নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সফলতা : নাহার নাসরিন



তোমারই মতো এসেছিলাম আমিও মাতৃকোলে।
কিন্তু তুমি পালিত হয়েছ আদর- আবদারে,
আমি হয়েছি অবজ্ঞা - অনাহারে।
তাই বলে তুমি ভেবো না, মা আমায় বাসেনি ভালো,
তোমারই মায়ের মতো আমারও মা বেসে আমায় ভালো।

আজ তুমি রঙ্গ মঞ্চে করো অভিনয়,
আমি তারই দর্শক দেখি সেই অভিনয়।
আমারও স্বপ্ন ছিলে হব অভিনেতা
অভিজ্ঞতা অনেক ছিল, ছিল না শুধু সাফল্যতা।
ধনীর ঘরের দুলাল তুমি তাইতো এত সফলতা
চাষীর ঘরে এসে দেখো,
কোথায় তুমি আর কোথায় সফলতা।।

মৃৎ সঞ্জিবনী :তপন কুমার মাজি



কোলাহল যদি না পাওয়াদের মিলিত রূপ হয়
তবে বিবেকদের সাক্ষী রেখে ঝড় উঠাবেই উঠাবে একদিন চেতনারা,
প্লাবন ঘটাবে মরুপ্রান্তরে,
বালিয়াড়ির বুকে জমাবে পলির আস্তরণ।

সহ্যের ঘরে বন্দি থাকা কন্ঠদের কলরবে যেদিন
জ্বলে উঠবে শ্লোগান,
কালবৈশাখীর হঠাৎ সফরে বয়ে আনা অশনির মতো
বৃষ্টিতে সেদিন ধুয়ে যাবে সমস্ত ধুলো-বালি।

পৃথিবীর অন্য প্রান্তে যেখানে রৌদ্রের গতিপথ রুদ্ধ
সূর্য নিজেই সেদিন চুমু খাবে সেখানে
প্রত্যন্ত প্রদেশের ধুকতে থাকা বিষন্নদের মুখে,

মাহেন্দ্রক্ষণে সেদিন বইবে মিঠেল হাওয়া
রক্তিম আশারা কইবে কথা ফুলেদের সাথে,
হরিৎক্ষেত্রে জমে উঠবে স্বতঃস্ফূর্ত প্রেমের আলাপ,
মৃৎ-সঞ্জিবনী ফেরাবে সেদিন পাষাণের মৃতপ্রাণ !

হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি : মো.রফিকুল ইসলাম


ভোরের প্রভাতে শুনতে পাই তোমার সুরে
আর্তমানবতার ধ্বনি ।
তোমার সুরে ভেসে উঠে আকাশে
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
দানবের মরণ ফাঁদের বিরুদ্ধে তুমি
প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি ।
রাজপথে মুখরিত শ্লোগান তোমার সুরে
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
জালিমের বিরুদ্ধে ধারালো তলোয়ার
তোমার তরঙ্গের গতি আজ ।
মেহনতি মানুষের আওয়াজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
শোষণ-বজ্ঞণা মজলুমের বিরুদ্ধে
অসহায় মানবের সম্মোহনী ।
অশুভ শক্তির ধ্বংসের সৈনিক তুমি অগ্নি
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
দিন-মুজুরি শ্রমিকের আর্তনাদের হাহাকার
দিশাহারা মানবের সৈনিক তুমি ।
তোমার সুরে বাতাসে বহে মুক্তির গান
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
সাম্যের প্রতিকী নৃত্যের প্রাঙ্গণে
বীরঙ্গণা মায়ের আর্তনাদ ।
তোমার কন্ঠে রাজপথ আজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
তুমি বিপ্লবীদের , বিপ্লবী কন্ঠস্বর
তোমার আওয়াজে মুখরিত ভূমি
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
জোসনার আলোয় রজনী সন্ধ্যায়
আলোর দিশারী তুমি ।
অন্ধজনের স্বজন আজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।

কান্না :তপন কুমার মাজি


দুর্বল আর নরম মানে কী শুধুই পরাজয় ?
গতিপথে যার ঢের অন্ধকার
আমার সেই শিকড় খুঁজে নিয়েছে বাঁচার রসদ !

প্রয়োজনে ফুটো করেছি পলিথিন-
গুঁড়ো করেছি নুড়ি-
ভেঙেছি পাথর,
কঠিন যে কোন কাঠিন্যই নয়
প্রমাণ করেছি ঝড়কে প্রতিহত করে,
কখনো লাঙলের ফলায় হয়েছি ছিন্নভিন্ন-
হয়েছি নাগরিকদের যূপকাষ্ঠে বলি,
তবুও...

ছেড়েছি কী হাল ?
নীরবে ছড়িয়েছি প্রাণরস ডালে ডালে--
পাতায় পাতায়--
কীটাণুদের বিষকে করেছি নির্বিষ,
ফুটিয়েছি ফুল বৃন্তে বৃন্তে,
দিয়েছি বেঁধে নাড়িকে বিটপের প্রতিটি শিরায়,
ফলাতে ফল,
দুঃস্থ পৃথিবীর প্রয়োজনে...

সদিচ্ছা আর মনোবলকে পাথেয় করে হাঁটছি--
এখনও হাঁটছি
অনিশ্চিত আগামীর পথে
যদিও কুঠারের আঘাতে শুনতে পাই আমি
কোন এক কান্না
যে কান্না অত্যন্ত গভীর ও ব্যঞ্জনাবাহী !!


আলো-ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়







।। তেরো ।।

চৈত্র মাসের সন্ধেবেলা। হ্যারিকেন নিয়ে পড়তে গেছি। অর্ধেক পড়া হয়েছে। ঝড় উঠলো। একটু পরেই বৃষ্টি। সারাটা দুপুর বেশ গরম গেছে। এখন বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা। সন্ধের একটু পরের বৃষ্টি চারপাশকে কেমন চুপচাপ করে দেয়। তার ওপর আবার গ্রাম। হ্যারিকেন নিয়ে বাড়ি ফিরছি। ব্যাঙ ডাকছে। রাস্তায় দু'একটা লোক। আমি প্রায় একাই। রাস্তার ধারে ধারে আমগাছ। ঝিঁঝিঁ ডাকছে। ভয় যে একেবারেই করত না তা নয়। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যেত একটা ভালোলাগা বোধ। কতদিন হল ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝিঁর ডাক কান থেকে সরে গেছে। আজ মনে হয় ওইগুলোই ছিল প্রকৃত গ্রামীণ জীবনের সঞ্চয় যা একটা মানুষকে ইঁট কাঠ পাথরের মাঝেও আমৃত্যু সবুজ রাখতে পারে।




।। চোদ্দ ।।

দেওয়ালীর রাতে প্রতিটা বাড়িতে মোমবাতি জ্বলছে। আমরা সারা পাড়া ঘুরে ঘুরে দেখছি কোন বাতিগুলো নিভে গেছে। বাতি নিভে গেলেই আমরা সেগুলো নিয়ে নিতাম। নেভা বাতি তুলে নেওয়ার সময় খুব তাড়াতাড়ি ফুঁ দিয়ে একটা দুটো বাতি নিভিয়ে সেগুলোও হাতে তুলে নিতাম। যখন বাড়ি ফিরতাম মনে হতো রাজ্য জয়ের আনন্দ। বাতিগুলো পেয়ে যে কি আনন্দ হতো তা বলে বোঝাতে পারবো না। বছর ঘুরে গেলেও সেগুলোকে কাছ ছাড়া করতাম না। আজও ভাবলে বাতিগুলো মনকে উষ্ণ রাখে।

(কর্ম

দাসপ্রথা ও দাসত্ব : সারিফ হোসেন


ইতিহাসের পাতা খুঁজলে পাওয়া যায় শব্দ দুটি
              " দাসপ্রথা ও দাসত্ব ”।

ইংরেজি ভাষার মায়াজালে
               আজ গর্বিত বাঙালির ও
বাংলা ও বাঙালীয়ানার ভাবনা ছেড়ে
               ইংরেজি দাসপ্রথার দাসত্ব মানে।।

শ্বেতবর্ণের নেশায় চড়ে
               গর্বিত কৃষ্ণের ভক্তও
কৃষ্ণকলির কৃষ্ণকায় দেখে লজ্জিত
               কারণ আমরা শ্বেতকায় আবদ্ধ।।

নীল আকাশের নীচে বসে
               বিন্দু বৃষ্টির স্পর্শ নিয়ে
ভাবি আমি, আমরা আজও কি
               "দাসপ্রথা ও দাসত্বের" গন্ডি পেরিয়েছি?


জানিনা, উত্তর নিজ নিজ
               আপন মননের অন্তরালে
খুঁজতেই হবে পথ আমাদের
               নতুবা রইবো আমরা দাসত্বেরই বেড়াজালে।।