নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

জয়দীপ রায়



শেষের কামরা
**************



স্পটলাইট বুকে হেঁটে চলা
বিকেলের সস্তার পাবলিসিটি
ছেড়া কামিজে শরীরে দেখিয়ে
পয়সা গোনে নোয়াটা
কালশিটে দাগ সযত্নে লুকিয়ে
আবারো সাজতে হবে
হাপিয়ে ওঠা বুকের মাঝের
নির্লিপ্ত ঘাম গুলো
আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্ধ্যের পর
শর্ট রেডি ম্যাডাম
জানি আবারো আবারো গিয়ে দাড়াতে হবে
কুঝিক ঝিক বলে যাওয়া
চলে যাওয়া ট্রেনের শেষের কামরায়
                       

শ্যামল কুমার রায়




শরৎ
*******


  
শরৎ , তুমি বড্ড কৃপণ, 
জগৎ জুড়ে আসো না, 
বাংলা মায়ের কোলটি ছেড়ে, 
ভুবন জুড়ে থাকো না ।
পৃথিবীটা যে বড্ড ছোট, 
ওয়েব জালে বন্দি ।
মানিকতলা আর ম্যানহ্টান করেছে যে সন্ধি ।
বর্ষার ঐ ভরা যৌবনে নদী ও কুমারী, 
শরতের ঐ হিমেল পরশে প্রকৃতি ও সুন্দরী।
খোঁপায় গুজে কাশফুল তুমি রূপবতী, 
কৈলাসের ঐ শ্রীময়ী আসে তব ঋতুতে, 
আপামর বঙ্গবাসী মাতে উৎসবে।
নিউজার্সির ঐ বাঙালি পাড়ায় শ্রীময়ী পূজিত, 
ঘরকুনো সেই বাঙালি আজ বিশ্ব ব্যাপিত ।
বাংলায় তুমি খুশির হাওয়া, বৃষ্টি থেকে মুক্তি, 
ভাদ্র আশ্বিন এই দুই মাসেতেই উৎসবেরই ব্যপ্তি ।
সম্প্রীতির এই বাংলাতে পরব - পার্বণ একসাথেতেই ঘটে,
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে উৎসবেতে মাতে।
জগতেরই ঐশ্বর্য যত তোমাতেই মুখরিত, 
সোনালী ঐ ধানের শিষে প্রান্তর প্লাবিত ।
গরীবের ও ঠোঁটে ফোটে এই সময়েতে, 
অন্ন বস্ত্র বিতরণ হয় পরব - পার্বণেতে ।
শরৎ তুমি গ্লোবাল হচ্ছ না কেন? 
ম্যানহ্টানে এই সময় শীত আসে জান?
" রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করনি" - 
কথাটা সত্যি নয়কো আজ, 
ঘরকুনো বাঙালি আজ কর্পোরেট - গ্লোবাল ।
মহাষ্টমীর সন্ধ্যা আরতি হয় সর্বত্র, 
শরতের আমেজ থেকে বঞ্চিত কেন থাকে পাশ্চাত্য? 
কনকনে ঐ ঠান্ডাতে কাঁপছে ওরা, 
উৎসবের আমোদে তবু মাতছে ওরা ।
শরৎ তুমি ছড়িয়ে পড়ো বিশ্ব জুড়ে, 
মধুমাখা তব হিমেল পরশ ছড়াক সাগর পাড়ে ।

প্রবীর রায়




নতুন বেহুলা
***********



ঘাটেঘাটে বেহুলার দেখা- দিকদিগন্তে
সমস্ত নদী নালাই যেন সেই পুরাতন-
গাঙুর নদী,আর তার বুকে ভাসানো ভেলা !
তবে ! আজ আর তাতে লক্ষ্মীন্দর নেই
লক্ষ্মীন্দরেরা আজ অসুর,তাই বেহুলাই-
সারথি,
নিজেই মরদেহ-নিজেই তার রক্ষক
মনসা সন্তান পাপীদের দংশিতে ভয় পাই
কারণ ! আজ বৈজ্ঞানিক যুগ-নিমেষেই বিষ উধাও
তবে তা পুরুষের ক্ষেত্রে ! নারীরা তার শিকার
তাই আজ আর একটি বেহুলা নয় !
কোটিকোটি বেহুলা যত্রতত্র-অবহেলিত মৃতপ্রায়,
এখন স্বর্গদ্বারও নেই ! তবে সতীত্ব পরীক্ষা অবিচল
ফেরেনা হারানো সন্তান-কঙ্কালে জাগেনা প্রাণ।।

শ্রীময়ী(দ্বিতীয় পর্ব)

         







শ্যামল কুমার রায়, সহ শিক্ষক,
নবগ্রাম ময়না পুলিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়।




               দ্বিতীয় পর্ব 
               -----------------



     মাখন ফিরে এসে তিতলি কে প্রপোজ্ করল । অধ্যাপিকা তিতলি সলজ্জ হেসে বলল, " জানি না যাও ।" কিন্তু অবাঙালী তাও আবার মারোয়াড়ি পরিবারে মাছ ভাত খাওয়া বাঙালি মেয়ে? ছি!ছি!ছি!বেটা , মাখন, ইয়ে গলত হ্যায়।

আবার মেয়ে প্রফেসর তো কি হয়েছে? বংশ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে? একদিকে, এত বছরের জমানো কৃতজ্ঞতা, রক্ত ঋণ শোধ করার সময়ে মা বাবা কেউ বুঝল না । আর মাখন কে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা যায়, শরীর দেওয়া যায়, তার ঔরসজাত সন্তানের মা হওয়া যায়, কিন্তু মনের জমির দখলীসত্ব কি করে দেবে , তিতলি? ওর মনের জমির মালিক যে একমাত্র, একমাত্র মাখন । সুতরাং আর কি? এক কাপড়ে তিতলি বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা মাখনের কর্পোরেট অফিসে। জ্যোতিষী শ্রী ঋষিকেশ শাস্ত্রী বলেছিলেন, " মাখনের বৃহস্পতি তুঙ্গী । " আর মাখনের ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ হবে। আমেরিকা যাওয়ার আগে মাখন তিতলি কে নিয়ে শাস্ত্রী আঙ্কেলের কাছে  গিয়েছিল । যোটক নিঃসন্দেহে রাজযোটক। কিন্তু রান অ্যাওয়ে ম্যারেজ। পরিনতি যখন জানাই ছিল, তখন তো আর সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই । তিতলি কে নিয়ে মাখন নিজের পাওয়া অফিসের ফ্ল্যাটে। প্রেমিক আর স্বামী কখনো এক হয় না , বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। তিতলি তাই অধ্যাপনা  সামলে স্ত্রী ধর্ম পালন করত। প্রকৃতির নিয়মে মাখন আর তিতলির কোল আলো করে এল সৌমদর্শন মুকেশ । সব অভিমান , জমানো ক্ষোভ, ব্যাথা নিমেষ উধাও হয়ে গেল নাতি হওয়ার আনন্দে। সম্পর্কটা শুধু আর তিতলি আর মাখনের মধ্যে রইল না, জোড়া লাগল দুটো পরিবারের মধ্যেও ।


(চলবে...)

ব এ বর্ণমালা ( অ - ক্ষ )(ষষ্ঠ পর্ব)





মাধব মন্ডল 
**********


কবি পরিচিতি:
সাংবাদিকতায় এম. এ.; বি.এড.।১৯৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত একফর্মার কবিতার বই ‘ছায়াপাত’।আনন্দবাজার ও বর্তমান পত্রিকার প্রশংসা পেয়েছিল।ছড়া এবং কবিতা নিয়ে লেখালেখি।বর্তমানে ফেসবুক ও বাংলা কবিতা.কম এ নিয়মিত লেখালেখি।রাজ্য সেচ দপ্তরে কর্মরত।ছোটদের একটি স্কুলের সম্পাদকও।১৯৬৮ এর মার্চে জন্ম।জন্মস্থান সুন্দরবন,বর্তমানে সোনারপুরে বাসস্থান ।




আমি জানি মাঝে মাঝে তুই বিপুল বিষাদী 
চুপচাপ হাঁটিস
তোর মুখ শুকিয়ে মরুভূমি
বাঁদিক বরাবর
ডানদিকেও একলা থাকিস।

কি করি কি করি ভাবতেই থাকি আর
এক আঁচলা বিদ্যাধরীর জল আনি
ছিটাই তোর চোখে মুখে
ক্ষণিকে শান্ত হোস
সাগরী ঢেউ ঝাঁপায় অন্তরে অন্তরে।

এবার আর তোকে কোল ছাড়া করবই না
সুর করে মেখে রাখি তাই কাজে অকাজে
তোর কানে সুর দেব
ঐ নদী দিয়ে দেব
রোদে জলে রাতে বেরাতে ওর বুকে নিঃশব্দ ঘুমাস।


কাল রাতটা কাল রাতের মতই কেটে গেল
রাত জাগা হুতোমেরা লজ্জা পেল শুধু
চারদিকে এত আলো
ঝলসে গেল অন্ধকারেরা
মানুষের মনেই তা`লে হুতোমের বাসা!

আজ ক'দিন হল
সত্যি কথা বলতে কি
আমি একা একাই তোর সঙ্গে কথা নিয়ে খেলছি
মাঝে মাঝে কি রাগাটাই রাগছিস
এহ বাহ্য
তোর রাগগুলোকেও খাচ্ছি সশব্দ!

কিন্তু কাল যে কি হল
আবছা আবছা একটা ছায়া নড়ছে চড়ছে
আমাকে ফিসফিস করে বলল
নে নে চল চল চল চল 
কি আশায় পড়ে আছিস পাগল!
অকস্মাৎ
অকস্মাৎ মর্মভেদী ডাক সন্তানের।

অতঃপর 
অতঃপর বাস্তবে ফিরি
বড় কি দেরি হয়ে গেল!
এখনও কি শীত শেষে কৃষ্ণরা নাচায়?
এখনও কি চড়াই পাখি কিচিমিচি ডাকে?
শিম ঝোপে ছাতার এসে বসে আর ছটপট করে?
অকস্মাৎ মর্মভেদী ডাক সন্তানের
কাল রাতটা কাল রাতের মতই কেটে গেল!


এইমাত্র শ্মশান থেকে ফিরছি
আসলে কি জানেন
খুব ছোট থেকেই ওর শরীরে এ বিষ ঢুকেছিল
আধুনিক চিকিৎসাও কোন কাজে এল না
অতঃপর সব শেষ!

অতঃপর সব শেষ হয়ে গেল
শ্মশানে যেতে যেতে শকুন বাচ্চার কান্না শুনি
একদল সমব্যথী রাস্তা-কুকুর সঙ্গ নেয়
ঐ তো শ্মশানের ছায়া ছায়া গাছ
একটি মাতাল গদগদ হল।

অতঃপর চিতার আয়োজন
ডোমকে চোলাই দিলাম পরিমাণ মত
শ্মশান শাসক নেতিয়ে পড়ল কিঞ্চিত পরে
একে একে সব সুতো ঐ চিতা খায়
সাক্ষ্মী শ্মশান পাখি,কুকুরের দল।

অতঃপর সেই মুহূর্ত!
ভূত্বকে ধুলোর উপর পদ্মাসনে আমি
হিঁচড়ে আনি শরীর থেকে নিজের একান্তকে
হায়, একি তোর হাল
মানুষকে ভালবেসে ভালবেসে!

দৃঢ় প্রত্যয়ে উঠে পড়ি
চিতার মধ্যে ঢুকি অতঃপর
আগুনকে ভালবেসে বলি
আঃ, কি শান্তি! কি শান্তি!
এই নাও আচ্ছন্নকে পরিমার্জনা কর।


হাঁটতে হাঁটতে শূন্যে ঝাঁপাচ্ছি
কাঁপাচ্ছি শরীর মন
হাঁপাচ্ছি একটু একটু
শূন্য দিচ্ছে ধরা তাও একটু একটু
বকুলের সময় এখন
এখানে অনেকেই আজ নিরাপদ।

যদিও ভূত্বকে সবাই নয় নিরাপদ
আপদ কংস সচল প্রকাশ্যে
শিশুরা ব্যঙ্গে ওখানে হাসে
যদিচ এখানে এখন অনেকেই নিরাপদ
এখানে এখন বকুলের সময় কিনা!



(চলবে...)

ব এ বর্ণমালা ( অ - ক্ষ )(পঞ্চম পর্ব)






মাধব মন্ডল 
**********


কবি পরিচিতি:
সাংবাদিকতায় এম. এ.; বি.এড.।১৯৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত একফর্মার কবিতার বই ‘ছায়াপাত’।আনন্দবাজার ও বর্তমান পত্রিকার প্রশংসা পেয়েছিল।ছড়া এবং কবিতা নিয়ে লেখালেখি।বর্তমানে ফেসবুক ও বাংলা কবিতা.কম এ নিয়মিত লেখালেখি।রাজ্য সেচ দপ্তরে কর্মরত।ছোটদের একটি স্কুলের সম্পাদকও।১৯৬৮ এর মার্চে জন্ম।জন্মস্থান সুন্দরবন,বর্তমানে সোনারপুরে বাসস্থান ।






জীবনটা এমন চলতে পারে না
বাস রাস্তার মাঝখানে ঐ লোকটা
সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা বুট পরে
হাতে দলীয় পতাকা
তামাশা আরো জমাবার জন্যে
কে একজন একটা প্লাস্টিকের চেয়ার দিল।

অতঃপর চেয়ারে ওঠে লোকটা
জীবন এভাবে চলতে পারে না
এ প্রধান চোর
প্রধান সাহেব জিন্দাবাদ
এরপর শুরু হয় জিন্দাবাদ ধ্বনি
গাড়িরা দাঁড়িয়ে পড়ে একে একে।

একে একে লোকেদের মনের কথাগুলো
প্রকাশ্যে না বলতে পারা কথাগুলো
লোকটা টেনে হিঁচড়ে বার করে
কারো চোখে রাগ নেই
বেবাক হাসিগুলো পিচ রাস্তায়
আহা,প্রধান আপনি তুমি তুই এক্ষুণি আয়!



লতপতে কথারা আমার মুন্ডু ছিঁড়ে খাক
তবুও আমার বাঁচা আমারই হাতে থাক
হাওয়ায় ওড়ে সজনে আর শিমূল শিমূল
চ্যাঁচাচ্ছি না এটা বলে - কি ভুল কি ভুল!

আমার চোখে কি বিদ্বেষ আঁকা ছিল?
আসলে শীতে শিরীষের ডাল ফাঁকা ছিল
আচমকা রোদ্দুর এবার যদি আঁকো
চোখে চোখে গড়ে ওঠে বারুদের সাঁকো।

ঐ দেখ ডালে ডালে কাজলের রেখা
ওড়ে খুব ডাকে খুব নানা দলের শেখা
ডাকি তোকে আয় আয় মুন্ডু ছিঁড়ে খা
অনন্ত বিষাদের ছায়াদের চেয়ে ভাল যা।



চাওয়া পাওয়া সব উঠে গেল
কার কি হিসেব বাকি বল
নিয়ে নাও নিয়ে নাও
আমাকে নীরবতাই দিলে দাও।

চারপাশে এত শব্দ, এতই শব্দ
দশরথের মত ব্যর্থ হতে চাইনা
নীরবতা তুই আমাকেই শেখা
শব্দভেদী সেই অব্যর্থ বাণের কৌশল!

যার যা বোঝার বুঝে নাও,নিয়ে যাও
নিখুঁত সাজানো নীরবতায় তোর প্রবেশ নিষেধ
আর তো ফিরব না সন্তানের ডাক ছাড়া
চল মন লোটা কম্বল আর নীরবতায়।


(চলবে...)