মানবতাকে বিপন্ন করে জাতি হয়েছে বন্দি
স্বার্থের নীতিতে মগ্ন হয়ে করেছে সন্ধি
সংখ্যালঘুর নির্যাতনে শুনেনি কেউ কাঁদন
মানব শিশুর কান্নার আওয়াজে জাতিকে করেনি বাঁধন।
অভিশপ্ত পৃথিবীতে অভিশপ্ত আমরা
অভিশপ্ত আমাদের জগৎময়
জাতি আজ বিবেকহীন মস্তক ধরণীর বুকে
মানবতা সব অসহায়।
ফিলিস্তিনি, কাশ্মীর যখন অবরুদ্ধ ধরণীর বুকে
কারো কন্ঠস্বরে শুনা যায়নি প্রতিবাদে সোচ্চার
সংখ্যালঘু বার বার নির্যাতিত হয়েছে শোকে
ধরণীর বুকে ছিল না কারো হুংকার
অভিশপ্ত পৃথিবীতে অভিশপ্ত আমরা
অভিশপ্ত আমাদের জগৎময়।
ধিক্ষিত মানব কণ্ঠ অকণ্ঠিত জীবন
সংখ্যালঘু সব বন্দিশালায়
ধমনীতে দেখা যায়নি প্রতিবাদে সোচ্চার
মারণাস্ত্রে অঙ্কুরিত করে জাতির মাঝে করেছে আবাদ
মানবতা যখন বিপন্ন ধ্বংসের লিলা
স্বার্থের নীতিতে গড়ে তুলিনি প্রতিবাদ।
অভিশপ্ত পৃথিবীতে অভিশপ্ত আমরা
অভিশপ্ত আমাদের জগৎময়
দশের লাঠি পুড়বে যখন একা
নিরবতা যে ভাবায়
আদমের ঘরে জন্ম নিয়ে ছিল শিশু নিষ্পাপ
ধরণীর বুকে জাতি করেছে আজ তাকে বিভেদ
দানবের বেশে ধরণীর বুকে সবাই যে মগ্ন
পাপিষ্ঠে অভিশপ্ত পৃথিবী গুণতে হবে বিপদ
অভিশপ্ত পৃথিবীতে অভিশপ্ত আমরা
অভিশপ্ত আমাদের জগৎময়
আর্তনাদে কাঁদিবে ধরণীর বুক
শুনিবে শোকে হায় হায়
দানবের বেশে ধরণীকে বার বার করেছে আঘাত
সৃষ্টির মাখলুকাত হয়েছে সবাই আজ বিপন্ন
মানবের কল্যাণে উন্মোচন হউক সব সৃষ্টি
না হয় জীবনের পরতে বিপদ যে আসন্ন।
অভিশপ্ত পৃথিবীতে অভিশপ্ত আমরা
অভিশপ্ত আমাদের জগৎময়
মানবের নীড়ে বিবেকের কাঠগড়া
মুক্তি যেন পায়।
নোটিশ বোর্ড
অভিশপ্ত : রফিকুল ইসলাম
সম্পাদকীয়
এবার মেঘে চাঁদ উঠেছে,জলের দরের খিদে,
কান্না লুকিয়েই সাজাবো পুজো,মিলনতিথি ঈদের।।
কঠিন সময় কাটছে না আর,এই দরিয়া হচ্ছে না যে পার,
মেঘ সরিয়েই ,আলো-ছায়া ,আসবে নতুন চাঁদ,খোদা'র।।
ধ্বংস হয়েও তাই ,ফিরে আসা যদি হয় ফের,
হেরে যাওয়া প্রতিটি মানুষও ,জেতে,আল্লার মুসাফির।।
ভালো থাকুন ,সুখে থাকুন ,ভালো রাখুন প্রিয় মানুষটিকে,
ফের দু কথা লিখবো আবার ,ফিরবো সবাই নিকোটিনে।।
সুস্থ্য থেকে ,যতটুকু দরকার ততটুকুই যাবো ঘরেই বাইরে,
কঠিন সময় ,তাই হাতে হাত রেখে চলতে হবে ভাইরে ।।
এবারের সংখ্যায় যারা লিখেছেন--
নন্দিনী পাল
শুভঙ্কর রাহা
কাজী জুবেরী মুস্তাক
অনিন্দ্য পাল
প্রীতম বিশ্বাস
রাহুল শীল
রিয়াজুল হক সাগর
অর্ঘ্যকমল পাত্র
রিঙ্কু মন্ডল
আর্য দাস
শোভন মন্ডল
রুমকি দেবনাথ
রাজা দেবরায়
শুভম চক্রবর্ত্তী
দেব জৈন
অভিজিৎ দাস কর্মকার
পিনাকি কর্মকার
ইসমাইল মোল্লা
গোলাম রসুল
শ্যামল কুমার রায়
সুকুমার দাস
কিশলয় গুপ্ত
সুনন্দ মন্ডল
রিম্পা লাহা সুরাই
শিশির বিন্দু দত্ত
প্রীতি কর্মকার
জয়তোষ ঘোষ
মাসুদ হাসান
আরিফ মন্ডল ( পেঁচা)
আসামুদ্দিন সেখ
আস্তাইন বিল্লা
মান্নুজা খাতুন
ধন্যবাদান্তে
নিকোটিন ওয়েব ম্যাগের সম্পাদকমন্ডলী
একটি মেয়ের আত্মকথা : মান্নুজা খাতুন
আমি তার প্রেমে পড়ি বারবার
হ্যাঁ তাকে মুগ্ধ নেত্রে চেয়ে দেখেছি বহুবার৷
আজ মুক্তির প্রথমদিন দীর্ঘ বন্দিত্বের পর আমি আজ মুক্ত, মেয়ে বলেই সমাজ আমার পায়ে শেকল দিয়েছিল, বই খাতা একদিন পুড়িয়ে দিয়েছিল, পথে ঘাটে বার বার আমায় অপমান করেছিল৷ আমার দাদা আমায় ভীষণ বকেছিল, বাবা চোখ রাঙিয়েছিল, সমাজ বলেছিল চৌকাঠের বাইরে এলে ভেসে যাবে কোথায় তা ঠাহর করতে পারবে না৷ ভুল তো আমি কিছুই করি নি সেদিন, আমার ভুল ছিল আমি লেখাপড়া শিখেছিলাম, আমার ভুল ছিল সমাজের আর মেয়েদের পড়তে শেখাচ্ছিলাম, বোঝাচ্ছিলাম কোনটা অন্যায় কোনটা ন্যায়, তাদের প্রতিবাদী হতে শেখাচ্ছিলাম, আত্মনির্ভরশীল হতে উৎসাহ দিচ্ছিলাম। কিন্তু সমাজের কিছু মানুষ সেটা ভালো চোখে নিল না, আমাকে শাসিয়ে গেল, বন্দিজীবন কাঁটাতে হবে। ঘরের বাইরে প্রায় ঘোরা ফেরা করে তারা৷ সেই থেকে আমি বন্দি।
আজ প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল রাতের গভীরে ভাইয়ের ছদ্মবেশ এ ওই গ্রাম ত্যাগ করে শহরে এসেছি মামার বাড়িতে। এখানে অবশ্য সমাজ নামক কোনো যমদূত নেই। এখানে সবাই মুক্ত। মামার ছেলে মেয়ে সবাই ইংরেজি পড়ে জুতো মোজা পরে, স্কুল - কলেজ যায় এখানে পড়াশোনার জন্য কোনো চোখ রাঙানি নেই। এখানে এসে আমার ভয় ভীষণ করছে কেননা মা আর ভাই একা আছে, ভয় হচ্ছে ওই সমাজের লোকগুলোর কথা ভেবে তারা যদি আমাকে না পায় তবে কি তাদের প্রতি নির্যাতন করে যদি। বাবা আমায় সান্ত্বনা দিয়ে গ্রামে ফিরে গেল, মামী অভয় দিল, মায়ের মতোই কাছে টেনে নিল। দিন কয়েকপরে মামা আমায় স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল।
এই ১০বছরে আমি অনেক এগিয়ে এসেছি। একা স্বাধীন জীবন যাপন করতে শিখেছি। শহরের অলিতে গলিতে বহুপথ হেটেছি। কিন্তু আমি নিজের জন্ম স্থানে ফিরতে পারি নি এখনো। আর কিছুদিন পরেই আমায় কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে যেতে হবে তাই মনে প্রানে চাইছি গ্রামের সেই পরিবেশ এ মন খুলে ঘুরে বেড়াতে, আমি চাইছি বাল্যবন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ করতে। কিন্তু আমি জানি আমার স্বপ্ন ঠিক পুরন হবে না৷
হঠাৎ আজ মামী একখানা চিঠি এনে আমার হাতে দিল। মায়ের চিঠি অবশ্য লেখাটা বাবার। মা তার দৈনন্দিন জীবনের সব কথায় ব্যক্ত করত। কিন্তু আজ অন্য কথা লিখেছে আমার ছেলে বেলার বন্ধু সরলার বিয়ে। সেই সরলা মা কে অনুরোধ করেছে আমায় যেন চিঠি লিখে ডেকে নেয়৷ চিঠির সাথে আর একটা চিঠি পেলাম সেটা সরলার। চিঠি দুটো পড়ে স্থির করলাম আমি গ্রামে ফিরব,, সরলা অনেক কিছুই লিখেছে,গ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়েও, সেই আমিই একজন ডাক্তার হয়ে কি ভাবে নিজের গ্রামকে অন্ধকারে রাখব এই প্রশ্নই আমাকে গ্রামে ফিরে যেতে বলছে৷
আজ ১০ বছর পর গ্রামে ফিরছি তবে ছদ্মবেশ এ নয় আমার চেনা রুপ নিয়েই। সেই গ্রামের স্বাস্থ্যদপ্তরের ডাক্তার হয়ে। স্বাস্থ্যদপ্তরে মহিলা ডাক্তার না থাকায় মেয়েরা বাড়িতেই সন্তান প্রসব করত এতে অনেক সময় সন্তান প্রসবের পর নাড়ি ছেদের ভুলে মায়ের কিংবা সন্তানের মৃত্যু হয়,নতুবা রক্তপাতের কারনেও মৃত্যু হয়। যাই হোক গ্রামে প্রবেশ করে মুগ্ধ নেত্রে সব চেয়ে দেখছি, আমাদের সেই বটতলা যেখানে খেলাধুলা করতাম, সেই খোলা মাঠা, সেই লুকিয়ে আমের বাগানে আম চুরি সবই মনে পড়ছে। কিছুটা যেতেই গ্রামের মাতব্বর জগদীশ ভট্টাচার্য এর সাথে দেখা হলো। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবেন? স্বাস্থ্য সংস্থার নাম বলাতে পথ দেখিয়ে দিল আর আশ্চর্য হয়ে আমার মুখের পানে চেয়ে চলে গেল। আমিও আরও অবাক হলাম যে আমায় চিনতে পারল না।
যাই হোক স্বাস্থ্য সংস্থার কেন্দ্র থেকে ফিরেই বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখলাম মা বাবা ভাই এর সাথে আমার বন্ধু সরলা ও তার মাও অপেক্ষা করছে৷ বাড়িতে সবাইকে প্রনাম করে একটু গল্প করে খেতে বসেছি যেই সেই সময় বাড়ির বাইরে কে বা কারা যেন বাবার নাম ধরে ডাকছে। বাবা খাবার ফেলে রেখেই উঠে গেল, মা ব্যস্ত হয়ে পড়ল আমাকে লুকিয়ে রাখার জন্য কিন্তু আমি মা কে বারণ করলাম এসবের দরকার নেই।
বাইরে বেরিয়ে এলাম আমিও দেখলাম জগদীশবাবু ছাড়াও আরও অনেকেই আছেন যারা আমাকে গ্রাম ছাড়া করাবার জন্য এসেছে। কিন্তু আমি তো ফিরে যাবার জন্য আসি নি। এ গ্রাম আমার, এই আমার জন্মস্থান কেন আমি ফিরে যাব? তাদের কথার যথেষ্ট প্রতিবাদ করলাম এবং তারা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে গেল। আমার মা আমায় আবার ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করল৷ কিন্তু আমি তো ফিরে যাওয়ার জন্য আসি নি।
পরের দিন বাবার সাথেই স্বাস্থ্য দপ্তরে গেলাম। আমার কাজ বুঝে নেওয়ার পরও বাবা সেখানে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু আমি রাজি হয় নি ফিরে যেতে বললাম। হ্যাঁ খুব মনে আছে সেদিন আমার হাতে একটা কেস এসেছিল, তাতে আমি যথাযথ সফল ছিলাম। একজন মহিলা ডাক্তার পেয়ে গ্রামের অনেক মহিলায় নিশ্চিত হয়েছে কিন্তু আমার প্রতি যাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ তার খুশি হতে পারে নি।
একের পর এক কেস আসতে থাকে, আমিও আমার কাজ করতে থাকি । সরলার বিয়েও হয়ে গেছে কদিন আগেই৷ সেদিন তেমন কাজও ছিল না৷ বসে আছি বাইরের বারান্দায় হঠাৎ দেখি জগদীশবাবু এগিয়ে আসছে দলবল নিয়ে। আমায় শাসিয়ে যাচ্ছে গ্রাম ত্যাগ করতে, আমাকে সেদিন কিছুই বলতে হয়নি যা বলার সেদিন গ্রামবাসীরাই বলেছিল। প্রত্যেকেই আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল, প্রতিবাদ করেছিল৷ জগদীশ বাবু ফিরে যায়।
ঘন্টাখানেক পরেই জগদীশবাবুর বাড়ির একটা ছোট ছেলে এসে জানাল তার দিদা তাকে ডেকে পাঠিয়েছে, তার মেয়ের ডেলিভারি কেস আছে শুধু জগদীশবাবুর ভয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনতে পারছে না। আমি যাব কি যাব না এটা যখন ভাবছি তখন আমার পাশে যারা ছিল তারা জানাল যদি বিপদ হয় তবে কি করবে? তারাও সাথে যাবে। কিন্তু তাদের নিরস্ত করে একজন নার্স কে সাথে করে ঘরে এগিয়ে গেলাম।
জগদীশবাবুর বাড়ির গেট এ পৌচ্ছেই বাঁধা পড়ল দারোয়ানের। কিন্তু সে বাঁধাও টিকল না উপর থেকে জগদীশবাবুর স্ত্রী তা দেখতে পেয়ে দারোয়ানকে পথ ছেড়ে দিতে বলল।
গেট পেরিয়ে অন্দরমহলে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখলাম জগদীশবাবুর রক্তাক্ত চোখ, আমার এই বাড়িতে উপস্থিতি তার সহ্য হচ্ছে না,, একবার আমায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে অনুরোধ করল। কিন্তু সে অনুরোধও টিকল না। ওনার স্ত্রী প্রতিবাদ করল, তাকে পূর্ব ঘটনা ( ছেলের বউ এর মৃত্যু) মনে করিয়ে দিল,, তখন একমাত্র মেয়েকে হারানর বেদনায় আর কিছু বলল না৷
৩০ মিনিট এর চেষ্টায় আমি সে অপারেশনেও সফল হই। সফল হওয়ার পর যখন নীচে নেমে এলাম জগদীশবাবুর স্ত্রী আমার কাছে তার স্বামীর ব্যবহার এর জন্য ক্ষমা চাইল ও অনেক আশির্বাদ করল। আশির্বাদ নিয়ে যখন বেরিয়ে আসছি তখন দেখি গেট এর সম্মুখে জগদীশবাবু দাঁড়িয়ে। আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম, দেখলাম তার সে রক্তচক্ষু নেই, সেই রাগ আর নেই, যেন মাটির একটা মানুষ । তার পুর্বভুলের জন্য ক্ষমা চান আমার কাছে। ততক্ষণে গ্রামের অন্যান্যরাও এগিয়ে এসেছি জগদীশ বাবুর বাড়ির দিকে বাবাও এলেন। জগদীশবাবুর এ হেন আচরনে আমি ক্ষমা না করে পারলাম না। এবং তার মেয়ের জীবন বাচানোর জন্য বকশিস দিতে চাইলে আমি নিজের জন্য না চেয়ে গ্রামের জন্য একটা স্কুল চাইলাম। খুশি মনে তা মেনেও নিল।
আজ আমি বহুদিন পর মুক্তি পেয়েছি। হেরে না গিয়ে জিতে গেছি। খোলা মাঠে খুশি মনে ঘুরছি ফিরছি। আর গ্রামের জন্য কাজ করছি।
লাল শাড়ি : আস্তাইন বিল্লা
সামনে ঈদ। আবার বাড়ির কর্তারও বাড়ি ফেরার সময় হয়ে এল। হাত চালিয়ে কুঠার চালাচ্ছে রেণুকা বিবি। তিন বছরের একটি শীর্ণ প্যাকাটির মত একটা শিশু পেটের সঙ্গে ন্যাকড়া দড়ি দিয়ে বাঁধা । রোগাজীর্ণ শিশু কেঁদেই চলেছে। শিশুকে যেন যেন জীবনের কঠোরতর সংগ্রামের অবতীর্ণ করার প্রস্তুতি। এখন থেকেই সহ্য ক্ষমতা করায়ত্ব না করলে চলবে কেন! জন্ম যে হয়েছে কঠিনের মধ্যে দিয়ে। এ যেন থামবার নয়। পাশে বকের মত গলা তুলে ভাঙা পা ছড়িয়ে শুকনো তো কোনো ব্যাপার নয় । বরং দুর্গন্ধযুক্ত মাছ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়াতে ব্যস্ত রেণুকার বড় ছেলে সুজন। এদিকে পাড়ার পঞ্চায়েত মেম্বারের ছেলে সদ্য থার্ড ডিভিশনে মাধ্যমিক পাশ করেছে৷ বাপ খুশি হয়ে এন্ড্রয়েডে মোবাইলও কিনে দিয়েছে৷ দুনিয়ায় সব কিছু মুঠোয় এনেছে৷ এই তো সেদিন রেণুকা তার স্বামীর সঙ্গে কত খোশগল্প করল, এমনকি চুমুও খেল। অবশ্য হারাণ মন্ডলের ছেলে কথা বলার দরুন দশ টাকা নিয়েছে৷ রেণুকার অভাব থাকা সত্ত্বেও টাকা খরচ করতে পিছুপা হয় নি। হাটে কাঠ বিক্রি করেই টাকা সংগ্রহ করেছিল। পিছুপা হবেই বা কেন অত দূরের মানুষকে এত কাছে এনে দিয়েছে। এ কি কম সৌভাগ্যের!
রেণুকার স্বামী থাকে মহারাষ্ট্রের নাসিকে। এই কদিন পর ঈদে'ই ফেরার কথা৷ সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজে জোগানদার হিসাবে শ্রম দেয়৷ বিনিময়ে আড়াইশো টাকা। অবশ্য এ কাজ তার ঠিক পোষায় না। তার পূর্বপুরুষেরা বনে-জঙ্গলে কাঠ কেটে জীবন যাপন অভ্যস্ত। এদিকে আবার সরকার কাঠ কাটার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি। সব মিলিয়ে তার মত উলুখাগড়ার এইসব জোগানদার কাজ পোষায় না বলে চলবে কেন! সে-যে কপাল করে হা-ঘরে জন্মেছে। তাই হারাণ মন্ডলের ছোটভাইয়ের সঙ্গে নাসিকে যাওয়া। তার ছোটভাই ঠিকাদার।
রেণুকা বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে কাঠ কাটতে থাকে হাঁপানি থাকা সত্ত্বেও । আর ভাবতে থাকে সুজনের আব্বা অনেক টাকা নিয়ে ফিরবে। সামনে ঈদ। কত গোছানো স্বপ্ন৷ সুজন এবং তার ছোটভাইয়ের জন্য নতুন জামা। তার নিজের আবার, অনেকদিনের স্বপ্ন, চুমকি বসানো ব্লাইজ এবং টুকটুকে লালরঙের তাঁতের শাড়ি। তাদের সংসারে সবচেয়ে বড় ভাবনা সুজনের ভাঙা পা আর তার মায়ের হাঁপানি। বাড়ির লোক বলেও গিয়েছেল। বাড়ি ফিরে এসে কলকাতায় মস্ত বড় ডাক্তার দেখাবে৷ এদিকে ঘরের দরমাও ভেঙে গেছে। সেদিন ছোট ছেলেটাকে দরমার ফাঁক দিয়ে শেয়ালে টানছিল। এইসব ভাবনার মধ্যেই ডাক দিয়ে ওঠে হারাণের ছেলে—
---অ সুজনের মা। তোমার ভাতার কালু যে ফির্যা আসে নাসিক থেক্যা।
এহেন খুশির সংবাদ শুনেই সুজনের মায়ের ঘাম কপালে রোদের আলো পড়ে চিকচিক করছে৷ ফর্সা গাল আপেলের মত লাল হয়ে ওঠেছে৷ কিন্তু পরক্ষণেই যখন হারাণের ছেলে বলে যে-
---দ্যাশে করুনা না কি যেন বালা আস্যাছে। তাই লেবাররা নিজ দ্যাশে চল্যা আসছে । খবরে বলছে সরকার টেনও বন্ধ করে দিছে ।তাই পথে হাট্যা আসছে।
এহেন কুশলে মহিলা গম্ভীর অথচ শান্তস্বরে বলে –
---ও ক্যামন আছ? দেখন যাব না?
--- না তাদের যে মোবাইল নাই। দেখন যাইব না।
হতাশ হয়ে মুখ নীচু করে অদৃশ্য ভবিষ্যতের আশঙ্কায়। হঠাৎ করে মাথা ঘুরতে থাকে৷ খুঁটি ধরে বসে যায় কাদাযুক্ত ঘরের বারান্দায়৷ আর অঝোরে কাঁদতে থাকে। সত্যি এতদিনের স্বপ্নও কাঁদতে থাকে রেণুকার সুরে সুরে। জগত সম্পর্কে সে যেন জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। এমত অবস্থায় মরার উপর খাড়ার ঘা। পঞ্চায়েত পক্ষ মাইক নিয়ে ঘোষণা করতে থাকে এই মর্মে যে, আগামী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আপনারা নিরাপদ অবস্থানে আশ্রয় নিন। সাবধানে থাকুন ।গাছের তলায় থাকবেন না। ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সব ঘোষণা কিছুই কানে যায় না রেণুকার৷ সে-যে স্বামী শোকে বিহ্বল। পাড়ার সকলেই যখন হইচই করতে গ্রাম ছাড়তে শুরু করে তখনই হুঁশ ফেরে তার৷ জানতে আগ্রহী হয়ে পাশের বাড়ি সেরাজুলের বুকে জিজ্ঞাসা করে -'লোক সকলি কোতি যায়? '
তখন উগ্রভাবে সেরাজুলের বউ জবাব দেয় –
--- মাগির ঢং কত! গাঁয়ে কত কিছু উড়্যা গেল কিছুই যাননা বুঝি! ঝড় গো। আল্লার ঝড় ।
একথা শুনে তাদের অনুকরণ করে দু'সন্তান নিয়ে হাঁটতে শুরু করে তখনই পিছন হাকতে হাকতে থাকে হারাণ মন্ডল। চীৎকার বলে - ' ও রেণু'। সে বরাবর নাম ধরে আদর করেই ডাকে৷ ডাকবেই বা না কেন! এ পাড়ায় মধ্যে কম সুন্দরী নয় কালুর বউ!। শরীর খানা যেন দুধে আলতা মেশানো ।ঘুরে তাকাতেই হারাণ বলে ওঠে কাঁদো কাঁদো হয়ে –
---তোর ভাতার যে আর নাই। রাস্তায় লরিতে পিশে দিছেরে। সে আর নাই।
আর এ খবর শুনেই মূর্ছা যায় সে। পেটে বাঁধা ছেলেটি জোরে কাঁদতে থাকে৷ সকলে ধরে নিয়ে যায় স্কুলের ব্লিডিং-এ। সেখানে অজস্র ভিড়ে একপাশে জায়গা পাই সেরাজুল এবং সেখানে দয়াকরে রেণুকার ব্যবস্থা করে দেয়। সে স্বামীর শোকে প্রায় মৃত। ছেলেরা বাপ এবং ক্ষিধের যন্ত্রণায় ক্ষিপ্ত হয়ে মায়ের উপর কিল চড় মারতে থাকে৷ এ যেন নতুন উপদ্রব। বিহ্বল অবস্থায় পড়ে রেণুকা। জগত সম্পর্কে সে যেন জ্ঞান হারা। আর ক্ষিধে অবস্থায় ঘুমিয়ে গেছে দু'সন্তান। আর গভীর রাতে হু হু করে বৃষ্টি আর ঝড় বইতে থাকে৷ সকলেই প্রায় নিজেদের পরিবারের খেয়ালে হই চই করতে থাকে স্কুল ব্লিডিং। অথচ একজন নীরব জন্তুর মত কাতরাচ্ছে। বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে সকালে আলো ফোটে। তখন সেরাজুলের বউ গায়ে হাত দিয়ে ডাকে –
'ও কালুর বহু। তোমার ছেল্যারা কই! ঝড়ে লইল না কি!
রেণুকা কোনো উত্তর না দিয়ে সে শীর্ণ হাত তুলে আকাশে তুলে চীৎকার বলে উঠল –
ওই যে । যার জিনিস সে ফিরায়্যা লইছে।
এ কথা বলেই মুখে ঘুরে ঘুমানোর ভান করে৷ কাপড়ের যে অর্ধেকাংশ শরীরে ছিল সেটাও ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করে। ঈশ্বর কি সবকিছু দেখলেন! না কি দেখেও চোখে বুঝে গা ঝাড়া দিলেন! তিন দিন পর রক্তমাখা কাপড়ে বাঁধা লাশ ফিরে এল রেণুকার কোলে । সে-যে স্বপ্ন দেখেছিল লাল শাড়ির। আজ অথচ দেখ স্বামীর রক্তে লাল হয়ে ওঠেছে সাদা থান খানি।
গোদের উপর বিষফোঁড়া : আসামুদ্দিন সেখ
কাল খুশির ঈদ। অথচ গুটিকয়েক লোক ছাড়া কেউই খুশিতে নেই। কাবিলের বাবা কাল রাতে এসেছে সাতশো কিলোমিটার হেঁটে। বেচারা আর দাঁড়াতে পারছে না । প্যাকেট বন্দী জলের মতোই তার পা দুটি ফুলে আছে । যেখানে কথা ছিল টাকায় পকেট ভর্তি থাকার , সেখানে কাবিলের বাবা এনেছে পকেট ভর্তি দুঃখ, হাহাকার, রক্ত ভেজা শরীর।
তিনমাস আগে কাবিলের ছোট বোন তার বাবাকে বলেছিল - বাবা এ বছর ঈদে একটা নতুন টু-পার্ট কিনে দিও?
কাবিলের বাবা বলেছিল - দেবো
তারপর বিদেশ যাত্রা । কিছুদিন যেতে না যেতেই পরিকল্পনাহীন লকডাউন। কাজ বন্ধ। কিছুদিন কাজ করে যা টাকা হয়েছিল সেগুলোও সব শেষ হতে বসেছে সঞ্চিত রেশনের মতো।কি করবে কাবিলের বাপ, দিশাহারা পথিক এর মত একটা রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করে। কোনো পথ নাই ! তারপর কিছু সঙ্গী সাথীদের সঙ্গে বাড়ির পথে হাঁটা। দীর্ঘ বারো দিন মরুভূমির বেদুইনদের মতো হাঁটার পর স্বপ্নের বাড়িতে আসা।
কিন্তু এ আরেক বিপদ ! পরশুদিন কাবিলদের ছাদের চালা প্রচন্ড ঝড়ের তীব্র আস্ফালন এর সামনে পড়ে , ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত অবস্থা এখন কাফিরদের।
তার বাবারও স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে !
হারানো সেই দিন : মাসুদ হাসান
আমাদের একটা সুন্দর ভোর ছিল,
তবু প্রতিদিন
আমরা একটি আরও সুন্দর ভোরের খোঁজ করতাম।
আজ পৃথিবীর বড়ো অসুখ করেছে,
চারিদিকে শুধু বিষাক্ত নিঃশ্বাস
শ্বাস নিতেও ভয় হয়।
নুতনের আশায় পুরাতন অজান্তেই হারিয়ে গেছে।
আমরা আজ আবার হারানো সেই দিনের খোঁজে।
পৃথিবির বুকে মৃত্যু মিছিল
শসান ঘাটে নির্জীব মানুষগুলির নীরব আর্তনাদ।
ম্যানচেস্টার, সবুজ নগরী, রাজধানী আপনাতে বাঁধ দিয়েছে।
পোপের শহর এখন শসান!
কসাই ডাক্তারগুলো ছাড়া স্বয়ং ঈশ্বরও ভীত স্তম্ভিত।
জারি হয়েছে অদৃশ্য এক দানবের শাসন ।
আমরা যেন এক সাজা প্রাপ্ত আসামী,
তীর্থের কাক আমরা চেয়ে আছি
শাসন মুক্ত এক অবাধ ভোরের দিকে ।
কবে আবার প্রাণ ছুবে মুক্ত বাতাস
হাত ছুবে তোমার জরাগ্রস্থ হাত,
হাঁটব আবার পায়ে দোলে শিশির ভেজা ঘাস।
*********
শরীর : জয়তোষ ঘোষ
ঈদ উপলক্ষে বাজারে গিয়ে রফিকুল বাবু স্ত্রী ও একমাত্র কন্যার জন্য ভালো পোশাক কিনে ছিল । ফেরার পথে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা অর্ধ উলঙ্গিনী নারী ও মাতৃ স্তনপানরত উলঙ্গ সন্তানকে দেখে সেগুলো দিয়ে দেয় ।বাড়িতে তার সন্তান অপেক্ষারত নতুন পোশাকের জন্য , রাস্তার অর্ধ উলঙ্গিনী শিশুটিকে জামাটি পরিয়ে দিয়ে নিজের শরীর ঢেকে নেয় নীরবে ।
তুলনা : প্রীতি কর্মকার
বছর চারের ছোট্টো শিশু হাঁটছে শত মাইল পথ,
ফিরতে হবে আপন গাঁয়ে পায়না খুঁজে বাঁচার পথ।
আমার ছেলে সোনা মানিক এই তো বসে শোফায়,
মরে মরুক মজুরের পো, তাতে কি কিছু আসে যায়?
আরাম নেই, বিরাম নেই, হাঁটছে কেবল হাঁটছে,
কে বলেছিল অতো দূরে যেতে, কাজ কি নেই কাছে?
আমরা না হয় উচ্চ শিক্ষিত, বিদেশ মোদের ভাতঘর,
দেশে ফিরি বিমান চড়ে, আমরাই তো ভবিষ্যতের কারিগর।
আমার ছেলে লিটল স্টার, যত্নে মানুষ, ব্রাইট ফিউচার,
মজুরের ছেলে মজুর ছাড়া কি আর হবে, ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ার?
ওরা তো রেললাইনেই ঘুমিয়ে পড়ে, বিপদ ওদের পদে পদে,
তাতে কি? আমি আমার ছেলে তো আছি বেশ নিরাপদে।
দুবেলা তো ভাত জোটেনা, বস্তিজুরে শুধু হাহাকার,
কাজ চাই, খাবার চাই, ওরা কি সবাই বেকার!!
মরলে বেকার করব কি আর, বেঁচেই বা ওরা করবে কী?
আমরাই তো বাঁচাই দেশ, আমরাই তো দেশ গড়ি।
মিছিমিছি জনসাধারণ মিছিল করো রাস্তা জুরে,
দুর্যোগে আর দুর্ভিক্ষে অমন কতই তো মানুষ মরে!
তাই বলে কি আমাদের তুলনা চলে ওদের সাথে?
আমরা আছি, আমরা থাকব, টাকায়, সুখে নিরাপদে।।
আমরা কি চা খাব না : শিশিরবিন্দু দত্ত
"আমরা কি চা খাবো না, খাবো না আমরা চা"----একই প্রশ্ন বা, কথাকে দু'ভাবে বলার রীতিই তো অলংকার। আই মিন, সাহিত্যে যে #অলংকার পরানো যায় তা কোনো পার্থিব জুয়েলারি দোকানে পাওয়া যায়নি,যায় না কখনও। সে যাই হোক, #মৃদুল_দেও কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এক উল্লেখযোগ্য ফিগার অফ স্পিচ। সদর্থকভাবেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন এই কথাটা মুখ ফসকে বলার কারণে।
বাঙালির চা খাওয়াটা একটা দৈনন্দিন #স্টার্ট অফ আ ডে। দিন শুরুই হয় না চা না খেলে।
বিশ্বে সর্বপ্রথম চা পানের প্রচলন করেন চীনের সম্রাট #শেন_নাং প্রায় দুশো খ্রীস্টপূর্বাব্দে । কথিত আছে যে , একদিন তিনি বাগানে বসে গরম জল খাচ্ছিলেন। তখন একটি বুনো গাছ থেকে কিছু পাতা এসে পড়ে ঐ জলের ওপর এবং সঙ্গে সঙ্গে জলের রঙ লালচে হয়ে যায়। তারপর তিনি সেই জল পান করেন। এভাবেই নাকি পানীয় জগতের মঞ্চে উদ্যমী আবির্ভাব ঘটে চায়ের।
তবে এটাও শুনেছি, এই বাঙালির চা খাওয়া শেখাটা ব্রিটিশদের কাছ থেকে । 'বোস্টন টি পার্টি' বলে একটা কথা পড়েছিলাম হিস্ট্রি বইতে। তবে এটা ঠিক যে, দার্জিলিংয়ের চা তার আগেই উৎপন্ন হতো কিন্তু সেই চায়ের স্বর্গীয় স্বাদ বাঙালিরা এখনো সেই ভাবে পাওয়া হয়নি । কারণ, দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত চা মোস্টলি বাইরের দেশে চলে যায়। #ছিটেফোঁটা যা পড়ে থাকে তা-ই চোখ বুজে পান করে বাংলার 'সহনশীল' বাঙালিরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটায়।
চা খায় না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। বাঙালির কাছে এমন একটি অমূল্য রসিক পানীয় যা শীত -গ্রীষ্ম -বর্ষা- সকাল- বিকেল -সন্ধ্যা , এমনকি দুপুরে বা, #মাঝরাতেও কেউ কেউ চা খেতে পছন্দ করেন । তবে বেশিরভাগ লোকের কাছেই প্রভাতী চা সারাদিনের উদ্যম কর্মক্ষমতা ও #অনুপ্রেরণা বটে। সকালের চা না হলে আবার চা যদি মনপসন্দ না হয়, তাহলে মনে হয় সারাটা দিন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়।
আমাদের চা খাওয়াটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাইরে ঘটে। সে সকাল হোক বা সন্ধ্যায়। বাজারের চায়ের দোকান দিয়েই আমাদের প্রাত্যহিকী শুরু করতে হয় । #সৌমেন, বিক্রম, বিপ্লব বা সুরজিৎ -শুকদেব ---চা পানের বিভিন্ন চরিত্র, নানারকম সঙ্গত। কখনো কখনো #আশিসদা,শ্যামলদা অথবা কমলদা চায়ের আড্ডা দিতে চলে আসে আমাদের ধূমকেতু কক্ষে। চা পানে পাই যেমন নানা রকম মানুষ রেগুলারলি, #চা-চরিত্র ও বিবিধ। আগে লিকার চা, যাকে বলে র - চা এবং দুধ চা ছিল। এখন গ্রিন টি , লেমন টি , ব্ল্যাক টি, ইনস্ট্যান্ট টি, স্পাইস টি------ওহ্ যেন একান্নবর্তী ফ্যামিলি অফ টি ।
সে যাই হোক না কেন, প্রত্যেকের চা পানের একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে । প্রতিদিন একটি চা দোকানে একই মুখের সমারোহ। কেউ #সিগারেট জ্বালিয়ে চা পান করেন। কেউ জোরে শব্দ করে চা পান করেন। কেউ বাবু স্টাইল তো কেউ #হাবু স্টাইল। কেউ পর পর দু'কাপ। মজার ব্যাপার হলো, চায়ের দোকানদার সব খদ্দেরদের চা-চরিত্র এক নিমেষে বলে দিতে পারেন ----- কে চায়ে বেশি চিনি খান, কার কম চিনির চা চাই, কার ডায়াবেটিস আছে বা, কার হার্টের প্রবলেম । একবার এক #অভিভাবক আমাকে তাঁর বাড়িতে #চাপ্যায়ন করেছিলেন। এমন মিষ্টি দিয়ে চা বানিয়ে আমাকে পরিবেশন করেছিলেন যে সেখানেই আমি #দু'লাইন লিখে ফেললাম : এ তো চা নয়, খাচ্ছি যেন দধি, আমি চায়ে মিষ্টি বিরোধী।
চায়ের স্বভাব চরিত্র যাই হোক না কেন, স্বাস্থ্যের দিক থেকে চা যথেষ্ট #উপকারী । নিয়মিত চা পান করলে শরীরে চনমনে ভাব আসে। শরীর-মনজুড়ে ক্লান্তি দূর করে চায়ে বিদ্যমান ক্যাফেইন। এ ছাড়া, চায়ে অনেক বেশি #অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় । তবে বিভিন্ন চায়ের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা।
কবীর সুমনের একটি বিখ্যাত গান আছে : এক কাপ চায়ে আমি #তোমাকে চাই । চায়ের সাথে টা- র একটা চিরন্তন প্রেম রয়েছে। কিন্তু এই চায়ের সাথে বিশেষ 'তোমাকে ' চাওয়ার কী কোনো উচ্ছ্বাস আছে ---তা আমার এক উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন।
#পরিশেষে বলি, বাঙালি যত আধুনিক ফ্যাশনে নিজের অস্তিত্বকে বিসর্জন দিক বা সো কলড্ আপডেট করুক, চা-প্রীতি বাঙালীর কাছে চিরন্তন সত্য হয়ে থাকুক----- যা দেখে অন্তত এই বিশ্বখ্যাত জাতিটাকে এক ঝলকে চিনতে পারে আসমুদ্রহিমাচল।
উলোট পুরাণ: রিম্পা লাহা সুরাই
ঠিক এভাবেই সেদিন পিষেছিল চাকা ,
মরেছিল কিছু অমানুষ ;
রক্ত তাদের উল্লাসে ফেটে আজ ,
নীরবতা চিরে ফিরুক সবার হুঁশ ।
তেত্রিশ কোটি শুধু নীরব দর্শক ,
সওয়ার বিকল রথে ,
বোধনের আগেই গিয়েছে ভাসান,
ওদের কান্না ভেজা পথে ।
দেবতাও আজ ফিরিয়েছে মুখ ,
বেজে গেছে পাঞ্চজন্য ;
অর্জুন আজ হারিয়েছে দিশা ,
পথ দেখাও হে কৃষ্ণ ।
ভাসছে পুঁথি , বাইবেল , কোরাণ
আবছা গীতার শ্লোক ,
ধর্ম জেহাদ সবটা ভুলে ,
অন্তরাত্মা জাগ্রত হোক ।
শর্ত : কিশলয়
প্রথম লড়াই বুকের দিকে আসে
তারপরেই পড়শী- বান্ধবী
ঝড়ের মতো জান্তব উল্লাসে
ফুঁসে ওঠে যমুনা, জাহ্নবী
মনকে বোঝাই পথের কথা গুলো
সময় কিছু কঠিন পরীক্ষা নিক
ঠিক হয়ে যাক একটা দুটো ভুলও
ঝড়কেও তুই মান্য করিস খানিক
বুকের ভিতর লড়াই পড়ুক জ্বরে
ছাই হয়ে যাক অকাল দাবানলে
যেমন হাড়ে নতুন নাটক করে
পুরুষ মানুষ প্রথম বাবা হলে
সকল লড়াই আচমকা যায় থেমে
জ্যান্ত হলে বুকের তাজা খুন
পায়ের কাছে শত্রু আসে নেমে
শান্তি টানে জ্বলন্ত আগুন
তবু জয় চাই, জয় : সকুমার দাস
তবু জয় চাই, জয়
-- অনীশ্বর
অপেক্ষারত
মৃত্যুমিছিল! ভয়!
তন্দ্রাহত অন্ধকার, অন্ধকার করে তুলছে
সমস্ত দিব্যদৃষ্টি!
অনাহুত অতিথি, অবিরাম
আগল ভাঙছে, ভেতরে ঢুকবে বলে
দরজা সামলে সমস্ত শক্তি নিংড়ে
শিরা- উপশিরা টানটান করে
দাঁড়িয়ে আছি। ধ্বসে পড়ার ভয়
শক্তিহীন করে তুলছে ক্রমশঃ
রাগ ক্ষোভ দুঃখ ভয়, সব মিলমিশে
একাকার। কোনটা তুলে রাখি
ভবিষ্যতের জন্য...
জয় জয় জয়, জয়শক্তি অর্জন
করতে করতে
অকস্মাৎ শক্তিহীন শক্তিশালী বিশ্ব,
প্রলাপধ্বস্ত, বিদ্ধ
কত ঠুনকো আমাদের শক্তি, অহঙ্কার
মেদবহুল আস্ফালন, --- সব অপলাপ
ভীতি-বাণীজ্যের অমোঘ দেউল
অসারত্ব বিলিয়ে যায়
মেরে বাঁচার আদিম কৌশল!
কে যেন
পাপ ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি প্রতিষ্ঠা করে
অস্ফুট সংলাপে!
অনবদ্য করতালি
বিশ্বাস বিলুপ্ত করে
প্রশ্নহীন দীর্ঘশ্বাসে!
তবু জয় চাই, জয়
মানুষের জয়
জীবনের জয়
স্বপ্নের জয়, আর
দয়া দাক্ষিণ্য নয়---
বেঁচে থাকবার জন্য
জীবিকার জয়।
প্রেমিকা : শ্যামল কুমার রায়
বছর পঁচিশ আগের তারুণ্যে ফিরে গেলেন ডঃ প্রিয়তোষ সান্যাল। একি কাকে দেখলেন আজ? সেই চেনা মুখ, চেনা হাসি। নিশ্চিন্তপুরের বিনোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি যাকে দেখতেন সে নয় তো? পিছনের বেঞ্চে বসা ক্লাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল চেহারার মেয়েটাকে তিনি বারবার ঘুরে ঘুরে দেখতেন, তাঁর প্রথম ক্রাশ।
খাতার মলাটে যার নাম তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে লিখে রাখতেন; যার হাসি তাঁর চোখে মনে লেগে থাকতো। এতো সেই ঊর্মি। হাঁ নিশ্চিত ঊর্মি। সেই সময়ও মুখ ফুটে বলতে পারলেন না, আজও চুপ থেকে গেলেন ব্লুমহার্ট স্কুলের আজকের রাশভারী প্রিন্সিপাল ডঃ সান্যাল। ঊর্মি এসেছে সিঙ্গেল পেরেন্ট হিসেবে মেয়ের ভর্তির জন্য ইন্টারভিউ দিতে।
চোখাচোখা প্রশ্ন দক্ষ হাতে সামাল দিয়ে চলেছেন মিসেস ঊর্মি ব্যানার্জী। মুখ ফস্কে ডেকে ফেললেন ' পুলু' বলে। পুলু হলো প্রিয়তোষের ডাক নাম, বন্ধুদের দেওয়া। ব্যাস, চোখাচোখি, মুচকি হাসি অষ্টাদশী প্রেমিকা ঊর্মি ফিরে এলো পুলুর কাছে।
-----------------------------------
সাদা প্লেটে মৃত্যু : গোলাম রসুল
আকাশে পৃথিবীর প্রতিফলন
মৃত্যুর অববাহিকায় বয়ে যাচ্ছে যে নদীটি আমারই দুঃখের মতো
শুকিয়ে গেছে কথা আর ছিঁড়ে গেছে আমার মুখের থেকে
হাওয়া শোকের পোশাক
মনুষ্য জাতি ডুবছে ঢেউয়ে
আর সন্ধ্যা নামছে
গলির মুখে মায়ের কোলে সন্তান স্তম্ভের মতো কাঁপছে রাত্রি
আমি রাত্রির কিছু জানি না
তাই প্রথম নক্ষত্রটিকে জিজ্ঞেস করি কি আছে আমাদের ভাগ্যে
প্লাস্টার করা নিশি
অসংখ্য শামুকের মুখ
ঝনঝন করে বাজছে পাতাল
ঝিঁঝিঁ পোকার ঐক্যতান
চোখের দৃষ্টিতে দ্রাঘিমা রেখা
ওপরে কে বসে রয়েছে
কে চালাচ্ছে এ্যাম্বুলেন্সের গাড়ি
একদিন চাঁদ ছিলো মানুষের মুখ
সে চাঁদ ডুবে গেছে সন্ধ্যায়
আকাশ ছিলো আরোগ্য
সেখানে ও ভারী পায়ের শব্দ
দূরবর্তী মেঘ বন্ধুর মতো
যদি বৃষ্টি নামে সমুদ্রের মাঝে
তাও শুনতে পাবো না উচ্চারণ
আমাদের দেখার জন্যে
সাদা প্লেটে মৃত্যু
__________________
খিদে : ইসমাইল মোল্লা
দেশ জুড়ে লকডাউন নভেল করোনা
বলছে নাকি ঘরেই থাকো বাইরে যেও না
দোকানদানি রাস্তাঘাটে লোক মেলা ভার
আমার ঘরে যে ধিকিধিকি জ্বলছে অনাহার
আমার ঘরের বছর আটেক শুনেছে রাস্তায়
বাপের নাকি কাজ বন্ধ ইঁটের ভাটায়
মায়ের মুখে চাপা ভয়
চলবে কেমন করে
ঘরে যে মোটে দশটা টাকা
খাবার এতে মেলে !
বউটা মোটে পাঁচমাস
মাসি বলে ভালো খাবার চাই
বাপের সুগার ভীষণ চড়া
বলতো দেখি টাকা কোথায় পাই ?
বলছে লোকে মাস্ক পড়ো
হাত ছুঁয়োনা হাতে
জ্বলা পেটে বলতো দেখি
মাস্ক বাবু কিসের কাজে আসে ?
আমায় তবে নিয়ে চলো ওই বাবুদের কাছে
বলবো বাবু দুবেলা ভাত দে না ওরে খেতে
না পারলে মানব না যা
সব বলব মিছে
বলতে পারিস খিদের চেয়ে
কোথায় বড় মহামারী আছে ?
গোপাল ভাঁড় : পিনাকি কর্মকার
বাংলাদেশের রসের রাজা, কি নাম বল তাঁর?
সমস্বরে বললে সবাই, তিনি গোপাল ভাঁড়।
নাদুসনুদুস গোপাল বাবু, টাকে ভরা মাথা ।
পেটটা যেন বটের গুঁড়ি, লম্বে খানিক নাটা।
কৃষ্ণনগর রাজার দেশ ,সেথায় তাঁর নিবাস।
রাজামশায়ের প্রিয়পাত্র, লোকটি তিনি খাস।
রসের রসিক ছিলেন তিনি, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি তাঁর।
ধূর্ত গোপাল পেয়েছিলেন, রাজার সমাদর।
কৃষ্ণচন্দ্রের ভাগ্য ভালো, সঙ্গী এমন ব্যক্তি।
একা গোপাল বাড়িয়ে দিলেন, মহারাজের শক্তি।
যতই আসুক বিপদ আপদ, না থাক পাশে কেউ।
একাই একশ গোপাল ভাঁড়, সামলে দিতেন ঢেউ।
রসের রাজা গোপাল ভাঁড়, জন্ম নাপিত ঘরে।
হাস্যরসে মন মজিয়ে, বিখ্যাত দেশজুড়ে।।
স্পষ্টবক্তা ছিলেন তিনি, ছিলেন যুক্তিবাদী।
রাজার ভুলও ধরিয়ে দিতেন, পেলেন ভাঁড় উপাধি।
তাঁকে নিয়ে হাজার গল্প, মজার এবং ভালো।
ভূবনজুড়ে মজার ছলে, ছড়ায় জ্ঞানের আলো।
ছোট্ট বেলায় সব হারিয়ে, একা হলেন ভবে।
দুঃখ ব্যাথা লুকিয়ে রেখে, হাসিয়ে গেলেন সবে।
রসের রাজা জ্ঞানের রাজা, তিনিই গোপাল ভাঁড়।
ভূবনমাঝে যতই খোঁজ, তুলনা নেইকো তাঁর।
ডাউন ট্রেন কর্ড লাইন লোকাল: অভিজিৎ দাসকর্মকার
...আরও নিম্নগামী হোতে চায় চোখের দৃশ্য-জল।
মন বলে বস্তুটির পাশে উনকোটি প্রত্নস্বাক্ষর_____
অক্ষরে অক্ষরে মননের আদর্শলিপি কথা বলে; তবুও
আবশ্যিক কোন documents দেখতে পাচ্ছি না
জ্যোৎস্নার সময়সীমায় চাতক পাখিটি রংবদল করে।
কালো। বাদামি। সাদা।
নির্ধারিত ভাবে আকাশ আর গিরগিটির পোশাক বদলে শীতকালের সকাল আর গ্রীষ্মের দুপুরে ডাহুক পাখি ডাকে।
সময়ক্ষণটির ছায়ার পিছনে আবদ্ধ হচ্ছি।
ডাকছে আর ভাঙছে শীততাপনিয়ন্ত্রিত ঈষদুষ্ণ শরীরী কারু-কোষ ।
ও বলা হয় নি, আজ নিরুত্তাপ ছিলো স্টালিনের স্বেদনজল।
এবং
১টি ঘোষণায়
ডাউন ট্রেন কর্ড লাইন লোকাল ৩৩ মিনিট লেটে চলার খবরে
গোটা পলাশ চত্তরের সরলরেখা জ্যামিতি বক্স হাতে ত্রিকোণমিতি করছে_____
মানবিক ভেদাভেদ : দেব জৈন
শহরের রাজনীতি, দেশের জাতি-ধর্ম,
গরিবের স্থান পদতলে, কে-আর বোঝে তাদের মর্ম!
ক্ষুধার জ্বালায় প্রাণ ঝরে, করতে হয় তাদের ভিক্ষা;
কেউবা আবার ঘাম ঝরিয়ে, চালায় ভাড়ার রিক্সা।
ছেঁড়া পকেটে জোটে না কিছু, পেট কাদাঁয় রাত-দিন;
সাহেবের নাকি দিন ভালো আজ, দেখেছে সে শালিক তিন।
খাবারের খোঁজে ট্রেনে-বাসে, বাচ্চারাও করে ভিক্ষা;
শিক্ষিত দেশের বিবেকহীন মানুষ, অভাব তাদের শিক্ষা।
খাবারে আজ নুনটা বেশি, সাহেবের মেজাজ হয়েছে ক্ষীণ;
রাতের বেলা ভাত জোটেনি! গরিব হালটাচ্ছে ডাসবিন।
স্বার্থের দুনিয়ায় কেই বা বোঝে, গরিবের পেটের জ্বালা;
জীবনের সুখ লকার ভর্তি, লেগেছে তাতে তালা।
সমাজ আজ অশিক্ষিত, করেছে ধনী-গরীবের ব্যবধান;
মিশেছে গায়ে লাল রক্ত তা ধনী, গরীবের সমান।
বাড়ি-গাড়ি ধনদৌলত, ধনীর হাতে আছে যে রত্ন;
ছেড়াঁ জামা-কাপড়, ধুলো মাখা গায়ে, গরিবেরাও দেখে স্বপ্ন!
অপেক্ষায়: শুভম চক্রবর্ত্তী
ঐ যে দেখো হাঁটছে, রাস্তা মাঝে;
ঐ যে দেখো মানুষ রুপি সাজে।
হল্লা করে পাড়ার মোড়ে,
খিল্লি করে কাজে।
ঐ যে তোমার আগামী,
তুমি যেমন রেখেছো তাকে।
সাবধানতার আশ্রয়ে,
সুস্বাস্থ্য লুকিয়ে থাকে।
ঐ যে দেখো নিয়ম কানুন,
তোমার অনিচ্ছার আড়ালে।
বাঁচিয়ে দিচ্ছে তোমাকে ,
এ বিশ্ব ব্যাধির আকালে।
তাই আপামর একটা উপায়,
শান্ত হয়ে বসো ঘরে।
এই একঘেয়েমির অন্তরালে-
তোমার সু-ভবিষ্যৎ খেলা করে।
বেসরকারি ইংরেজির আদর : রাজা দেবরায়
তমন্নাঃ আর ভালো লাগেনা । এপ্রিলেই আবার নতুন সেশন । আবার নতুন একগাদা বই ! দাম কত পড়বে এবার কে জানে !
আদিত্যঃ বললাম সরকারী স্কুলেই ভর্তি করাও । শুনলে না তখন । নাও এবার ঠ্যালা সামলাও !
তমন্নাঃ কী করবো ! সবাই তো বলেছে যে প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়ামে না দিলে ভালো রেজাল্ট করতে পারবে না, জাতীয় প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি । আচ্ছা বই এত বেশি কেনো বলো তো ?
আদিত্যঃ বই বেশি হলেই তো তোমার মতো সবাই 'স্ট্যান্ডার্ড' স্কুল বলবে । ইংরেজী ভালো শিখতে পারবে বলবে । বলবে, 'স্মার্টনেস' আসবে তাড়াতাড়ি !
আসলে বই বেশী হলে মা-বাবার পক্ষে পড়ানো সম্ভব হবে না । অগত্যা প্রাইভেট টিউটর !! আর বই বেশী হলে স্কুলের 'আয়'ও বেশি হয় !
তাছাড়া বই বেশি হলে বাচ্চারা ছোটো বয়স থেকেই মুক্ত চিন্তা থেকে দূরে সরে থাকবে, তাতে 'অনেকের' অনেক কিছু 'লাভ' হয় এবং 'ভবিষ্যত'ও সুনিশ্চিত হয় !!!
তমন্নাঃ শেষ কথাগুলো কী বললে বুঝতে পারিনি । একদম মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে !
আদিত্যঃ বলেছি, চিন্তা করো সন্তানকে দার্শনিক বানাবে নাকি শুধুই 'দক্ষ শ্রমিক' !!
করোনার করুনায় : রুমকি দেবনাথ
ঋষি খেতে বসেছিল। ভাতটা গলে দলা হয়ে গেছে,তরকারিটা পুরে গেছে।এমন ভাত করলে মাকে হাজারটা কথা শোনাতো,কান্না পাচ্ছে আজ। ফোনটা বাজলো,স্ক্রীনে ভেসে উঠলো - 'মা!!' ঋষি চোখের জলটা মুছে মনটা শক্ত করে ফোন ধরলো -
'হ্যালো,মেরী পিয়ারী মাম্মী বলো কি খবর??'
''আবার ওইসব হিন্দী-মিন্দী? বলেছিনা আমায় ওসব বলবিনা!শোননা বাবু পুকুরের মাছ গুলো কত বড়ো হয়ে গেছে, তুই কবে বাড়ি আসবি বলতো? তিনমাস হয়ে গেল,বলেছিলি তো এই ইংরেজি মাসের শেষে আসবি,তা ১৫ তারিখ তো হয়েই গেল, ছুটির কথা কিছু বললি অপিসে?''
'মা গো একটু আস্তে,আস্তে, একটু দম নিয়ে বলো।আরে এই মাসে বাড়ি যাওয়া হবে কিনা বলা যাচ্ছেনা, অফিসের প্রচুর চাপ এখন। তবে ওই মাসের প্রথমেই ছুটি পেয়ে যাবো চিন্তা করো না।'
''সে কি রে?? সে যে ঢের বাকি। আবার তোর বাবা বলছিল কীসব রোগ হচ্ছে বাইরে বাইরে,ছুঁলেই নাকি আরেকজনের হবে, খবরে দেখাচ্ছিল যে! চলে আয় দিকি তুই বাড়ি।''
'আরে পাগল সে তো অন্য রাজ্যে,ওই রোগের নাম করোনা। তবে আমাদের কলকাতায় কোনো ভয় নেই। তুমি অতো চিন্তা করো না তো, কিচ্ছু হবে না।'
এরপর প্রতিদিনের মতো কথা বলে রেখে দিল। Ⓜ️
এভাবে কেটে গেল আরও পাঁচদিন।এর মধ্যে রাজ্যে করোনার ছোঁয়া শুরু হয়ে গেছে,দু তিনজন মতো আক্রান্ত হয়েছে।আজ ঋষিদের অফিস হাফটাইমে ছুটি দিয়ে দিল। পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ছুটি থাকবে। ও ঘরে এসে সব গুছিয়ে রেখে দিল, ভোরের ট্রেন হাওড়া থেকে।ওর বাড়ি মেদিনীপুরের একটা গ্ৰামে। ওর ঘরের বাকি দুজন আজই রওনা দিল, ওদের বাড়ি তুলনামূলক কাছে, রাতের মধ্যে পৌঁছে যাবে।
কিন্তু পরদিন সরকারীভাবে বন্ধ ঘোষণা হল। ট্রেন সব বন্ধ।ওর আর বাড়ি যাওয়া হল না। যদিও ওর মা বলেছিলেন কোনো অন্য গাড়ি করে চলে আসতে কিন্তু ওর বাবা বললেন একদিন তো,থাক পরদিন চলে আসবে। কিন্তু বিধি বাম! রাতে ঘোষণা হল পুরো ২০দিনের জন্য গোটা দেশ লকডাউন থাকবে,প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোনো যাবে না। যথারীতি বাস,ট্রেন সব বন্ধ।ওর মা কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন। অবশ্য ওর অতো চিন্তা হয়নি। ও ভাবলো ফোন ঘাটবো, রাঁধবো আর খাবো।Ⓜ️
কিন্তু দিন দশেক পরে ভয়াবহতা বুঝতে পারলো। করোনা মহামারীর রুপ নিল।ডাক্তাররা ওষুধ আবিষ্কার করতে পারছেন না,কিছু করার নেই, শুধু বাড়ি বসে থাকা। চারিদিকে হাহাকার শুরু হয়ে গেল, দিনমজুর দের উপবাস, রাস্তার পাশের মানুষ গুলোর করুন অবস্থা। লকডাউন ২০দিনের পর আরোও ১৫দিন হল। ঋষির আশার আলো আবার কমে গেল। একমাস পর অফিস থেকে জানানো তারা আর কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না। এদিকে ঋষিদের বাড়ির আর্থিক অবস্থা এমন নয় যে তারা টাকা পাঠাবে। তাই তাদের মিথ্যা বলে বন্ধুদের থেকে টাকা ধার নিয়ে কোনোরকম চালাতে লাগলো। পুরো বিল্ডিংয়ে ও একা, মাঝে মাঝে নিজেকে কেমন ভুতের মতো লাগে ওর। রান্না করতে ইচ্ছে না হলে মুরি খেয়ে কাটায় সেটাও না হলে খালি পেট।Ⓜ️
পরদিন ওর বান্ধবী রিয়ার ফোন। রিয়ারও একই অবস্থা তবে ওর বাবার অনেক টাকা,এটাই রক্ষা।
রিয়া - 'আজ বাড়ির মালিক এসে বলে গেল,বলছে পাঁচ তারিখের মধ্যে ঘর ছেড়ে দিতে হবে।'
''মানে??বললেই হল? একটা মেয়েকে এভাবে বের করে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই ওনার। কোথায় যাবি তুই এর মধ্যে??''
'উনি বললেন সেসব জানেন না, বাড়ি ছাড়তেই হবে। বাবাকে জানিয়েছি,দেখি যদি কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করা যায়।'
হ্যাঁ সে হতে পারে কারণ রিয়ার বাড়ি ট্রেনে ঘন্টা তিনেক, তাই গাড়ি করে যাওয়ায় যায়। কিন্তু ঋষির এমন কোনো আশা নেই,কারণ একে তো ওর বাড়ি অনেক দূরে তাছাড়া টাকাও নেই!!Ⓜ️
আরোও দশদিন পর মাঝরাতে হঠাৎ ওর মায়ের ফোন -
''বাবু তোর তারককাকা মারা গেছেন।''
'কী বলছো?? কি করে হল এসব?কখন??'
"আজই,গত এক সপ্তাহ আগে হেঁটে বাড়ি আসবে বলে বেরিয়েছিল।আজ দুপুরে রাস্তার মাঝেই......'' মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
তারককাকা ওদের প্রতিবেশী। পুনেতে একটা হোটেলে কাজ করতেন। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কাকীমা বাড়িতে থাকেন। এবার ওদের কী হবে?কে দেখবে?? নাহ্ আর ভাবতে পারছেনা ও!!!!Ⓜ️
পরদিন ঋষি খবরে দেখল এইসবের মধ্যে আবার একটা ঝড় আসছে,যা এত শক্তিশালী নাকি এক মুহূর্তেই সব তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।ও আর দেরি করল না হাতে যা টাকা ছিল তা দিয়ে একটা পুরনো সাইকেল আর কিছু খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়িতে কিছু জানালো না মা বাবা চিন্তা করবেন বলে।
'মা শোনো ফোনটা একটু ডিস্টার্ব করছে দুদিন ধরে। আমি সময়মতো তোমাকে ফোন করে নেবো, তোমাকে করতে হবে না।'
"এর মধ্যে আবার তোর ফোন খারাপ হলো? আচ্ছা বাবা সাবধানে থাকিস।"Ⓜ️
ও বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু রাস্তায় নেমে বুঝতে পারলো কতটা কষ্ট!!একে তো মাথার ওপর কাঠফাটা রোদ, পিঠে ভারী ব্যাগ, তাতে আবার খাওয়ার কষ্ট।আর ক্ষিদে পেলে বেশীক্ষণ চালানোও যায় না। রাস্তাও চেনেনা, গুগল ম্যাপ ভরসা।ফোনে কদিন চার্জ থাকবে জানে না।যা আছে তিনদিন মতো যাবে কিন্তু তারপর?প্রায় গোটা দিন কেটে গেল এখনও সবে কলকাতা পেরিয়েছে।
এভাবে দুদিন চলল। মাকে সেদিন সকালে ফোন করল -
"বাবু তুই ঠিক আছিস তো? আমার কেমন মনে হচ্ছে তুই ভালো নেই।"
'আমি ঠিক আছি মা,কিচ্ছু হয়নি আমার। তোমরা কেমন আছো?'
"আমরা ঠিক আছি,আজ তো ঝড় হবে, তোর বাবা আমাদের দোকান ঘরটা (এককালে দোকান থাকায় ওটা বেশ বড়ো, হলঘর মতো) খুলে দেবে বলছিল,গ্ৰামে যাদের কাঁচা ছাউনি তারা থাকতে পারবে।"
ঋষিদের বাড়ি ওই একটাই ছাদের ঘর ওই দোকানঘর,বাকি ওদের থাকার ঘর সব টালি দিয়ে বানানো,ওর মা বাবা যে এই সময়ে গ্ৰামের লোকের কথা ভেবেছে এতে ওর বেশ ভালো লাগলো।ওর বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা টা দিগুন হয়ে গেল।
'ভালো করেছো মা, খুব ভালো করেছো।'
"তোর ফোনটা ঠিক হলো?কী রাঁধলি আজ?"
'না ফোন টা ঠিক হয়নি,আর আজ আমি, আমি ফেনাভাত রেঁধেছিলাম,পেট ভরে খেয়েছি। তুমি একদম চিন্তা করো না আমাকে নিয়ে,ঝড় আসছে তোমরা সবাই কে নিয়ে সাবধানে থেকো।'Ⓜ️
এরপর এলো সেই ভয়াবহ ঝড়, সেই কালো রাত। ঋষি রাস্তার পাশের একটা স্কুলের সাইকেল গ্যারেজে কোনরকমে আশ্রয় নিল।ও তো প্রাণে বেঁচে গেল কিন্তু গাছ পড়ে ওর সাইকেল টার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। তার সাথে শেষ হতে বসল ওর বাড়ি ফেরার স্বপ্ন।এখন হাতে যা টাকা আছে তাতে আর একটা সাইকেল কেনা সম্ভব নয়। এদিকে ক্ষিদেয় চোখে অন্ধকার দেখছে। পাশে কোনো দোকান খোলা নেই যে কিছু কিনে খাবে। সামনের টিউবওয়েল থেকে বার তিনেক জল খেয়েছে, তাতে ক্ষিদে কমার দায় আরো বেড়ে গিয়েছে। ফোনটা বেজে উঠলো, রিয়ার কল।
"হ্যালো ঋষি,রনি বলল তুই নাকি সাইকেলে বাড়ি যাচ্ছিস? পাগল হয়েছিস তুই?"
'আমার কিছু করার নেই রে, এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। কি করতাম আমি বলতো?'
"কিন্তু এত কষ্টে এভাবে কদিনে পৌছাবি তুই??আদেও কি......."
'হুম আদেও পৌছাবো কিনা জানিনা, কারণ কালকের ঝড়ে সাইকেল টাও গেছে। দেখি ওটার কোনো গতি করতে পারি কিনা, নাহলে এই পা দুটো ছাড়া কোনো ভরসা নেই (মনে মনে ভাবলো সে দুটোও ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে)। জানি না রে তবে বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।'
ফোনটা রেখে বাড়িতে ফোন করল।দুবার পুরো বেজে গেল, কিন্তু কেউ তুলল না। এমন তো কখনো হয়না,ও ফোন করলে একবার বাজতে না বাজতেই মা ছুটে এসে ধরে,মা কোনো কারণে ব্যস্ত থাকলে বাবা ধরে।ও এদিক ওদিক দেখতে লাগলো কোনো সাইকেলের দোকান যদি দৈবাৎ খোলা থাকলে যদি সাইকেল টার কোনো ব্যবস্থা হয়।ওর গুগল ম্যাপ বলছে আর দুদিন মতো গেলেই ও গ্ৰামে পৌঁছাবে। তবে মা ফোন না ধরাতে একটু দুশ্চিন্তা হতে লাগলো,যা ঝড় হল তাতে বাড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি তো?Ⓜ️
চারিদিকে গাছ ভেঙ্গে পড়ে, ইলেকট্রিক তার জরিয়ে খুবই খারাপ অবস্থা, তবে একটু উঁচু এলাকা হওয়ায় রাস্তায় জল জমেনি এই রক্ষা। সাইকেল টা ঠেলতে ঠেলতে কোনোক্রমে এগোতে লাগলো। হঠাৎ পাড়ার মিন্টুর ফোন -
"হ্যালো। তুই কোথায় আছিস? ঠিক আছিস তো?"
'হ্যারে আমি ঠিক আছি। তবে বাড়িতে বলিস না আমি গত তিনদিন ধরে সাইকেলে বেরিয়েছি, বাড়ি যাব বলে।আর দুদিন, ঠিক পৌঁছে যাবো বল?'
"সাইকেলে?ওহ তা বলছিলাম.."
'আগে বলতো আমাদের বাড়ির কি অবস্থা?মা ফোন ধরলো না,ঝড়ে সব ঠিক আছে তো?'
"কি বলি বলতো? মানে..... তুই......"
'ভাই সত্যি করে বলতো সব ঠিক আছে তো???'
"তোর বাবা....কাল ঝড়ের মধ্যে একটা কুকুরছানা কে বাঁচাতে গিয়ে বাইরে বেরিয়েছিল, ঠিক সেইসময় তোদের বড়ো পিটুলি গাছটা পড়ে.....জ্যাঠা...জ্যাঠা আর নেই ঋষি....."
ফোনটা সুইচ অফ হয়ে গেল। ঋষি স্থানু হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কিসব বলে গেল মিন্টু? নিজের কানে কি শুনলো ও? এতো কষ্ট করে ও তিনদিন যুদ্ধ করছে শুধুমাত্র ওই মুখ দুটো একবার দেখবে বলে!! তারপর সাইকেল ফেলে দিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটতে লাগল।Ⓜ️
খানিকটা যাবার পর রাস্তার পুলিশ ওর পথ আটকালো।কী নাম, কোথায় বাড়ি,কোথা থেকে আসছে কোনো প্রশ্নেরই উত্তর না পেয়ে ওর ব্যাগ নিয়ে জিনিসপত্র ঘাঁটতে লাগল। আরেকটা পুলিশ অফিসার এসে ওকে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো। কিছুক্ষণ মার খাওয়ার পর ও আর্তনাদ করে উঠলো,বুক চিড়ে হৃদপিন্ড টা বুঝি ওইখানেই বের করে আনবে।
"আমার বাবা....আ.....সে মারা গেছে!!!তাকে আর আমি দেখতে পাবোনা। আমার ডাকে সে আর সাড়া দেবেনা.... আমার সব শেষ.... শেষ দেখাটাও......"জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল দুদিনের অভুক্ত শরীর টা। Ⓜ️
এই জ্ঞান আর ফিরবে কিনা আমার জানা নেই।কতো হাজার হাজার মানুষ এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তাও জানা নেই। কতটা পরিমাণ নরক যন্ত্রনা ভোগ করছে তারা তার আন্দাজ টুকুও হয়তো করতে পারবোনা আমরা ঘরে বসে। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার বা সাহায্য করার কোনো উপায়ও নেই আমাদের কাছে। শুধু ঘরে বসে প্রার্থনা করতে পারবো মানুষগুলোর জন্য,যেন তারা মরার আগে অন্তত তাদের প্রিয়জনের মুখ দেখতে পায়।ব্যাস এইটুকুই.....
নিরন্তর অপেক্ষা : শোভন মন্ডল
আমরা কি এইভাবে হারিয়ে যাবো?
কোমরের নীচ থেকে যে তীব্র আকুতি কুড়ে খাচ্ছে
তার কোন বিহিত হলো না
জানা নেই নিরন্তরকাল আসলে কী
খুঁড়ে রাখা গর্তের ভিতর থেকে কিলবিল করছে কীট
অজস্র, অনন্ত লেজযুক্ত কীট
সময় নেই , সময় নেই আর
ঝিমিয়ে পড়ছে প্রাণ, ভেসে যাচ্ছে নিথর খোলস
এইসব দেখতে দেখতে অপেক্ষায় থাকা শত শত ডিম্বাণুরাশি
প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত করছে
নিজেকে
পরিযায়ী : আর্য দাস
গভীর অসুখ, ভীষণ সংকট দেশে
তারা যায় ভিনদেশে
সন্ধানে দুমুঠো অন্ন, পরিযায়ী বেশে।
ওরা হাঁটছে রোদের সাথে
আকাশ যখন জ্বলতে থাকা দীপ
সলতে পাকায় পেটের ক্ষিদের ব্যামো
ছাড়তে হবেই পরিযায়ীদের দ্বীপ।
অববাহিকার রেলের লাইন জুড়ে
ঘুমোয় যত রুটি আধপোড়া
পোড়াকপাল শ্রমিক যত্তসব
ঘুমিয়ে মরে হেঁটে আগাগোড়া।
গোরার বিবেক তবুও কি কাটা পড়ে,
কালামানুষের দেখে ছিন্ন লাশ ?
উপত্যকার রাস্তায় চাপা পড়ে
মোমবাতি হাতে মিছিলের অবকাশ।
পৃথিবীর যত যুদ্ধ আর মহামারী
জীবন মেলায় ওদের আরবার,
প্রাপ্য রুজির সন্ধানে ওরা পাবে
শুধু সমান্তরাল মৃত্যু উপহার।
অসম লড়াই চলছে যুগে যুগে
শ্রেণীসংগ্রাম সংখ্যায় বারেবারে
বন্দী বিপ্লব প্রমাণ দিয়ে গেল;
সর্বহারারা আজও কতভাবে হারে।
পুনরায়: রিঙ্কু মন্ডল
বর্ণভেদের ছোঁয়াছুয়ি করার
অভ্যাসটাই বদলালো না;
উপরন্তু দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ।
মানুষের সাথে মানুষের সাক্ষাৎ নেই
হেরে যেতে বসেছে সমাজ;
জীবন কাটছে ইতর প্রাণীগুলোর মতই।
আমাদের ব্যবহার-
ভালো অথবা খারাপ
মৃত্যুর পরে সংস্কাররূপে আত্মাতে থেকে যায়।
কতদিন হয়ে গেল
গৃহবদ্ধই হয়ে আছে মানুষ,
দিন কাটায় একাকিত্বে।
বিষাক্ত ভাইরাস ধ্বংস হওয়ার পর
যদি একাকিত্বের সংস্কার থেকে যায়,
তাহলে আর একবার হবে
আমাদের পরাজয়;
যা মহামারির পর দ্বিতীয় এক মহামারি।
রিয়াজুল হক সাগর একগুচ্ছ কবিতা
১.
এই সময়ে
এ খন রাত এসেছে অন্ধকার
সত্যের বিজয় নিশান উড়ছে,
এই বাংলায়, সাহস রেখ আগামির
পথে পথে, এই হোক অঙ্গিকার।
সমাজের চিত্র বদলে গেলেও
বদলায়নি মানুষের চরিত্র,
আবার একটি পলকে বদলাতে
পারে মানুষ নামের অমানুষ ।
এই মানুষ যেতে হবে বহু দুরে
অচিনপুরের একটি গ্রামে,
সেখানে হবে বিচার তোমার
থাকবে শুধুই তুমি নামের একমাত্র আমি।
২.
যা….রে করোনা --
দুরে চলে যা হে করোনা
কোথা হতে আসলি রে তুই,
তোর কাছে সবাই মাথা নত
অতি শক্তিশালী তোর প্রলয়।
তুই কি তাকিয়ে দেখেছিস,
কত লাশের মিছিলের ধিক্কার
তোকে শুনতে হয়েছে
কোটি কোটি প্রাণের চিৎকার।
এই করোনা কি করিলি?
দুনিয়া জুড়ে দেখছে তোকে
তাকিয়ে তাকিয়ে, তোর ভয়ে।
লকডাউনের যাতা কলে এখন
পৃথিবী মানব শুন্য দেখা মেলে না
অতি আপনজনের, এই করোনায়
হে করোনা তুমি চলে যাও দেশ হতে।
৩.
নালিশ
করিতে নালিশ
করবে আমায় পালিশ,
মামলা দিয়ে
করতে চায় হালিস।
চোরদের দাপট
চোখে পরার মত,
আনাচে কানাচে দেখা যায়
বৃক্ষ রাজির মত।
সত্যের বিজয় জেনেও
আজ নিচ্ছুপ,
বিবেক নামের
সেই স্বত্বা আমার হারিয়ে গেছে।
৪.
নাইরে দিন
দিন গেল তোর আগে ভাগে
একলা দিনের মত,
আজে বাজে স্বপ্ন দেখে
হাজার কথা শত ।
মিষ্টি মেয়ের দৃষ্টি পড়ে
ঝাকড়া চুলের দিকে,
রাখাল ছেলের বাশিঁর সুরে
মাঠ গেছে হায় পিকে।
এই দিনের কাছে
সেই দিনের হার,
নদীর বুকে ঢেউয়ের খলাৎ খলাৎ
ডাকু শুনে আমিও দিলাম পার।
৫.
ভাতের লাগিয়া…
দু..দিন গেল পেটে ভাত পরে নি
কেটে গেল বেলা,
অবুঝ শিশুর চোখের পানি
স্বপ্ন করে খেলা।
বাবা যে তার কাজে গেছে
আনবে কিনে খাবার,
পাইনি কাজ বাবা তাহার
দিন শেষে পেলনা আহার।
এই করোনার ভয়ে ভয়ে আজ
দিশেহারা গরীব মানুষ,
লুট করে খেল সব
ফিরলো না তাদের হুস।
কোভিড-19 : রাহুল শীল
বুকের ভেতর ভীষণ ভয়ের বাস
নিরাপদ শুধুই কোয়ারেন্টিন,
মায়ের মুখেও একটা শুধু শব্দ
বিপদের নাম কোভিড-19।
আকাশ ফাটে।খাঁচার ভিতর মানুষ
করোনা নামে চিনা ভাইরাস,
পাশের বাড়ির কাকার হাই প্রেশার
ইতালিতে থাকে ছেলে পলাশ।
খবর কাগজ, মৃত্যু মিছিল গুনে
কানের কাছে করে ফিসফিস,
নিউজ চ্যানেল বার্তা পাঠায় শুধু
করোনা আক্রান্তের মিলল হদিশ।
ভিড় এড়াতে সতর্কতার বাণী,
এক মিটার দূরে পথ চলুন।
নিজামুদ্দিন বাড়ালো আক্রান্ত সংখ্যা
কার কথা কে শোনে বলুন।
যে জনগণ মৃত্যু দেখে শেখেনা
তাদের জন্য কিছু করার নেই,
ঘরে বসেই মৃত্যু মিছিল দেখুন
করোনা হতে বাঁচবেন এভাবেই।।
বারুদ : The Elixir of Life : প্রীতম বিশ্বাস
" Life always wants to sustain itself, if possible then eternally. "
'অল-ইকসির' অর্থাৎ আশ্চর্য বস্তু। সময়টা সপ্তম শতাব্দী, তার আগে 'Elixir' শব্দ টা আসেনি। যদিও শব্দ দুটো ৫২-৫৩, তবুও এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে ঔষধি বস্তু আর আশ্চর্য বস্তু এক জিনিস নয়। কিন্তু ওষুধ টা যদি অমরত্বের বা চিরযৌবনের হয় ? কি ? হোঁচট খাচ্ছেন তো ! এগোতে থাকুন আরো খাবেন।
জীবনের শুরুর সময় থেকেই আশ্চর্য বস্তু খোঁজ এখনো অবধি অবিচল আছে বরং বেড়েছে কয়েকশো গুণ। প্রোক্যারিওটস্ থেকে শুরু করে এখনো অবধি জীবন যে কোন উপায়ে অমরত্ব পেতেই চায়। তার বিভিন্ন উপায়ে অবশ্য জীবন ইতিমধ্যে খুঁজে ফেলেছে। মানবজাতি সেটা বুঝতে আজও অক্ষম, কারণ মানুষ জীবনের থেকে অনেক পিছিয়ে। আর ঠিক সেই জন্যই অমরত্ব বলতে যা আমাদের মাথায় আসে তা হল অমৃত, philosopher's stone, আব-ই-হায়াত্ , ochimizu ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকমই একটা নাম "The Elixir of Life", যার মানে অমরত্বের বা চিরযৌবনের একটা সিরাপ ।
প্রশ্ন আসছে নিশ্চয়ই এসবের সাথে বারুদ এর কি সম্পর্ক ! খুব স্বাভাবিক। আসুন তবে;
পুরাকালে 'অমৃতের খোঁজে হলাহল' , বা philosopher's stone এর জন্য অসংখ্য মৃত্যু - এসব জানে অনেকেই। তবে তা নিছক রূপকথা এমন দাবি করতে আমার দ্বিধা নেই। কিন্তু রূপকথা সত্যি হবে না এমনও তো কোনো মানে নেই।
" Accidents are normal in life." , এই কথাটায় আমি খুব বিশ্বাস করি। দেশটা চীন, সময়টা তখনও আন্ত-সাম্রাজ্য যুদ্ধের। বহু রোগ-ব্যাধি-ক্ষত এসবের উত্তর খোঁজা চলছে বিশ্বব্যাপী, এবং চীনেও। বহু ওষুধে সালফার, পারদ এর ব্যবহার অপরিহার্য। এর মাঝেই জীবনের চির চাহিদা মেনে নিয়ে কিছু মানুষ খুঁজছিল 'Elixir of Life' । বিভিন্ন মিশ্রণ, তাতে সালফার, পারদ, চারকোল এসব থাকতো। প্রথম শতকের অর্ধেকের দিকে তারা সন্ধান পান সল্টপিটার এর, এক ধরনের জারক লবণ। 'টাও' নামে এক জনজাতি, তারা এসব মিশিয়ে রোগমুক্ত, জড়ামুক্ত, মৃত্যুমুক্ত জীবন খুঁজছিল। যদিও তা পাওয়ার একটা পথ গৌতম বুদ্ধ বহুকাল আগেই বলে গিয়েছেন, তবুও ওই যে "যত মত তত পথ" । এরকম খোঁজের এক মিশ্রণে ছিল সালফার, পারদ, চারকোল, সল্টপিটার এসব। সালফার আর চারকোল জ্বালানী অন্যদিকে সল্টপিটার জারক। ব্যাস ঘটে গেল 'magical accident' । মন্থনে উঠে এলো 'বিষ', নাম পরল 'huoyao' অর্থাৎ 'fire medicine' । খেয়াল করুন শব্দ দুটো fire এর সাথে medicine । হ্যাঁ, একটা Taoist লেখা অনুযায়ী, 'huoyao' was an accidental by product from the experiment seeking to create the Elixir of Life .
এই huoyao আর কিছুই নয়, যাকে আপনি বারুদ বা gunpowder বলে থাকেন। তারপর এর দৌলতে যে কাল সাম্রাজ্য এখনো চলছে বিশ্বব্যাপী তাতে আমার 'black powder' নামটা বেশি প্রযোজ্য বলে মনে হয়।
Elixir of Life পাওয়া যাবে কিনা সে নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র সংশয়ে আচ্ছন্ন নই, কারণ জীবন তার অমরত্বের পথ খুঁজে ফেলেছে কোটি বছর আগে। কিন্তু অবিরাম মন্থনে এই যে সব 'বিষ' উঠে আসছে, তা গলায় ধারণ করার জন্য গাঁজাপেয়ী পাগলের যে খুব দরকার, আর বিশ্বের হিরোশিমায়ন বা নাগাসাকি-করণ হওয়ার আগেই দরকার ।
ভবিতব্য : অনিন্দ্য পাল
ভবিতব্য
কয়েকটা প্রশ্ন করি তোমায়
কে সৃষ্টি করেছিল তোমায়?
তুমি অতীত না ভবিষ্যৎ?
তুমি কি সবার?
নাকি শুধুই ভ্রম আমার?
ভবিতব্য তোমার ও কি আছে ভাগ্য
ওই ভেসে যাওয়া অসহায় মাকড়ের মত?
উত্তর পাবোনা, জানি
জানি সেই ভবিতব্য নেই আমার
ছিল কি কখনও?
সত্যিই কি ঘটেছে কিছু?
কোন ঘটনা অথবা ধংস অথবা সৃষ্টি?
নাকি সবটাই ভ্রম আমার?
যেমন নিজেই আমি!
====================
মানুষ তুমি মানুষ হও : কাজী জুবেরী মুস্তাক
সারা পৃথিবী আজ বাঁচার জন্য লড়ছে
ঈশ্বরের সামনে নতজানুই বসে থাকছে ;
সকলে থাকতে চায় মহাবিশ্বের উপরে
মুখোশের উপরে আরেক মুখোশ পড়ে ।
ক্ষমতার দম্ভ নেই আজ পৃথিবীর বুকে
অহিংসা পরম ধর্ম বাণী সকলের বুকে ;
কাঁধে কাঁধ রেখে বাঁচার স্বপ্নটা দেখছে
ব্রহ্মাণ্ডের এমন দৃশ্য কে কবে দেখেছে ?
পৃথিবী জুড়ে আজ শুধুই মানুষ মরছে
হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ভেদাভেদ ভুলেছে ;
আলোর অপেক্ষায় পৃথিবীটাও বহমান
জ্বালো আলো ঈশ্বর ;আল্লাহ ;ভগবান ।
যুদ্ধ দাঙ্গা ভুলে মানবতা এক কাতারে
মহানুভবতা থমকে যায়নি কাঁটাতারে ;
মানুষ আজকে মানবতা ফেরি করছে
সব ভুলে ভালোবাসাটাও বিলি করছে ।
ভেঙে চুরে গেছে আজ সব অহংকার
ভাগাভাগি করে করছে সবাই আহার ;
কিসের এতো দম্ভ জীবনটাইতো ছোট
মানুষ তুমি আবারও মানুষ হয়ে ওঠো।
স্নেহ : শুভঙ্কর রাহা
পাঁচ বছর হলো সে বাড়ি আসেনি। এই পাঁচ বছরে না এসেছে একটা ফোন, না এসেছে কোনো চিঠি, না কোনো খবর। প্রথম দিকে বেশ কয়েক মাস ফোনে চেষ্টা করা হতো, এখন সেই চেষ্টা প্রায় নেই বললেই চলে। এখন তো দেখছি বৌদি ঠিকঠাক সিঁদুর টুকুও মাথায় দেয় না।
জ্যাঠা আগে একাই চাষ করতো। একই জমির একদিকে লাগাত মুশুরি, একদিকে আলু আর পিঁয়াজ। আলু উঠলে পাট হতো। অন্য জমি গুলোতে ধান চাষ করতো। এখন আর পারে না। ছেলের চিন্তায় কিছুটা অকাল বার্ধক্য এসেছে। এখন বেশিরভাগ টা ভাগচাষী রাই চাষ করে, ফসল উঠলে ফসলের ভাগ আর টাকা মিলিয়ে যা হাতে আসে তাতে ওদের তিনজনের সংসারে বিলাসিতা না থাকলেও ভাতের অভাব নেই। জেঠি বরাবর ঘর-গৃহস্থালি, গরুর গোয়াল নিয়েই ব্যস্ত ছিল, আজও তাই। তবে গরু টা আর নেই তাকে বিক্রি করে একটা ছোটো ছাগল নিয়েছে, আর বাকি টাকা টা ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাখা আছে। ছাগল টাকে জেঠি আর বৌদি মিলে দেখা শোনা করে। বৌদি রোজ নিয়ম করে কাঁঠাল পাতা খাওয়ায় ছাগল টাকে।
বিকাল হলে বৌদি ছাদে ওঠে। আমাদের ছাদ আর বৌদি দের ছাদের মাঝে একমানুষ দূরত্ব। প্রথম প্রথম বৌদির ছাদে ওঠা টা আমাকে উৎসাহ দিত একরকম adrenaline rush বলা চলে। বৌদিকে দেখিয়ে দেখিয়ে ১০-২০ টা স্কিপ বেশি করতাম, পুশ আপের সংখ্যাও বেড়ে যেত। বৌদি সেটাকে কেমন ভাবে নিত তা আমার জানা নেই। কিছুদিন পর থেকে আর এমনটা করতাম না, আড়চোখে তাকিয়ে দেখতাম বৌদি কিছু বলতে চেয়েও ইতস্তত বোধ করে। তাই আমিই একদিন বৌদির কাছে জ্যেঠির শরীর স্বাস্থ্য কেমন আছে জানতে চেয়ে কথা শুরু করার চেষ্টা করলাম। পাশের বাড়ির জেঠিমার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার মতো বোকা বোকা প্রশ্ন দিয়ে কথা বলার অজুহাত দেখে বৌদি তো আমাকে নিয়ে বেশ ঠাট্টা করলো। আমিও ব্যাপারটা উপভোগ করলাম।
তারপর থেকে রোজ বিকালেই বৌদির সাথে কথা হতো, নানান রকম কথা। সে কথা কত ডালপালা বিস্তৃত করে, আমি নিজেকে সামলে নিই। পাড়ার বয়জেষ্ঠ্য রা বাঁশ পেকে ট্যাস ট্যাস করার আগে তাকে কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়ে যায় জ্যাঠা কে। বন্ধুরা আমাকে ভ্রু তুলে, মাথাটা হালকা বাঁ দিকে বেঁকিয়ে ইশারা করে। পাড়ার টাইম কলে জল আনতে গিয়ে শুনলাম ' ছেলেটার কি দোষ? ওই মেয়েছেলে টাই ফুসলেছে। আসল ব্যাপার হলো অভাবে স্বভাব নষ্ট। বাড়ির রোজগেরে পুরুষ যদি বাড়িতে না থাকে তাহলে যা হবার তাই হচ্ছে।'
আমি জলের জায়গাটা ভরে একবার থুতনি টা তুলে আবার সেটাকে নামিয়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
শহরের ইতিকথা : নন্দিনী পাল
আকাশটা আজ নেমে এসেছে চৌকাঠে
ছুঁয়ে আছে মিনারের মাথা
বহুতলের ছাদের উপর ধূসর দিগ্বলয়
সাঁতরে যাচ্ছে সময়,
জলের উপর তরঙ্গ ফেলে।
দূরে ওই ব্রীজের পাঁজরে
বর্ষার রুগ্ন জোলো হাওয়া
নদীর বুকে লঞ্চটা ভোঁ আওয়াজ দিয়ে
ডাকেনি অনেকদিন
কারখানার মৃত চিমনিগুলো
আকাশের দিকে নির্নিমেষে তাকিয়ে
কপাটের তালায় পড়েছে জং
অনেকদিন কোন কোলাহল নেই
নেই ব্যস্ততা
অন্ধকার শীতল এখানে
যান্ত্রিক নিস্তব্ধতা শুধু পায়রার ডানায় ভেঙে খানখান
সাড়া দেবার কেউ নেই
দমবন্ধ কিছু কান্নারা ফিরে গেছে কড়া নেড়ে,
উৎসবের জ্যোৎস্নার আদরমাখা সন্ধ্যায় আজানের সুরে
চাঁদের চর্যাপদ
ওদের একফালি রুটির আশ্বাস দিও।
করোনা : শ্যামল কুমার রায়
করোনা এবার দিচ্ছে ডাক
মানব সভ্যতা নিপাত যাক।
সচেতনতা ভাই উঠছে গড়ে
করোনা তাই যাচ্ছে সড়ে।
সভ্যতার আজ চরম সংকট
স্বার্থপরতা হচ্ছে প্রকট।
ছুটছি সবাই নিজের তরে
রসদ মজুত নিজের ঘরে।
আতঙ্ক আজ বড়ো পুঁজি
কালো বাজারির সুযোগ খুঁজি।
আর্ত অসহায় রইলো পরে
দিন মজুরিতে পেটটা ভরে
মৃত্যু মিছিল খবর করি
আরোগ্য সব আড়াল করি।
প্রভু তুমি দাওগো মেরে
মনুষ্যত্বহীনতা চিরতরে।
----------------------------
পল্লব সিনহা
চোখ যায় যতদূর; কেবলই পড়ে থাকা হাড়।
'ইহা ভালোবাসার ধ্বংসস্তুপ' বলেছো তুমি।
মৃত পর্যটকের পাহাড়।
নেমেছে গৃহযুদ্ধ।
আমরা সেই পাহাড় ফেলে, এগিয়েছি ঈশ্বর।
এখানে রক্তের ঘ্রাণ, উড়িয়েছে বন্দুক।
ভুলিনি তাকে;
সে ঘ্রাণে মেখে সাদা ভাত, খাওয়ানো প্রিয় বন্ধু!
এখানেই শেষ প্রেম। শরীরও বন্ধ্যা।
জেনেছি হে জীবন; মৃত্যু অলকানন্দা!
বিরহের উদ্যান; সাজিয়েছে যখ।
আমরা-
পরিচয়হীন। শায়িত। দুই মৃত পর্যটক!
সারাফাত হোসেন
একা
বৃষ্টি এলো,
পাখি ফিরে গেলো বাসায়।
মেয়েটা ভিজছে
একা
দূরে অনেক দূরে আর একজন
সেও ভিজছে
তবে তার সাথে নতুন মানুষ,
নতুন বসন্তের মত ওদের প্রেম।
বৃষ্টিতে নাকি ভালোবাসা বাড়ে,
হয়ত বাড়ে
কিন্তু বৃষ্টি যত প্রখর হয় মেয়েটা তত একা একা হয়ে যায়।
এমনটা তো পারত ছেলেটার নতুন প্রেমিকা সে-ই হতো,
সে ভিজত ছেলেটার সাথে যেমন আগের বর্ষায় ভিজেছিল তারা দুজন।
শব্দ জব্দ (৪) : আজকের শব্দ "প্রেম"
প্রেম: /বিশেষ্য পদ/ প্রীতি স্নেহ অনুরাগ ভালবাসা ও ভক্তি মিশ্রিত ভাববিশেষ।
প্রেম বা ভালোবাসা ,হম্ম পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টি ,যা কিছু উৎপত্তি সবটুকুই এই প্রেম বা ভালোবাসা না থাকলে হতো না বা হবেও না ।
"প্রেম "
নিয়ে যারা লিখলেন
"আখের রস গুড়ের পাকে
প্রেমও তেমন মনের ফাঁকে।
ভালোবাসা আর দেহত্ববোধ
মিলেমিশে একাত্ম হোক।"
- সুনন্দ মন্ডল
"আকাশলীনার কানের দুলে
শিশির জমাক কাব্য,
বুকের মাঝে নিবিড়ভাবে
প্রেমনদী হোক নাব্য…"
- সৌমেন দাস
"চশমার কাছে ধার নেওয়া দৃষ্টি,
ব্যবধানে আটকে থাকা ফ্রেম
নন্দন থেকে ভিক্টোরিয়ায় আটকে আছে প্রেম"
- অরূপ সরকার
"দুর্বলতার দুর্বার মত প্রেম এক চির সবুজ
হৃদয় মাটির অনুভূমিক বুকে বিরাজ
প্রেম এক কাঁথা সেলাইয়ের সুচ
নক্সায় ইতিহাস বাঁধে জীবন অধ্যায়ের সুইচ...."
- হরেকৃষ্ণ দে
" ঘুম ঝির ঝির চোখের পাতা স্বপ্ন মাখানো মন, আলসে আলসে ভোর আদুরে ঠোঁটে চুমু এঁকে দেয়
মন বলছে আর একটু ঘুমোই কাজ যা আছে যাক না চুলোয়
মন আজ হয়ে যাক ঘুমকাতুরে এক প্রেমিক। "
- বর্ণা দত্ত
"
গুনীজন কন, প্রেম লুকিয়ে
রাখতে পারাও শিল্প, নিগূঢ় প্রেমে।
তুমি কি পেরেছো সখী
রাখতে সমেত প্রেম বন্দি একফ্রেমে।"
- জিয়াউর রহমান
"প্রেম: জানি সবটুকু গেম,ফুরিয়ে গেলে মায়া তার,
ভালোবাসা: নিজের মৃত্যুতেই ,বেঁচে থাকা জন্মান্তরে বারবার।।"
- জ্যোতির্ময়
সৌমিক মৈত্র
১।।
যতক্ষন না ফুরিয়ে যায়, ততক্ষন অবদি সবকিছু রঙীন;
চোখ আলোর কাছে ঋণী আর অন্ধকার মোমবাতির কাছে।
২||
ভেঙে গেলে তা বিচ্ছিন্ন, মচকে গেলেও তা আটকে থাকে শুকিয়ে যাওয়ার আগে অবদি।।
৩||
জল জীবনের জল ধ্বংসের, পরিস্থিতি বেছে নেয় মরা বাঁচা।
৪||
মৃত্যুর পর মানুষ রূপে কুৎসিত হয়, আর গুনে সুখ্যাত।।
৫||
বিছানার সাথে নিঃশ্বাস ভাগ করতে শিখলে তবেই একসাথে বাঁচা যায়।।
শব্দ জব্দ (৩) : আজকের শব্দ " অক্ষর"
অক্ষর : অক্ষর বলতে আমরা বুঝি বর্ণমালা প্রতিটি বর্ণকে ।
অভিধান অনুযায়ী
অক্ষর বি. 1 বর্ণ,
এবার একটু অক্ষর নিয়ে ভাবা যাক :
এই যে আমরা রোজ লিখছি বা পড়ছি সেটা যেকোনো ভাষায়ই হোক না কেন প্রতিটি ভাষার একটা অক্ষর আছে ,আমরা বাংলা অক্ষর ও ইংরেজি অক্ষর জানি বুঝি লিখতে পারি ,কিন্ত চাইনিজ বা জাপানিজ অক্ষর বুঝতে পারি না পড়তেও পারি না ,তেমনি হায়ারোগ্লিফিকের বর্ণ বা অক্ষর গুলো আজও রিসার্চ করার বিষয় ,এই অক্ষর গুলো আসলে এক একটা ছবি যেমন "অ" এটাও একটা ছবি আমরা এটাকে "অ" উচ্চারণ করছি কিন্তুক যারা বাংলা জানে না পড়তে পারে না তাদের কাছে এটা একটা ছবি মাত্র ।
তাই বলা যায় কে অক্ষর আসলে ক্ষরণহীন ,একটি ছবি যার দ্বারা আমরা অনুভূতি ,ভাব প্রকাশকে একটা লিখিত রূপ দিতে পারি ।
অক্ষর শব্দ নিয়ে আজ যারা লিখলেন
"মানুষের চোখের সামনে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে অক্ষর!
'অ' টাই বেঁচে আছে মানুষেরই আগে, বাকি সব ক্ষর।"
- সুনন্দ মন্ডল
"অক্ষরের ঠোকাঠুকি তে জন্ম নিলেও নিতে পারে কাব্য
ভাবনার পোষাকে মিশে থাকে প্রবাদও ।।"
- অরূপ সরকার
"কথা ভুলে যাওয়া শ্রমিকের ফ্যাকাসে শব্দ ঠোঁটে-
বপন করলে অক্ষর-বীজ একদিন গল্প গাছ হয়ে ওঠে।"
- মেঘনা রায়
"অক্ষর : পরিচিত দেওয়াল লিপি ,
যতটুকু এই আমি,মৃত্যর আগে রোজ শিখি।"
- জ্যোতির্ময়
"অক্ষর সবসময় বুলি নয়
কখনো তা প্যারামিটারও হয়।
ঘটেছে কত ঘটনা অপ্রীতিকর
কথা শুনেনি বলে অক্ষরে অক্ষর।"
- জিয়াউর রহমান
উজান উপাধ্যায়
নিষিক্ত
স্নান করতে গেছি ভেবে ডুবে গেছি নিষিক্ত ডিম্বাণুর চোখে।
দাঁত খুলে দাঁড়িয়ে গেছি নর্দমায়, শেকড় উপড়ে ছয়ফুট উচ্চতার গাছ চুলে কলপ দিচ্ছে।
তুমি জানতে, আমি স্নানে। শহরের সব জল আমার শরীরে-
এইভাবে শুকিয়ে যাচ্ছি রোজ। আমাকে ভেঙেচুরে শহরের গাধাদের ঘর সংসার।
তোমার কোলেপিঠে চড়ে এইভাবে সন্দেহজনক হয়ে বেড়ে উঠছি। চাঁদ পর্যন্ত আমার পচাগলা হাত।
শব্দ জব্দ (২) : আজকের শব্দ " কথা"
শব্দ জব্দ : শব্দ জব্দ শুনলেই একটা লেখা মনে পড়ে যায় শব্দ নিয়ে যার শব্দ যাদু যার লেখায়
"শব্দ কল্প দ্রুম
সুকুমার রায়
ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রাম, শুনে লাগে খটকা-
ফুল ফোটে? তাই বল। আমি ভাবি পটকা!
শাঁই শাঁই পনপন, ভয়ে কান বন্ধ-
ওই বুঝি ছুটে যায় সে ফুলের গন্ধ?
হুড়মুড় ধুপধাপ- ওকি শুনি ভাই রে!
দেখছ্ না হিম পড়ে- যেও নাকো বাইরে।
চুপচুপ ঐ শোন! ঝুপঝাপ ঝ-পাস!
চাঁদ বুঝি ডুবে গেল?গব গব গবা-স।
খ্যাঁশ খ্যাঁশ ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ, রাত কাটে ওই রে!
দুড় দাড় চুরমার - ঘুম ভাঙে কইরে!
ঘরঘর ভন ভন ঘোরে কত চিন্তা!
কত মন নাচে শোন - ধেই ধেই ধিনতা!
ঠুং ঠাং ঢং ঢং, কত ব্যথা বাজে রে-
ফট ফট বুক ফাটে তাই মাঝে মাঝে রে!
হৈ হৈ মার মার 'বাপ বাপ' চিৎকার -
মালকোঁচা মারে বুঝি.? সরে পড়, এইবার।"
ফুল ফোটে? তাই বল। আমি ভাবি পটকা!
শাঁই শাঁই পনপন, ভয়ে কান বন্ধ-
ওই বুঝি ছুটে যায় সে ফুলের গন্ধ?
হুড়মুড় ধুপধাপ- ওকি শুনি ভাই রে!
দেখছ্ না হিম পড়ে- যেও নাকো বাইরে।
চুপচুপ ঐ শোন! ঝুপঝাপ ঝ-পাস!
চাঁদ বুঝি ডুবে গেল?গব গব গবা-স।
খ্যাঁশ খ্যাঁশ ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ, রাত কাটে ওই রে!
দুড় দাড় চুরমার - ঘুম ভাঙে কইরে!
ঘরঘর ভন ভন ঘোরে কত চিন্তা!
কত মন নাচে শোন - ধেই ধেই ধিনতা!
ঠুং ঠাং ঢং ঢং, কত ব্যথা বাজে রে-
ফট ফট বুক ফাটে তাই মাঝে মাঝে রে!
হৈ হৈ মার মার 'বাপ বাপ' চিৎকার -
মালকোঁচা মারে বুঝি.? সরে পড়, এইবার।"
তাই শব্দ নিয়ে কিছু কাজ করার চেষ্টায় আমাদের একটু শব্দ খোঁজার চেষ্টা ।
আজকের শব্দ "কথা"
কথা নিয়ে যারা লিখলেন
"স্পর্শ কর মন ছুঁয়ে দেখো
শিশির ভেজা ধান ,
এমনিই প্রাণ পাবে কথারা সব
এতো শব্দের আয়োজন বৃথাই আমার।"
- বর্ণা দত্ত
"হৃদয়ের চোরাকুঠুরিতে জমে আছে নানা কথা
বলি বলি করে বলা হয় না তো
জমে আছে হৃদয়ে সে ব্যাথা
থেকে থেকে হায়
চোখ ভরে যাই, বেড়ে ওঠে ব্যাথা টুকু
দীর্ঘনিঃশ্বাসের ছাতায়।"
- মান্নুজা খাতুন
"অনেক অপ্রিয় কথা যা সত্যও হয়,
অনেক সত্য সবসময় প্রিয় হয় না।
বাস্তবতার ভিড়ে অহেতুক কথাও গল্প বানায়,
সত্যি মিথ্যের আমদানি রপ্তানিতে মজেছে জমানা।"
- সুনন্দ মন্ডল
"ঠোঁট ঠোঁট রেখে বুনে চলি কথা
নীরবতার ভাষা সহজ নয় বোঝা।
কথার ভীড়ে হারিয়ে গেছে সবাই একলা একা,
কথার মুখোশ চাপিয়ে নিয়েই ঘরের পথে ফেরা।"
- অরূপ সরকার
"
কথার কথায় সময় কাটে
কাটে কথার ভালো লাগার ঘোর...
তোর দেওয়া সেই ইচ্ছেডানায়
কথা পায়না উড়ান দেওয়ার জোর।"
- মৌসুমী রায়
" কথার উপর বৃষ্টি পড়ে নৌকো আসে ঘাটে,
মুঠোর মাঝে গল্প উড়ে কান্না বিকোয় হাটে।
শহর জুড়ে জীবন পুড়ে ধূলোয় মাখা চিমনি,
তোমার কাছে চাইতে গিয়ে দাঁড়াই ঘুরে এমনি।"
- অরুণাভ নিয়োগী
"চোখে চোখে আর কতো দেখা হবে
প্রিয়তম লাজুকলতা
আর দেখা নয়, আজ ছুঁয়ে তোমাকে
বলবো মনের কথা।"
-শাহীন রায়হান
"কঠিন কথা সহজ করে বলতে সহজ কথা জটিল হয়ে যায়..."
-অনিমূল ইসলাম
"কথার পরেও কথা থাকে
কথায় কথায় কথা বাড়ে
সঠিক কথা অনেক সময়
হারায় নানান কথার ভারে"
- মোঃ গোলাম মোস্তফা লিটু
"জমে থাকে কথা প্রকাশিত শব্দ রূপে,
পুড়েছিলো রক্তিম পলাশ বিষাক্ত 'ধুপে'।"
- রৌনক হাজরা
"সজীব বলে অনর্গল
জড়ের কথা মনে,
প্রকৃতি বলে সবার কথা
ক'জন তা শোনে!"
-বৈশালী ব্যানার্জী
কথা : ফুরিয়ে যেতেই অভিমান জালিওয়ালবাদ
- জ্যোতির্ময়
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)