নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বিবেক এবং : সুমিত ভদ্র



শহর কেঁপে ওঠে ঘুম ভাঙা চিত্কারে;
থর থর করে কাঁপতে থাকা শরীর বারবার ব্যর্থ হয়
কামলালসায় নিমজ্জিত হিংসাত্মক হাতের থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টায়।
উপভোগ করো শরীর,
নষ্ট করো সম্ভ্রম।
চিঁড়ে ফেলো যোনি তোমাদের কালো রাতের চিহ্ন মুছে দিতে।
মেতে ওঠো শরীর নিয়ে খেলা ও হত্যালীলায়।
তোমাদের কামোত্তেজনা মানে না কোনো বিবেকের বাঁধা!
ছোট্ট প্রানের ধর্ষন ব্যাথার কাতরতাও পৌঁছাতে পারেনা তোমাদের কানে।
বন্ধ ঘরে বা জঙ্গলে বেড়ে যায় আরও একটি শিশুর গলাকাটা লাশের সংখ্যা।
আর প্রতিবাদ ধামাচাপা পড়ে ধর্মাবলম্বি রাজনীতির কচকচানিতে।
শুঁকিয়ে যায় একসময়ের দগদগে ঘাঁয়ের ক্ষত,
নিভে যায় মোমবাতি মিছিলের বাতি,
গতানুগতিক কলরবে ভেঙে যায় কালো কাপড়ে ঢাকা মৌন মিছিলের নীরবতা।
বেকসুর হয় আরও একটি ধর্ষক,
বীজ বপন হয় আরও এক ধর্ষিতার প্রানহানির।

ঝরা পাতা : রাণা চ্যাটার্জী



কালকেও যে সজীব ছিল, আজকে ঝরাপাতা
সাংবাদিক লিখছে কতো,আমার কলম ভোঁতা

এইতো সেদিন চির সবুজ,জাগলো কিশলয়
হঠাৎ দেখি এক যুদ্ধ ছায়া,কখন কি যে হয় !

দস্যি দামাল,ছন্দে কামাল,ভারত সেনানী বীর,
 মনোবলের লেলিহানে গুঁড়াও,যত জঙ্গি শিবির

বড়শি নিয়ে পড়শী দেশ,রোজ করছে নাজেহাল,
 বীর সেনাদের দৃঢ়চেতা ভাব ,হবেইনা টালমাটাল।

গাছের পাতা ঝরতেও দেখি নতুন পাতা আসে
পাখপাখালির মিষ্টি সুর সংগীত হৃদয় ভালবাসে।

  ঝরা পাতা তো ঝরেই পড়ে  নির্ঝরে টুপ করে,
  কচি পাতা আসে দেখি,সেজে ওঠে গাছ ভরে।
                     
 পাতা ঝরে ,খসে যায়ও,কত স্মৃতি রেখে যায়,
 উদাসীন মন,করে হায় হায়,গাছ বুঝি অসহায়।

 নিয়মেরই আঙিনায় সব কিছুই তো সয়ে যায়,
 পৌঢ়রাও সরে যায়,কিশলয় দেখি প্রাণ পায়।

 তবু মন খাবি খায়, সুখ দুঃখের স্মৃতি চমকায়,
 ব্যস্ততা ধমকায়,ঝরা পাতা থমকায়,ধোঁয়াশায়।

           
             

চুপ : বৈশাখী গোস্বামী

কতগুলো মৃত্যু এসে দাঁড়াল
ঠিক আমার দু'পায়ের সীমানায়
এ ওর ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল
এ বলে আমায় তো ও বলে আমায়
কী তাহাদের আকুতি
আমি বিস্মিত, অবিচল
মিলিয়ে দেখি অবিকল
উনিশ কুড়ির তফাৎ
চুপ করে বসি,
কপাট বন্ধ করে শান্ত স্বর...


তারপর দেখলাম জীবনের থেকে শ্রেষ্ঠ মৃত্যু
না! আর হয় না।


মেয়েটা একটা মানুষ : শিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়



মেয়েটা পুড়ছিল
মেয়েটা জ্বলছিল
মেয়েটা শুনছিল — হল্লা-হৈ

আসলে মেয়েটা, একাই আগুন।

মেয়েটা ছুটছিল
মেয়েটা ছুটছিল
থামাতে পারেনি তাকে — হাজার কুহক

মেয়েটা চাইছিল, জয়ের তিলক তার কপালে আঁকুক।

মেয়েটা পুড়ছিল
মেয়েটা ছুটছিল
মেয়েটা বলছিল — দুঃখ একবুক

মেয়েটা জিতে নিল, জয়ের মুকুট।

মেয়েটা হাসছিল
মেয়েটা কাঁদছিল
মেয়েটা বলছিল — লড়াই চলুক

আসলে মেয়েটা একটা মানুষ।।

আলো-ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






      ।। (এক)।।

সকালবেলাটা তোমার আমার কারও নয়। সকালবেলাটা সকালবেলার। একেবারেই প্রকৃতির। কতবার ভোরের জানলা খুলে বাইরেটা দেখেই মন ভালো হয়ে গেছে। ভুলে গেছি সব। রাতের অশান্তি মাথা থেকে হাওয়া। একবার এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে দুর্গাপুর গিয়েছিলাম শুধু এই শর্তে যে বিয়ের পরদিন ভোরবেলা কাউকে কিছু না জানিয়েই বেরিয়ে আসব। কারণ ভোর দেখা। দেখেছিলাম। একবারের জন্যও তাকে আমার ইস্পাতনগরী বলে মনে হয় নি। সদ্য ঘুম থেকে ওঠা একজন মানুষ। চারপাশ কেমন যেন অগোছালো। এটাই তো আসল রূপ। গুছিয়ে নিলেই তো একটা আরোপিত অস্তিত্ব যেন কোথা থেকে এসে জুটে যায়। যা নেই তাকেও টেনে আনার ইচ্ছা আমাদেরকে গ্রাস করে। আর তখনই নষ্ট হয়ে যায় স্বাভাবিকতা। ভোর এসব কিছুর ঊর্দ্ধে। মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই অমোঘ উচ্চারণ ------ " প্রভাত আসে তাহার কাছে আলোক ভিক্ষা নিতে......"। তাই তো ভোরের এই শুদ্ধতা। বাসের জানলা দিয়ে ভোর দেখতে দেখতে স্টেশন পৌঁছেছিলাম।


                      ।।দুই।।

আজ পর্যন্ত জীবনে ক'টা মানুষ আমার কাঁধে এসে হাত রেখেছে? আঙুলের গাঁট গুনতে গুনতে সামান্য এগিয়েই থেমে যেতে হয়। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে কারও দিকে আঙুল তোলার কোনো অধিকারই আমার নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা ছাড়া অন্য আর কার সাথে মেশার জন্য এগিয়ে গেছি? জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই তো চারদেয়ালের মধ্যে ছাত্র পড়িয়ে কেটে গেল। যতটুকু সময় হাতে পেয়েছি তার বেশিরভাগটাই পড়ে লিখে কেটেছে। আর বাকিটা হয় কোনো পরিত্যক্ত মন্দির, না হয় কোনো নির্জন রেলস্টেশন, আর না হয় কোনো গাছতলা। এদের পেরিয়ে এসে ক'টা মানুষের সঙ্গে মিশতে পেরেছি? আমি যখন বলেছি, জায়গাটা দারুণ, তখন আমার ছাত্রছাত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠেছে, স্যারের পছন্দ মানেই একটা বড় ফাঁকা জায়গা। খুবই সত্যি কথা। কত কত দিন যে নির্জন স্টেশনে কেটে গেল তা গুনে শেষ করা যাবে না। কথা না বলেই তো বেশি ভালো থেকেছি। তাই হাতে গোনা যে ক'টা মানুষ কাছে আছে তাদের নিয়েই আমায় খুশি থাকতে হবে। হাতে গোনা সংখ্যাও যদি কমে তাহলেও আমার কিছু বলার নেই। হাতের সব ক'টা আঙুল আমি আমার নিজের দিকেই তুলি। কারণ তাতে নিজেকে অনেক কিছু শেখানো যায়।

(ক্রমশ...) 

নারী : সুবিৎ বন্দোপাধ্যায়



তুমি এক ডুবে তুলে আনছ ফুল
খুঁড়ে আনছ জলের পত্রজ হৃদয়
বাম হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছ তারা
হয়ে উঠছে বরাভয়।

পলকে সে অলীক মাছ
মাছ থেকে নবীন গাছ

সহসা জলের তলায় ঝাপটে লাফিয়ে তাকে মুখে করে জেগে উঠছে দিগন্ত আর সর্ষে ক্ষেত 
রঙা মাছরাঙা পাখি ।

সূর্যের গায়ে গায়ে অর্বুদ জলকণা লেগে
স্ফটিকের মত অসংখ্য রামধনু ছটায় ঝিকিয়ে        উঠছ পলে পলে উড্ডীন এক আশ্চর্য্য শিখায়
তুমি সেই কখনো ফিনিক্স কখনো সাইরেন দের তিন বোন অডিসিউসের পরাজয়।