নোটিশ বোর্ড
জ্যোতির্ময় মুখার্জি
আগমনী ধানক্ষেত ও একটি মেলোডি
বাথরুম সিদ্ধান্তটি অতঃপর
কলমে জমা থাক
ছায়াপথে ছাতা হাতে কয়েকটি মানুষ
ও
একটি চলমান ইনফিনিটি
মুখোশে মুখ ঢাকলে প্রতিদিন
কিছু ছুলন্ত আপ্তবাক্য
সচেতন প্রতি বাতাস-কাঁপা
শূন্যতায়
ছেনি-হাতুড়ির শর্তহীন সরলরেখা বরাবর
বিবস্ত্র কিছু ধুলো ও বালি
ঘুমন্ত ঝিলমিল রাগে
আশ্চর্য পালতোলা নৌকার মতো
প্রতিটি উত্থান ও পতনে
উভচর ধূসরতা ছুঁয়ে
আগমনী ধানক্ষেত ও একটি মেলোডি
মৌসুমী ভৌমিক
গঙ্গা জল = অক্সিজেন(বিশ্বাস) X দূষণ/নোংরা=পবিত্র
বৃদ্ধাশ্রম
ছেলেকে অতিরিক্ত আদরে লালন করা
=ছেলে + অতিরিক্ত আদর
=ছেলে + স্বার্থপরতা
>স্বার্থপর
~ভাল হবার প্রচেষ্টা
=minimum বৃদ্ধাশ্রম
স্বপ্ন
(ইচ্ছে+ কর্ম ) - বাস্তবে প্রাপ্তি
+
সাধ + কল্পনা
=
স্বপ্ন
হাইকু
1. আকাশ ছুঁয়ে
বৃষ্টি একটু এসো
সুখটা নিয়ে।
2. জুঁই শেফালি
সুগন্ধ ছড়িয়ছে
এসো না অলি !
3. নীল আকাশ
মেঘেদের ছুটিতে
হাসছে সূর্য।
রাহুল গাঙ্গুলী
১টি অসম্পৃক্ত কম্পাসকথা
১.
০-maternityর সূত্রে_______
সিরিঞ্জ ও নিষিদ্ধতা
চশমার ঝুরোকাচ : ফসফরাসে মাখামাখি
অতিরিক্ত
f(চাঁদ + চুম্বক) → limit → 1/0
রাত হলেই : চিতাপর্বে পিয়ানোর রিড
ব্যস্তানুপাতিক = অবশিষ্ট (না ? ভি)
২.
infinity = অসম্পূর্ণ ও অসম্পৃক্ত _____
০-phase : বরফে জমানো গোপন রাত
{f(মরা চামড়া) → limit → প্রতিরাতের যৌনতা}
স্পর্শবর্তী আবেশের ৩য় গুহামুখ
২২/১০/১৭।সকাল ০৯-৫৮
দাহ্য পিচরাস্তা জুড়ে বাসি পাপড়ির খোলোশ
৩.
নিঃশর্ত সমর্পণ ________
viscosity ≠ 0 ^ ০।লীনতাপীয়
গাঢ়ত্ব কোলাজ।অসতীপনার জানলা সমীকরণ
কে জেগে আছে (নেই)।কাটাকুটিতে নিষেক-ছুরি
ঘুম : অথৈজল দেবনগরী শিলালেখ
গোলাপি অন্তর্বাস থেকে ঝাপসা গন্ধ পাই
আশটে চশমার ফ্রেম : সত্যিকারের শাদা-সামুদ্রিক
৪.
পিথাগোরাস = _______ যৌনতা X = ০
তাপমাত্রা ভেঙে যায়।হলুদ খানখান
কল্কে পাড় : আচল।যখন ধ্রুবক = আত্মস্থায়ীহীন
নদী ছিনিয়ে নেয় বালিয়াড়ি জলসাঘর
বৃদ্ধা চামড়া : মাকড়শা ইতির বেলোয়ারী মার্বেল
হাহুতাশ : কলসিভর্তি সুপ্ততা > শাঁখ চৌকাঠ
ঘাসেরও ভেজা শরীর।স্যাঁতস্যাঁতে ঘুড়ি
ছুরিটিকে স্বীকার্য কৌমার্য : ১ম খুন
সম্পাদকীয় ✍️(কবিতার ল্যাবরেটরি )
সম্পাদকীয় ✍️✍️
"হাঁস ছিল ,সজারুও ,(ব্যাকরণ মানি না )
হয়ে গেল" হাঁসজারু" কেমনে তা জানি না ।।"
সুকুমার রায় (খিচুড়ি কবিতা )
"হোক তবে" খিচুড়ি " ভেঙে ছুড়ে ফেলে কিছু কবিতাও ।
ব্যাকরণ না মেনে ভাষা পাক "শব্দ দিয়ে "সাজানো কথাও ।।"
থাক !অনেক বিজ্ঞ লোক আছে বাবা ,বলবে এসব কবিতা ?
এসব পাগল প্রলাপ ,এক্কে বারে যা তা "।।
আরে মশাই ছাড়ুন তো । আপনি লিখুন আপনার মতো করে । যারা লিখেত জানে না ,যারা মুখ ফুটিয়ে সব কথা বলতে পারে না ,তারা কি করবে ? নিজের ভিতরেই মরতে থাকবে রোজ ? কথা জমতে জমতে একদিন তো" বুমম"। আর তা হবার আছেই প্রতিনিয়তই ক্রমশ বেড়ে চলেছে কোলাহল ,জনঘনত্ব ,যান জোট ।একদিকে সৃষ্টি আর অন্য দিকে ধ্বংসের লীলা । আর এর মাঝেই নিয়ম ,নিয়ম ভাঙার নিয়ম ।একটা নিঃসঙ্গ নিস্তব্ধত্বা ,কিংবা ভিড় ঠেলে লোকাল ট্রেনে একটু বসবার জায়গার লড়াই ।এর মাঝেই কত শব্দ ,দৌড়ঝাঁপ ,কিংবা পড়ছে বাজ ,কোথাও আর্তনাদ কোথাও আনন্দ উল্লাস কিংবা মিছিল ,ইঁদুর খুঁজে চিল ।আরও কত শব্দ ....রোজের বাস ট্রামের ভিড়ে শব্দেই শব্দ হারাচ্ছে ।আর এর মাঝেই হাসি মুখে ভালো থাকার চেষ্টা ।
এটাই জীবন ,একটা আবোল তাবোল ছন্দে কিন্তু নির্দিষ্ট তালে এগিয়ে চলছে জন্ম থেকে মৃত্যুর দিকে ।
তাই ছন্দ ছাড়া ,তাল ছাড়া ,সুর ছাড়া ,কিংবা শব্দ ছাড়াও (মুখে আসে কিন্তু বহিঃ প্রকাশ নেই ) তাদের সাজিয়ে একটা একটা জীবনের গল্প কথা নিয়েই কবিতার খোঁজ ,একটা গানের খোঁজ হল "কবিতার ল্যাবরেটরি " ।
যে সব শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে সবার অলক্ষ্যে সেই সব না বলা কথার বহিঃপ্রকাশে এই প্রচেষ্টা । জানি সে গুলো কবিতা না ,কিন্তু তবুও কবিতা ,তবুও বাস্ট হয়ে যাবার আগে একটু নতুন করে বেঁচে উঠার মন্ত্র ।
"তাই তো একটাই শর্ত কবিতার ল্যাবরেটরি এর "কবিতা লিখতে না পারা অর্থাৎ যা বিজ্ঞদের কাছে কবিতা নয় কিন্তু আমার ,তোমার ভিতর জমতে থাকা কথা "
অনেক জনের "না বলা কথা " আমরা পেয়েছি ।সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেছা । ভালো থাকবেন আর ভালো রাখবেন প্রিয় মানুষটিকেও ।।
ধন্যবাদান্তে ,
জ্যোতির্ময় রায়
( সম্পাদক )
কবিতার ল্যাবটরি এর টিম
তুলি রায়
জ্যোতির্ময় মুখার্জি
জ্যোতির্ময় রায়
বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও অধিকার নিয়ে কিছু কথায় বিপ্লব সৎপতি
বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও অধিকার
বিপ্লব সৎপতি
Glocon-D না খেয়েও ভর দুপুরে সূর্য্য ও ভ্যাঁপসা গরমের সাথে লড়াই করতে করতে ডানপাশে ত্রিলোচন অটোমোবাইলের শোরুম,বাম পাশে থানাকে পিছনে রেখে, আমরা সিমলাপাল আটচালাগোড়া বাসস্টপে পৌছালাম। গরমে যা অবস্থা কোনোরকমে খাতড়াগামী বাসে উঠে লক্ষীসাগর পৌছালেই বাচি। 'যোগ' জলপ্রপাতের ন্যায় ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে সিনেমার হিরোদেরের রোমান্টিকতা আসে। ওসব আমার কর্ম নয়। তাই চোখ,মুখের ঘাম মুছে দোকানের গায়ে সাঁটানো 'বিক্ষোভ ও সমাবেশ, ১২দফা দাবী নিয়ে ধর্মতলা চলুন ' পোস্টারগুলি পড়ার চেষ্টা করছি। ছোটোবেলায় 'কেন্দ্রসরকারের কালোহাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও' শুনলেই মনে হত, এরা কতো বোকা বাঁশের কঞ্চির উপরে পতাকা না নিয়ে মোটা লাঠি নিলেই তো পারে। যাইহোক হাতকে দূরবীন করে পড়ার চেষ্টা করছি। ভাবটা এমন যেন -যত কষ্ট হোক ওটা পড়তেই হবে। পাশে দেখি-'সেও' একবার রাস্তা নিয়ে গবেষণা করছে পরক্ষনেই আবার জুতো নিয়ে গবেষণা করছে। মানে এত নিখুঁত ভাবে একদৃষ্টি তাকাচ্ছে যে গবেষণার থেকে কম বলা যায় না। ইতিমধ্যে খাতড়াগামী একটি বাস স্টপে এসে ইঞ্জিন বন্ধ করেদিল। মিনিট পনেরো বাদে ছাড়বে। ভিড় হালকা কিন্তু সিট খালি নেই। 'কাকের' বসা আর 'তাল' পড়ার সম্পর্কের মতো, আমরা সামনের গেটে উঠা মাত্রই, সামনের গেটের সোজাসুজি দ্বিতীয় সিট থেকে একজোড়া নতুন দম্পতি নেমে গেলেন। তাদের আগের স্টপে নামার কথাছিল কিন্তু ভুলেগিয়ে আমাদের সুবিধা করেদিলেন। বাসের হাওয়া লাগলেই দুনিয়ার সবচেয়ে অসম্ভব কাজ কে সম্ভব করে তুলি। মানে 'হলিউড' সিনেমাগুলিকে আমেরিকা থেকে সমূলে উৎপাটিত করে বাঁকুড়াতে আছড়ে মারি। এই গরমে নায়ককে অবশ্য কষ্ট করে আসতে হয় না। এখানে ফ্রীতে একটা নায়ক পাওয়া যায়। কিন্তু আজকে ওসব ভাবলে চলবে না। আসার পর থেকে গরমের চোটে চারপাশে চিৎকার চেচাঁমেচি শোনাগেলেও,আমাদের মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছে। অনেক কথাই বাকি বাসে বলতে হবে, পাছে 'হলিউডি' চিন্তা মাথায় চলে আসে- তাই মাথাকে বারকয়েক ঝাঁকিয়ে নিলাম। ইতিমধ্যে বাসের হেল্পার বাস চাপড়ে সবাই কে জানান দিচ্ছে যে এবার বাস ছাড়বে। টিউশন পড়তে আসা কিছু ছেলেমেয়ে বাস ভিড় করে এমন জটলা করছে যে কথা বলার উপায় নেই। বাস চলতে শুরু করল, আমি চুপ করে আছি, চাইছিলাম শুরুটা পাশের সিট থেকে হোক।এর মধ্যে এক ভদ্রলোক আমার দিকে ঝুকে বিশ্ববিখ্যাত ডায়লগ বলে চলেগেলেন,'দাদা কোথায় নামবেন?।' পরের স্টপেজে একজন মহিলা বছর আটেকের একটি মেয়েকে কোলে নিয়ে সামনের গেটে উঠল। মেয়েটি পোলিও খোঁড়া,মুখ দিয়ে লালা ঝরছে।এক কথায় প্রতিবন্ধী। মহিলার হাতে 'ঔষধ দোকানের 'পলিথিলিন' দেখে বোঝা যায়-হসপিটাল এসেছিল মেয়েটিকে ডাক্তার দেখাতে। আমার বিপরীত দিকের ভদ্রলোককে দেখলাম, মাথা নামিয়ে মোবাইলে মন দিলেন। চোখাচোখি হলে পাছে সিট চেয়ে বসে। মহিলাটি আমার সিট বাম হাতে ধরে এর ওর দিকে অসহায় ভাবে তাকাচ্ছে। একবার মনে হল- আমরা দুজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। পুরো রাস্তা দাড়িয়ে গেলেও কিছু মনেই হবেনা। এতএব সিট দুটো মহিলাকে দিয়ে দি। 'পাশের জনের' দিকে তাকিয়ে দেখি,'সেও' ইশারায় একেই কথা বলছে। পরক্ষনেই ভাবলাম, আমরা কেন ছাড়ব? এটা তো পাবলিক বাস, প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য একটি সিট রির্জাব আছে। আমরা সিট ছেড়ে দিলে,বাসের পাবলিক আমাদের দিকে প্রশংস্য দৃষ্টিতে তাকাবে। হয়তো বাড়ি ফিরে, চায়ের ঠেকে বন্ধুদের শোনানোর মতো একটি গল্প পেয়ে যাবো। কিন্তু ঔই মহিলাটির অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে কি? বাসে উঠলেই তো আবার কোনো দয়াবান মানুষের সিট ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কতকটা ধর্মীয় সংগঠন বা এনজিওর পূজোতে গরীব দুখিদের পোষাক বিতরনের মতো।এতে বিতরন কারীদের সামাজিক টেস্টাস বাড়ে কিন্তু গরীবদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। প্রশ্নটা যেখানে অধিকারের, দয়া বা অনুকম্পা কোনো স্থান পেতে পারে না। সিট থেকে দাড়িয়ে বাসের কনডাক্টর কে খোঁজার চেষ্টা করলাম। ভিড়ের মধ্যে দেখতে না পেয়ে, সামনে প্রতিবন্ধীদের জন্য রির্জাব সিটের দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখি, বছর কুড়ি বাইশের দুটি ছেলে সিট অধিকার করে নিজদের মধ্যে খোশ মেজাজে গল্প করছে। বললাম, 'দাদা আপনাদের সিট ছাড়তে হবে। এই মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে বসবেন '। 'ছাড়বো কেন!', সামনের ছেলেটি বিস্ফারিত মুখ করে বলল। 'সামনে কি লেখা আছে পড়ুন ',লেখাটার দিকে আঙুল বাড়িয়ে বললাম। জানালাধারে যে ছেলেটি এতক্ষণ চুপ করে বসেছিল,এবার সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল, 'উঠব মানে! সেই বাঁকাদহ থেকে আসছি!ভাড়া দিয়েছি!কনডাক্টর আমাদের সিট দিয়েছে'। 'সাথে মেয়ে আছে বলে হিরোগিরি দেখাচ্ছে ',প্রথমের ছেলেটি ফিসফিস করে বলল। আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম,'সেটা কনট্রাকটর ও আপনার নিজস্ব ব্যাপার'। কিন্তু আপনাদের উঠতে হবে। সে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আগের যে ভদ্রলোক চোখ নামিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বললেন,'উঠবেন না মানে! উঠে যান বলছি। '
তার দেখাদেখি বাসের হাতল ধরে দাড়িয়ে থাকা দু - তিনজন ভদ্র লোক, একস্বরে চিংকার করে বললেন, 'না উঠলে ভালো হবে না বলছি। ' এতজনের চাপে ছেলেদুটি কনডাক্টরকে শাসাতে শাসাতে উঠে গেল।'শালা আমাদের রাস্তা দিয়ে পেরোবি না। দেখে নেবো। ' আমি বললাম, 'দাদা কি সব মেয়ে হিরোইজম বলছিলেন না। ' কোনো উত্তর না দিয়েই ছেলে দুটি পিছন দিকে এগিয়ে গেল। এরপর আমি মহিলার দিকে ঘুরে বললাম, ' বসুন। আর শুনুন বাসে উঠলে মনে রাখবেন, আপনার মেয়ে সঙ্গে থাকলে একটি সিট পাওয়া আপনার অধিকার। কারোর কাছে সিট চাওয়ার দরকার নেই।কনডাক্টরকে বলবেন, ব্যাবস্থা করে দেবে।'
বিপ্লব সৎপতি
Glocon-D না খেয়েও ভর দুপুরে সূর্য্য ও ভ্যাঁপসা গরমের সাথে লড়াই করতে করতে ডানপাশে ত্রিলোচন অটোমোবাইলের শোরুম,বাম পাশে থানাকে পিছনে রেখে, আমরা সিমলাপাল আটচালাগোড়া বাসস্টপে পৌছালাম। গরমে যা অবস্থা কোনোরকমে খাতড়াগামী বাসে উঠে লক্ষীসাগর পৌছালেই বাচি। 'যোগ' জলপ্রপাতের ন্যায় ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে সিনেমার হিরোদেরের রোমান্টিকতা আসে। ওসব আমার কর্ম নয়। তাই চোখ,মুখের ঘাম মুছে দোকানের গায়ে সাঁটানো 'বিক্ষোভ ও সমাবেশ, ১২দফা দাবী নিয়ে ধর্মতলা চলুন ' পোস্টারগুলি পড়ার চেষ্টা করছি। ছোটোবেলায় 'কেন্দ্রসরকারের কালোহাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও' শুনলেই মনে হত, এরা কতো বোকা বাঁশের কঞ্চির উপরে পতাকা না নিয়ে মোটা লাঠি নিলেই তো পারে। যাইহোক হাতকে দূরবীন করে পড়ার চেষ্টা করছি। ভাবটা এমন যেন -যত কষ্ট হোক ওটা পড়তেই হবে। পাশে দেখি-'সেও' একবার রাস্তা নিয়ে গবেষণা করছে পরক্ষনেই আবার জুতো নিয়ে গবেষণা করছে। মানে এত নিখুঁত ভাবে একদৃষ্টি তাকাচ্ছে যে গবেষণার থেকে কম বলা যায় না। ইতিমধ্যে খাতড়াগামী একটি বাস স্টপে এসে ইঞ্জিন বন্ধ করেদিল। মিনিট পনেরো বাদে ছাড়বে। ভিড় হালকা কিন্তু সিট খালি নেই। 'কাকের' বসা আর 'তাল' পড়ার সম্পর্কের মতো, আমরা সামনের গেটে উঠা মাত্রই, সামনের গেটের সোজাসুজি দ্বিতীয় সিট থেকে একজোড়া নতুন দম্পতি নেমে গেলেন। তাদের আগের স্টপে নামার কথাছিল কিন্তু ভুলেগিয়ে আমাদের সুবিধা করেদিলেন। বাসের হাওয়া লাগলেই দুনিয়ার সবচেয়ে অসম্ভব কাজ কে সম্ভব করে তুলি। মানে 'হলিউড' সিনেমাগুলিকে আমেরিকা থেকে সমূলে উৎপাটিত করে বাঁকুড়াতে আছড়ে মারি। এই গরমে নায়ককে অবশ্য কষ্ট করে আসতে হয় না। এখানে ফ্রীতে একটা নায়ক পাওয়া যায়। কিন্তু আজকে ওসব ভাবলে চলবে না। আসার পর থেকে গরমের চোটে চারপাশে চিৎকার চেচাঁমেচি শোনাগেলেও,আমাদের মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছে। অনেক কথাই বাকি বাসে বলতে হবে, পাছে 'হলিউডি' চিন্তা মাথায় চলে আসে- তাই মাথাকে বারকয়েক ঝাঁকিয়ে নিলাম। ইতিমধ্যে বাসের হেল্পার বাস চাপড়ে সবাই কে জানান দিচ্ছে যে এবার বাস ছাড়বে। টিউশন পড়তে আসা কিছু ছেলেমেয়ে বাস ভিড় করে এমন জটলা করছে যে কথা বলার উপায় নেই। বাস চলতে শুরু করল, আমি চুপ করে আছি, চাইছিলাম শুরুটা পাশের সিট থেকে হোক।এর মধ্যে এক ভদ্রলোক আমার দিকে ঝুকে বিশ্ববিখ্যাত ডায়লগ বলে চলেগেলেন,'দাদা কোথায় নামবেন?।' পরের স্টপেজে একজন মহিলা বছর আটেকের একটি মেয়েকে কোলে নিয়ে সামনের গেটে উঠল। মেয়েটি পোলিও খোঁড়া,মুখ দিয়ে লালা ঝরছে।এক কথায় প্রতিবন্ধী। মহিলার হাতে 'ঔষধ দোকানের 'পলিথিলিন' দেখে বোঝা যায়-হসপিটাল এসেছিল মেয়েটিকে ডাক্তার দেখাতে। আমার বিপরীত দিকের ভদ্রলোককে দেখলাম, মাথা নামিয়ে মোবাইলে মন দিলেন। চোখাচোখি হলে পাছে সিট চেয়ে বসে। মহিলাটি আমার সিট বাম হাতে ধরে এর ওর দিকে অসহায় ভাবে তাকাচ্ছে। একবার মনে হল- আমরা দুজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। পুরো রাস্তা দাড়িয়ে গেলেও কিছু মনেই হবেনা। এতএব সিট দুটো মহিলাকে দিয়ে দি। 'পাশের জনের' দিকে তাকিয়ে দেখি,'সেও' ইশারায় একেই কথা বলছে। পরক্ষনেই ভাবলাম, আমরা কেন ছাড়ব? এটা তো পাবলিক বাস, প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য একটি সিট রির্জাব আছে। আমরা সিট ছেড়ে দিলে,বাসের পাবলিক আমাদের দিকে প্রশংস্য দৃষ্টিতে তাকাবে। হয়তো বাড়ি ফিরে, চায়ের ঠেকে বন্ধুদের শোনানোর মতো একটি গল্প পেয়ে যাবো। কিন্তু ঔই মহিলাটির অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে কি? বাসে উঠলেই তো আবার কোনো দয়াবান মানুষের সিট ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কতকটা ধর্মীয় সংগঠন বা এনজিওর পূজোতে গরীব দুখিদের পোষাক বিতরনের মতো।এতে বিতরন কারীদের সামাজিক টেস্টাস বাড়ে কিন্তু গরীবদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। প্রশ্নটা যেখানে অধিকারের, দয়া বা অনুকম্পা কোনো স্থান পেতে পারে না। সিট থেকে দাড়িয়ে বাসের কনডাক্টর কে খোঁজার চেষ্টা করলাম। ভিড়ের মধ্যে দেখতে না পেয়ে, সামনে প্রতিবন্ধীদের জন্য রির্জাব সিটের দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখি, বছর কুড়ি বাইশের দুটি ছেলে সিট অধিকার করে নিজদের মধ্যে খোশ মেজাজে গল্প করছে। বললাম, 'দাদা আপনাদের সিট ছাড়তে হবে। এই মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে বসবেন '। 'ছাড়বো কেন!', সামনের ছেলেটি বিস্ফারিত মুখ করে বলল। 'সামনে কি লেখা আছে পড়ুন ',লেখাটার দিকে আঙুল বাড়িয়ে বললাম। জানালাধারে যে ছেলেটি এতক্ষণ চুপ করে বসেছিল,এবার সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল, 'উঠব মানে! সেই বাঁকাদহ থেকে আসছি!ভাড়া দিয়েছি!কনডাক্টর আমাদের সিট দিয়েছে'। 'সাথে মেয়ে আছে বলে হিরোগিরি দেখাচ্ছে ',প্রথমের ছেলেটি ফিসফিস করে বলল। আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম,'সেটা কনট্রাকটর ও আপনার নিজস্ব ব্যাপার'। কিন্তু আপনাদের উঠতে হবে। সে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আগের যে ভদ্রলোক চোখ নামিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বললেন,'উঠবেন না মানে! উঠে যান বলছি। '
তার দেখাদেখি বাসের হাতল ধরে দাড়িয়ে থাকা দু - তিনজন ভদ্র লোক, একস্বরে চিংকার করে বললেন, 'না উঠলে ভালো হবে না বলছি। ' এতজনের চাপে ছেলেদুটি কনডাক্টরকে শাসাতে শাসাতে উঠে গেল।'শালা আমাদের রাস্তা দিয়ে পেরোবি না। দেখে নেবো। ' আমি বললাম, 'দাদা কি সব মেয়ে হিরোইজম বলছিলেন না। ' কোনো উত্তর না দিয়েই ছেলে দুটি পিছন দিকে এগিয়ে গেল। এরপর আমি মহিলার দিকে ঘুরে বললাম, ' বসুন। আর শুনুন বাসে উঠলে মনে রাখবেন, আপনার মেয়ে সঙ্গে থাকলে একটি সিট পাওয়া আপনার অধিকার। কারোর কাছে সিট চাওয়ার দরকার নেই।কনডাক্টরকে বলবেন, ব্যাবস্থা করে দেবে।'
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)