তোমার শেষ চিঠিটা এসেছিলো একটা
সাদামাটা খামে,
(এখনও চিঠি লেখা রেওয়াজটা অনিকেত
দেয়নি ছেড়ে ),
খোলা চিঠিতে কয়েকটা সাজানো শব্দ—
“তুমি একবার আসবে লাবণ্য
সেই নীলকুঠির ধারে?”
অনেক বছর পরে এলাম ,
যেখানে আমার ঠিকানাটা একদিন
ভেসে গিয়েছিল কোপাই এর জলে।
সেই কোপাই,
এখনও সে চৌডল হারানো কিশোরী
আর ফুলডাঙার মাঠের পাশে সেই
পোড়ো নীলকুঠি,রাঙচিতার ঝোপ আর
পাথুরে চড়াই।
কোপাই -এর মাটি ছোঁওয়া জলে
আমাদের ইচ্ছেগুলো তখন ভাসতো টলটলে,
শেষবেলায় কোপাই -এর বুক ছুঁয়ে উড়ে
যেত বক, তার পাখসাটে
এলোমেলো হতো আমার চুল
তুমি সাজিয়ে দিতে নিজের হাতে।
এই মুহূর্তগুলোই শুধু এখনও পড়ে আছে
নোনাধরা সিঁড়ির পৈঠাতে।
সেবার বান এসেছিল কোপাই -এ,
তোমার শরীর জুড়ে ছিল তখন পলাশের
নেশা ,আর আদিবাসী উৎসবের রাত,
মাদল -মউলের মৌতাত।
ধীরে ধীরে পাড় ভেঙে পড়ছিল কোপাই-এ,
পড়ন্ত বিকালে তুমি হাঁটতে পা মেপে মেপে,
এক ছটাক ,দু ছটাক —শেষ পথ।
একদিন বললে “ তুমি এগোও,আমি আসছি”
সেই শেষ দেখা, তুমি হারিয়ে গেলে।
আজ আবারও আমরা হাঁটছি ,
ঘর বাঁধতে না পারা দুজন যেমন হাঁটে ,
পাশাপাশি কোন কথা না বলে,
কিছুটা পথ,কিছু মুহূর্ত ,কিছু পিছুটান ফেলে,
চলবো আমরা ,যতক্ষণ না সূর্যাস্ত হয়।
তারপরে হাসনুহানার বোঁটা বেয়ে নামবে
চাঁদলাগা রাত,সে এক অন্য মেয়েলিকথা।।