।। ছয় ।।
একদিন রেডিওতে শুনলাম ---- "পাখি উড়ে যাবে বলে খাঁচা কিনি না"। একটা গান একটা জীবনকে বদলে দিতে পারে। আমরা সেইভাবে গান শুনলাম কোথায়! আমাদের গানে পুরোটাই বিনোদন। শিক্ষা কোথায়! অথচ এইসব গান আমাদের প্রতিদিনের জীবনে যদি উঠে আসতো তাহলে আমরা এই ইহজীবনেই দেখতে পেতাম এক ঘর রোদ। আর সেই রোদে মানুষেরা খেলে বেড়াচ্ছে শিশুর সারল্যে।
।। সাত ।।
সত্যিই তার মুখ না দেখে থাকতে পারতাম না। ঘুমের মধ্যেও তাকে দেখতে পেতাম। শুধুমাত একবার চোখের দেখা দেখবার জন্যে কতবার তার বাড়ির সামনে দিয়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরপাক খেয়েছি। দেখা হয় নি। যদিও তাতে কিছু যায় আসে না। বাড়ির সামনে দাঁড়ালেও শান্তি। একদিন কিন্তু সেই চোখ হারিয়ে যায়। কোথায়? অথচ আমারই তো মন। হাজার চেষ্টাতেও যার কাছ থেকে নিজেকে ফেরাতে পারি নি, সেই মনকে কে বোঝালো! কার কথায় সে সরে এলো? যে চোখ ছাড়া মনের মুহূর্ত চলত না, সেই মন অন্য চোখে তাকাবার সময় কখন পেল? মন যে বৈশিষ্ট্যে আমৃত্যু রত থাকার অঙ্গীকার করেছিল তা সে ভুলে গেল কি করে!
।। আট ।।
"এ্যাই দত টাকা দে" ------ চোখের সামনে একটা শুকনো হাত। দুহাত ভর্তি পুরোনো আর বাতিল রঙবেরঙের চুড়ি। একটাও দাঁত নেই। মাথার চুল সাত জন্মেও তেল পড়ে নি। পরনের কাপড় নোংরা আর ছেঁড়া। দুহাতে তিনটে তিনটে ছ'টা ব্যাগ। দশ টাকা দিলাম। কী খুশি। এইভাবে রোজ আসে বুড়ি। একদিন দেখি ফুটপাতে বসে আসন বুনছে। "কাকে বসতে দিবি?" আমার প্রশ্ন শুনে বুড়ির একেবারে হেসে গড়িয়ে পরার যোগাড়। "আজ একত টাকা দে"----- একদিন হঠাৎই চেয়ে বসল। আমি বললাম পুজোর সময় দেব। আর কোনো কথা নেই। হাসতে হাসতে সেদিন দশ টাকা নিয়ে চলে গেল। পুজোর সময় বুড়িকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। মনে হল সে কি অন্য কোথাও চলে গিয়ে রাস্তা খুঁজে পায় নি! একদিন এক বান্ধবী এসে খবর দিল, "তোমার প্রেমিকা লঞ্চঘাটে ঘোরাঘুরি করছে"। এর বেশ কয়েকদিন পরে বুড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়াল। দেখলাম বুড়ির একশ টাকার কথা মনে আছে। কিছু খাওয়াতে গেলে খাবে না। দশ টাকা নিয়ে হাসি মুখে চলে যাবে। আমার ওপর যেন ওর একটা অধিকার জন্মে গেছে। একদিন কে যেন এসে বলল, ওকে টাকা দেবেন না। বুড়ি ছোট ছোট ছেলেদের টাকা বিলিয়ে দেয়। সে নাকি দেখেছে। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান বলে মনে হলো। এমন একটা মানুষ আমার ওপর অধিকার দেখায়।
(ক্রমশঃ...)