নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

এপার ওপার: দেবযানী ভট্টাচার্য্য








এত সাজছ কেন! -সবকিছু ভীষন  মানানসই - -আমার সহ্য হয়না- জানইতো-
যেখানে যেমনটি হবার কথ- পোশাক, অলংকার ,রং, ভঙ্গিমা, কেশবিন্যাস , আহ্লাদীপনা -। কেমন নিষ্ঠুর দেখাচ্ছে  তোমাকে- যেন প্রিয় কবিতাটিকে ধর্ষণ করত এগিয়ে আসছে কোন মেলোড্রামাটিক বাচিকশিল্পী। উদ্ধত গ্রীবায় এখনো আটকে আছে শাওয়ারের জলজ আদর । আয়নার কাঁচে  প্রত্যার্পিত একলক্ষ নার্সিসাস চুমুর রিফ্লেক্শনে আমার দুর্বল দৃষ্টি হেরে যাচ্ছে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
সেইসব অলীক আদর গায়ে জড়িয়ে এ নিয়ন শহরে বিজ্ঞাপিত হবার অমোঘ চুম্বকে কাবুলি  বেড়ালের গরগরে সুখ সুখ নম্রতায় এবার তোমার গোড়ালি ছুঁয়ে নেবে পেনসিল হিলের দাম্ভিক  শিখর, হাতের নাগালে এনে দেবে এলিট কাঁধের পেশল উচ্চতায় অনায়াস স্পর্শ !

   একটু আগেই--যখন সোনালী   বিকেলটা নিভন্ত আঁচে ঝিমিয়ে পড়ছিল--সেই পাখিটা আজও এসেছিল -বোধহয় আমার মতই সন্ধ্যেগুলোের আসন্নতায় ও ফেরার পথ হারিয়ে ফেলে--আমি তখন সুগন্ধ পাচ্ছিলাম , প্রসাধন  শেষে ছড়িয়ে দেওয়া শ্যানেল ফাইভের-তুমি কি বেরোবার আগে আসবে একবার! বেডরেস্টটা আর একটু তুলে দিয়ে যাবে কি ! জানলা দিয়ে দেখতাম কোন গাড়ি আজ- কি পোশাক সংগীর। বোধহয়  পাঁচটা বাজে--রোদ্দুর বসন্ত বিকেলের পলাশ রঙ মেখে ছুঁয়ে নিচ্ছে জাললায় রাখা ক্যাকটাসের কর্কশ ত্বক। মৌটুসি পাখিটিও এবার বেশ চঞ্চল-ওর ডিউটি শেষ--এবার তিরতিরে ডানা ওকে ফিরিয়ে দেবে কি প্রিয় কোন পরিসরে!
যাও পাখি--একা থেকোনা- ফিরে যাও আনন্দ কুলায়- অন্ধকার আমার একাকী  জানলায় রেখে দিয়ে চলে যাও।

এবার ফিরবো আমি এগারো বছর- যখন
তোমার চুলে কচুরিপানার তিরতির কোমল প্রশ্রয় অনাঘ্রাত সৌরভ নামিয়ে জলোচ্ছ্বাসের মত ভেঙে পড়তো বুকের দামাল অববাহিকা  জুড়ে--যখন তোমার চোখে শ্রাবণ আকাশ জড়ো হলে ফুসফুস বাতাস হারাতো- যখন দক্ষিণ বাতাস বসন্তের খোঁজ নিয়ে এলে কোন্ সে পাগল করা টানে নিরুদ্দেশ- নিরুদ্বেগ-- ঘরের মধুকাল ভুলে বাউল জ্যোৎস্না  কিংবা পলাশ দুপুরে ঘাসে ঘাসে শরীরী আগুন । তখন জারুল রঙা তাঁতের শাড়ি,
তখন হঠাৎ  এলো খোঁপা ভেঙে গেলে ঝিমধরা সুগন্ধী আঁধার- তখন স্বর্ণাভ ত্বকে সহজ বৈভব-চোখের নিজস্ব  ঝিলে তখন নৌকাডুবি -তোমার পরাগরেণু মেখে নেওয়া তীব্র অসময়-।
তখন স্বল্পাহার , ধুলোমাখা গৃহস্থালি  , অভাবের অনিবার্য দিন -।তখন বেসামাল পরিযায়ী ডানার উড়ান- তবুও অজস্র  রাত একত্র উষ্ণ চুমুকে পার হত কবিতায় গানে । আকাশের রঙ ফিকে হয়ে এলে ঘুঘুর মত নরম বুকে মুখ ডুবিয়ে আসতো চন্দনগন্ধী ভোর-।

 যদি জানতাম একটি ডিসেম্বরের ভোরে আমার জীবন থেকে চিরতরে মুছে যাবে কস্তুরী  ঘ্রাণ--বড় কষ্টে সংগৃহীত সামান্য একত্র ভ্রমনপাথেয় অর্থহীন হয়ে যাবে--পাহাড়ী কুয়াশায় পিছল বাঁকে আমি হারাবো আমাদের ধুলোমাটি জীবনের সুখ--আমার চোখের সামনে তিরতিরে কচুরিপানা মুছে নেবে সকরুণ  রঙ- আমাকে ফিরিয়ে দিতে নিরক্ত জীবন অনায়াস ঝাঁপ দেবে লেলিহান
আগুনে ঝর্নায়-!

পরমান্ন  পরমায়ু থেকে চলে গেছে এলাচের ঘ্রাণ-।
হঠাৎই তাকিয়ে দেখি -পড়ে আছি পরাজিত
ঘৃণ্য সরীসৃপ -ক্রমশই ডুবে যাচ্ছি  স্তব্ধ প্রলয়ে।
এই যে অসহ প্রাণ , তবু দেখ অনিঃশেষ লোভ- তোমাকেই  শাপ দিচ্ছি -তোমাকেই পিষ্ট করে তবু পড়ে আছি পরগাছা এক-
স্মৃতির গন্ধটুকু মৃত্যুগামী শরীরে বিছিয়ে-।

কোন মন্তব্য নেই: