নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

পায়েল খাঁড়া লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পায়েল খাঁড়া লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

তারা শুরু ছেড়ে চলে যায়,হারায় না কোনোদিন



কবি পায়েল খাঁড়া
জন্ম :17 জানুয়ারি 1993
ইহলোক ত্যাগ: 08 ই মার্চ,2019

কি লিখবো সে ভাষা আজ আমার নেই ,কয়েকদিন আগে দিদি বলেছিল শরীর খারাপ ,গতকাল রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে যখন মেসেঞ্জার অন করেছি তখনই শুনতে পেলাম দিদি আর নেই ,প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিলো না ,তারপর সত্যি সত্যিই সে নেই ।

নিকোটিন শুরুর প্রথম থেকেই দিদি সব সময় পাশে ছিল ,নিকোটিন যখন প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখনও সাহস দিয়ে বলেছিল " এগিয়ে যা ভাই ,সাথে আছি "
কিন্তু  কই আজ সে ?


"রক্তে ভিজছে মাটির পাঁজর, শিরায় বিষ্ফোরক
শতাব্দী, তোকে পেয়েছে এ কোন মারণ খেলার ঝোঁক।"


সত্যিই এ কোন মারণ ঝোঁক ,একে একে সবাই কেমন চলে যাচ্ছে ছেড়ে ।

তাই আজকের নিকোটিন এর" সকাল বেলা "
কবি পায়েল খাঁড়া কে উৎসর্গ করলাম ।


- জ্যোতির্ময় 

পায়েল খাঁড়া








দেওয়ালি




আলোয় আলোয় ঝলমল করছে মন্ডপ।বৈদ্যুতিন সজ্জা মাকড়সার জালের মতো শাখা ছড়িয়েছে রাতের কালচে দেওয়াল জুড়ে।চারপাশে পোড়া বারুদের গন্ধ আর থেকে থেকে শব্দ বাজির বিকট উল্লাস বুঝিয়ে দিচ্ছে আজটা অন্য পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা।
অমাবস্যাটা অবশ্য পুরোদস্তুর লোপাট হয়নি।তার আপাতত ঠিকানা বড় রাস্তার উল্টো দিকে ফুটপাতের একচিলতে উদ্বাস্তু সংসারটায়।একটা টিমটিমে লুন্ঠনের আলো কোনো রকমে পাল্লা দিচ্ছে মধ্য কার্তিকের ঠান্ডার সাথে।তার বিষন্ন আভা একটা ফ্যাকাসে প্রশ্নচিহ্নএর মতো লেপে আছে শীর্ণ কচি মুখটায়।
"মা, আমাদের দেয়ালি কবে আসবে?"
"আসবে রে আসবে, একদিন ঠিক দেয়ালি আসবে --দেখিস; আর সেদিন চারদিক শুধ আলো আর আলো!"
সহসা একজোড়া বেপরোয়া তীক্ষ্ণ আলোয় ওদের চোখ ধাঁধিয়ে গেল।সেদিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অস্ফুটে বলে উঠল মেয়েটা-- "মা, ওই দেখ_দেয়ালি_আসছে....."
মায়ের আর্তনাদ হারিয়ে গেল উৎসব মুখর শহরের শব্দের ভিড়ে।


পায়েল খাঁড়া




বোধন




ভোরের শঙ্খধ্বনির সাথেই বোধনের পুজা শুরু হল।মন্ডপের সামনেই বেলতলায় পুজার বেদি।তারই সামনে নৈবেদ্য  সাজিয়ে পুরোহিত পুজায় বসেছেন।চারপাশে ঘিরে রয়েছে পাড়ার মেয়ে-বউরা...একটু পরেই ষষ্ঠীর অঞ্জলি। পাড়ার সবচেয়ে বড় পুজো নবারুন সঙ্ঘের শারোদোৎসব এবারে দশ বছরে পা দিল।আলোর বাহার আর থিমের রকমারিতে প্রতি বছরই এরা নতুন চমক দেয়।বিগত ন-বছরে এই এলাকার সেরা পুজোর পুরস্কার প্রতিবারই এরাই জিতে এসেছে।প্রায় পনের-বিশ লাখ টাকার খরচা হয় প্রতিবছর......এবছর বাজেট দাঁড়িয়েছিল পুরো পঁচিশলাখ। শোভা আর গুঞ্জন এবছর পুজোকমিটির সেক্রেটারি।ওরা ঠিক করেছিল এবছর শারদিয়া আয়োজনে এমন কিছু করবে যাতে শুধু এই পাড়া নয় সারা শহর কখনও ভুলতে না পারে। সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে ওদের এবারকার শারোদোৎসব। আর হলও তাই......অঙ্গীকারটা ওদের একই রইল শুধু পালটে গেল আঙ্গিকটা।
     হুল্লোড় আর শোরগোলের মধ্যে দিয়ে কখন যেন দিনটা কেটে গেল।বিদায়ি সূর্য মিশে গেল পশ্চিমের লালে। তিলোত্তমা কলকাতা ভেসে যাচ্ছে আলোর বন্যায়।মন্ডপে মন্ডপে উপছে পড়ছে দর্শকের ভিড়।আজ ব্যাতিক্রম শুধুই নবারুন সঙ্ঘ।এখানে কোন বাহ্যিক চাকচিক্য নেই।অতি সাদামাটা ঘরোয়া মন্ডপ__সাবেকি সাজের প্রতিমাপ্রয়োজন মতই আলো আর বাজনার আয়োজন।আর আছে তাদের আন্তরিক নিষ্ঠা
শোভা আর অখিল মন্ডপের বাইরে দাঁড়িয়ে।ভিতরে ও বাইরে পাড়ার লোকেদের ভিড়।রাস্তার বাঁক ঘুরে একটা গাড়ি এসে থামল ওদের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে এল মনোরমা,তার সাথে আরও দুজন লোক।মনোরমা শোভার সামনে এসে দাঁড়ালো।ওর চোখে কৃতঞ্জতা মাখা দৃষ্টি।
     প্রায় মাসচারেক আগে হটাৎই একদিন মনোরমার সাথে এদের দেখা হয় কলেজ স্কোয়ারে।মনোরমা শোভার কলেজের বন্ধু।আর সেখানেই ওরা আজকের এই ঝাঁ-চকচকে আধুনিক সমাজের এক নিষ্ঠুর মানসিকতার সাথে ব্যাক্তিগতভাবে পরিচিত হয় মনোরমার কাছে।মনোরমা উত্তর কলকাতায় একটা বিদ্ধাশ্রমের দেখাশোনা করে।সমাজের বয়ঃজ্যেষ্ঠ মা-বাবা,যারা কোন একদিন নিজের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা,উন্নত ভবিষ্যত আর সুন্দর সামাজিক জীবন দেওয়ার জন্য প্রানপনে খেটেছেন অথচ আজ তাদের শেষবেলায় সেবা তো দূরে থাক দুবেলা খেতে দেওয়াটুকুও সেই সন্তানদের কাছে আতিশয্য বলে মনে হয়......সেই সব বৃদ্ধ মানুষদের মাথা গোঁজার এমনই এক ঠাই ‘আপন ঘর বৃদ্ধাশ্রম।’ মনোরমা বলে ওই বৃদ্ধাশ্রমের জায়গাটা নাকি দান করেছিলেন কোন এক কোম্পানির মালিক কিন্তু তাঁর বর্তমান উত্তরাধিকারী গৌতম দত্ত ওই জমির উপর ক্লেইম করছেন।ছ-মাসের মধ্যে ৪০লাখ টাকা না দিতে পারলে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। ১৬লাখ টাকার ব্যবস্থা কোন মতে হয়েছে কিন্তু এখনও প্রয়োজন আরও ২৪লাখ।কোথায় পাবে অত টাকা?
সেদিন ফিরে এসে শোভা সংঘের সবাইকে শোনায় ঘটনাটা।পরেরদিন সকালে ওরা সবাই যায় ‘আপন ঘর বৃদ্ধাশ্রম’এ।ব্যাপারটা ভীষনভাবে দাগ কাটে ওদের মনে। অত গুলো বয়স্ক মানুষ আরও একবার ঘরছাড়া হবেন শুধুমাত্র মানুষের লোভ আর অমানবিকতার দায়! কিছুতেই নয়।ওরা ঠিক করে পুজোর বাজেটের ২৪লাখ টাকা ওরা দান করবে ‘আপন ঘরের’ জন্য।একটা বছর নাই বা হল ওদের মন্ডপের জাঁকজমক,নাই বা হল চোখধাঁধানো আলোকসজ্জা।মাটির প্রতিমার বদলে এবার ওরা রক্ত-মাংসে গড়া মাতৃমুর্তিদেরই শ্রদ্ধার্ঘ অর্পন করবে।
গুঞ্জন এগিয়ে এল শোভা আর অখি্লের পাশে।সঙ্ঘের বাকি সদস্যরাও এসে দাঁড়ালো। ২৪লাখ টাকার একটা চেক নবারুন সঙ্ঘের তরফ থেকে তুলে দিল মনোরমার হাতে।কাঠ-পাথরে তৈরি নকল মন্ডপের নয় আজ ওরা বোধন করল প্রকৃত অর্থেই একটা মন্দিরের যেখানে জীবন্ত ইশ্বরের প্রতিমুর্তিরা থাকেন।
মায়ের সন্ধ্যা-আরতি চলছে।গুঞ্জন আশ্চর্য চোখে শোভার কাঁধে হাত রেখে ইশারা করে দেখাল।শোভা তাকিয়ে দেখল মায়ের মুখের দিকে।মায়ের চোখদুটো যেন আনন্দে ঝলমল করছে।আজ বাজারের কেনা আলোয় নয় মঙ্গলময়ীর মঙ্গল আলোকে ভরে উঠেছে ওদের মন্ডপ।

পায়েল খাঁড়া





আশ্রয়
********


সিগারেটটায় একটা লম্বা টান দিয়ে ছাদের কার্নিশে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো কাঞ্চন। পশ্চিম আকাশটা কালো করে আছে, হাওয়ায় শোঁ-শোঁ শব্দ—এক্ষুনি তেড়ে বৃষ্টি নামবে!
কালো আকাশের বুকে বিদ্যুৎএর কয়েকটা ধারালো আঁকিবুঁকি কেটে গেল নিমেষে আর সাথে সাথেই বাজ পড়ার কড়কড় শব্দ।ছেলেবেলায় বাজ পড়লেই কাঞ্চন ছুট্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরত তার মা’কে।বাজের শব্দে বড় ভয় পেত সে।ভয় সে এখনও পায়; শুধু তেমন করে আঁকড়ে ধরার মত কাউকে আর কাছে পায় না, যার বুকে মুখ গুঁজে পৃথিবীর সমস্ত ভয় থেকে রেয়াত পাওয়া যায়! পাওয়া যায় একটা তুমুল নিরাপত্তার আশ্বাস।
“আহ, তুমি না পুরুষ মানুষ!” সুচেতার কথাগুলো বেজে ওঠে কাঞ্চনের কানে।সত্যিই তো, সে যে পুরুষ মানুষ—বাড়ির মাথা, পরিবারের অভিভাবক;   তার যেঅমনি  কথায় কথায় অত উতলা হতে নেই।মেয়েছেলেদের মতো অত ফ্যাচফ্যাচ ক’রে কাঁদতে নেই, কষ্ট পেলে বলতে নেই, ভয় পেলে দেখাতে নেই—এতে না’কি সোসাইটিতে লোকের কাছে নিজের ওজন থাকে না, সম্মানহানি থুড়ি পৌরুষহানি ঘটে!” নিজের স্ত্রী’র মানসিকতার সাথে এখনও ঠিকমতো নিজেকে রিলেট করতে পারে কাঞ্চন।কেমন  যেন হাঁপিয়ে ওঠে সে। “কোন শালা বলে যে ‘নেই’গুলো শুধু মেয়েদের বেলাতেই খাটে; ছেলেদের ক্ষেত্রেও তো তার লিস্টটা নেহাত ছোট নয়...”, নিজের মনেই বিড়বিড় ক’রতে থাকে কাঞ্চন।
দেখতে দেখতে দু-চার ফোঁটা করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল সাথে ঝোড়ো হাওয়া।সামনের কলমি আম গাছটার ডালে একটা ডাকপাখির বাসা; বৃষ্টি আর ঝড়ের ঝাপট থেকে বাঁচতে মায়ের ডানার মধ্যেই ঢুকে গুটিসুটি মেরে বসে আছে দুটো বাচ্চা।মায়ের বুকের উষ্ণ ওমে কত নিরাপদ বোধ করছে ওরা।একটা তৃপ্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনটা সহসা ভারী হয়ে ওঠে—হায় পোড়া কপাল, তার যে মা’ও নেই!
বিয়ের তিন বছরের মধ্যেই মা’কে হারিয়েছিল কাঞ্চন।আর থাকলেই বা এমন কী উদ্ধার করে ফেলত সে—ছেলে হয়ে সন্তানের কোন কর্তব্যটা সে পালন করতে পেরেছে! বিয়ের দু’সপ্তাহ পরই শ্বশুর মশায়ের কোম্পানিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পোষ্ট নিয়ে কোম্পানির ফ্ল্যাটে উঠে আসতে হয়েছিল তাকে।মা’কে ভীষন মিস করত সে; মনে হত ছুটে চলে যায় মায়ের কাছে, তাঁর হাতের সেই আদর, কপালে ভাঁজ ফেলা চিন্তার রেখা—যেখানে সে আজও সেই ছোট্ট খোকা, যেখানে পুরুষ হয়ে ওঠার কঠিনতা জটিলতাগুলো নেই।একটা সহজ জীবন, কিন্তু ফিরতে চাইলেই সুচেতা অশান্তি করত তাই একরকম বাধ্য হয়েই...  
আরেক ঝলক তড়িৎ রেখা চিরে গেল মেঘলা ফরাস।আবার গর্জে উঠল আকাশ।একটা অস্পষ্ট শিহরন খেলে গেল কাঞ্চনের শরীরে।ছেলেবেলার সেই অনুভূতিটা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনা সে।দীর্ঘ সতের বছরের দৃঢ় সাংসারিকতা পেরিয়ে আসা তার ঋজু শিরদাঁড়াটা সবার অলক্ষ্যে আজও নুয়ে পড়ে এক বালখিল্য ভীতির কাছে।
“বাপি...”, কুঁকড়ানো হাতটার উপর একটা নরম স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে দেখল কাঞ্চন, পাশে কখন এসে দাঁড়িয়েছে তার তের বছরের মেয়ে কেতকী।
“মেঘ ডাকলে তুমি ভয় পাও তাই না বাপি! আমি জানি, মামনি রাগ করে বলেই তুমি...
বাট ডোন্ট ওয়ারি, আমি তো আছি।তুমি আমার হাত চেপে ধরো, দেখবে আর একটুও ভয় করছে না।” বিহ্বল দৃষ্টিতে কেতকীর হাসিমাখা মুখের দিকে তাকালো কাঞ্চন তারপর পরম আদরে মেয়েকে বুকে টেনে নিল; এই পৃথিবী থেকে আসলে হয়ত কিছুই হারায় না—আজ অনেকগুলো বছর পর, সেই মায়ের গায়ের গন্ধ, সেই নিবিড় আশ্রয়ের অনুভূতি, আর মায়ের সেই ডাকনাম ‘কেতকী’।

পায়েল খাঁড়া*আশ্রয়*
সিগারেটটায় একটা লম্বা টান দিয়ে ছাদের কার্নিশে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো কাঞ্চন। পশ্চিম আকাশটা কালো করে আছে, হাওয়ায় শোঁ-শোঁ শব্দ—এক্ষুনি তেড়ে বৃষ্টি নামবে!
কালো আকাশের বুকে বিদ্যুৎএর কয়েকটা ধারালো আঁকিবুঁকি কেটে গেল নিমেষে আর সাথে সাথেই বাজ পড়ার কড়কড় শব্দ।ছেলেবেলায় বাজ পড়লেই কাঞ্চন ছুট্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরত তার মা’কে।বাজের শব্দে বড় ভয় পেত সে।ভয় সে এখনও পায়; শুধু তেমন করে আঁকড়ে ধরার মত কাউকে আর কাছে পায় না, যার বুকে মুখ গুঁজে পৃথিবীর সমস্ত ভয় থেকে রেয়াত পাওয়া যায়! পাওয়া যায় একটা তুমুল নিরাপত্তার আশ্বাস।
“আহ, তুমি না পুরুষ মানুষ!” সুচেতার কথাগুলো বেজে ওঠে কাঞ্চনের কানে।সত্যিই তো, সে যে পুরুষ মানুষ—বাড়ির মাথা, পরিবারের অভিভাবক;   তার যেঅমনি  কথায় কথায় অত উতলা হতে নেই।মেয়েছেলেদের মতো অত ফ্যাচফ্যাচ ক’রে কাঁদতে নেই, কষ্ট পেলে বলতে নেই, ভয় পেলে দেখাতে নেই—এতে না’কি সোসাইটিতে লোকের কাছে নিজের ওজন থাকে না, সম্মানহানি থুড়ি পৌরুষহানি ঘটে!” নিজের স্ত্রী’র মানসিকতার সাথে এখনও ঠিকমতো নিজেকে রিলেট করতে পারে কাঞ্চন।কেমন  যেন হাঁপিয়ে ওঠে সে। “কোন শালা বলে যে ‘নেই’গুলো শুধু মেয়েদের বেলাতেই খাটে; ছেলেদের ক্ষেত্রেও তো তার লিস্টটা নেহাত ছোট নয়...”, নিজের মনেই বিড়বিড় ক’রতে থাকে কাঞ্চন।
দেখতে দেখতে দু-চার ফোঁটা করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল সাথে ঝোড়ো হাওয়া।সামনের কলমি আম গাছটার ডালে একটা ডাকপাখির বাসা; বৃষ্টি আর ঝড়ের ঝাপট থেকে বাঁচতে মায়ের ডানার মধ্যেই ঢুকে গুটিসুটি মেরে বসে আছে দুটো বাচ্চা।মায়ের বুকের উষ্ণ ওমে কত নিরাপদ বোধ করছে ওরা।একটা তৃপ্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনটা সহসা ভারী হয়ে ওঠে—হায় পোড়া কপাল, তার যে মা’ও নেই!
বিয়ের তিন বছরের মধ্যেই মা’কে হারিয়েছিল কাঞ্চন।আর থাকলেই বা এমন কী উদ্ধার করে ফেলত সে—ছেলে হয়ে সন্তানের কোন কর্তব্যটা সে পালন করতে পেরেছে! বিয়ের দু’সপ্তাহ পরই শ্বশুর মশায়ের কোম্পানিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পোষ্ট নিয়ে কোম্পানির ফ্ল্যাটে উঠে আসতে হয়েছিল তাকে।মা’কে ভীষন মিস করত সে; মনে হত ছুটে চলে যায় মায়ের কাছে, তাঁর হাতের সেই আদর, কপালে ভাঁজ ফেলা চিন্তার রেখা—যেখানে সে আজও সেই ছোট্ট খোকা, যেখানে পুরুষ হয়ে ওঠার কঠিনতা জটিলতাগুলো নেই।একটা সহজ জীবন, কিন্তু ফিরতে চাইলেই সুচেতা অশান্তি করত তাই একরকম বাধ্য হয়েই...  
আরেক ঝলক তড়িৎ রেখা চিরে গেল মেঘলা ফরাস।আবার গর্জে উঠল আকাশ।একটা অস্পষ্ট শিহরন খেলে গেল কাঞ্চনের শরীরে।ছেলেবেলার সেই অনুভূতিটা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনা সে।দীর্ঘ সতের বছরের দৃঢ় সাংসারিকতা পেরিয়ে আসা তার ঋজু শিরদাঁড়াটা সবার অলক্ষ্যে আজও নুয়ে পড়ে এক বালখিল্য ভীতির কাছে।
“বাপি...”, কুঁকড়ানো হাতটার উপর একটা নরম স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে দেখল কাঞ্চন, পাশে কখন এসে দাঁড়িয়েছে তার তের বছরের মেয়ে কেতকী।
“মেঘ ডাকলে তুমি ভয় পাও তাই না বাপি! আমি জানি, মামনি রাগ করে বলেই তুমি...
বাট ডোন্ট ওয়ারি, আমি তো আছি।তুমি আমার হাত চেপে ধরো, দেখবে আর একটুও ভয় করছে না।” বিহ্বল দৃষ্টিতে কেতকীর হাসিমাখা মুখের দিকে তাকালো কাঞ্চন তারপর পরম আদরে মেয়েকে বুকে টেনে নিল; এই পৃথিবী থেকে আসলে হয়ত কিছুই হারায় না—আজ অনেকগুলো বছর পর, সেই মায়ের গায়ের গন্ধ, সেই নিবিড় আশ্রয়ের অনুভূতি, আর মায়ের সেই ডাকনাম ‘কেতকী’।