নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অভিসারী শহর : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

   

অভিসারী শহরের বুকে নামে       
সর্পিল পিচ্ছিল রাত --   
যৌনতা নগ্ন হয় সুরভি ও সৌরভে ।   
রাতের মায়ার আছে রূপ --     
যৌবনেরে করে যায় শিকার ;       
তার নখরের আঘাতে করে ক্ষত   
যৌবন পরাস্ত দেখ যৌন অভিঘাতে --   
অভিসারী রাত তবু বিকে চলে     
আকাশের প্রান্ত হতে একমুঠো বিকার !       
এখানে নারী - পুরুষ সব একাকার !!       

প্লাবন ভূমি : বিকাশ দাস (বিল্টু )



নীরবতা যখন বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস হয়ে প্লাবিত হয় প্লাবন ভূমিতে

প্লাবন ভূমি যখন প্লাবনের জলে লবনের আস্তরনে
চাষ অযোগ্য

লাঙল চালিয়ে ফসল ফলানোর চেষ্টা
      বীজ বপন করতে ভয় লাগে -
অঙ্কুর কি হবে?
                না ভ্রূণ সুপ্ততেই বিনাশ....

প্লাবনের জল কবিতা হয় ;
  ভ্রূণ হয়, চারা গাছ হয়ে বাঁধ দেয় ।
প্লাবন আটকে যায় গাছের শিকড়ে ।

জল আর লবন হয়না !
এই তো কবিতায় শান্তি ,এই তো মনের সুখ ।

থাক না প্লাবন ;
                  জমি পলি হবেই হবে ।
ক্ষতি হউক না !হতে দাও ,
জল তো আছেই জীবনের বাঁচার রসদ হয়ে ।

গাছ আরও কিছু লাগাতে হবে নদীর ধারে ।
আসুক যত নোনা জল ,
সূর্য আছে তাপ আছে কবিতা আছে ।

ভয় নেই তাই  ।

ঋজু রেখ: হেমন্ত সরখেল



                                     

রেখা চাই। ঋজু, সটান।

ভূমি ফুঁড়ে ওঠা কালের বৈজয়ন্ত হলেও স্তর ভেঙে এগোতে
   তুমি বেঁকে যাবেই। অদ্ভুত তো নয়!

খসে যায় পলেস্তারা। দাঁত হ্যা-হ্যা নোনা। বেঁকে-চুরে মোম
ঝড়ে ঝাড় লন্ঠন
চলিত শব
     যবনিকা অন্ধকার, চাপ চাপ।

ওঠো।
মাথায় ঠেকছে আকাশ?
ভেদ করো। এটাই প্রকৃষ্ট সময়।

বক্র নয়। ঋজু। হাঁটো, ছোটো, গতি দাও।
রেখ খোঁজো, রেখ
রেখ রাখো, রেখ
রেখ বোঝো, রেখ
রেখ বাঁচো, রেখ
আরো আরো আরো যতটায় ব্রহ্মান্ড শেষ হয়
                                 অনন্ত নিঃশেষ

প্রবল শক্তিতে
শেষবারের মতো
             ঋজু রেখ-এ
                                                       
এ যাবৎ না-টানা কবিতার রেখায়
        অনমনীয়  গর্ভাধান যাও রেখে।
                           

আলো-ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। এগারো ।।

ছোটবেলায় রোদ উঠলে খুব আনন্দ হতো। হ্যাঁ, রোজ রোজ এই আনন্দ পেতাম। একনাগাড়ে তিন চার দিন বৃষ্টি হওয়ার পর মেঘলা আকাশ দেখে যখন খুব মন খারাপ সেই সময় সকালে ঘুম থেকে চোখ খুলেই মাকে জিজ্ঞাসা করতাম, রোদ উঠেছে কিনা। মায়ের নেতিবাচক উত্তরে এত মনখারাপ হতো যে কী বলব! আমি আবার ঘুমিয়ে পড়তাম। এত কষ্ট হতো যে মনে হতো আমার যেন কিছু হারিয়ে গেছে। আজও এই স্বভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় নি। বরং আরও বেড়েছে। কিন্তু আমি রোদ ভালবাসি কেন?? আমি দেখেছি রোদের আলোয় আমি নিজেকে পড়তে পারি। মেলে ধরতে পারি। মেঘলা দিনে আমার আলোর পৃথিবী ঢাকা পড়ে যায়। কারও মুখ দেখতে পাই না। মনের মানুষ ছাড়া থাকবো কি করে? মেঘলা দিনে আমার মনের মানুষ আভরণহীন। তাই তো এতো মনকষ্ট!


।। বারো ।।

সবেমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। তখন একটা চার্মস সিগারেটের দাম ছিল পঁচিশ পয়সা। দুজনে পয়সা দিয়ে কিনতাম। তারপর অনেকটা সাইকেল চালিয়ে অনেক দূরে চলে যেতাম। ধরানোর আগে সিগারেটটা ভালো করে দেখতাম। আর মনে মনে ভাবতাম একটা সিগারেট একটা মানুষকে কত তাড়াতাড়ি বড় করে দেয়। সেই সময় কেউ যদি ছোট বলতো তাহলে এতো রাগ হতো না! আর কিছু বলতেও পারতাম না। তবে পঁচিশ পয়সার একটা সিগারেটের হাত ধরে আমি রোজ একটু একটু করে বড় হয়ে যেতাম।

(ক্রমশ...)

ফিরে আসি :রূপম অধিকারী


আমার হৃদয়ে ব্যাথা বহমান
শরীর পীড়িত তোমার আঘাতে
নিঃশ্বাস ফেলছি আজো
হয়তো কিছু প্রত্যাশায়

এখন আমার দু- হাত যা জড়াবে
তাকে ধরে রাখবো কোথায়
আমি আজও ঈশ্বর দেখিনি
খোঁজ করিনি কোনো উপরওয়ালার
তবু দেখেছি মানুষের ধর্মের নৃসংশতা
ভেবেছি কিভাবে পালাবো
তুমি যেখানে আছো লুকিয়ে
সেখানে গিয়েই লোকাবো

এখন আর শেষবার একবার বাঁচতে চাও
সবকিছু ভুলে সবাইকে বাদ দিয়ে
নিজের ভিতরের আমিকে খুঁজে নাও
বৃষ্টির জলে ভেজে শরীর মুছবো না
চোখ ঢাকবো কালো চশমায়
আজও ফেরিওয়ালা হেঁকে যায়
ফেলে দেওয়া কোনো জিনিষের আশায়
বালিশ জানে চোখের নোনতা
মনের খবর কেউ রাখে না

এটাই শেষবার, আর সুযোগ নেই
কিবোর্ডের বোতাম টেপার গরজ শেষ
তুমি ছিলে আমার মতন আনকড়া
গানের সুরে সাজানো মহড়া
নীল রংটা খুব প্রিয় জানতাম
সব উপহার নীলেই মিশতাম
তবুও রাখতে পারিনি আটকে
হারিয়ে যাওয়া বহু সময়
মুখ ফিরে তাকায়

সম্পর্ক বোঝার চেষ্টায়,ক্লান্ত শরীর ক্লান্ত মন
সিঁড়ি ভাঙার অঙ্কে আজো ভুল করি
হাতে রাখা সংখ্যা হাতেই রেখে দি
তোমাকে যদি বন্ধুই ভাবি,তবু আছে স্বার্থ
আকাশ বলে, আমি তোমার খারাপ থাকার কারণ
যে জানলায় দাঁড়াতে,তাতে আজও রোদ আসে
বৃষ্টির জল ঢোকে ঘরে. আমি দেখি
আমার মুখ থেকে ঝরে পরে কথা
শোনার জন্য কোনো পাখি এসে বসে

কবে থেকে ভাবি চলে যাবো
বহু দূরে শহর ছেড়ে
তত এগিয়ে আসো কাছে
কষ্ট বিঁধিয়ে দাও বুকে
যতবার কবিতার কাছে আসি
ততবার ভালোবাসা শুখে নি নাখে
দিক ভুল হয়ে যায় অচেনা লাগে
অক্ষত কথাগুলো টেনে নিয়ে চলে

ফাঁকা রাস্তায় হেঁটে চলার শুন্যতা
আমাকে ডেকে নিয়ে যায়
মাথার ওপর থাকা অপরাধবোধ
ভুল করে বাড়ি ফিরিয়ে আনে

নৌকাসমগ্র : শুভঙ্কর দাস



কবির ভেতর থেকে নৌকা বেরিয়ে ভেসে যায় জলে,নাকি নৌকার ভেতর থেকে কবি বেরিয়ে এসে হেঁটে চলে যায় পাড়ে!
মাঝখানে জিরাফের মতো মুখ বাড়ানো সন্ন্যাসীগাছের ছায়ায় নৌকা দুলছে,কবিও।

পাড়ের দিকে চাও,প্রথমে গুহা,পাথুরে পথ,আর একটু এগোলেই গরুর খুরের ধুলো,আর একটু গেলেই নিকানো উঠোন,তুলসিতলা,হলুদরঙা শাড়ি

জলের দিকে চাও,প্রথমে ঢালু এবড়ো-খেবড়ো আহ্বান,তৃষ্ণা নিবারণের ধ্বনিগুণ, অভিযানের অলৌকিক হাতছানি আর এক দিগন্তরঙিনগভীরতা

নৌকার যাত্রা শুরু জলে আর পাড়ে,পাড়ে আর জলে।অতলে,অশোকে এবং অবিরাম মুক্তির বন্ধনে

এই নোঙরে চুম্বন করে,এই ডুবে যায় সুদীর্ঘ স্রোতের মধ্যিখানে,এই পাথরে খোদাই করে আকাশ,এই আদি তরলে খুঁজে ফেরে মনতরঙ্গের আয়না

ক্লান্তি পাথরের মতো জমাট বাঁধে,ঈর্ষা মরা শামুকখোলের মতো ধারালো,দুঃখ শুকিয়ে যাওয়া জলের দাগের মতো অসহায়

শুধু মহাকালের একটি চোখ সময়ের চশমা পরে দেখে,সুদীর্ঘ রক্ত-মাংসের ছায়ার নিচে

একটি নৌকা একা দুলছে,কবিও।