নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

মৌসুমী ভৌমিক








✍️সাক্ষাৎকার
    ***********

প্রশ্ন :১:- আপনার কাছে কবিতা কি ?
উত্তর : আমার কাছে কবিতা হল বন্ধু, আমার সুখ, দুঃখ ও যাপনের সঙ্গী।
     ২:- আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তর : আমার প্রিয় কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর।
   অন্যান্য কবিদের কবিতাই মূলতঃ প্রেরণা।

     ৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ?
উত্তর : বলা মুশকিল। তবে একটা কবিতা লেখার পর কিছু শান্তি অনুভব করি। হয়ত তাই লিখি।

     ৪:- আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত)
উত্তর : প্রথম কবিতা - 'মৌন'। 2011 সালে সানন্দা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
           প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ - 'যাপন'। 2017 সালে উড়ান প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

     ৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ?
উত্তর : আত্মিক সম্পর্ক হওয়া উচিত। কবিতা যখন মন ছুঁয়ে অন্তর ছুঁয়ে যায়, সে শব্দমালা তখন শুধু কবির নয়, পাঠকেরও হয় বৈকি।

৬. ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ?
উত্তর : ফেসবুক বর্তমান যুগে এক বড় প্লাটফর্ম। আজ যারা ফেসবুকে কবিতা লিখছে, ভবিষ্যতে তাদেরই কেউ বড় কবি হয়ে উঠবে না, এমন কথা বলা যায় না। সময় বলে দেবে এর গুরুত্ব কতখানি।

৭.ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ?
উত্তর : যে যার নিজের জায়গায়। ছাপার অক্ষরে লেখা পড়ার যেমন বিশাল সুবিধে আছে, অপরদিকে অনলাইন ম্যাগাজিন খুব কম সময়ে অনেক দুরবর্তী স্থানেও পাওয়া ও পড়া সম্ভব। অনলাইনে অনেক পাঠকের কাছে পৌঁছানোও সুবিধাজনক।

৮. আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুখ হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?
উত্তর : বই বিমুখতার কারণ বহুবিধ। বইসংখ্যা প্রচুর, তাছাড়া অনলাইনে বই/কবিতা/লেখা পড়ার ফলে কেনার চাহিদাও কমে যাচ্ছে। তবে ভাল বইয়ের পাঠক আজও বর্তমান।

৯. উত্তরাধুনিক কবিতা বলতে কি বোঝেন ? অনেক জনই আজকাল কিছু কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বলছে এটা উত্তরাধুনিক কবিতা , কিন্তু কবিতা পড়তে গেলে দাঁত ভাঙার উপক্রম কিংবা মাথার উপর দিয়ে চলে যায় সেক্ষত্রে আপনার কি মতামত ?
উত্তর : যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কবিতারও আধুনিকীকরণ ঘটবে, এটাও কাম্য। তবে দেখতে হবে এ কবিতাও যেন পাঠককে স্পর্শ করে।

১০. গদ্য কবিতা ও গদ্য-পদ্য কবিতা কি ? গদ্য কবিতায় কি ছন্দ বা নির্দিষ্ট তাল থাকার প্রয়োজন নেই ?
উত্তর : গদ্য কবিতায় অন্ত্যমিল থাকে না। তারও নিজস্ব ছন্দ থাকে তবে নির্দিষ্ট নয়।



মৌসুমী ভৌমিকের কাব্যগ্রন্থ "যাপন" ভারতবর্ষের যেকোনো প্রান্তে ঘরে বসেই পেয়ে যান ডেলিভারি । অর্ডার করতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কেঃ https://goo.gl/ivub8T



✍️কিছু কবিতা



শব্দরা
***********




পাহাড়ের গা বেয়ে চলা রাস্তা ধরে
শব্দরা হেঁটে যাচ্ছে
নির্বাক আমি নিথর হয়ে বসে থাকি


ঢালু উপত্যকার কোল বেয়ে
খাদের পাশ দিয়ে গেলে যেমনটা হয়
শব্দরা সেভাবে হাঁটছে
স্পষ্টতঃ বললে
শব্দরা খেলছে, অক্ষর ভেঙে ভেঙে
আবার ক্রমশঃ নিজেদের জুড়ে নিয়ে


শব্দের বৃষ্টি আয়নাবাচক হলে
তাদের গল্পটা বুঝতে পারি
নির্বাক আমি জেগে উঠলে
শব্দরা হাসে -
শব্দরাও প্রগলভতা ভালবাসে



আঁধার
***************



আলোর পৃথিবীকে আঁধার স্পর্শ করলে
            রাত্রি হেসে ওঠে ।
নাক্ষত্রিক আকাশে জোছনার প্লাবন এলে স্বর্গীয় দ্যোতনায়
              ভেসে থাকে দিগন্ত।
অখিল বিশ্ব রাত্রির চান্দ্রিক সুষমার
    কাছে ঋণী হয়ে থাকে।
জন্মাধতার মুখোশ খুলে হে মানুষিক অসুর
      এই মোহময় অপরূপ জ্যোস্নায়
ধুয়ে নাও বিষাক্ত মন
সন্ত্রাসের আগুন।
আঁধারের মৌনতাকে সম্মতি না মেনে
মৌনমিছিল বলে জেনে রাখো।
আঁধারের সম্মোহন মুছে দিক যত রক্তাক্ত চেতনা। পৃথিবীর পাণ্ডুলিপিতে লেখা হোক শুধু মানবতা, ভাতৃত্ববোধের অক্ষর।
তারপর এ পৃথিবী অ-আসুরিক হোমযজ্ঞে
শুদ্ধ হয়ে লাবণ্যময়ী মমতাময়ী মাতৃভূমি।



আলোহারা জীবন
*****************


মনগুলোতে অন্ধকার জমলে
মুখগুলো পরে  নেয় মুখোশ
নক্ষত্রদের পুড়িয়ে দিয়ে
রক্তের স্বাদে ভাঙে উপোস।
ক্ষমতার কাছে নুইয়ে মাথা
শব্দ  হারায় প্রতিবাদী স্বর
মোমবাতি জ্বলে, কান্নারা শুধু
দুঃখ ঢাকে, কাটে আঁচড়।
জমজমাট অন্ধকার অলিগলি
আলোহারা চাঁদ, দিগদিগন্ত
জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে
থাকে না কোনো মুহূর্ত।
তবু, আশ্চর্য ভাত ফুটে উঠলে
গন্ধে আবার বেঁচে ওঠে জীবন।






পদযাত্রা       
***************



দিনের আলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে
এসো দুপুরআলো সেলাই করি
সূর্য কাছে এলে ছায়াও ভয় পায়
নিজেকে গুটিয়ে ছোট হয়ে এলে
আমার ছায়াও আমাতে মিশে যায়
আমি একাত্ম হয়ে প্রহর গুনি
সন্ধ্যার আঁধার হেঁটে এলে
গোধূলির আলোতে মুখ ধুই
মেখে নিই নরম আলোর প্রশান্ত আভা
ক্লান্ত আমি অতল স্বপ্নের সুলভ খামে
হারিয়ে যায় সম্মোহিতের মতো
জীবনের কথা বিছিয়ে যে ইচ্ছেরা জাগে
সকালের সোনালি আলোয় তাদের
আবার পদযাত্রা।




আমি ও গাছ          
***************


আমি দেখি
মাঠের মাঝে গাছগুলি একাকী দাঁড়িয়ে -
তখন আর নিজেকে একা মনে হয় না ঠিকই
বরং গাছের থেকেও অসহায় মনে হয় ।
শেকড়হীন সুগন্ধহীন জীবন
সারাজীবন কারো না কারোর অপেক্ষায় বহুবার মরার পরেও বেঁচে থাকে ।
জেগে থাকে শূন্য করতল মেলে পৃথিবীর মায়ার মাঝে
কিছুই তো নেই - ভিক্ষাপাত্র নিয়ে প্রবজ্যা দরজায় দরজায়
তার চেয়ে গাছ হওয়া ভাল।




সাক্ষাৎকারে: জ্যোতির্ময় রায়

রোমা মন্ডল ব্যানার্জি



মেরুদন্ডীয় মেঘ
"""""""""""""""""



মেঘ পেরুলেই আমার  বাড়ি,
যাবিরে 'টগর' যাবি ?
দিগন্ত ছুঁলেই মস্ত আকাশ
মাটি ছোঁয়া জানালাও খোলা পাবি...

জানিস 'টগর,'
সেই জানালা দিয়ে ভোরও আসে,
আসে  শিরদাঁড়াদের পাল ,
রুগ্ন রোদ ওড়ে না বাতাসে,
'আ ঢাকা আঙ্গুলে' আসে সকাল..

মেঘ পেরুলেই  আমার  বাড়ি,
চলনা 'টগর' , যাবি  ...?

মন মেঘ সরালেই সাদা সড়ক
নেই তো প্রতিহিংসার মোড়..
এইখানেতে 'আধমরা রোদ',
শুধুই মিথ্যে ভুরি ভোর.....

চিৎ শুয়ে রয় শরীর ঘাটে
খসখসে হিংসা,প্রতিশোধ...
শিরদাঁড়া'টা শ্যাওলা পড়া পঙ্গু মনে
এইখানেতে,আঁচড়ায় জীবন বোধ.....

ঐ তো, মেঘ পেরুলেই আমার  বাড়ি,
চলনা 'টগর'  যাবি  ....?

ঐ খানেতে  অ্যাসিড জল নেই,
নেই  কামুক, লোভী বাতাস,
'উলঙ্গ  রাজা'র দেশের সত্য বলা
সেই ছেলেটারও এইখানেতেই বাস..

ঐ তো 'টগর' মেঘ  পেরুলেই 
আমার  বা়ড়ি, চলনা  'টগর'  যাই,
মেঘ সরালেই ন্যায্য আকাশ,
মাটি, মা আর মানবিকতার গন্ধ  পাই  ...

ঐ তো 'টগর'... 
কালো মনের মেঘ  সরালেই  আমার  বাড়ি,
চলনা, চলনা 'টগর'  যাই  .....

পবিত্র চক্রবর্তী







আজব পুরাণের গপ্প
****************


                          ( ১)
       
সে আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগের কথা । তখন দুর্গা ঠাকুর বসন্তকালে সিংহের পিঠে চেপে বাপের বাড়ী আসতেন । সময়টাও ছিল খাসা । বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি হরেকফুলে সেজে উঠত । মা মেনকা আর অন্যান্য সখীরা নানা ফুল তুলে এনে কত রকম সাজ বানাতেন । আহা কৈলাস দেখো , চারিদিকে বরফ আর বরফ ! কী আর করা বাপ-মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শীতের দেশে বিয়ে দিতে বাধ্য হন । সে যাইহোক যা হওয়ার হয়ে গেছে । বছরে এখন একটিবার মেয়েকে কাছে পেয়ে কত আদর করে , চুমু দেয় । আর দাদু প্রাচীনবর্হি সে তো আনন্দে দিশেহারা ।
একদিন সকালবেলা আঙুরের রস পান করতে করতে দেবী দুর্গা তার দুই বোন কদ্রু আর বিনতার সাথে সাধের ফুল বাগিচায় ঘুরছেন । দুর্গাকে কাছে পেয়ে ফুল গাছেদের শরীরেও খুশী । দেবীও তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন । কিন্তু কেন জানি না আজ সকাল থেকেই পার্বতীর মনটা কেন জানি না খারাপ । বড় বোন মশকরা করে জিজ্ঞেস করেন , “ হ্যাঁ রে পার্বতী ভোলানাথের জন্য মন খারাপ নাকী ?” দেবীর মুখে হাসি কিন্তু মনের কোথাও কী যেন না থাকার দুঃখ । এই বাগানেই বাসা বেঁধে থাকে নীলকণ্ঠ দম্পতি । পার্বতীর মনের কথা বুঝতে পেরে তারা টুঁই টুঁই করে গান গাইতে গাইতে বলে –
“ বাসন্তীর মনে বসন্ত নেই-
তাই তো মা হারিয়েছে খেই ।
শ্যামদেশে আছে এক বৃক্ষ-
ফুটলে ফুল যাবে সব দুঃখ ।”



                                  ২

প্রজাপতি দক্ষ চিন্তায় আকুল । কী এমন গাছ যা তার বাগিচায় নেই ? আর শ্যামদেশ সেটাই বা কোথায় ? সুপ্রাচীন দাদু প্রাচীনবর্হি নাতনীর মনের দুঃখের কথা জানতে পেরে প্রপিতামহ ব্রহ্মার আশ্রম ব্রহ্মলোকে যান । ব্রহ্মা বলেন “ দেখো বাছা প্রাচীনবর্হি আমি বিশ্বের সকল কিছু সৃষ্টি করলেও বয়েসের কারনের বর্তমানে কিছু স্মৃতি বিলোপ ঘটেছে । তুমি বরং বিষ্ণুলোকে যাও ।” 
প্রাচীনবর্হি সেখানেও যান । কিন্তু ভগবান বিষ্ণু তখন অনন্ত শয্যায় , ঘুম ভাঙানো যাবে না । অবশেষে নারদমুনির পরামর্শে ভারতবর্ষের পূর্ব দিকে শ্যামদেশ (বর্তমানের থাইল্যান্ড) থেকে আনা হয় শেফালি ফুলের গাছ । পরম যত্নে তা লাগানোও হল , কিন্তু ফুল বসন্ত শেষেও আর ফোটে না । এ যে বড় বিড়ম্বনা । 
                
                                   ৩

এদিকে রাবণের আক্রমনে সকল দেবকুল চিন্তিত । ভগবান বিষ্ণু তখন রাম অবতারে ধরায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণপ্রিয় সীতাকে উদ্ধারের আশায় । কিন্তু পরাক্রমশালী রাবণকে বধ করা যে সহজ নয় তা জেনেই শরৎকালের এক সকালে কালিয়াদহের পাড়ে বসে একাগ্র চিত্তে দেবী দুর্গার অকাল বোধন করে বসেন । এই সময় দেবকুলের ঘুমানোর সময় । কী আর করা দেবীকে রামের কাছে পাঠানো হল পরম শক্তি দেওয়ার জন্য । রাম দেবীকে একশো আটটা নীল পদ্মে পূজা দিলেন । একেই ঘুমের সময় কিন্তু একটা মিষ্টি গন্ধে দেবীর মুখ পরম আনন্দে ভরে উঠলো । তিনি দেখলেন , অনেক ফুলের মাঝে শ্বেত-স্বর্ণ কান্তি ক্ষুদ্র কিছু ফুল । দেবী শ্রীরামের কাছে জানতে চান , “ বৎস এহেন মধুর ফুল কোথায় পেলে ?” করজোড়ে রাম জানায় , “ দেবী এ ফুল এ দেশে কেবল আপনার পিতার বাগানে শরৎকালেই ফোটে । আপনার পিতামহ এনেছিলেন ।”
এরপরের ইতিহাস সকলেরই জানা । শোনা যায় এরপর থেকেই দেবী দুর্গা কেবলমাত্র প্রিয় শেফালি ফুলের জন্যই শরৎকালে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়ী আসেন । রামকে আর সেই নীলকণ্ঠ পাখীকেও আশীর্বাদ করেন । ফলে রাম যুদ্ধে জয়ী হন আর নীলকণ্ঠ পাখী শরৎকালের দুর্গাপূজায় মায়ের সাথে খানিকটা পূজা পেয়ে থাকে ।
গপ্প শুনে আমার ভাগ্নী পটা তো দিব্যি খুশী । আমাকে বলল “ মামা এ গল্প কোথায় পেলে ? বন্ধুদের বলতে হবে তো ।”
আমি বললাম , “ খবরদার ! এ শুধু তোর আমার গপ্প , ‘ আজব পুরাণে ’এসব আছে লেখা ।।”



ইমরান হাসান




বিসর্জন
********


রেখা বেদে দের মেয়ে, তার বিয়ে টা হয়েছিল অনেক অল্প বয়সে।তার একটাই দুঃখ তার পেট থেকে নতুন জীবন এর জন্ম হয়নি। সে বন্ধ্যা। সবাই তাই বলে থাকে। তবে তার মনে হয় না। কেননা তার মাঝেও মীনরূপ জলদেব প্রকট হন প্রতি মাসে। তার তিননদী তেও বান ডাকে প্রতি মাসের তিন দিন।

আজকে সে এই কারণেই এসেছে বরেন্দ্র মহাস্থান এ। এখান নিশুম্ব নামের এক মহাতান্ত্রিক এর বাস সে শুনেছে, সবাই নাকি তার দেখা পায় না। তবে সে আশায় আছে, সে হয়ত পেয়ে যাবে। কেননা সে শুদ্র দেবতার পূজারী। নিশুম এর ন্যায়।

রেখা মেঠোপথে এগুচ্ছে তার মাথার উপরে একটা ঝুড়ি। সেই ঝুড়ির মাঝে নানা রকম এর জিনিস। সে এগুলো বিক্রি করে বিভিন্ন এলাকা তে।

সে আসতে আসতে পৌছাল একটা গড় এর কাছে। ঢিবির মত উঁচু হয়ে আচ্ছে গড়টি। এখান থেকেই নিশুম্ব এর এলাকা শুরু।

সে পূজা করে এক অজানা অন্ধকার দেবতার। তবে তার অনেক নাম ডাক। সন্তান চাইতে গিয়ে যারা তার দেখা পেয়েছে তারা কেউই নাকি খালি হাতে ফেরেনি।

“সেইডা তো ঠিক আছে, কিন্তক তান্ত্রিক এর কাছে যাওনের আগে শুইন্না লও সে কিন্তক সব কিছুর একটা কইরা দাম লয়”

সে গরীব বেদেনি। এরপরেও সে চলেছে তার কাছে।

সবার অপবাদ সইতে পারে না সে। তার আর ভালো লাগে না বন্ধ্যার এই অপবাদ। তার স্বামীকে শুনতে হয় হাটকুড়া নাম।

কিছু না বললেও তার মুখ দেখলে পারে বোঝা যায়। যে তার ভেতর টা ছিড়ে যায়।

এই কারণে তান্ত্রিক যা দাম চায়, সে দিয়ে দেবে,

সেটা যা-ই হোক না কেন।

যদিও তান্ত্রিক চরিত্রহীন নয়। তাকে ব্রহ্মচর্য এর সাধনা করতে হয়। এই কারণে যদি সে তার সমস্ত সম্পদ চেয়ে বসে তাও পিছে হটবে না সে।সে হয়ত চাইবে তার জীবন , সেটিও দিতে সে রাজি। যদি সন্তান এর জন্মের পর সে তাকে বলি দেয় সে হাসতে হাসতে বলি তে উঠবে।

সে ভাঙ্গা দেউল এর কাছে এল। এই দেউল টা সেই পৌরাণিক যুগ এর। মহাভারত এর যুগের রাজা পুণ্ড্রক বানিয়েছিল নাকি এটা।
এর মাঝে এখনও আঁধার সেই দেবতার পূজা করা হয়। যার পূজা পুণ্ড্রক করত।
দেউলটা শুন্য। ভেতরে কেউ নেই , শুধু ছুঁচোর বিষ্ঠা ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে যেন নেই।

অন্ধকার এর একটা একটা করে স্তম্ভ যেন সবদিকে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে সে কোথায় পাবে সেই তান্ত্রিক কে। এটাই বুঝতে পারছে না।একদিকের ছায়া গুলো নাচছে যেন নাচতে নাচতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আর অপর দিকেও ছায়ার নাচন দেখা যাচ্ছে। এই ছায়া গুলো কাঁপতে কাঁপতে ঘরের কোনাতে জড় হতে লাগলো , একটু পরে সে দেখতে পেল সেখানে ঘুলঘুলি এর কাছে একটা কৃষ্ণরঙের মানুষ বসে আছে। তার উপরে ছোঁয়া লেগেই ছায়া কাঁপছে।

সে গেল তার কাছে , সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতে গিয়ে তাকে থামিয়ে দিল সে।

তার ঠোঁট নড়ল না, কিন্ত স্পষ্ট বুঝতে পারল সে তার মনের ভেতরে কথা বলে চলেছে সে ,

“তুই হাটকুঁড়ে তাই লস কি?”
“হ স্বামীজী , হামি হাটকুঁড়া” সে বলল
“তোরে আমি বাচ্চা দিতে পারুম না, পারবি তুই, তুই পারবি, কিন্তক তোর মনের মইদ্ধে যে ভয় আছে তাক তাড়ান লাগবো, তুই তোর জন্য বাচ্চা আনবি ছাওয়াল আনবি, কিন্ত তোর বাচ্চা অইব, কাঁকড়ার বাচ্চার লাহান”

“এইটা কি কন”
“হ, যা কইতাছি মন দিয়া শোন। তুই এখান থেকএ গিয়া দীঘির জলে গা ধুইবি, তোর স্বামীরে নিয়া আইছস তো?”

“হ ,কিন্তক স্বামীজী আপনার এলাকাত তো পুরুষ মানা, তাই আনি নাই”
“এরপরে তোর স্বামীর লগে তুই নরলীলা করবি”
“তোর বাচ্চা হইব , কিন্ত কাঁকড়ার বাচ্চার লাকান হইব”
“ওর কি দাঁড়া থাকব? তাইলে তো সবাই তারে দানো কইব!”
“আরে না ও কাঁকড়া হইব না, কাঁকড়া তো হইবি তুই” যা আর দেখতে পাইবি না আম্রে তুই, যা”

একমুঠো ধুলো নিয়ে তার দিকে ছুড়ে দিল সে।তার চোখ জ্বালা করে উঠল, চোখ বন্ধ করল সে, তবে চোখ খুলে সে দেখে যে আর কেউ নেই। 

সে ফিরে এল, পরনের পোশাক নিয়েই নামল দীঘিতে, দীঘির পানি যেন কেমন আঁশটে একটা গন্ধ করছে যেন অনেক গাড় কিছু একটা পানিটা। এরপরে ডুব দিয়ে উঠল সে।

তার স্বামীর কুটির এর দিকে যাত্রা করল সে, এখানে এক বেনের কুটিরে আছে তারা , বেনে গেছে প্রাগজ্যোতিষ এ।
স্বামীর কাছে নিজেকে সঁপে দিল সে।

পরের দিন সকাল থেকেই, যেন নিজের মাঝে এক ধরণ এর পরিবর্তন এর ছোঁয়া পেতে শুরু করল সে, যেন কোন কিছু তার ভেতর থেকে টানছে, যেন কিছু একটা তার ভেতরে থেকে তার মাঝ থেকে বের হচ্ছে।

ধীরে ধীরে তার পেট স্ফিত হতে শুরু করল দুই তিন মাস এর মাঝেই, সবাই বুঝতে পারল সে মা হতে চলেছে।

তবে সে কিছুই বুঝতে পারল না তখনও, তবে তার মনে হত যেন খুব ধীরে ধীরে কিছু একটা তার ভেতর থেকে তার শক্তি কে শেষ করে ফেলছে।

তবে সেটা খুব বেশী না। এটা বুঝতে শুরু করল সে যখন থেকে ৬ মাস হতে লাগলো তার। তার পেট অস্বাভাবিক রকম এর ফুলে গেল। আর তার হাত পা গুলো যেন ছোট ছোট হয়ে গেল, সে সারাদিন শুয়ে থাকে বিছানার মাঝে,

এরপরেই শুরু হল শুকিয়ে যাওয়া, তার পেট এর ভেতর থেকে ধীরে ধীরে যেন সবকিছু সেই নতুন প্রাণ গ্রহণ করে নিচ্ছে। সে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে, তার পেট টা খোলস এর মত বড় হতেই আছে, আছে, এখন তাকে দেখলে মনে হয় চার হাতি একটা কাঁকড়া। তান্ত্রিক এর ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হচ্ছে যেন ধীরে ধীরে।

যেদিন এর প্রসব এর সময় আসল, দাই ভয় পেয়ে গেল, কেননা তার দেহ কাগজ এর মত হয়ে গেছে, এত পাতলা চামড়া।

ধীরে ধীরে সে যখন তাকে একটু একটু করে বাচ্চাকে এই ধরা তে নিয়ে আসল, তারা পেট ফেড়ে বের হয়ে এল, একদম তার মত দেখতে একটা মেয়ে আর তার স্বামীর মত একটা ছেলে। রেখার মুখে হাসি নিয়েই সে ঢলে পড়ল চিরনিদ্রা এর কোলে।

সে সেভাবেই জন্মদিল তার সন্তান দের কে যেমন করে কাঁকড়া মা তার সন্তান জন্ম দেয়, নিজেকে বিসর্জন দিয়ে, সে জানত এটাই হবে, এই কারণে সে এটা নিয়ে কখনই কিছুই বলেনি। তার শব কে পোড়াতে বা কবর দিতে রাজি হয়নি পুরোহিত মশাই, তিনি বলেন “এই কন্যা সাক্ষাৎ মাতৃ দেবী” তার শব মাটি ধারণ করতে সক্ষম হবে না, তার মাঝে এত শক্তি নেই, আমরা একে দেবীর ন্যায় বিসর্জন দেই মা গঙ্গার মাঝে, তিনিই তাকে দেখবেন,

নির্দিষ্ট দিনে লাল বেনারসি পরিয়ে তাকে ভাসিয়ে দেওয়া হল জাহ্নবী এর তীর থেকে। ধীরে ধীরে সেও যেন আরেক দেবীর ন্যায় বিসর্জিত হল গঙ্গার মাঝে। আসলে মাতৃত্বই তো দেবীর ধর্ম, আর তার মন্ত্র বিসর্জন এর গান। 



অনোজ ব্যানার্জী




বিসর্জন
********



"বিসর্জন " কথাটি,, একবারমাত্র ভাবলেই,কিএক গহীন, দুঃসহ, অসীম বেদনায় ডুবে যায়, আমাদের সকলের মন।
মগজের মধ্যে ঝিলিক মারে সর্বক্ষণ, কি যেন গেল হারিয়ে,কি যেন গেল ফুরিয়ে.....দেবদেবীর
পুজোর ঘট আনা হবে,পুজোর বেদীতে হবে তার আবাহন, পঞ্চপ্রদীপ জ্বলবে, ধূপ, ধুনোর সুগন্ধে,,  ঢাকের বাজনা, কাঁসির শব্দ ,শঙ্খধ্বনিতে ভরে যাবে মন্দিরপ্রাঙ্গন।
তারপর,,,,সমস্ত আমোদ,,হইহুল্লোড় যাবে ফুরিয়ে। আনন্দরা যাবে যেন কোথায় হারিয়ে,,,,
দিতে হবে বিদায়,,দেবদেবীকে,,,
ঘট বিসর্জন,,প্রতিমা নিরুঞ্জন,,,...
*******
এখন,,
পুজোর বেদীতে,, বসে বসে নিচ্ছে পুজো
যেসব রাক্ষসের দল,, দেশটাকে পাঠাচ্ছে জাহান্নামের অন্ধকারে যারা,,,
আরাম করে,আয়েস করে কাটেচ্ছে সুখের জীবন,,,
নিচ্ছে কেড়েকেড়ে  আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পরশমাণিকটিকে,
তাদের দিতে হবে এবার বিসর্জন।
হাজার কুসংস্কার, পাপ,অন্যায়,দুর্নীতি, গুণ্ডামি,
অত্যাচার,, অনাচার,ধর্ষণ,
ধর্ম নিয়ে ছিনিমিনি খেলা,,প্রবঞ্চনা,
বোম,বারুদ, বুলেটে অগণন তাজা তাজা মানুষের অকারণ, রক্তপাত,,,কত শহীদের বেদনার্ত লাশের মিছিল,,
কত মায়ের কোল হলো খালি....
এসবের যারা করছে পুজো,,ভক্তিভরে,,
যারা দায়ী এসব কুকাজের জন্য,যে সব দানব ঘটাচ্ছে এসব কুকর্ম,,
আমাদের দেশমাতাকে করছে যারা কলংকিত,
অবিরত,,,,
দেশটাকে যারা দিচ্ছে বেচে বিদেশীদের হাতে,গরু-ছাগলের মত, এই সুন্দর পৃথিবীটাকে,  যারা দিচ্ছে ডুবিয়ে..
অনাদ্যন্ত, নরকের গভীর পঙ্কিলতায়,,
এবার আর তাদের কোন ক্ষমা নয়,,,
সুসভ্য সমাজের বেদী থেকে তাদের দিতে হবে
সমূলে বিসর্জন।
হবে বসাতে রাজসিংহাসনে,,
ভদ্র,সত্যনিষ্ঠ, বিচক্ষণ , দেশপ্রেমিক, বীর নেতাকে।। প্রস্তুত হও এবার ঘরেঘরে।।

মাধব মণ্ডল






হাত
---------




ইস, এ হাতে এখনো বসে
দুব্বো ঘাসের পাতা
একটু একটু কালচে ঘৃণাও
ঘর দালান উঠোন ফুঁড়ে
আসি আসি ভাব।

জিভ সব ভেঙে ভেঙে
কথা বা গান ছাড়ে
নদী বা পুকুর ঘাটে
আমার লোমশ বুকে
খুকি তুই কাকে যে খুঁজিস!!

গল্প গল্প মন তোর
এ হাত আলমারি পাক
নিদেনপক্ষে একটা তাক
পেয়ারার ডালে বুলবুলি
আর ফুটে থাকা থোকা থোকা ফুল।

কাল রাতে কেঁদেছিল খুকি
গভীর দুঃখ পেলে ও খুকি কাঁদে
সেই সুর আদি গঙ্গা খায়
ও হাতে এবার কি তুলেছিস?
কচি কচি দুব্বো? ঘৃণা?