশ্বাস হয়ে
আমার "আমি"র মুখে বারবার এঁকে রাখা সব মুখোশ
খরার আদরে ফাটাফুটি দোঁয়াশের মত চেয়ে আছে
আকাশের দিকে,
ধরো সেখানে ভেসে আছে একটাই মেঘ
অথবা অভিশাপ
বৃষ্টি হলে ,ধুয়ে যাবে রঙের পরত
না হলে , ধূসর গুঁড়ো হয়ে বাতাসে মিশে যাবে
আঁকা পরিচয়
স্তরে স্তরে গড়ে তোলা বল্মীক জীবন

এখন দেখছো এই সব শব যা চেয়ে দেখ
আকাশের দেওয়ালে ফুটে আছে নাম
আঁকা মানুষ ...