********
কাশফুলে ভরে গেছে মাঠ, নৈঋত হাওয়া ছুঁয়ে দিলেই রেনু ছড়িয়ে পড়েছে আহ্লাদী কিশোরীর হাসির মত।
ছুঁয়ে দেখিনি আজও, শহরে ফোটে না কেন কাশ? বন্ধু বলেছিল কোন এক শারদপ্রাতে উপহার দেবে, প্রিয় কাশফুল। সে এখন গ্রাম ছাড়িয়ে, জন্মভূমি ছাড়িয়ে, মাতৃভূমি ছাড়িয়ে অনেক অনেক দূর -- বন্ধু , তোর ওখানে কাশফুল ফোটে? কাশফুল তোর এন আর আই বুকে আগমনী বার্তা পাঠায়? আমার প্রতিটি শরৎ-সকাল কল্পনার কাশফুল ছুঁয়ে, স্পর্শসুখে ভেসে যায়...
নীলাকাশ ক্যানভাস জুড়ে জমাটবদ্ধ মেঘ কখনও বিশাল পুরুষের অবয়বে ঘনীভূত, কখনও কুচি-কুচি শুভ্র মেঘ দুরন্ত বালিকার চঞ্চল রূপে নৃত্যরত, কখনও বা বিষাদ ঘনিয়ে আসে কালো মেঘের ছায়ায়... যেন দক্ষ কোন শিল্পীর আশ্চর্য ব্রাশিং এ চিত্রিত মোহময় শারদ আকাশ ।
দ্যাখো দ্যাখো! কি উজ্জ্বল রঙে পাপড়ি মেলছে পদ্মকুঁড়ি ...প্রতিটি পাপড়িতে দৃঢ় প্রত্যয়, তুমি আসছো হে সারদ লক্ষ্মী! কৃষ্ণের মোহন বাঁশির সুর মন্দ্রিত
আকাশে-বাতাসে।
নবীন শিশির ছুঁয়ে ফুটে ওঠা শিউলির সুগন্ধে বিহ্বল চরাচর , সোনারোদ গায় মেখে ঝরে পড়ে, শিউলি কুড়োনো আঁচল হাওয়ায় ছড়িয়ে দেয় আগমনীসুর। সেই মিহি সুরের মূর্ছনায় ভেসে যেতে যেতে উমা, ভেসে ওঠে তোর প্রিয় মুখ -- অধীর ব্যাকুল জননী হৃদয় মিনতি জানায় গিরিরাজে--
"যাও যাও গিরি আনিতে গৌরী উমা নাকি বড় কেঁদেছে/ দেখেছি স্বপন নারদ বচন
উমা মা মা বলে কেঁদেছে ।"
ব্রহ্মা, বিষ্ণু,মহেশ্বর, ইন্দ্র আরো বহু দেবতার তেজরশ্মি হিমালয় এর সুউচ্চ শিখরে অবস্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সম্মিলিত হয়ে মহিষাসুর বধের জন্য যে দশপ্রহরনধারিনী দেবী দুর্গার সৃষ্টি সে হয়ে উঠল পৃথ্বীকন্যা।
তাই তো উমা আসবে বলে মাঠে ঘাটে কাশের আয়োজন, আকাশ সেজে ওঠে উজ্জ্বল নীল রঙে, দীঘি ভরে ওঠে পদ্মফুলে। বকুল কুড়োনো হাত শিউলি কুড়িয়ে মালা গাঁথে। সে আসবে বলে নবীন ধানের মঞ্জুরী আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। নতুন পোশাকে, দেওয়ালে নতুন রঙে, পর্দায় ছড়িয়ে পড়ে আগমনী সুর -- মায়ের অবুঝ মন, নিজেকে প্রবোধ দেয়--
"এবার আমার উমা এলে আর উমা পাঠাব না/ লোকে বলে বলুক মন্দ, কারো কথা শুনবো না ।"
উমা আসবে বলে আমার মায়ের হাতদুটি কেমন সেজে ওঠে একজোড়া নতুন শাখা-পলায়, সেখানেও আগমনী সুরে সুরে উমা আসবার আনন্দ বার্তা ছড়ায়।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন