স্নেহাশিস খোকা,
আমার বাবা মানে তোর দাদুকে এক দিন আমি বলেছিলাম,
বাবা তোমার কি কখনো কষ্ট হয়না?
তোমাকে কাঁদতে দেখিনি কোন দিন।
আমার কথা শুনে তোর দাদু মুচকি হেসে বলেছিল,
পুরুষ মানুষের যে অনেক কর্তব্য।
তারা যদি কাঁদে,
নিরাশ হয় তাহলে সংসার নামক এই নৌকাটা,
মাঝ সমুদ্রে ডুবে যাবে।
বাবার সেই কথার মানে আমি পরে বুঝেছি।
আর এটাও বুঝেছি যে পুরুষের জীবনটা অনেকটা শামুকের খোলসের মত আবৃত থাকে।
যা উপরে শক্ত আর ভীতরে নরম।
আর তাই তো তোকে যখন বকা দিতাম, আমারো খুব কষ্ট হত।
কিন্তু তুই যখন রাতে ঘুমিয়ে পরতিস।
আমি তোকে মন ভোরে আদর করতাম।
আর তোর মাকে বলতাম, দেখে নিও আমার খোকা একদিন অনেক বড় হবে।
সত্যি খোকা , আজ তুই অনেক বড় হয়েছিস। আমি আর তোকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনা।
সময়ের ঘোড়িটাও আজ উল্টো দিকে বইছে। আমিও স্হবির হয়ে যাচ্ছি।
এক সময় ছিল,
তুই তোর পরিচিতদের কাছে গর্ব করে আমার পরিচয় দিতিস।
কিন্তুু এখন তোর লজ্জা হয়।
আর তোর এই লজ্জা আমায় অনেক কষ্ট দেয় খোকা।
তা তুই বুঝবিনা।
জানিস খোকা,
প্রতিটা মানুষের জীবনে যেমন জোয়ার আসে .... , তেমনি আসে ভাটা।
এক সময় আমারো এসেছিল জোয়ার সে সময় আমি অনেক পেয়েছি ,
তোর মাকে পেয়েছি গৃহ লক্ষি হিসেবে।
তার পর তুই এলি আলো হয়ে।
কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি,
এত দ্রুত বদলে যাবে। এক ভয়ঙ্করী ভাটা এসে তোর মাকে নিয়ে গেল। আমি প্রার্থনা করি যেন সে ভালো থাকে স্বর্গে স্থান পায়।
এই দুর্বিষহ জীবন তাকে বইতে হয়নি,
এই বলে নিজেকে শান্ত্বনা দেই।
আজ আমি তোর কাছে বোঝা হয়ে গেছি তা আমি বুঝি,
কিন্তু কি করব বল,
সময়ের ঘোরিটা যে উল্টো দিকে বইছে কিন্তু থামছে না,
জানিনা আর কত দিন চলবে,,
সব কিছুই তো একসময় ফুরিয়ে যায়,
কিন্তুু আমার জীবন কেন ফুরায় না?
জানিস খোকা,
এই দু হাত ভোরে তোকে দিয়ে এসেছি।
চাই নি কিছুই।
আজো দিতে চাই, তোমায় মুক্তি,
আমার ভার থেকে।
যেই বুকে তোকে আগলে রেখেছিলাম,
সেই বুকের স্পন্দনটা দিতে চাই তোর হাতে।
কিন্তু এতটাই স্হবির হয়েছি,
আমি তাই পারছিনা,
আমি পারছিনা।
ইতি তোর অক্ষম
বাবা