অকাল মৃত্যু
***********
মৃত্যু মানেই শোকস্তব্দ পরিবেশ
ভাষা হারিয়ে যায় সবার , বলার মতো কিছু থাকে না।
আর সেই মৃত্যু টা যদি অকাল মৃত্যু হয় ,
অকালে যদি কেউ প্রাণ হারায় ,তবে যেনো পাহাড় ভেঙে পড়ে সেই পরিবারের উপরে।
পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ,কষ্ট যেনো এসে পড়ে,সেই পরিবারের উপরে।
এমনিই এক ঘটনা-------
আমাদের পাড়ার ছেলে ,রমেশ খুবই ভালো ছেলে ,
রমেশ থাকতো ওর মাকে নিয়ে;
জীবনটা কাটছিলো তাঁর বেশ ভালোই মাকে নিয়ে।
সাত কূলে ওদের আর কেউ ছিলো না।
রমেশ টা একটা ছোট কোম্পানিতে জব করত আর তার সাথে সমাজ সেবার মতো কিছু কাজ করত,
কেউ যদি বিপদে পড়তো ,সে যে কোনো ধরনের বিপদ হোক না কেনো,
সবার আগে ছুটে যেত রমেশ।
এমনি কারোর বিপদে, কাল দূপুরে রমেশ যখন খেতে বসেছিলো সবে----
মুখে খাবার তুলতেই ,কয়েক জন বন্ধু এসে ডাক দিলো রমেশকে;
রমেশ মুখের অন্ন ফেলে রেখে দিয়ে ,দিলো ছুট বন্ধুদের সাথে।
তখন রমেশের মা, রমেশকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো -----
খাবার ফেলে কোথায় যাছিস রে?
মুখের অন্ন ফেলে যেতে নেই ,
তা হলে মা লক্ষি রাগ করে।
রমেশ হেসে তাঁর মাকে বলে----
মাগো জরুরি কাজে বেড়াতে হবে,
চলে আসবো খুব শিগগিরি;
এখন তবে যাই মা,এই বলে রমেশ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
দিন থেকে রাত শেষ হলো রমেশ এখনো ফিরলো না ঘরে,
এমনি করে মাঝ রাত্রি হয়ে এলো;
তবুও রমেশ আসলো না ফিরে।
চিন্তায় চিন্তায় ঘুম নেই তার মার চোখে,
রাত জেগে বসে আছেন উনি ঠাকুরের সামনে,
মনে মনে ভাবেন তিনি, সেই দূপুর বেলায় বেরিয়েছে খোকা এই আসছি বলে,এত রাত হয়ে গেলো কখন আসবে খোকা ফিরে।
রাত যখন দুটো ত্রিরিশ, তখন একজন এসে দরজায় কড়া নাড়ে------
দরজাটা খুলতেই এক অল্পবয়সী ছেলে রমেশের মাকে ডেকে বললো------
মাসীমা আপনার ছেলে আর বেঁচে নেই।
কারা যেনো ওকে গুলি করেছে,
পরে আছে পাশের পাড়ার গলিতে।
খবরটি শুনে এক নিমিষের মধ্যে রমেশের মা মাথা ঘুরিয়ে পরে গেলো ঘরের মেজের ওপরে,
যখন উনার জ্ঞান আসে ফিরে,দেখে ঘর ভর্তি লোকজন উনাকে ঘিরে আছে।
সবাই উনার দিকে চেয়ে কেঁদে যাচ্ছে ফুঁপিয়ে, ফুঁপিয়ে।
উনি বলে উঠলো ওদের সবাইকে ,তোরা সব অলক্ষনী কান্না বন্ধ করে এখনি,
কি হয়েছে তোরা সবাই মরা বাড়ির মতো কাঁদছিস কেনো বসে বসে?
আমার খোকার কিছু হয়নি তো,
ও যাওয়ার আগে বলে গেছে আমাকে-----
ফিরে আসবে খুব শিগগিরী।
এমন সময় চার কাঁধে করে ছেলের মৃত দেহ আসলো ঘরের উঠোনের সামনে;
তা দেখে রমেশের মা বলে ,এ আমার ছেলে হতে পারে না ।
ছেলে আমার মিথ্যে কথা বলে না কোনোদিনও,
সে বলে গিয়েছিলো আসবে সে ফিরে খুব শিগগিরী;
এমন তো কথা ছিলো না,আসবে সে ফিরে চার দোলা কাঁধে করে।
তবে তোমরা এ কাকে নিয়ে এসেছো চার দোলা কাঁধে করে আমার ঘরে?
আর এ কেমন সাঁজে এনেছো তাঁকে,
যেনো মনে হয় বিয়ের সাঁজে শুয়ে আছে।
তোমরা ফিরিয়ে নিয়ে যাও ,আমার সামনে এনো না তাকে।
জোর করে যখন রমেশের মাকে দেখানো হলো তাঁর খোকার মুখ,
রমেশের মা তো হতবাক হয়ে ,চেয়ে রইলো তাঁর খোকার দিকে।
বললো ,এই প্রথম মিথ্যে কথা বললি তুই আমাকে,
ফাঁকি দিলি আমাকে -----
আসার কথা ছিলো তোর ফিরে,
এলি ও ফিরে তবে চার কাঁধে করে।
গিয়েছিলিস খাবার ফেলে
বললি এসে খাবার খাবি,
তবে এখন কেনো তুই শুয়ে আছিস?
উঠ নারে খোকা তুই ,
আমি খাইয়ে দিই তোকে ,আমার নিজের হাতে;
তুই থাক একশো বছর বেঁচে,তোর বদলে নিক ভগবান আমাকে তুলে।
এমনি করে বলতে বলতে হঠাৎ দেখি ,রমেশের মা উঠলো আর্তনাদ করে।
বললো ,কি দোষ ছিলো আমার খোকার ?
কোন অপরাধে মরতে হলো আমার খোকা কে?
কেনো নিলি আমার খোকার প্রানটি কেঁড়ে?
কেনো খোকা চলে গেলো আমাকে ছেড়ে?
কেনো আসলো তাঁর জীবনে অকাল মৃত্যু ধেয়ে?
এই প্রশ্নের জবাব আমায় এবার কে দেবে,কে দেবে??
সত্যি এমনি করে রোজ কত না রমেশ এই ভাবে যাচ্ছে অকালে এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে,
আর আমরা নীরব হাজার প্রশ্নের ভিড়ে নিজেদের কে আবদ্ধ করে রেখে দিচ্ছি নিজেদের মধ্যে।
সত্যি এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে??
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন