নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অক্ষয় কুমার সামন্ত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
অক্ষয় কুমার সামন্ত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

অক্ষয় কুমার সামন্ত





কবি হতে পারো নি 




এখনও যদি মাসিক কিছু রোজগারের ভেতর
নিজেকে হাঁটা চলা করতে দ্যাখো
মাথার মধ্যে চলা কিছু হিসেব নিকেশ
তোমাকে বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়
তাহলে বলবো দারিদ্রতা দোষী নয়, তুমিই দোষী
তুমি কবি হতে পারো নি --
কবিত্বের মধ্যে কোন দারিদ্রতা নেই।

এখনও যদি প্রতিবাদী কথায়
তোমার কলম চুম্বন না করে
সমাজ ফোটাতে তুলি না ধরো
বুলেটের সামনে নিজেকে ছুঁড়ে দিয়ে
বলতে না পারোঃ এই ধরো কবিতার পাতা
আমাকে মেরে ফেলার আগে আগুন ধরাও
আর তার উত্তাপে বাষ্প হোক
তোমাদের রক্তে মিশে থাকা সব সাধ --
তাহলে বলবো তুমি কবি হতে পারো নি
কবিত্বের মধ্যে কোন ভয় নেই।

অক্ষয় কুমার সামন্ত





অসুখ
******



যেমন করে নদীর ব্যথার কথা
ঝড়ের রাতে বুঝতে পারে নদীর পাড়
তেমন করে অসুখ সহসা এসে
মৃত্যুর পথ চিনিয়ে দিয়ে গেছে।

অবহেলার সিঁড়িতে কতটুকু আর ওঠা যায়
কাজগুলোকে জমিয়ে জমিয়ে স্তূপের নীচে
চাপা পড়ে গেছি - শব্দ খুঁজি অক্সিজেনে
আমাকে থামিয়ে শেষ চিঠি লেখে কলম
তার না লেখা ব্যথার কালিতে।

অগোছালো সময় ঘড়ির কাঁটাকে
অবজ্ঞা করে হারিয়ে ফেলে গতি 
আর তার পিছনে আমি প্রবাহহীন --
বিছানায় শুয়ে শুয়ে মুমুর্ষু চোখে
ব্যর্থতাকে ফিরে ফিরে যোগ করি;
আর কি এক মোহে একটু ভালোবাসার জন্যে
গায়ে লেপ মুড়ি দিয়ে
শীতের রাতে নক্ষত্রের কপালে
আমার মৃত্যুচিহ্ন আঁকি।

অক্ষয় কুমার সামন্ত






মৎস্যকন্যা
********* 



ঠিক করে উঠতে পারছিল না কিভাবে কথা বলবে। আসা-যাওয়ার পথেই আলাপ। খুব স্মার্ট মেয়ে মধুরীমা। তার দামী দামী স্কার্ট দেখে অল্পেশের কথা বলার সাহস হারিয়ে যেত।
খুব সাদা মাটা অল্পেশ। ধুলো কাদা মেখে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে তার বড় হওয়া। ছোটবেলা থেকে তার পড়াশোনায় ঝোঁক ছিল। তাই দারিদ্র্যকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। সরকারি স্কলারশিপ পেয়ে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়। কলেজে 1st সেমেস্টারে সে রেজাল্টও ভালো করে।  বাসে দেখা হলে কথা হতো। তারপর কলেজমোড় থেকে দশ মিনিটের হাঁটা পথে তার সঙ্গী হওয়ার চেষ্টা করতো মধুরীমা।
অল্পেশের ছাতা হারানোর ব্যামো ছিল খুব। প্রত্যেক বছর মা একটা করে ছাতা দিতেন। কিন্তু কতোবার যে চায়ের দোকানে ছাতা ফেলে আনমনে হাঁটতে শুরু করেছে তার হিসেব নেই। তাই তার কাছে ছাতা না থাকাটাই স্বাভাবিক। বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় কলেজমোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতো সে। কিন্তু মধুরীমা তাকে ছাতার তলায় ডেকে কথা বলতে বলতে কলেজে যেতো। গ্রীষ্মের রোদেও সে ছাতা নিয়ে অল্পেশের অপেক্ষায় থাকতো। ধীরে ধীরে কথাগুলো গভীর হয়। তাদের কথার সুরে হাওয়া বৃষ্টিকে ডেকে আনতো। অল্পেশ বুঝতেই পারে নি কখন সে তার মনের গভীরে মধুরীমার জন্য আসন পেতে ফেলেছে। অনেককিছু বলবে ভাবে কিন্তু নিজের ছেলেবেলা মনে এলে সব ইচ্ছেগুলো আহত হয়। কথায় কথায় একদিন মধুরীমা বলেঃ আমি শুধু ছাতা হাতে নয়, সারাজীবন তোমার ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতে চাই।
অল্পেশের ভয় হয়। চোখের সামনে দেখতে পায় কতো সুন্দর প্রেমগুলো বিয়ের পর কেমন যেন হুড়মুড়িয়ে পড়ে। কথা রাখার থালায় অভাব পড়লেই ওঠে তোলপাড়।
সেটা ঝড় হয়ে নিভিয়ে দেয় ছোট্ট সংসারের ছোট্ট উনোনকেও। সাজানো কল্পনার ডানা হঠাৎ যেন বাস্তবের ঝড়ে পথ হারিয়ে ফেলে। একসঙ্গে বয়ে যাওয়া দুটো জীবন যেন উবু হয়ে বসে থাকা সারি সারি প্রস্তরখণ্ডে ধাক্কা খেয়ে নদীর মতো দুদিকে বইতে থাকে। রাতের বিছানাগুলো যেন দম্ বন্ধ হওয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের গুমোটে ঘন্টার কাঁটার একটু হেঁটে চলা। এইসব ভাবতে ভাবতে তার ইচ্ছার রং গুলো যেন মরা স্রোতে ভাসতে ভাসতে জল-কাদা-বালুকণায় ডুবে যায়।
সেদিন মধুরীমা কলেজে আসে নি। সল্টলেক থেকে একা একা ফিরছিল অল্পেশ। যাদবপুরে নেমে একা একা হাঁটতে হাঁটতে ঝিলপাড়ের কাছে গিয়ে বসল। তার চঞ্চল মনের ভাবনাগুলো স্থির হতে হতে সে দেখতে পেল মাছগুলো শ্বাস নিতে নিতে জলের ওপর ভাসতে শুরু করছে। চিন্তার ঘনঘটায় ক্লান্ত চশমার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেল মধুরীমা যেন মাছ হয়ে তার সংগে কথা বলতে ভেসে উঠছে। সেও বিড়বিড় করে একান্তে তার সংগে কথায় মগ্ন হলোঃ

- যদি তোমাকে সাগর থেকে তুলে আনি?
আমার এ ঘরের উষ্ণ মরুতে থাকবে কেমন করে?

- যদি সত্যিকারে চোখ তুলে তাকাও
তোমার তারায় খুঁজে নেব জল- জীবনের সম্বল।

- আমার সামান্য জীবন- পায়ে আটকায় পথ
টিউশানের টাকা চলে যায় মেসের খরচায়
তোমাকে রাখবো কোথায় ?

- ভালোবাসার ভিক্ষা চেয়ে চেয়ে যে আগুন ওঠে
মনের ভেতর তারও আঁচ লাগে আত্মায়
তুমি শুধু রেখো হৃদয়ের বারান্দায়।

- যদি আর না ফেরাই চোখ তোমার চোখে?
- আমার চোখের কোনে খুঁজে নেব জল
আমার ভেসে থাকার আজীবন সম্বল!...