নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আমিই মা :সৌজন্য ভট্টাচার্য্য

জননী আমি তোদের স্বপ্নের খেলাঘরে,
তাই বাৎসল্য আজ গুমরে কেঁদে মরে।
মৃত্যু যন্ত্রণা হজম করে যখন
একে একে তোদের জন্ম দিলাম
ফোকলা হাঁসিতে প্রসব যন্ত্রণাটা‌ই ভুলে গেছিলাম।
সবাই বলেছিল আমি নাকি রত্নগর্ভা!
সন্তানেরাই একদিন প্রমাণ দেবে জননী সর্বেসর্বা।
আজ তোরা সবাই প্রতিষ্ঠিত নিজের মতো করে,
কিন্তু জানিস! আমি আজও একা আমার কুঁড়েঘরে।
তোদের বাড়িগুলো নাকি খুব সুন্দর সাজানো?
আমার পরণে এখনও সেই জীর্ণ শাড়িটাই জড়ানো।
চোখের দৃষ্টিও হয়েছে ক্ষীণ বয়সের ফাঁকে,
এখন পাড়ায় সবাই আমাকে ভিখারিনী মা বলে ডাকে।
তবে ভিক্ষাবৃত্তি এ আমার প্রথম নয়
শুরু করেছিলাম যখন তোদের জন্ম হয়।
তখন হাত বাড়াতাম তোদের ভালোবাসায়
আজ‌ও আমি দুহাত পাতি দুমুঠো ভাতের আশায়।
জানিনা আমি মা হ‌ওয়া পাপ নাকি পুণ্য,
হ‍্যাঁ রে একবারও কি কষ্ট হয়না এই ভিখারী মায়ের জন্য?
থাক, চাইনা বাপু ওই মেকি ভালোবাসা
কার‌ও কাছে হবোনা আর ঋনী,
বাটিটাই আজ আমার শ্রেষ্ঠ সম্বল
কারণ?? -আমি যে ভিখারিনী।।
                                  

বালিজুড়ি : তাপসী লাহা


প্রত্যাবর্তন
মানে ফিরে এলে,

দু পায়ের সমগ্রে থিতিয়ে জমে যাওয়া ভেজা বালির ভার।

শুধু  কি  এ ভার  নিয়েছি!

সাথে মিশে আছে মনের নিঝুম ঘর উপচে পড়া কালিঝুলি।

রোজ দেখি ঝাড়বো বলেও  হাত লাগাই না।

মলিনতার সাথে ধূসর বিষাদের অনুষঙ্গ।


মুক্তির কথা ভাবিনা।


শুধু এসব অন্যমনস্ক আবহের প্ররোচনায় টের পাই না ঘাতক শেকড়ের বিস্তার পায়ের তল ভেদ করে জাপটে ধরেছে অবদমনের মাটি আর আমার ঘরে ফেরা বাতিল হয়ে যায়।

ভাবনার আঁচলে তোমার রং : প্রণব রায়




এক আঁচল বাতাস যখন
    ছড়িয়ে পড়ে শরীর জুড়ে
     কল্পনাকে সুড়সুড়ি দেয়..
আমি তখন অন্ধ বাউল
    একতারাতে হারিয়ে গিয়ে
   তোমার রঙে একলা রাঙি;
এক আকাশ ভাবনা যখন
  আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে
    নতুন দিনের গল্প বলে...
আমি তখন আকুল পাগল
            দিগন্তেতে ছুটে গিয়ে
    তোমায় ডাকি দুহাত তুলে;
একটি দুটি স্বপ্ন যখন
      বোতাম খুলে উঁকি মেরে
    ঘুলঘুলিতে লুকিয়ে পড়ে..
আমি তখন ফেরিওয়ালা  স্বপ্ন নিয়ে একলা হাঁটি
পড়ে থাকে বঞ্চিত সব পথের মাঝে ;
দুচার ফোঁটা বৃষ্টি যখন
      আমার কাছে ছুটে এসে  সরস করার উপায় খোঁজে...
আমি তখন ঝর্ণা হয়ে
 তোমার বুকে হারিয়ে গিয়ে  উড়াই নিশান ঠোঁটের ভাঁজে।

দরজার ওপারে : সারিফ হোসেন



প্রেয়শী,
 তোমার ওই টানা টানা কাজল আঁখি,
পুষ্প পাপড়ির ন্যায় ঠোঁটের বিন্যাস
অথবা ভ্রু কোচকানো মুখের হাসির
কিংবা রেশমি চুলের শিলান্যাস....

বসন্ত আসার আগমনী বার্তা বহন করে।
না কোনো কোকিল কন্ঠের প্রয়োজন নেই,
নেই প্রয়োজন রং-বেরং ফুলের বাহার।

কিন্তু সেই তুমি ঝাসির রানী বীর রমণী
সমাজের প্রভুত্বের হাত থেকে পৃথিবীর কথা
না ভেবে পারবে কি এই ফাগুনে আমায়
বুকে জড়িয়ে ধরতে! জানি পারবি না।  কারণ
ঘাসের মত নিষ্পাপ ভালোবাসায়, বাতাসের ন্যায় তোমার শরীর স্পর্শ করলেও সমাজের
দরজার ওপারে বেশ্যাবৃত্তি অ্যাখ্যায়িত হবে।।

আত্মহনন :বিশ্বজিৎ সরকার

শরীরের ভিতর জ্বলছে শহর
তোমার চুল এসে তবু আজও মুখ ঢাকে,
ভালো থাকার নামে পুড়ে যাই
লুকানোর মিথ্যে আচেঁ।

গ্রামের পথ ভুলে গেছি
প্রেমিক হবার শখে,
ভালোবাসি তবু আমি
অন্ধগলির শোঁকে।

সৌরভ :দোলন দাস মন্ডল



সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছ তুমি,
প্রতিটা পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে সে তোমার
নীল শার্ট, নীল জিন্স, চশমার ফ্রেম.....
চলার পথেই তোমার হাত ঠিক করে নিলো চুল। 
তুমি ছোট থেকে বড় হতে হতে মিশে গেলে ভীড়ে,
খুব সামনে ছবি হয়ে ফুটে উঠলে তারপর
হাতের ইশারায় তাকে ডেকে নিলে কাছে।
পাশাপাশি হাঁটছে এখন দুটো মানুষ,
পা মেলাচ্ছে পায়ে ।
এ ছন্দ যেন ভুল হবার নয়!
দু'জোড়া আড়চোখের দৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে গাল-কপাল-চুল পরস্পরের
এখন তার সামনাসামনি বসে তুমি... কথা ঝরে পরছে টুপটাপ
তোমার হাত আবার ছুঁয়ে যাচ্ছে তোমার চুল অভ্যাসবশত।
আবার বদলে যাচ্ছে স্থান, সামনে থেকে পাশে....
পথের দোলানিতে হাঁটু ছুঁয়ে যাচ্ছে হাঁটু,
হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে হাত। 
চোখে চোখও যাচ্ছে ছুঁয়ে.....
ভিতরে ভিতরে অনুসন্ধিৎসু আরও দু'জোড়া চোখ...
ঠোঁটের পাতারা গল্প বুনছে।
গভীর পুলকে হেসে উঠছে সময়।
ধারাপাতের হিসাব থেকে দুটো মানুষ সংখ্যা তুলে নিচ্ছে ইচ্ছে মতো।
তারপর নিজেদের মন মতো লিখছে নামতা।

খুব কাছ থেকে আমি ওদের দেখছি...
এ শহর ওদের চেনে না,
তারপরও ওদের গা থেকে খুব সন্তর্পণে মেখে নিচ্ছে সৌরভ
রেলস্টেশন থেকে পথ, পথ থেকে শপিং মল, শপিংমল থেকে ফুটপাত....।

এর বহুদিন পর,
অনেকগুলো শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পেরিয়ে
একলা জোড়া পা...আজও
শহরটার শরীর জুড়ে গন্ধটা খোঁজে,
মিলিয়ে যাওয়া ধূলোছাপে পা মিলিয়ে হাঁটতে যায়...
ফুটপাতের ঘাড়ে নাক গুঁড়ে গন্ধটা নিতে চায় প্রাণপণ...।

কিছু গন্ধেরাও আসলে নদীর মতো.....
যার উৎস থেকে মোহনা...মোহনা থেকে উৎস..
শেষ হয়, তবু শেষ হয় না।