নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সুখী ও অসুখী ঘাম : উজান উপাধ্যায়


শক্ত করে এঁটে বসা প্লাস্টিক আবরণ তুলে দিতে গেলে আঁঠার শত্রু কোনও তরলকে খুব প্রয়োজন।

শহরে গরম এলে মানুষের দ্বিস্তরীয় খোসা উঠে যায়। ফুটপাতে নিরাময়ী চোখ রাখে আঁশহীন খোলামেলা  ফল, বহুতল ছেড়ে আসা ক্লান্ত টহল।  খোসা ছুঁড়ে ছায়া ফুঁড়ে বেহুলা আঁচল -- হঠাৎ রাস্তা জুড়ে সারি সারি বৃহন্নলা গাছ-চিঠি জুড়ে নাগরিক ঘাম বাধ্য শহর জুড়ে ছড়িয়েছে সুখের অসুখ। অসুখের পারদেরা উপেক্ষিত বিধবার সিঁথি জোড়ে, শিৎকারে শিষ্ট নষ্টামির পালতোলা খাম।

শহরে গরম এলে পরিযায়ী পাখিদের প্রবল আরাম। শেষ ট্রেনে বাড়ি ফেরা গাছগুলো দিনগত পাপক্ষয়ে মুছে ফেলে শহরের নাম।  সুখী ও অসুখী ঘাম প্রয়োজন অনুসারে চুকিয়েছে ভ্রমনের দাম।

না আমি কবি নই : সারিফ হোসেন


না আমি কবি নই,
                    নিছক তোমাকে ভালোবেসে ঠাকুর বাড়ির
 দু-চার কথা চুরি করে লিখেছিলাম কয়েকটি।

কিন্তু বিশ্বাস করো,
                    বর্তমানে আমিও আজ কবি অ্যাখ্যায়িত।
                    কি নিদারুণ পরিহাস সমাজের।  তাই
                    বাংলার গৌরব, বাংলার অহংকার আজ শায়িত।।

হ্যাঁ আমি ফেসবুক কবি,
                    হাজারো সস্তা জিনিসের মাঝে আমার অবস্থান।
                    বাংলা লেখনীর ইতিহাস না পড়েই আমি কবি
                    এই জায়গা ছাড়া আর কোথায়বা হয়ে পারে স্থান?

খুব ভোরে সকাল বেলা,
                    চায়ের সাথে কবি আর কবিতা কবিতা রব।
                    কটাক্ষের সুরে মানুষ হাজারে হাজারে
                    বাঘের মত বাঙালীরও কী তবে ভালো কবির অভাব?

না আমি কবি নই,
                    লিখতে লিখতে নতুন করে আবার লেখনীকে ভালোবাসা।
লুপ্তপ্রায়,  দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া
বাংলা ভাষা চোখ তুলে,  মেরুদন্ড সোজা করুক
                    এই টুকুই আশা।।

অভিসারী শহর : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

   

অভিসারী শহরের বুকে নামে       
সর্পিল পিচ্ছিল রাত --   
যৌনতা নগ্ন হয় সুরভি ও সৌরভে ।   
রাতের মায়ার আছে রূপ --     
যৌবনেরে করে যায় শিকার ;       
তার নখরের আঘাতে করে ক্ষত   
যৌবন পরাস্ত দেখ যৌন অভিঘাতে --   
অভিসারী রাত তবু বিকে চলে     
আকাশের প্রান্ত হতে একমুঠো বিকার !       
এখানে নারী - পুরুষ সব একাকার !!       

প্লাবন ভূমি : বিকাশ দাস (বিল্টু )



নীরবতা যখন বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস হয়ে প্লাবিত হয় প্লাবন ভূমিতে

প্লাবন ভূমি যখন প্লাবনের জলে লবনের আস্তরনে
চাষ অযোগ্য

লাঙল চালিয়ে ফসল ফলানোর চেষ্টা
      বীজ বপন করতে ভয় লাগে -
অঙ্কুর কি হবে?
                না ভ্রূণ সুপ্ততেই বিনাশ....

প্লাবনের জল কবিতা হয় ;
  ভ্রূণ হয়, চারা গাছ হয়ে বাঁধ দেয় ।
প্লাবন আটকে যায় গাছের শিকড়ে ।

জল আর লবন হয়না !
এই তো কবিতায় শান্তি ,এই তো মনের সুখ ।

থাক না প্লাবন ;
                  জমি পলি হবেই হবে ।
ক্ষতি হউক না !হতে দাও ,
জল তো আছেই জীবনের বাঁচার রসদ হয়ে ।

গাছ আরও কিছু লাগাতে হবে নদীর ধারে ।
আসুক যত নোনা জল ,
সূর্য আছে তাপ আছে কবিতা আছে ।

ভয় নেই তাই  ।

ঋজু রেখ: হেমন্ত সরখেল



                                     

রেখা চাই। ঋজু, সটান।

ভূমি ফুঁড়ে ওঠা কালের বৈজয়ন্ত হলেও স্তর ভেঙে এগোতে
   তুমি বেঁকে যাবেই। অদ্ভুত তো নয়!

খসে যায় পলেস্তারা। দাঁত হ্যা-হ্যা নোনা। বেঁকে-চুরে মোম
ঝড়ে ঝাড় লন্ঠন
চলিত শব
     যবনিকা অন্ধকার, চাপ চাপ।

ওঠো।
মাথায় ঠেকছে আকাশ?
ভেদ করো। এটাই প্রকৃষ্ট সময়।

বক্র নয়। ঋজু। হাঁটো, ছোটো, গতি দাও।
রেখ খোঁজো, রেখ
রেখ রাখো, রেখ
রেখ বোঝো, রেখ
রেখ বাঁচো, রেখ
আরো আরো আরো যতটায় ব্রহ্মান্ড শেষ হয়
                                 অনন্ত নিঃশেষ

প্রবল শক্তিতে
শেষবারের মতো
             ঋজু রেখ-এ
                                                       
এ যাবৎ না-টানা কবিতার রেখায়
        অনমনীয়  গর্ভাধান যাও রেখে।
                           

আলো-ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। এগারো ।।

ছোটবেলায় রোদ উঠলে খুব আনন্দ হতো। হ্যাঁ, রোজ রোজ এই আনন্দ পেতাম। একনাগাড়ে তিন চার দিন বৃষ্টি হওয়ার পর মেঘলা আকাশ দেখে যখন খুব মন খারাপ সেই সময় সকালে ঘুম থেকে চোখ খুলেই মাকে জিজ্ঞাসা করতাম, রোদ উঠেছে কিনা। মায়ের নেতিবাচক উত্তরে এত মনখারাপ হতো যে কী বলব! আমি আবার ঘুমিয়ে পড়তাম। এত কষ্ট হতো যে মনে হতো আমার যেন কিছু হারিয়ে গেছে। আজও এই স্বভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় নি। বরং আরও বেড়েছে। কিন্তু আমি রোদ ভালবাসি কেন?? আমি দেখেছি রোদের আলোয় আমি নিজেকে পড়তে পারি। মেলে ধরতে পারি। মেঘলা দিনে আমার আলোর পৃথিবী ঢাকা পড়ে যায়। কারও মুখ দেখতে পাই না। মনের মানুষ ছাড়া থাকবো কি করে? মেঘলা দিনে আমার মনের মানুষ আভরণহীন। তাই তো এতো মনকষ্ট!


।। বারো ।।

সবেমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। তখন একটা চার্মস সিগারেটের দাম ছিল পঁচিশ পয়সা। দুজনে পয়সা দিয়ে কিনতাম। তারপর অনেকটা সাইকেল চালিয়ে অনেক দূরে চলে যেতাম। ধরানোর আগে সিগারেটটা ভালো করে দেখতাম। আর মনে মনে ভাবতাম একটা সিগারেট একটা মানুষকে কত তাড়াতাড়ি বড় করে দেয়। সেই সময় কেউ যদি ছোট বলতো তাহলে এতো রাগ হতো না! আর কিছু বলতেও পারতাম না। তবে পঁচিশ পয়সার একটা সিগারেটের হাত ধরে আমি রোজ একটু একটু করে বড় হয়ে যেতাম।

(ক্রমশ...)