নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আফরোজা সুলতানা






আফসানার অনুসন্ধান  


ইন্ডিয়া ব্যাটিং করতে  নেমেছে এবার । তাড়াতাড়ি রুটি বানিয়ে সপরিবারে খেলা দেখতে বসলো আফসানা । না , খেলা দেখার নেশায় নয় । ইমরানকে খোঁজার নেশায় । ইমরান আখতার , যার সাথে পত্র মিতালি হয়েছিল আফসানার আজ থেকে ঠিক ১৬ বছর আগে ।  তখন ইমরান স্টেট লেভেল ক্রিকেট খেলত । সময়ের সাথে কত যে ঠিকানা বদলাল দুজনের । তখন কোন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ছিল না । মোবাইল কিছু জনের হাতে বিলাসিতার আমেজ এনে দিত মাত্র ।

একে অপরকে না দেখা এই বন্ধুত্তের একসময় ইতি ঘটলো । তবু আফসানা আজও খোঁজে তাকে । টি.ভি.র মাধ্যমে । যদি সে ন্যাশনাল লেভেলে খেলার চান্স পেয়ে থাকে ।

খেলার শুরুতে তার উৎসাহটা শেষে পাল্টে যায় বিষণ্ণতায় , হতাশায় । আজও তাই হল । কত নতুন নতুন খেলোয়াড় সব । কিন্তু তার ইমরান কই ?
ডিনার করতে করতে সে শুনতে পেলো ম্যান অফ দা ম্যাচের নামটা । ঘোষিত হল শেখ হাসানুজ্জামানের নাম ।

শেখ হাসানুজ্জামান , যার কোন এক সময় ইমরান আখতার ছিল ছদ্মনাম !


শাহীন রায়হান




মৃত্যুময় মাতাল নগরে



জানি বৃষ্টির মত ঝরে যাব একদিন
অক্ষমতার প্রাচীরে ঝুলিয়ে শ্যাওলা পর্দা
বর্ষণমুখর দীঘল প্রাতে কদমের পাপড়ির মত
ভেসে যাব শ্রাবন নদীতে। 
স্বপ্নহীন ম্লান দুটি চোখে গোধূলীর শেষ আলো
তখন মিলাবে বেদনাহত নিঃস্তদ্ধ সন্ধ্যার আবছা আঁধারে।
মনের ফ্রেম ঢেকে যাবে নিঃসঙ্গ বার্ধক্য পলিতে
নিজেই নিজের কাছে হয়ে যাব অচেনা অপাংক্তেয়
যখন প্রতিটি ইচ্ছে পালক পুড়ে যাবে অবহেলার আগুনে।
যেদিন দূরন্ত শৈশব কামার্ত যৌবন বন্ধুত্বের
নিরন্তর উচ্ছ্বাস প্রেমিকার ত্রিভুজ চতুর্ভুজ ভালোবাসা
ধুলোচিহ্নের মত উড়ে যাবে গ্রীষ্মের
দূরন্ত বাতাসে।
আর আমি মৃত্যুময় মাতাল নগরীর
পথে হেঁটে যাব অবিরাম
মৃত্যুরই আবেশে।

সানন্দা নন্দী






দু'মুঠো অন্ন চাই 





তুমি কি দিতে পারো দু' মুঠো অন্ন ?
ঐ যে ঠাঁয় বসে থাকে রাস্তার ফুটপাথে দিনরাত
দিতে কি পারো দু' মুঠো অন্ন ওদের মুখে তুলে ?
ওদের পরিচয় শুধু যে ফুটপাথবাসী
ওরা তোমার-আমার কাছে বেকার তা জানি
তবুও পেট তো আর বোঝে না সে কথা
শোনে না ওদের দারিদ্রতার কথা
খিদের জ্বালায় কাঁদে ওদের অবোধ শিশুটা
তারা যে নিষ্পাপ, বড়ো অসহায় !
তারা জানে না তাদের দারিদ্রতার কথা
তারা জানে না তাদের জনক-জনকীর ব্যর্থতার কথা
শুধু কেঁদে মরে খিদের জ্বালায় দিন-রাত
তুমি কি পারো না ওদের মুখে তুলে দিতে
শুধু দু' মুঠো অন্ন ?

পেট ভরে দু' বেলা দু'  মুঠো অন্ন
এ যেন স্বপ্নের মতন
স্বেত-শুভ্র অন্ন যেন রাজকীয় খাদ্য সম ।

পথের ধারে ঘুমটি দোকানের পাশে
পরে থাকে ডাস্টবিনের পাত্র
এঁটো খাবার আর নোংরা পচায় ভর্তি সে বাক্স
ওরা খুঁটে খায় সেই নোংরা ফেলা বাক্সের খাবার
তাতে ক্ষণিক মেটে খিদের জ্বালাটা
কিন্তু রোগে ভুগে মরে অপুষ্টির কারণে
দু' বেলা দু' মুঠো অন্ন তুলে দিতে যে ব্যর্থ ওদের জনক-জনকী ।

ওরা জানে না বার্গার - পিৎজার স্বাদ
ওরা জানে না কোনো পোশাকী খাবারের নাম
ওরা তুষ্ট দু' বেলা দু' মুঠো অন্নে ।

কাঁচের দেওয়ালে ঘেরা রেস্তোরার সামনে
দাঁড়িয়ে থাকে করুণ ভাবে
লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে উচ্ছিষ্ট খাবারের পানে ,
দোকানীরা দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়
পাছে ব্যঘাত ঘটে ব্যবসায়
ভীড় কমে যায় রেস্তোরার ।

ওরা যে ভীষণ দরিদ্র
পেট ভরে খেতে পায় না দু' বেলা দু' মুঠো
খিদের জ্বালায় ভিক্ষে করে রাস্তায় রাস্তায়
হাত পেতে গঞ্জনা শুনে নেয় ভিক্ষের পয়সা
খিদের জ্বালা মেটাতে ওরা বেছে নেয় এমন পন্থা ।

প্রতিদিন না জানি কতো বাড়তি খাবার
ফেলা হয় রাস্তার ডাস্টবিনের বাক্সে
তুমি কি সত্যিই পারো না দু' বেলা দু' মুঠো অন্ন
তুলে দিতে ঐ সব অসহায় মানুষের মুখে ?
হয়তো এতে লাভবান হবে না কিছু
কিন্তু দোয়া পাবে ঢের
" সকলের তরে সকলে আমরা
      প্রত্যেকে আমরা পরের তরে "
            স্বার্থকতা পাক কথাখানি ।


রিয়া ভট্টাচার্য




তোমার আমার গল্প
 



যখন খোয়াবনামা মুচকি হাসে, আবদারসুতো আবেগী হয়ে জড়িয়ে নেয় পাকে পাকে। হিমরাতে যেভাবে শিশিরস্নাত হাঁটে পাথুরে পিচ রাস্তা, শেষবাস ফিরে যায় রাত্রিশেষে নিঃশব্দে ; ঠিক এই সড়কেই লেখা হয় তোমার আমার গল্প।

আপেক্ষিক পিছুটানে যখন পিঞ্জরে পোষ মানে উদাসীন জেদি পাখি, পরাশর বন্ধক রাখেন গলা মৎস্যকুমারীর কাছে............  
গলিত কুষ্ঠঘায়ে আঁকা হয় মরমিয়া চুমুর নিশান, বিপদসংকেত তুচ্ছ করে রাক্ষসপুরীর বন্দিনীদের জন্য রাত জাগে লালকমল - নীলকমল।  কিছু রূপকথা যেখানে হাসনুহানা হয়ে ফোটে; ঠিক সেই দেশেই লেখা হয় তোমার - আমার গল্প।

যেখানে অভিমান কিলিমাঞ্জেরো মেঘের মত ভিড় করে আসে, চিরহরিৎ বনানী নিমেষে পত্রশূন্য হয় অদেখা অভিশাপে। শ্রাদ্ধকালে পাকানো আলোচালের পিণ্ডের মত গলার মধ্যে দলাপাকিয়ে ওঠে বিস্বাদ কান্না, কুঁচকে ওঠা চাদরে কুঁকড়ে শুয়ে থাকে অস্পর্শী আঘাতখতিয়ান। আপন প্রতিবিম্ব ভুষোকালি হয়ে ব্যঙ্গচিত্র আঁকে আয়নায়, অশ্রুসিক্ত চোখ শেষ মিনতি জানায় প্রিয়াস্পদের দরবারে ; ঠিক সেইক্ষণে আর্তধ্বনি আখরে লেখা হয় তোমার - আমার গল্প।

বেহায়া ইচ্ছেরা যখন কল্পতরু হয়ে আঁকড়ে ধরে মৃত্তিকাকণা, শেষ চুম্বনের মত তৃষ্ণার্ত খড়খড়ে ঠোঁট শুষে নিতে চায় শেষ জলবিন্দু......
দেখা অদেখার মাঝখানে যখন কল্পনারা গড়ে তোলে স্বপ্নসেতু, বসন্তরাতে যখন দিগন্তপার হতে ভেসে আসে বিরহী কেকার বিষাক্ত নিঃশ্বাস। প্রত্যাখানের নীলে জর্জরিত প্রেমিক মন যখন ছটফট করে মৃত্যুকাঙ্ক্ষায়,   ভোরের স্নিগ্ধ সমীরণ যখন চাবুকসম আছড়ে পড়ে পিঠে ; ঠিক সেই সন্ধিক্ষণে লেখা হয় তোমার - আমার গল্প।

যখন পাতাবাহার গাছের ফাঁকে মগ্নচিত্তে বাসা বোনে গতঝড়ে সর্বহারা বাবুইপাখি, যখন প্রেমিকার কোলে মুখ গুঁজে মায়ের গায়ের গন্ধ খোঁজে আদরকাড়া প্রেমিক.....
বলা না বলার মাঝখানে যেভাবে অজান্তেই গড়ে ওঠে ধূসর গলিপথ, নিঃসীম অন্ধকারে দেবদূতসম মুমূর্ষুকে ভরসা দেয় নাইটিঙ্গেলের লণ্ঠন। যখন ঝাপসা চোখ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ঠিক যেভাবে গরম ভাতের গন্ধ পেলে নেচে ওঠে ক্ষুধার্ত স্বাদকোরকেরা ; সেইখানে নিকানো মেঝেতে কাঠকয়লার কালিতে লেখা হয় তোমার - আমার গল্প।

আদপে সবাই বলে রূপকথা বাস্তব হয়না কখনো, কিন্তু জীবনের প্রতিটি বাঁকেই বাস্তবের অবগুণ্ঠনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে সে।
গল্প..... সেতো জীবনপথেরই নামান্তর। রাজা - রাণীর মিলন - বিরহের নিঃশব্দ আক্ষরিক অভিযান। আসলে গল্প সবার হয়না, সবাই সবার সাথে সুখীও হয়না। পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের একটা সম্পূর্ণ গল্প আছে, যা তার জীবনকাল বেয়ে চলে অনন্তের পথে; মসীচালনা করে কোনো রাজা বা রাণী। আর পুরাতন অসমাপ্ত গল্পগুলো! তারা পরিত্যক্ত হয় উইধরা ডাইরির পাতায়, কোনো হিমরাতে আগুন উৎসবে আত্মাহুতি দেবে বলে।।

লীনা দাস




মন কেমন করে




মন তো কত কিছুর জন্যই কেমন করে!
ছেলেবেলা,আমার গ্রাম,গাছপালা,
পুকুর,মৃত বাবা মৃতা মায়ের জন্য!
ফেলে আসা এত বছর এত মাস এত দিন!

সব কিছুর জন্যই মন কেমন করা!

কতকিছু মুছে নি:শেষ হয়ে গেছে।

তবুও ঐটি আমার গ্রাম,ঐখানেতেই
হৃদয় আমার গেছে চুরি।

জালের মত জড়িয়ে থাকা স্মৃতি
একটা একটা করে ছাড়াতে থাকি
স্মৃতি রোমন্থন নি:সঙ্গ জীবনে 
আনন্দের বাতাবরন!

মরানদীর খাত হয়ে থাকা মন,
স্মৃতিচারণে আচম্বিতে প্লাবনের
কল্লোল ছুটে আসে।      

রং বদলে যায়,বিবর্ণ মুখ ঠোঁট থরথরিয়ে কাঁপে-----
বিচিত্র অনুভূতি ঢেউ তোলে,
মিলিয়ে যায়! হিসাব নেই!
বৃদ্ধাবাসের জানালা দিয়ে আকাশপানে চেয়ে একদিন প্রতিদিন!!

দেবযানী ভট্টাচার্য্য

                  




        
                            ভয় 






 অন্ধকারকে আমি ভয় পেতামনা
ছোটবেলায় ,সবাই বলত সৃষ্টিছাড়া মেয়ে--ছোট্টখাট্টো চেহারা --জেদী--হিংসুটে আর দস্যি-।বাবা নেই বলেই নাকি এমন আমি। সুন্দরী  শান্তশিষ্ট  দিদির কম হেনস্তা  হয়নি এই দস্যির হাতে।বিনা নালিশে বেমালুম  হজম করতো প্রশ্রয়ে। কতবার মা অন্ধকার চিলেকোঠায় বন্ধ করে রেখেছে ,আমি কাঁদিনি--চিৎকার করে ছড়া বলেছি,ভুলসুরে উৎকট গান গেয়েছি , একসময়  ক্ষিধেয় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি ধুলোমাখা মেঝের উপর। 
অনেক রাত্রে ঠাকুমা আর দিদি এসে চুপিচুপি ডেকে তুলেছে।ঠাকুমা অধৈর্য  হয়ে পদ্মাপারের ভাষায় ক্ষোভে ফেটে পড়তেন----'আপদ্ মাইয়াডা কাউরে ডরায়না !-জন্মাইয়া বাপেরে খাইসে-অহন আমাগো জ্বালাইয়া পোড়াইয়া খাইবো।" এরকম আলোর বিপরীতে নিজেকে স্থির রেখেই স্কুল পালাতে শিখলাম --সাইকেল নিয়ে সোজা দামোদরের পাড়ে। কতবার মাঝিদের পটিয়ে জেলেনৌকোয় চেপেছি । নদীর চড়ায় মড়া পোড়ানো দেখেছি, ক্ষেত থেকে তুলে নিয়েছি টাট্কা সবুজ কড়াইশুঁটি । কখনো রাস্তা থেকে তুলে এনেছি খোঁড়া কুকুরছানা, কখনো বা্চ্চা শালিখ।নিজের পুজোর জামা ভিখিরি  মাকে দান করে চরম পিটুনি খেয়ে রাগে মায়ের মুর্শিদাবাদী সিল্কে  কাঁচি চালিয়েছি নিষ্ঠুর উল্লাসে।কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো দেখেছে এই ছোট্টখাট্টো  মেয়েটার সাংগঠনিক  ক্ষমতা--এক ডাকে একটা জমায়েত --মিছিল। মারপিট, ঘেরাও, পিকেটিং ,স্লোগান, গনসংগীত  ,স্ট্রিট্-কর্ণারিং ,পথনাটক, গ্রুপ থিয়েটার--জনপ্রিয়তার নেশা নেশা ঘোর। রাত করে বাড়ি ফেরা ছিল, ছিল ছেলেদের সাথে গ্রামে গ্রামে রাত কাটানো-।আত্মীয়রা বিদ্রুপ করে গেছে বাড়ি বয়ে--পাড়া প্রতিবেশীরা তকমা দিয়েছে-- "গেছো মেয়েছেলে" ,
"ছেলে চড়ানো মেয়ে" । নিজের ছেলেদের আমার ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলার উপদেশ দিয়েছে । আমি কিছুই গ্রাহ্য করিনি- -দরকারে পরে ওই বাড়িগুলোই আমার কাছে এলে মনে মনে হেসে কাজে লেগে পড়েছি । আমার নামে শুনতে শুনতে ধৈর্য্যহারা মা চড় মারতে উঠলে হাত চেপে ধরেছি,মায়ের অসহায় কান্না ও দুর্বল করতে পারেনি আমায় ।
হাসপাতালের মর্গ থেকে যখন সাতমাসের অন্তঃসত্ত্বা  দিদির কাঁটাছেঁড়া শরীরটা আনতে গেলাম--কালসিটে পড়া হাত,ছ্যাঁকা লাগানো গাল, কপালের মাঝ বরাবর একটা সেলাই---কি বীভৎস একটা অন্য পৃথিবীর গন্ধ ঘরটায়-অন্ধকার ,স্যাঁতসেঁতে। একটা কালচে মুখ, নীল ঠোঁট নিয়ে শুয়ে আছে দিদি-ঠোঁটের কোণায় শুকিয়ে যাওয়া রক্ত।ওরা বললো দোতলার সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে-। অথচ আমি তো জানি ক্রিটিক্যল প্রেগন্যান্সির কারণে  বেডরেস্টের নিদান পাওয়া দিদির সাথে ওরা কি কি করেছে। না---তখনও ভয় পাইনি আমি ,বের করে এনেছি ওকে মর্গ থেকে । দাঁড়িয়ে থেকে পুড়িয়েছি  ওর শরীরটা । তারপর
আইনি লড়াই--ওর হিংসুটি বোন শেষ দেখে ছেড়েছে এ অন্যায়ের । 
শুধু আজ যখন আইটি সেক্টর থেকে ভোর রাতে হা-ক্লান্ত আমি দরজা আনলক করে আমাদের ফ্ল্যাটটায় ঢুকলাম আর টানটান শূন্য বিছানাটা দেখলাম--আমার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো-এই প্রথমবার-।টেবিলের ওপর ল্যাপটপ, তার পাশে ফটোস্ট্যান্ডে তোর গত জন্মদিনে তোলা ছবিটা--তুই আমার মুখে কেকের ক্রিমগুলো মাখাচ্ছিস্ , আমি কপট বাঁচার ভঙ্গী তে মুখ আড়াল করছি--কি ভীষণ প্রাণ ছবিটায়।  ঠিক সামনেই উপুড় করা "রিভার অব্ স্মোক"  বইটা, যেন রাত জেগে পড়তে পড়তে এই মাত্র উঠে গেছিস-। তার পাশেই তোর শূণ্য কফিকাপটার তলায়  সাদা একটা কাগজ কি ভয়ংকর শূণ্যতা  নিয়ে পড়ে আছে আমারই জন্য--আমি হাতে তুলে নিলেই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে-।আমি জানি ওর বুকে লেখা অক্ষরগুলো--গত দু সপ্তাহ ধরে ওরা তোকে যন্ত্রণা দিয়েছে--অবশেষে ওদের থেকে তুই নিজেকে মুক্ত করেছিস--মুক্ত করেছিস এই একবছর তিনমাস বারোদিনের একত্র যাপন থেকে--।যে তুই একদিন আমাকে ছেড়ে ট্যুর এ যেতেও বায়না করতিস --কেমন আলগোছে সব ফেলে চলে গেলি --হঠাৎ উগ্র ,রুক্ষ মনে হতে থাকা এই জেদী মেয়েটাকে ফেলে এক নরম রূপকথার বুকে মাথা রাখবি বলে -। আস্ত একটা জীবন গুটিয়ে নিয়ে চলে গেলি--দায়হীন, শর্তহীন--বিশ্বাসই হয়না যেন-সব তো পড়ে আছে ঠিক তেমনি-
-সকালে যেমন ছিল বেরোবার  সময় -।কিন্তু এই সাদা কাগজ হাতে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা দস্যি মেয়েটা জানে কিভাবে ভিতর থেকে তাসের ঘরের মত ভেঙে যাচ্ছে তার সাহসের ইমারতটা--কি ভীষন এলোমেলো অর্থহীন   হয়ে যাচ্ছে জীবনভোরের আপোসহীন লড়াইগুলো । এই টিপটপ্  করে গুছিয়ে রাখা দেড়কামরার শূন্য লিভ ইন ফ্ল্যাটটার মধ্যে আমি অক্সিজেন পাচ্ছিনা।তোকে ছাড়া বাঁচবার ভয়ে আমার নিঃশ্বাস  আটকে যাচ্ছে ।