নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

শ্যামল কুমার রায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
শ্যামল কুমার রায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

প্রেমিকা : শ্যামল কুমার রায়



   বছর পঁচিশ আগের তারুণ্যে ফিরে গেলেন ডঃ প্রিয়তোষ সান্যাল। একি কাকে দেখলেন আজ? সেই চেনা মুখ, চেনা হাসি। নিশ্চিন্তপুরের বিনোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি যাকে দেখতেন সে নয় তো? পিছনের বেঞ্চে বসা ক্লাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল চেহারার মেয়েটাকে তিনি বারবার ঘুরে ঘুরে দেখতেন, তাঁর প্রথম ক্রাশ।
        খাতার মলাটে যার নাম তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে লিখে রাখতেন; যার হাসি তাঁর চোখে মনে লেগে থাকতো। এতো সেই ঊর্মি। হাঁ নিশ্চিত ঊর্মি। সেই সময়ও মুখ ফুটে বলতে পারলেন না, আজও চুপ থেকে গেলেন ব্লুমহার্ট স্কুলের আজকের রাশভারী প্রিন্সিপাল ডঃ সান্যাল। ঊর্মি এসেছে সিঙ্গেল পেরেন্ট হিসেবে মেয়ের ভর্তির জন্য ইন্টারভিউ দিতে।
                 চোখাচোখা প্রশ্ন দক্ষ হাতে সামাল দিয়ে চলেছেন মিসেস ঊর্মি ব্যানার্জী। মুখ ফস্কে ডেকে ফেললেন ' পুলু' বলে। পুলু হলো প্রিয়তোষের ডাক নাম, বন্ধুদের দেওয়া। ব্যাস, চোখাচোখি, মুচকি হাসি অষ্টাদশী প্রেমিকা ঊর্মি ফিরে এলো পুলুর কাছে।
               -----------------------------------

করোনা : শ্যামল কুমার রায়



করোনা এবার দিচ্ছে ডাক
মানব সভ্যতা নিপাত যাক।
সচেতনতা ভাই উঠছে গড়ে
করোনা তাই যাচ্ছে সড়ে।
সভ্যতার আজ চরম সংকট
স্বার্থপরতা হচ্ছে প্রকট।
ছুটছি সবাই নিজের তরে
রসদ মজুত নিজের ঘরে।
আতঙ্ক আজ বড়ো পুঁজি
কালো বাজারির সুযোগ খুঁজি।
আর্ত অসহায় রইলো পরে
দিন মজুরিতে পেটটা ভরে
মৃত্যু মিছিল খবর করি
আরোগ্য সব আড়াল করি।
প্রভু তুমি দাওগো মেরে
মনুষ্যত্বহীনতা চিরতরে।
----------------------------

তিহার : শ্যামল কুমার রায়


অনেক ভেবে দেখেছি-
তিহার জেলেই থাকছি।
অভিযোগে শুরু, অভিযোগেই শেষ
অভিযোগের খাতা, দ্রুত নিঃশেষ।
বেশ কঠিন ছিল ভালো ছেলে হওয়া
যৌবনের ঝোঁক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
শাড়ির ভাঁজে ছিল আলতো ছোঁয়া
আঁচল সরিয়ে শুধু কাছে পাওয়া
কাছে পাওয়ার রেশ,থাকে না বিশেষ
তৃপ্তির শেষ, হিসেব শুরু,
কূটক্যাচালিতে বুক দুরুদুরু।
পাওনা গণ্ডা বুঝিয়ে দিতে হবে
রক্ত ৠণ শোধ করতে হবে।
আমিত্বের লড়াই এ সব ছারখার
থামতে চায় না, জীবন বারবার
জনারণ্যে শুধু আজ মুখোশের ভিড়
সম্পর্ক কোথাও নয়তো নিবিড়
এর চেয়ে ঢের ভালো তিহারে থাকা
অপরাধী মন নিয়ে শুধু বেঁচে থাকা।
           -----------------------------

শ্যামল কুমার রায়ের দুটি কবিতা

জলছবি

জীবনের কঠিন সময়, মন খারাপের মুহূর্ত
একরাশ হতাশা আর চরম বিরক্তি!
কানহার মতো কে যেন বলে গেল-
এটাই কি প্রথম দুঃসময়?
ফিরে দেখা জীবনের শৈশবে,কৈশোরে,যৌবনে-
কারা যেন বলেছিল-"ওর কিচ্ছু হবে না।"
আজ ওরাই কুৎসাপক্ষ।
অক্ষমের সান্ত্বনা তো কুৎসাতেই।
তবে জীবনের পরিক্রমণ তো ভারী অদ্ভুত!
স্থায়ী সুখ, শান্তি যেন সোনার পাথর বাটি
আসলে সংসারে সুখ তো ভীষণ অনিত্য
এই আছে তো এই নেই।
ভাঙাচোরা জীবন, অস্থির সময়
নড়বড়ে জ্যোতিষ আর চওড়া মার্শাল লাইন
                                        ভরসা জোগায়।কোথাও যেন একটা চাপা থাকা জেদ,স্থির বুদ্ধি
আর হিম শীতল মস্তিষ্ক দৃষ্টি ঘোরায়
ভরসা করে থাকা মুখ আর ভরসার মুখের দিকে
তোকে পারতেই হবে আনন্দ।
ছোট্ট অথচ অনতিক্রম্য দূরত্ব
বৈঠা পার হওয়াই তো জীবন
আর ওপারে? চিরশান্তি।
       ------------------------------------------



আম্লিক
             

আবার একটা নতুন বাড়ি
নতুন করে লাগলো বকুল গাছ,
বকুল গাছের তলায় দেওয়া
আবার প্রথম প্রতিশ্রুতি।
উস্কে দেয় পুরোনো স্মৃতি -
ফেলে আসা দিন,
রেখে হাতে হাত-
জীবন যুদ্ধের অসংখ্য কথামালা।
ক্ষত বিক্ষত মনের আয়নায়
অজস্র আঁচড়ের চিহ্ন।
তৈরি করে বেদনার বিষ বাষ্প।
তোকে কিছুতেই কাছে আসতে দেয় না।
বেদনা বিধুর জীবনে শুধুই শূন্যতা
গড়ে তোলে আম্লিক ভবিষ্যত।
           ----------------------------

বটগাছ : শ্যামল কুমার রায়



বড় বেমানান এ জীবনে
প্রতি নিয়ত ক্ষত বিক্ষত
টোল খাওয়া আত্ম বিশ্বাস
চিড় ধরা সম্পর্ক
উদ্যত অভিযোগের আঙুল
অসন্তোষের বিষেদাগার
সম্পর্কের ফাটলেই -
গগনচুম্বী বটগাছ।
________________

পরিক্রমণ : শ্যামল কুমার রায়।



জীবনের পরিক্রমণ অ্যাত অদ্ভুত,সর্পিল!
ভাবায়, ভীষণ ভাবে ভাবায়।
এই সেদিনও যা ছিল আগুন রঙা ফুল
আজ তাই আগুনের লেলিহান শিখা।
আবার জ্বলে,পুড়ে ছাই হওয়া জীবন
ঠিক,ঠিক যেন ফিনিক্স পাখি।
শেষ! সব শেষ! শেষের পরেও শুরু।
      ------------------------

না-মানুষ, মেয়েমানুষ :- শ্যামল কুমার রায়।





তুমি আমাকে কিভাবে চেনো?
নারী হিসেবে? ধুর!
সে অস্তিত্ব তো কবেই হারিয়েছি।
তুমি চেনো আমায় লোভাতুর চোখে,
তোমার পৌরুষের মল্লভূমি আমি।
তোমার উল্লাস আমার শীৎকারে
অথচ, বড়ো নিশ্চল তুমি আমার চিৎকারে।
কর্ণ থেকে কংস, রাবণ থেকে বাছাধন
আমার এলোচুলে সদা উদ্যত তোমার হাত,
চুপ করাতে হবে না আমায়?
বাঁজা, বাজারির তকমা? গা সওয়া হয়ে গেছে।
গার্হস্থ্য হিংসার শিকার আমি।
ভাবতে অবাক লাগে, বড় অবাক লাগে!
আমার শত্রু অনেক-
গর্ভধারিণী থেকে কটূভাষিণী
সৃষ্টিকর্তা থেকে সম্ভোগ কর্তা।
নির্যাতিত আমি নানা রূপে, নানা ভাবে,
কেউ কখনো মানুষ ভাবেনি।
কোথাও পৌরুষের ফল
কোথাও বা পৌরুষের কারণ।
সংসারে তো আমি সর্বংসহা!
কখনো আমি শুচি, কখনো অশুচি,
কখনো বা আমি ঢাকের বাঁয়া।
চরম অস্তিত্ব সংকট আমার
স্বনির্ভর হয়েও চরম সংকটে।
কেমনে করব পার- ভব বৈতরণী এবার?
              

চাতক. .. শ্যামল কুমার রায়



         তপ্ত দাবদাহে দগ্ধ ধরণী
         তরুছায়ার খোঁজ কম করেনি।
         স্বস্তি মেলা খুবই দুষ্কর
         রুজিরুটির জন্যে সবাই তৎপর।
         অবলা জীব অসহায় বড়
         শীতলতা শুধু কেন খুঁজে মর।
         বৈভবের আশ্রয় শীতল ঘরেতে,গাড়িতে
         ফকিরের দেখা মেলে মাটিতে, ছায়াতে।
         বৃষ্টির জন্যে চাতক সবাই
         আমীর, গরীবতে কোনো ভেদাভেদ নাই।
         তপ্ত ধরণী শীতল অবশেষে
         বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চারিত আকাশে।
         শীতল বারিধারা নামল শেষে
         ধরণীর মলিনতা মুছল নিমেষে।
            

পোড়া : শ্যামল কুমার রায়



                         

               আগুনে সব পোড়ে
               সোনা গলে,পুড়ে খাঁটি হয়।
               মনও পোড়ে। তবে-
               মন কষাকষিতে, বিরহে, বিচ্ছেদে-
                        এমন কি প্রেমের আগুনেও।
               সব পোড়াতেই -
               শেষে পুড়তে হয় নিজেকেই।
               কখনো চিতার আগুনে-
               আবার কখনো বা জীবনে।
               একটা খাঁটি সোনা-
               চির ভাস্বর,
               জীবনে, মননে।
                

অনন্যা :শ্যামল কুমার রায়



                      তুমি অনন্যা!
     তোমার সাথে অন্য কারোর তুলনা হয় না।
   সবাই যখন আঘাত করে পুলকিত হয়-
   তুমি তখন আঘাত করেও বেদনাহত হও!
   সবাই যখন চলার পথে অঘটনই চায়-
তুমি তখন ফেরার পথে অপেক্ষাতেই রও।
     সবাই যখন উন্নতিতে চরম ঈর্ষান্বিত
    তুমি তখন বিপদ ভেবে সদা শঙ্কিত ।
  সবাই যখন গুছিয়ে নিতে সদা তৎপর
তুমি তখন সাজিয়ে দিতে ভুলেছো আপন পর।
ব্যবহার করে বাগিয়ে নিতে ধান্দাবাজের ভিড়
  তুমি তখন তফাত বাড়াতে ভীষণ অস্থির।
  সবাই যখন ঝামেলা করে বেশ ফুরফুরে
তোমার কেন ঝামেলা করে আঁখি জল ভরে ?
       সবাই যখন তোষামোদে শশব্যস্ত
  তুমি তখন ভুল ধরতে করো না ইতস্তত।
 তুমি যখন অভিমানী , কও না কোনো কথা,
  শুধু তোমার মান ভাঙাতেই থাকে কারকতা।
তোমার মত দ্বিতীয় কেউ খুঁজে পাওয়া ভার!
    অনন্যা থাকতে আর কিসের দরকার?
         

শ্যামল কুমার রায়






বিসর্জন 
-----------


গিরিরাজ কন্যা পার্বতী তুমি, 
পিতৃপক্ষের অবসানে মর্ত্যে আবির্ভূত হও তুমি, 
খুশির জোয়ারে মর্ত্যবাসী ভাসে।
আনন্দের আগমন হয় তোমার সাথে,
 মর্ত্যবাসী ভালোবেসে তোমাকে আনন্দময়ী বলে ডাকে।
তোমাকে ঘিরে আছে পৌরাণিক কাহিনী কত ! 
কার্ত্যায়নের আশ্রমে পূজিত হয়েছিলে তুমি -
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী ।
দশমীর ঐ শুভ দিনে অসুর বধ করেছিলে তুমি ।
দেবতারা ফিরে পেল স্বর্গের অধিকার।
অশুভ শক্তির হল নাশ , 
শুভ শক্তির হল উচ্ছাস ।
পৌরাণিক ঐ উপাখ্যান যদি হয়ও প্রতীকী, 
অশুভ শক্তির বিনাশে তুমি চির ব্রতী ।
গীতার ঐ উবাচ নয় যে মিছে, 
ধর্মেরই প্রতিস্থাপনে তুমি আস যে মর্ত্যে ।
পৌরাণিক ঐ অসুরের তবু ছিল ন্যায় অন্যায় বোধ, 
আজকের অসুর ওসব থেকে বহু দূরে, 
নীতি, নৈতিকতার নেইকো বালাই ,
কামিনী, কাঞ্চনে আসক্ত এরা ভাই।
ভোগের বাসনা ভীষণ তীব্র, 
যোগ্যতার চেয়ে এদের প্রত্যাশা বেশি, 
সবকিছুই পেতে এদের ভীষণ তাড়াতাড়ি ।
আইনের শাসন এরা মানে না কখনও ।
এরা কোনও বিশেষ ধর্মের নয়, 
অপরাধীর কোনও ধর্ম হয় না জেনো, 
অপরাধীকে শুধু মানবতা বিরোধী মেনো ।
কোথাও এরা ধর্ষক, কোথাও ছিনতাইকারী, 
কোথাও বা ধর্মোন্মাদ , কোথাও জেহাদী ।
শিক্ষিত আর অশিক্ষিতে এখানে ফারাক নেই কোনও ।
মগজ ধোলাই করে এদের ফিদায়ে বানানো হয়। 
সন্ত্রাস  আর ধ্বংসে হয় উল্লাস এদের ।
এদের অত্যাচার থেকে বাদ যায় না কেউ, 
নির্ভয়া থেকে নিরীহ জনতা হয় এদের শিকার, 
এদের হাত থেকে বাঁচাতে মাগো অবতার আসা দরকার ।
এরা যে শুধু সমাজে আছে, তা কিন্তু নয় !
শিক্ষিত পরিবারেও কন্যা ভ্রূণ হত্যা হয়।
সুরক্ষিত নয়কো মানুষ সমাজের কোথাও ।
শিক্ষা নিকেতনেও শিশু নির্যাতিত হয়। 
তুমি তো বধিলে একটা অসুর , 
মনুষ্যরূপী অসংখ্য অসুর বধে মাগো অনেক দুর্গা দরকার, 
বর্ষব্যাপী যারা করবে এদের সংহার।

শ্যামল কুমার রায়




শরৎ
*******


  
শরৎ , তুমি বড্ড কৃপণ, 
জগৎ জুড়ে আসো না, 
বাংলা মায়ের কোলটি ছেড়ে, 
ভুবন জুড়ে থাকো না ।
পৃথিবীটা যে বড্ড ছোট, 
ওয়েব জালে বন্দি ।
মানিকতলা আর ম্যানহ্টান করেছে যে সন্ধি ।
বর্ষার ঐ ভরা যৌবনে নদী ও কুমারী, 
শরতের ঐ হিমেল পরশে প্রকৃতি ও সুন্দরী।
খোঁপায় গুজে কাশফুল তুমি রূপবতী, 
কৈলাসের ঐ শ্রীময়ী আসে তব ঋতুতে, 
আপামর বঙ্গবাসী মাতে উৎসবে।
নিউজার্সির ঐ বাঙালি পাড়ায় শ্রীময়ী পূজিত, 
ঘরকুনো সেই বাঙালি আজ বিশ্ব ব্যাপিত ।
বাংলায় তুমি খুশির হাওয়া, বৃষ্টি থেকে মুক্তি, 
ভাদ্র আশ্বিন এই দুই মাসেতেই উৎসবেরই ব্যপ্তি ।
সম্প্রীতির এই বাংলাতে পরব - পার্বণ একসাথেতেই ঘটে,
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে উৎসবেতে মাতে।
জগতেরই ঐশ্বর্য যত তোমাতেই মুখরিত, 
সোনালী ঐ ধানের শিষে প্রান্তর প্লাবিত ।
গরীবের ও ঠোঁটে ফোটে এই সময়েতে, 
অন্ন বস্ত্র বিতরণ হয় পরব - পার্বণেতে ।
শরৎ তুমি গ্লোবাল হচ্ছ না কেন? 
ম্যানহ্টানে এই সময় শীত আসে জান?
" রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করনি" - 
কথাটা সত্যি নয়কো আজ, 
ঘরকুনো বাঙালি আজ কর্পোরেট - গ্লোবাল ।
মহাষ্টমীর সন্ধ্যা আরতি হয় সর্বত্র, 
শরতের আমেজ থেকে বঞ্চিত কেন থাকে পাশ্চাত্য? 
কনকনে ঐ ঠান্ডাতে কাঁপছে ওরা, 
উৎসবের আমোদে তবু মাতছে ওরা ।
শরৎ তুমি ছড়িয়ে পড়ো বিশ্ব জুড়ে, 
মধুমাখা তব হিমেল পরশ ছড়াক সাগর পাড়ে ।

শ্রীময়ী(দ্বিতীয় পর্ব)

         







শ্যামল কুমার রায়, সহ শিক্ষক,
নবগ্রাম ময়না পুলিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়।




               দ্বিতীয় পর্ব 
               -----------------



     মাখন ফিরে এসে তিতলি কে প্রপোজ্ করল । অধ্যাপিকা তিতলি সলজ্জ হেসে বলল, " জানি না যাও ।" কিন্তু অবাঙালী তাও আবার মারোয়াড়ি পরিবারে মাছ ভাত খাওয়া বাঙালি মেয়ে? ছি!ছি!ছি!বেটা , মাখন, ইয়ে গলত হ্যায়।

আবার মেয়ে প্রফেসর তো কি হয়েছে? বংশ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে? একদিকে, এত বছরের জমানো কৃতজ্ঞতা, রক্ত ঋণ শোধ করার সময়ে মা বাবা কেউ বুঝল না । আর মাখন কে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা যায়, শরীর দেওয়া যায়, তার ঔরসজাত সন্তানের মা হওয়া যায়, কিন্তু মনের জমির দখলীসত্ব কি করে দেবে , তিতলি? ওর মনের জমির মালিক যে একমাত্র, একমাত্র মাখন । সুতরাং আর কি? এক কাপড়ে তিতলি বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা মাখনের কর্পোরেট অফিসে। জ্যোতিষী শ্রী ঋষিকেশ শাস্ত্রী বলেছিলেন, " মাখনের বৃহস্পতি তুঙ্গী । " আর মাখনের ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ হবে। আমেরিকা যাওয়ার আগে মাখন তিতলি কে নিয়ে শাস্ত্রী আঙ্কেলের কাছে  গিয়েছিল । যোটক নিঃসন্দেহে রাজযোটক। কিন্তু রান অ্যাওয়ে ম্যারেজ। পরিনতি যখন জানাই ছিল, তখন তো আর সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই । তিতলি কে নিয়ে মাখন নিজের পাওয়া অফিসের ফ্ল্যাটে। প্রেমিক আর স্বামী কখনো এক হয় না , বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। তিতলি তাই অধ্যাপনা  সামলে স্ত্রী ধর্ম পালন করত। প্রকৃতির নিয়মে মাখন আর তিতলির কোল আলো করে এল সৌমদর্শন মুকেশ । সব অভিমান , জমানো ক্ষোভ, ব্যাথা নিমেষ উধাও হয়ে গেল নাতি হওয়ার আনন্দে। সম্পর্কটা শুধু আর তিতলি আর মাখনের মধ্যে রইল না, জোড়া লাগল দুটো পরিবারের মধ্যেও ।


(চলবে...)

শ্রীময়ী(প্রথম পর্ব)


     


        
শ্যামল কুমার রায়, সহ শিক্ষক,
নবগ্রাম ময়না পুলিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়।





                       ( প্রথম পর্ব )
                    --------------------
                     মুরারীমোহন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শ্রীময়ী। সহ শিক্ষা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মুকেশ শর্মা । ঐ বিদ্যালয়টা মুকেশের ঠাকুরদার স্মরণে । অত্যন্ত উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলে মুকেশ । অর্থের প্রাচুর্য মুকেশ কে বখাটে ছেলে হতে দেয়নি । কারণ, মুকেশের মা লেডি ব্রাবোন কলেজের বাংলার  অধ্যাপিকা। মা জাতিতে বাঙালি । আর বাবা মারোয়াড়ি । মাঝারি মাপের শিল্পপতি । মুকেশের মা, বাবার ও প্রেমের বিয়ে । তখন ১৯৭৪ সাল। বাঙালি মেয়ে তিতলি তালুকদার ।আশুতোষ কলেজে বাংলা অনার্সের ছাত্রী । আর মুকেশের বাবা মাখনলাল শর্মা তখন ফিটফাট তাজা যুবক । অডি গাড়িতে চড়ে কলেজে আসত । আর পুলিশ কনস্টেবল, তারকনাথ তালুকদারের মেয়ে তিতলি সাদামাটা কিন্তু মার্জিত পোষাকে কলেজে আসত। মৃদু ভাষী, শালীন, মিষ্টি মুখের তিতলি কে চোখে লেগে গেল মাখনের । হাতে সোনার আংটি ও গলায় সোনার চেন। মাখন হিসাব শাস্ত্রে অনার্স। কলেজ ক্যাম্পাসে তিতলি থেকে চোখ সরত না মাখনের । চাপা গুঞ্জন শুরু হল কলেজে - প্রজাপতি এখন আর ফুলে বসে না , রে। প্রজাপতি এখন মাখনে আটকে গেছে। সতীর্থদের উৎসাহ, টিপ্পনী তে কখন যে ওরা কাছাকাছি চলে এল, তা দুজনকেই ভেবে বলতে হবে।
    অভিজাত পরিবারের ছেলে মাখন এর পর হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ করে দেশে ফেরে। আর তীব্র লড়াই করে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকা তিতলি মাস্টার্স কমপ্লিট করে জে আর এফ কোয়ালিফাই করে। তালুকদারবাবুর অশিক্ষিত কিন্তু ধর্মপ্রাণ স্ত্রী তিতলির নৈতিক চরিত্র গঠনে খুব বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন । একদম নিজের প্রচেষ্টাতে রিসার্চ করাকালীন তিতলি লেডি ব্রাবোন কলেজে অধ্যাপিকা পদে যোগদান করে । জীবনের প্রথম প্রেমের কথা তো ভোলা যায় না । আর মাখন , তিতলির সম্পর্কটা 'ফ্লার্ট' এর ছিল না ।

(চলবে...)