#মাদার তেরেসা একবার বলেছিলেন
" সবচাইতে ভয়ঙ্কর দারিদ্রতা হচ্ছে একাকিত্বের দারিদ্রতা এবং এইটা অনুভব করা যে আমাকে কেউ ভালোবাসেনা। "
“The most terrible poverty is loneliness, and the feeling of being unloved.”
সারাজীবন দরিদ্র,অসহায়,দুস্থমানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া মাদার তেরেসা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন বস্তুবাদী জগত বা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ডের মৌলিক চাহিদাগুলোর অভাব কাকে বলে।
টানা একমাস খেতে না পারা হাড় জিরজিরে শরীরের মৃতপ্রায় সোমালিয়ান বালক কিংবা ঘুর্ণিঝড়ে স্বজন হারানো মানুষের হাহাকার ,মানব জীবনের যত রকমের দারিদ্রতা যত রকমের কষ্ট আছে সেইটা মাদার তেরেসার চাইতে বেশী কেউ কাছ থেকে দেখেছিলেন কিনা জানিনা।
সেই মাদার তেরেসাও দিনের শেষে এসে বলেছিলেন
" দা গ্রেটেস্ট পোভার্টি ইজ দা লোনলিনেস। "
সবচাইতে বড় অভাব হৃদয়ের সঙ্গীর অভাব। সবচাইতে বড় যন্ত্রনা একা থাকার যন্ত্রনা।
কিন্তু সবচাইতে স্যাড ফ্যাক্ট হলো,দিনের শেষে আমরা সবাই একা।
আমি প্রায় সময় আমার লেখায় রবিন উইলিয়ামস নামক এক ভদ্রলোকের কথা বলি। এই ভদ্রলোক কে আপনারা জুমানজি হিসেবেই চিনেন। আজীবন মানুষ কে হাসিয়ে গেছেন। বিভিন্ন রোল প্লে করে। গুড উইল হান্টিং এ ম্যাট ডেমনের থেরাপিস্ট হিসেবে ডেমন কে ডিপ্রেশন থেকে বেঁচে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। কিন্তু সেই রবিন উইলিয়ামস কে অনুপ্রেরণা দেয়ার কেউ ছিলনা।
একদিন তার লাশ পাওয়া গেলো বেল্টে ঝুলন্ত অবস্থায়।
আজীবন মানুষ কে হাসানো মানুষটা নিজের বলা সেই বিখ্যাত উক্তিটিকেই প্রমাণ করে গেলেন।
" এমন অনেক মানুষ থাকে যারা মানুষ কে হাসায়, সেসব মানুষ ভিতর থেকে অনেক একলা। তারা অন্যকে হাসায় কারণ একা থাকার যন্ত্রনা কি সেটা তারা জানে। "
রবিন উইলিয়ামসের টাকা পয়সার অভাব ছিলনা। লেজেন্ডারি এক্টর্। কিন্তু রবিন উইলিয়ামস একা ছিলেন। অনেক বড় একটা হোল ছিল তার বুকের ভেতর্। পৃথিবীর সব টাকা পয়সা দিয়ে এই হোলটা ভরাট করা যায়না।
এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ নিজস্ব অবস্থান সাপেক্ষে তিনটা প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে বাস করে।
রবিন উইলিয়ামসদের মত লেজেন্ডদের আত্মহত্যা আসলে এইটা প্রমাণ করে ,টাকা পয়সা যশ খ্যাতি এইসব একটা পর্যায় পর্যন্ত কোন মানে রাখে।
টাকা ,পয়সা ,নাম খ্যাতি এইসবের দৌড় বস্তুবাদী জগত বা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ড পর্যন্ত।
আবার পরিবার ,আপনজন এরা থাকে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আসলেই কি শেষ পর্যন্ত। না। রবিন উইলিয়ামসেরও সন্তান ,স্ত্রী ছিল। তারা যথেষ্ট ভালোবাসত তাকে। সাপোর্ট দিত। কিন্তু পরিবার ,আপনজন , আত্মীয় স্বজন ,বন্ধু বান্ধব ,প্রিয়তম, প্রিয়তমা এরা একজিস্ট করে মানুষের সামাজিক জীবন বা সোশাল ওয়ার্ল্ডে। এটা মানুষের দ্বিতীয় জগত যেখানে সে প্যারালালি বাস করে।
আর একটা জগত থাকে। রাত বারোটা পেরোনার পর সেই জগতে মানুষ ঢুকে। রাতের খাবার খাওয়ার পর ছেলে মেয়ে দের কে গুডনাইট জানিয়ে ,বিছানায় স্ত্রী কে আদর করে শেষ একটা চুমু খেয়ে বা ফোনে প্রিয়তম কে ঘুমিয়ে যেও বলে প্রতিটা মানুষ পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে সেই জগতে ঢুকে পড়ে।
আমাদের বাস করা সেই তৃতীয় জগতের নাম হলো স্পিরিচুয়াল ওয়ার্ল্ড। আধ্যাত্বিক জগত। সেই জগতে আমরা সবাই একা। এটা শুধু নিজের একান্তই নিজের জগত।
সেই জগতে আমরা প্রত্যেকেই মস্তিষ্কের নিওরনগুলোর সাথে হিসেব কষতে বসি।
অদ্ভুত সব প্রশ্ন রাখি নিজের সামনেই।
আমি কে?
কি আমার পরিচয়?
শুধু দুই বেলা ভাত খাওয়া আর দু তিন বার রিপ্রোডাকশন করাই কি আমার কাজ? প্রকৃতির সাইকেলে আমার ভূমিকা কি শুধু একটা রিপ্রোক্টাটিভ এলিমেন্ট হিসেবে? গাছকে কার্বন ডাই অক্সাইড দান করাই কি আমার কাজ?
আচ্ছা আমি কি সুখী? আচ্ছা সুখী হওয়ার ডেফিনেশন কি? আমার যদি কষ্ট পেতে ভালো লাগে তাহলে কি কষ্টই আমার সুখ নয়? জীবন এত আপেক্ষিক কেন?
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই নিজের আত্মার কাছে নিজে এইসব প্রশ্ন রেখে উত্তরের অপেক্ষায় ঘুমাতে যাই। আমরা ভাল থাকি। কিন্তু কেউ কেউ প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেয়ে খেপে যায়। নিজের মন কে প্রশ্ন যেতে থাকে। আমার অবস্থানের মানে টা কি? উত্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। হাল ছেড়ে দেয়। একদিন এই বোবা পৃথিবীর উপর প্রচন্ড অভিমান করে দুম করে মরে যায়। বুম ,দা শো ইজ ওভার্।
কিন্তু এই অশরিরী বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে লুকোন থাকে একমাত্র সত্যটি।
সারাদিন সন্তান ,বন্ধু ,ভাই বোন , এমপ্লয়ি ,স্বামী স্ত্রী ,বাবা মা হিসেবে রোল প্লে করে ক্লান্ত হয়ে দিনের শেষে রাত বারোটার পর আমরা সবাই একা। উই আর অল এলোন। দিস ইজ দা ওনলি ইউনিভার্সাল ট্রুথ!