নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বিশ্বজিৎ প্রামাণিক





খুব সকালেই যদি
****************


খুব সকালেই যদি জানতে পারি--
আমি আজ বেঁচে নেই!
নাকে তুলো গুঁজিয়ে দেব!
শুঁকব না আর কারও ঘ্রাণ।
কানে তুলসি ঠেসে দেব!
শুনব না একটুও অভিমান।
চোখের পাতা নামিয়ে দেব!
আচ্ছন্ন করে দেব সমস্ত বন্ধন।
জিভের আগা বাঁকিয়ে নেব!
স্বাদকোষেদের দেব ভীষণ নিদ্রায় চির শয়ন।
হৃদয় থামিয়ে দেব!
রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দেব।
মগজে ঘসে দেব চির পাষাণ।
তবুও মৃত্যুর পর চিৎকার করে সেদিনও বলতে চাইব--
যেভাবে আমি ভাবছি,
তুমিও কি এখনও আমায়
ভালোবসছো এতক্ষণ?
নাকি ভুলে গেছো প্রিয়!
আমাদের যা ছিল আগের সবটাই সন্ধিক্ষণ!

তবুও একবার যদি ফিরে যেতে পারি--
বারো বছর পর হঠাৎ তোমার সামনেই!
তোমার জন্যে রক্ত গোলাপ নেব!
শুঁকতে দেব না কাউকেই একটুও ঘ্রাণ।
কানে তোমার পুরোনো ছন্দ ধরব!
আগের মতোই ভোলাব সব অভিমান।
চোখে ভীষণ প্রেম রাখব!
তোমার জন্য রাখব অসংখ্য মধুর বন্ধন।
জিভের আগা ভিজিয়ে নেব!
জড়তাগুলোকে দেব ভীষণ নিদ্রায় চির শয়ন।
হৃদয় গুছিয়ে নেব!
রক্ত ছড়িয়ে দেব!
মগজে ভাসিয়ে দেব প্রেমের ভাসান!
তবুও আসার পর চিৎকার করে সেদিনও বলতে চাইব--
যেভাবে এত বছর ধরে চাইছি,
তুমিও কি চেয়ে গেছো আমায় তেষ্টায় এতক্ষণ?
নাকি ভুলে গেছো প্রিয়!
আমাদের যা ছিল অতীতের সব সন্ধিক্ষণ!


চিরঞ্জিত সাহা



হাতকড়া
********


জমছে ধুলো চশমাকাঁচে,ঘড়ি বলে গোধূলি,
বুকপকেটে স্মৃতির মিছিল,ছেঁড়া নোট-আধুলি ।
বরফ চাদর,জীর্ণ মলাট,কাঁটা ঘুড়ি কার্নিশে,
এক পশলা রামধনু দিস ব্যস্ত দিনের শেষে ।
শালিখ ডাকে ঘুলঘুলিতে,তোর ফেরারি শুনে
স্বপ্নগুলো যত্নে মোড়াস,হলদে খামে বুনে ।


মেঘ ছুঁতে চায় পাহাড়চুড়ো,পক্ষীরাজের ডানা
মুছিস ফলক ক্যালেন্ডারে,হিসেব কষা মানা ।
তোর ফেরাতে হাজার দাবি,কেতাবি তল্লাশি,
মনসাহারায় তুষার নামুক,ইচ্ছেরা সাহসী ।
দুঃখ হারাক ট্র্যাশবাক্সে,সোহাগী হাতকড়া;
এক মুঠো রোদ মেলুক পেখম,আহেলী গাঁটছড়া ॥


নীতা কবি মুখার্জী




রবি কবি
*********



আকাশের রবি আর আমাদের মাটির রবি দুজনাই প্রাতঃ স্মরনীয়
মাটির রবি তাঁর স্বমহিমায়, তাঁর উজ্জ্বল জ‍্যোতিতে চির বরনীয়।

জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়ীর অতি শুভ এক ক্ষনে
জন্ম নিলেন কবির রাজা বিশ্ব ভুবন জানে।
পাঠশালাতে মন বসে না,প্রকৃতি তাঁহারে চায়
গ্ৰহন করিলেন প্রকৃতি দেবীকে, মন যে সেদিকে ধায়।

নিয়মাবদ্ধ পূঁথি পড়া ছেড়ে ,পড়িলেন নানা পাঠ
বিদ‍্যা দেবী খুশী হয়ে তাঁর মাথায় দিলেন হাত।
মায়ের আশীষ মাথায় নিয়ে লেখেন কবিতা গুলি
গানে গানে আর গল্পে কথাতে ভ‍রিলেন নিজ ঝুলি।

বাংলা ভাঁড়ার পূর্ণ হলো যে কবিতা রচনা গানে
বাংলা ছাড়ায়ে বিশ্ব মাঝারে নোবেলটাও তো আনে।
কবিদের গুরু বিশ্বকবি বিস্ময় জাগে মনে
বাঙালী তোমার গর্বে গর্বী তোমার করুনা দানে।
আজি শুভ দিনে অঞ্জলি দিই তোমার চরন তলে
শুধু দেখি ঐ বিজয় মালাটি দোলে যে তোমার গলে।



জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি





আ পারফেক্ট হোল্



এইতো চাঁদের মতো চুল সীমানা। হে প্রিয়, তোমার গর্ভাশয়ে বেড়ে উঠুক আজ আহ্লাদী মাটি। শাঁখা-পলার মতো খুলে রাখো তোমার ঘর ঘর বিশ্বাস। তুমি কি শান্ত হবে এই প্রকাশ‍্য স্বেদ ও বিষে?

যদিও এখানে কোনও যুক্তিহীন বারান্দা নেই। এখানে মাঝরাতে লোভীর মতো গান শুনিয়ে যায় না কোনও আধপোড়া শ্লোক। নীলকন্ঠ পাখিটিও এখানে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে মেখে নেয়নি শরীর শরীর পালক। এখানে সবকিছুই পারফেক্ট। এখানে জলের তলায় ঘুমিয়ে পড়ে না জল

হে প্রভু, তিরস্কার করবেন না আমাকে। চিৎকার করে ঘুম ভাঙাবেন না আমার। আপনাকে অসহ্য করে তোলার মতো কোনও ব‍্যক্তিগত আঁশ বাকি নেই আর। আপনার প্রিয় পৃথিবী থেকে কোনও নরম নরম রাত চুরি করে পালাইনি আমি। আপনার পৃথিবীতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে শিশু বুকে স্টেনগান জড়িয়ে। তাহলে খামোখা দোষ দিচ্ছেন কেন আমাকে ? ওদের বুকে থেকে যদি আপনি সীসার গন্ধ পান তারজন্য কি আমি দায়ী?

তাকিয়ে দেখুন, কিছু বালি বালি অন্ধকার কিন্তু এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে। ওদের প্রতীক্ষার কোনো সিঁথিডোর নেই। নামতে নামতে ক্রমশ শষ্য থেকে বীজ, বীজ থেকে শষ্য হওয়ার আগে পর্যন্ত তুলতুলে জিহ্বা তুলে জেগে থাকে খিদে আর ভয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাই শরীরে পিন ফুটিয়ে দেখে নিই, ঠিক কতটা স্বপ্ন বুনলে বাড়িঘরগুলো নিজস্ব পরাগ মুছে হাততালি দিতে দিতে হেঁটে যাবে সমস্ত রাস্তা জুড়ে



মোস্তফা তোফায়েল




প্রজনন ক্ষমতারহিত
*******************



পদ্মফুলের মধু, মিষ্টি মধুর।
পদ্মফুলের মধু পদ্মবুকে থাকে,
লালপদ্ম নীল পদ্ম সাদা পদ্ম
পুণ্ডরিক উৎপল কমল।
মধু পান করে ওরা শুয়ে ঘুম যায়,
স্বপ্নে স্বপ্নে বায়ু সাঁতরায়,
উড়ায় উড়ায়
বলাকা পাখায়
দেশ হতে দেশান্তরে ঘুমোতে ঘুমোতে চলে যায়
আনন্দের ঘোর মদিরায়।
মানুষ তাদের সব গ্রন্থি খুলে দিয়ে
সোম রস মধু নিয়ে সম্পদ দোলায়;
দুই পক্ষ মেলে দোলনায়;
সারা বিশ্ব মুগ্ধ আজ আচানক মধু ছলনায়।
মধুবিদ্ধ উভ-পক্ষ
সম্মিলনে উদ্বাহু ত্রস্ত লোলায়মান বিলাসী ছেলেরা
আলিঙ্গনে আলিঙ্গনে ভিজিয়ে ফেলেছে আজ ভূমিদেহ ধরা;
ভোগবাদী বিশ্বে আজ সারাদিন সারাক্ষণ বেজে চলে গানের পসরা।
প্রবল সংঘর্ষ নেই, প্রতপ্ত সঙ্গম নেই, প্রজনন নেই!
সংঘর্ষে সংঘর্ষে ত্বক ছিঁড়ে যাওয়া উত্তেজনা নেই!
প্রজনন ক্ষমতাই নেই।
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে নেই উত্তপ্ত, চাপা শীৎকার;
নেই অঙ্গীকার;
নেই দম্ভ, খাড়া স্তম্ভ, নেই ঘর্মস্রাবী স্বাধিকার;
নেই অহংকার
পৌরুষের নারীত্বের সদর্পী সুপুষ্ট বেদনার
প্রবল ঝংকার।
আছে শুধু স্মৃতি কথা –
একদিন আমাদেরও ছিল অধিকার প্রবণতা;
একদিন আমাদেরও শালপ্রাংশু বাহুবল ছিল;
একদিন আমাদেরও খাড়া নাঙ্গা খোলা অস্ত্র ছিল:
একদিন আমাদেরও অনন্তপ্রবাহী নদী রক্তস্রোত ছিল;
একদিন আমাদেরও ঐক্যবদ্ধ এক মাতা ছিল;
আমাদের জাতিগোত্রবর্ণপ্রথা একদিন একাকার ছিল;
প্রবল হুংকার ছিল পাহাড় কাঁপানো—
প্রবল ধিক্কার ছিল মেঘদের গর্জন ছাপানো—
কঠিন আঘাত ছিল বন্দুকের সুতপ্ত ব্যারেলে—
সেই বীর্যপাতে জন্ম নিয়েছিল বিশ্বময় মানব প্রবল
উজ্জীবিত, সাহসী, সবল
আজ শুধু পান করি মধু।
নিঁদ যাই মনের হরিষে;
রজনী শাওন ঘন, ঘন দেয়া গরজন
রিমিঝিমি শবদে বরিষে
নিঁদ যাই মনের হরিষে।

তনুজা চক্রবর্তী




পাটকাঠি
********


                   

বদল এসেছে, আঙ্গিকে বদল না ঘটিয়ে
শঙ্খের ছন্দের বারান্দায় কবিতা,
রবি মধু ছন্দে ঘোরাফেরা করেছে---
তবে নবীন কলম সেই সুরে, 
অনীহা দেখাতে গিয়ে আজ সরগম ভুলেছে !
আধুনিক সভ্যতা ঝুলছে ছেঁড়া জিন্সে,
কোমর থেকে নেমে অনবরত মাটি ছুঁতে চাইছে, 
পুরুষের লজ্জা বস্ত্র !
নারীরাও মুগ্ধ ছেঁড়া জিন্স, কাটা হাতে! 
গান সোৎসাহে পানীয় হয়েছে, 
যুগের সঙ্গে সভ্যতা এগোচ্ছে
কবিতার সঙ্গে প্রবন্ধের অবৈধ প্রেম বাড়ছে,
শুধু হারাচ্ছে কবিতা প্রীতি--
অভিধান বুকে জড়িয়ে কবিতা পাঠের অভ্যাস, 
নীরেণ সুনীল শক্তি  অবধিই তাকে ভালোলাগায় !
তাই শুরুর সেই সহজপাঠ, মান্ধাতার পথপ্রদর্শক 
এখনো প্রকাশকের পেট ভরাচ্ছে !
অবয়ব টাকে মেনে চলেছে সাহিত্য, 
শুধু কাঠামোটা পাটকাঠির বন্ধুত্ব---- 
মেনে নিয়েছে।