নোটিশ বোর্ড
বৈশাখী দাস
প্রভাত প্রতীক্ষায়
নাহ্! তেমন কোনো সুরেলা ভোরাই এর দোল খাওয়া নেই,কার্নিশ ঘেঁষা এই ইলেকট্রিক তারটিতে।নেই শুভেচ্ছা বিনিময়ের ফর্মালিটি।শুধু স্লিপিং পিলে ডুবিয়ে রাখা কিছু নির্বিকার পেন্ডুলামের দোলন আছে অবচেতনে।ঠিক যেন ফর্ম্যালিনের সুরক্ষায় রুখে দেওয়া 'বিকৃতি',মেহগণি রাতঘুমের।তাও কি ঘুম? বেশ কিছু একলা শিশিরের উপন্যাস,নিঃসঙ্গ ঝিঁঝিঁর অভিমানী আত্মকথা জমেছে রাতজাগা অবকাশের কুঠুরিতে! অবশ্য মাঝে মাঝে রাত্রির সামুদ্রিক সত্ত্বা ফুঁড়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত ভেসে ভেসে ওঠা রূপোলী-ধূসর স্বপ্নরাও জ্বালায় বড়ো! না না,ওদের প্রযত্নে নেই কোনো বলিষ্ঠ নামের আওতা,ঠিকানার আদর।তাই বায়ু বুদবুদের মতই ভ্যানিশ শেষমেশ!
তবুও তো,দিশাহারা হেমন্ত-নিশিকে চেনাতে পথ,কলমে জ্বালিয়ে রাখা আকাশপ্রদীপ! রজঃস্বলা মননের উর্বরতার আশ্বাসে অক্ষরের ইনফ্রারেডে আবার সাজিয়ে তোলা সবুজঘর,পান্ডুলিপির ভাঁজে জিইয়ে রাখা প্রভাত-প্রতীক্ষা.......
অমৃতা রায় চৌধুরী
সমাজ-পুরাণ
শৈশবের ছোট্ট পাড়া, শৈশবের বাড়ি,
বর্তমানে পুকুর ঘিরে নতুন ফ্ল্যাটের সারি।
ফ্ল্যাটের নতুন বারান্দাতে নতুন নতুন মুখ;
স্কোয়ার-ফিটের মাপা ঘরে একলা থাকার সুখ!
ছোটো ফ্ল্যাটে সবই মাপা 'রোদ-হাওয়া-জল',
মৃদু হাসি, চাপা কান্না, মাপা হট্টগোল ।
একই সাথে বাস করা আজ খেয়াল পুরাতন,
এখন শুধু দেখা হলে, মৃদু সম্ভাষণ -
ছোট্ট 'হ্যালো', হালকা হাসি, অল্প কথা বলা;
সযতনে দূরে থাকার জন্য এড়িয়ে চলা।
একলা থাকতে চায় যে মানুষ, একলা সংসার,
একলা তুমি, একলা আমি, একলা চারিধার!
একলা থাকতে চাইতে চাইতে বাবা-মা'ও পর,
নানান মাপের বৃদ্ধাশ্রমই তাঁদের নতুন ঘর।
একবিংশ শতক আজ কানে দিয়েছে মন্ত্র;
মানুষ এখন আবেগহীন, হৃদয়বিহীন যন্ত্র ।
সবখানেই প্রতিযোগিতা, সবাই প্রতিযোগী,
ত্যাগমন্ত্র জানে'না কেউ, সবাই চরম ভোগী।
হানাহানি ও হিংসা তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আজ,
ভালোবাসা-মমতা-স্নেহ'ই শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ।।
পায়েল খাঁড়া
দেওয়ালি
আলোয় আলোয় ঝলমল করছে মন্ডপ।বৈদ্যুতিন সজ্জা মাকড়সার জালের মতো শাখা ছড়িয়েছে রাতের কালচে দেওয়াল জুড়ে।চারপাশে পোড়া বারুদের গন্ধ আর থেকে থেকে শব্দ বাজির বিকট উল্লাস বুঝিয়ে দিচ্ছে আজটা অন্য পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা।
অমাবস্যাটা অবশ্য পুরোদস্তুর লোপাট হয়নি।তার আপাতত ঠিকানা বড় রাস্তার উল্টো দিকে ফুটপাতের একচিলতে উদ্বাস্তু সংসারটায়।একটা টিমটিমে লুন্ঠনের আলো কোনো রকমে পাল্লা দিচ্ছে মধ্য কার্তিকের ঠান্ডার সাথে।তার বিষন্ন আভা একটা ফ্যাকাসে প্রশ্নচিহ্নএর মতো লেপে আছে শীর্ণ কচি মুখটায়।
"মা, আমাদের দেয়ালি কবে আসবে?"
"আসবে রে আসবে, একদিন ঠিক দেয়ালি আসবে --দেখিস; আর সেদিন চারদিক শুধ আলো আর আলো!"
সহসা একজোড়া বেপরোয়া তীক্ষ্ণ আলোয় ওদের চোখ ধাঁধিয়ে গেল।সেদিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অস্ফুটে বলে উঠল মেয়েটা-- "মা, ওই দেখ_দেয়ালি_আসছে....."
মায়ের আর্তনাদ হারিয়ে গেল উৎসব মুখর শহরের শব্দের ভিড়ে।
চৈত্রী চৌধুরী
পূজো
পূজো কিন্তু সবার কাছে খুশির পুজো হয়না।
তোমাকে কি পুজো এলেই হাতছানি দেয় আয়না?
নতুন শাড়ি, নতুন জুতো, জামাকাপড় আর গয়না?
সবার কিন্তু এত খুশি, এত মজা সয়না।
পূজো কিন্তু সবার কাছে খুশির পুজো হয়না।।
যে ট্রেনটা পিষে দিলো এত লোকের দেহ।
যে বন্যা কেড়ে নিলো মা-বাবার স্নেহ।
যে ঝড়টা তান্ডব হয়, শুধুমাত্র বয়না।
পূজো কিন্তু সবার কাছে খুশির পুজো হয়না।।
যে ছেলেটার মাথা ন্যাড়া, মা মরেছেন স্ট্রোকে,
যে মেয়েটা ভুগছে এক কঠিন জরা রোগে,
যে লোকটা ভিক্ষা করে, খায় কিংবা খায়না!
পূজো কিন্তু তাদের কাছে খুশির পুজো হয়না।।
যে ছেলেটা গুলি খেয়ে বুকে এখন মৃত।
যে মেয়েটা রেডলাইটের নিচে অনাবৃত।
বনের পাখি কয়েদ করে পুষছ ঘরে ময়না?
পূজো কিন্তু তাদের কাছেও খুশির পুজো হয়না।।
আমার বাবার পা ভেঙেছে, তাতে কার কি?
ঢাকির গায়ে নেইতো জমা, নোংরা কত! ছিঃ!!
সবাই ব্যস্ত দুগ্গা নিয়ে, কেউতো ফিরে চায়না।
পূজো কিন্তু সবার কাছে খুশির পুজো হয়না।।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)