আমি হঠাৎ করেই দেখেছি মাটি ফাঁক হয়ে গিয়ে আলাদা হচ্ছে রুজিরুটি, আমি মনে মনে ঋতু পরিবর্তনের ভয়ে কেঁপেছি । যুদ্ধক্ষেত্রে অব্যবহৃত কার্তুজের মতো কিছু নামহীন গোত্রের কাছে আমি প্রয়োজনের তাগিদে নিজেকে বিক্রি করেছি ফুটপাথের ধাঁর ঘেঁষে । আমি রাতজেগে দেখেছি অন্ধকার গলির বাঁকে একদল ঘাসফড়িং এর মতো অধিকারের লড়াইতে নেমেছে রূপান্তরকামীদের ক্ষত-বিক্ষত মিছিল ।নিকষ কালো দিঘীর জলের পর্দা সরিয়ে একটুকরো জলপদ্ম তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতে মাথা তুলেছে । ওটা কিসের শরীর ? মানুষ ? শুকিয়ে আসা মৃতদেহটার মাথার উপর ঘুরঘুর করছে একঝাঁক রঙ্গিন কাপড়ে মোড়া শকুনের দল । পাশে যে দুহাজার টাকার নোটের পাঁচ - সাতটা বান্ডিল পড়ে আছে কই তার উপর তো কারুর নজর নেই । অহংকারের শেষ আধখাওয়া টুকরোটা থেকে আর কোনো বোঁটকা গন্ধ নাকে আসছে না । আমি ছিপ ফেলে নিকষ জলে রাঘব বোয়াল খুঁজতে থাকি । হঠাৎ ছিপে টান পড়ে; অতি কষ্টে আমার ছিপ বেয়ে উঠে আসে একটা লাল ঝিনুকের পোশাক পরা ছোট্ট এক মৎসকন্যা । ভয়ে কাঁপছে তার গোটা শরীর । আমি হাত বাড়িয়ে একটা দুহাজার টাকার নোটের বান্ডিল তার হাতে গুঁজে দিতে গেলাম ।বাচ্চা মেয়েটা ওটা ছুঁয়েও দেখলো না । দূরে টিলার উপর থেকে ভেসে আসছে একটা তীক্ষ্ণ মোহময়ী খেয়াল বাঁশির শব্দ । শিশুটি বাঁশিওয়ালার ফুঁ এর তালে দুলে দুলে লেজ নাড়লো কিছুক্ষণ । আমি চুপ করে তাকে দেখছি । তারপর হঠাৎ করেই সে জলে ঝাঁপ দিয়ে চোখের নিমেষে অদৃশ্য হয়ে গেলো । মাটির চারপাশে গুরগুর শব্দ শুরু হচ্ছে । ভূমিকম্প ! আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার প্রিয়জনদের নাম ধরে ডাকি । কারুর কোনো সাড়া আসেনা । আমি ফ্যাকাশে চোখে দেখি ধীরে ধীরে মাটি ফাঁক হয়ে উঠে আসছে একঝাঁক পঙ্গপালের মতো হাড় জিরজিরে মাংসাশী গিরগিটির লাল চোখের ধুলো । আমি ভয়ে জ্ঞান হারাবার আগে লক্ষ্য করি আকাশের পশ্চিম কোণে প্রবল ঘূর্ণঝড় উঠছে, আকাশে উড়ছে শয়ে শয়ে টাকার নোট আর অগুন্তি সার্টিফিকেটস । শেষ বারের মতো চোখ বোজার আগে আমি অবাক চোখে দেখি অদূরে শুকনো উলঙ্গ কঙ্কালসার শরীরটা দুহাত মাথার উপর তুলে আকাশ বিদীর্ণ করে চিৎকার দিতে দিতে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে আর তার মাথার উপরে চক্রাকারে ঘুরতে থাকা শকুনের দল কখন যেন আনুবিসের জাদুবলে বদলে গিয়ে রূপ নিয়েছে একঝাঁক মিষ্টি পরিযায়ী পাখির !
ঋতু বদলাচ্ছে !
দেখলেন, প্রথমেই আমি বলেছিলাম না আমার ঋতু পরিবর্তনের সাঁড়াশিতে ক্লাস্ট্রোফোবিয়ার ব্যামো আছে ! এখন যদি আপনারা শিকারী আর আমি তার শিকার হই তাহলে স্বীকার করছি আমার স্বীকারোক্তির বয়ানে আপনারা অদ্ভুত উওেজনা পাবেন । কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সাথে নিউক্লিয়ার মিউটেশনের অ্যাটাচমেন্টের একটা জটিল তত্ত্বের মাধ্যমে অমরত্বের ফর্মূলা আমি একটা অ্যালুমিনিয়ামের বাক্সে তালায় বন্দী করে সেই কালো দিঘীর জলে লুকিয়ে রেখে এসেছি । কই যান, যান, লেগে পড়ুন উত্তরাধিকার চেইনে সেই গোপন ফর্মূলা আবিষ্কারের নেশায় । আরো প্রাণ যাক । নয়তো শকুনের দল যে না খেতে পেয়ে মরবে; দিঘীর কালো জল অ-মানুষদের রক্ত না পেলে শুকিয়ে যাবে যে । যদিবা সেই দিঘীর পাড়ে তুমি বেঁচে পৌঁছোও ; যদি সেই মনমাতানো খেয়াল বাঁশির শব্দ তুমি শুনতে পাও ; যদি তুমি সেই বাচ্চা মৎসকন্যার দেখা পাও , তাহলে ওর কাছেই পাবে সেই বাক্স খোলার চাবিকাঠি । শুধু মনে রেখো অমরত্বের গোপন ফর্মূলা পেতে হলে তার কানে কানে তোমাকে শুধু উচ্চারণ করতে হবে একটা ছোট্ট পাসওয়ার্ড - “ গোডোত ! “