গরীব ঈদ
আজ বিহানে যখন নামাজের সুর ভাইসে আস্যা
খড়ের ছাউনি দেয়া ঘরত করিম মিঞার লাশটা তখন ঝুলছে ।
তাঁর বেটা আর বিবি যখন ঈদের খুশিত মাতিবার কথা
তখন করিমের নিথর লাশ আগা করি রাখে শোক পালনে ব্যস্ত
গেরামের বিবি তো সুর টানে টানে কাঁদে আর বলতে থাকে
"কেহ নাহি কেহ নাহি গরীবের জন্যে ফেরেস্তা কাঁথা মুড়ি দিছে রে বেটা"
"আগে জাইনবার পাইলে মোর কানের দুল বেইচা ঈদ মানাইতু।"
"হে আল্লাহ তুই বড় নিঠুর "
১২ বছর বয়সী করিম মিঞার বেটা
বাপের বুকের মাথা রাখে হায় রে কি কান্না
"বাজান তুই কই গেল, তুই কই গেল বাজান"
বাজান মুই তোর ঠেনা কিছুই চাহনি"
এমন দিনত মইলে করিম কেউই নাই
আখন আছে খালি একটা নিথর লাশ আর দুখান শোকাতুর মানুষ।
শেষ কাজ করিবার মতন মাইনষের যে বড় অভাব
গরীব মাইনষক কে নিয়ে যাবে গোরস্থান?
করিম মিঞা কি আর মরিবার চাহিছিলো বেটা আর ফুটুফুটে বিবিক ছাইরে।
কিন্তুক সেই কবে থেকে করিম বেটা আর বিবিক ঈদে নয়য়া কাপড় দিতে চায়
সেই একটা ছিড়া শাড়ি আর বেটাটা একখান ছিড়া শার্ট পরে বেড়ায়
দিলে না দিলে না বড়লোক মোল্লারা করিমক বাইচবার দিলে না।
খুটরিত জইমে থয়া টাকা সব নিছিল কাইহরে।
কাপড় দিবা না পারার দুঃখে করিম মিঞা মইরে গেল্।
কিন্তু তাঁর বেটা আর বিবি তো কাপড় চাহিনী,
শুধু মাইগেছিলো কমদামী গরীব ভালোবাসা।
সেটা করিম মিঞা বুইজবা না পায়ে গরীবের দায়ে মইরে গেল্।।
হিজল গাছের ছায়া
******************
কলেজ থেকে সামান্য দূরে চার পা হেটেই একটা ছোটো জমির পাশেই পুকুর ধারে একটি বেশ ছায়া প্রদানকারী হিজল গাছ। নিরিবিলি জন-মানবহীন একটা জায়গা চুটিয়ে প্রেম করা যায়।
সাগর একজন দ্বিতীয় বর্ষের কলেজে পড়া ছেলে ভালোবেসেছিলো তারই বান্ধবী নদী কে। সেতো সাগর নয় যেন জলের প্রাচুর্যের মতো কবিতার অসীম ভান্ডার । আর নদী যেমন প্রতিদিন বয় তেমনি প্রায় কেঁদে ফেলত মেয়েটা সাগরের কবিতা শুনে। অবশ্য একথা অনস্বীকার্য যে নদী কিন্তু সাগরের কবিতা শুনে নিজের আবেগকে থামতে না পেরেই তার প্রেমে পড়েছিলো।ওই যে কলেজের প্রথম দিন সাগর ক্লাশে সেই কবিতাটা শুনিয়েছিল না রবীন্দ্র নাথের "হঠাৎ দেখা"।এভাবেই তো ওদের রিলেশনটা শুরু। সম্পকের্র প্রথম দিন সাগর ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল নদী কে সেই ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় হিজল গাছের নিচে।হিজল গাছের নিচে বসে ভালোবাসার পৃথম দিনেই সাগর নদীকে শুনিয়ে ছিল জয় গোস্বামীর কবিতা '"ঈশ্বর ও প্রেমীকের সংলাপ"
— ‘সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’
:বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে
— ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’
:বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান
— ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’
:পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি
— ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’
:পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা
— ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
:কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেই
বলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’........""
নদীর দু-চোখ ভোরে জল এসেছিল আবেশে। দূরের ওই মাঠের স্নিগ্ধ বাতাস, হিজল গাছের শীতল ছায়া সব কিছু যেন দারুন ভাবে আলোড়িত করেছিলো নদীকে।আর তক্ষুনি নদী জলস্রোতের মতো কলকল শব্দে বলেছিল - "আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি সাগর খুব"। প্রথমদিনের কাটানোর দারুন অম্ল-মধুর আমেজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল দুজনই।
সম্পর্কের ১বছর হলো যেদিন ,সেদিন সাগর নীল পাঞ্জাবি আর নদী গোলাপি শাড়ী পরে এসেছিল।দুজনে বসে কথা বার্তা চলছে এমন সময় হঠাৎ করে আনমনা হয়ে সাগর আওড়াতে খাকে জীবনানন্দ দাশের "বনলতা সেন"
"..........হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি.......
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন..."
এই একবছরে কত যে কবিতা শুনিয়েছে সে নদীকে একমাত্র হিজল গাছটি ছাড়া কেউ জানে না। এই তো কবে যেন ঠিক মনে পড়ছে না সেদিন সাগর Robert Browning এর .."Meeting at Night" কবিতাটা নদীর চোখে চোখ রেখে বলেছিলো।
".....and a voice less loud,though its joys and fears,
Than the two hearts beating each to each!"
কবিতা যখন থামল নদী তখন বিভৎ্স মায়া নিয়ে সাগরের দিকে চেয়েছিল।একদিন সাগর নদীকে বলেছিলো যে তাকে সে বিশ্ব কবিতা দিবসে এক গুচ্ছ কবিতা শোনাবে।২১শে মার্চ কথা মতোই এসে নদী সাগরের অপেক্ষায় বসে ছিল হিজল গাছের নিচে।কিছুক্ষন পর ফোন আসে নদীর কাছে।ফোনের ওপার থেকে জানান দেয় সাগরের একসিডেন্ট হয়েছে।
(৭ দিন পর)
সাদা কাপড় পরে একটা মেয়ে গাছের নিচে বসে আছে।মুখটি এখন তার দারুন মায়া,দেখলেই যেন কান্না পাবে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে।আর বিড়বিড় করে একরাশ কবিতা হেসে হেসে শুনিয়ে যাচ্ছে কাকে যেন? আর অস্থির আশা নিয়ে সাগরকে জিজ্ঞেস করছে 'ভালো হচ্ছে তো?' কিন্তু শুনবে কে তার কবিতা?সাগর ? সেতো বেঁচে নেই। যে কবিতার কোনো শ্রোতা নেই,আবৃতি শুনে বাহবা দেবার কেউ নেই।সেই কবিতা আবৃত্তি শুনে কে তাকে উত্তর দেবে যে ভালো না খারাপ হয়েছে।এভাবেই প্রতিদিন দিশাহীন নদী যার সামনে একরাশ কবিতা আওড়িয়ে যাচ্ছে সে এক স্থির শান্ত শীতল হিজল গাছের ছায়া । হ্যাঁ হিজল গাছের ছায়া।
"কোনও একদিন ফিরে এসো,যে কোন
একদিন যেদিন খুশি....
.....
আমি খুব বেশী চাইছি বলে
আমি চাইলে কখনও তুমি না দিয়ে
থাকোনি।(তসলিমা নাসরিন)।।
সাগর একজন দ্বিতীয় বর্ষের কলেজে পড়া ছেলে ভালোবেসেছিলো তারই বান্ধবী নদী কে। সেতো সাগর নয় যেন জলের প্রাচুর্যের মতো কবিতার অসীম ভান্ডার । আর নদী যেমন প্রতিদিন বয় তেমনি প্রায় কেঁদে ফেলত মেয়েটা সাগরের কবিতা শুনে। অবশ্য একথা অনস্বীকার্য যে নদী কিন্তু সাগরের কবিতা শুনে নিজের আবেগকে থামতে না পেরেই তার প্রেমে পড়েছিলো।ওই যে কলেজের প্রথম দিন সাগর ক্লাশে সেই কবিতাটা শুনিয়েছিল না রবীন্দ্র নাথের "হঠাৎ দেখা"।এভাবেই তো ওদের রিলেশনটা শুরু। সম্পকের্র প্রথম দিন সাগর ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল নদী কে সেই ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় হিজল গাছের নিচে।হিজল গাছের নিচে বসে ভালোবাসার পৃথম দিনেই সাগর নদীকে শুনিয়ে ছিল জয় গোস্বামীর কবিতা '"ঈশ্বর ও প্রেমীকের সংলাপ"
— ‘সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’
:বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে
— ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’
:বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান
— ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’
:পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি
— ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’
:পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা
— ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
:কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেই
বলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’........""
নদীর দু-চোখ ভোরে জল এসেছিল আবেশে। দূরের ওই মাঠের স্নিগ্ধ বাতাস, হিজল গাছের শীতল ছায়া সব কিছু যেন দারুন ভাবে আলোড়িত করেছিলো নদীকে।আর তক্ষুনি নদী জলস্রোতের মতো কলকল শব্দে বলেছিল - "আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি সাগর খুব"। প্রথমদিনের কাটানোর দারুন অম্ল-মধুর আমেজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল দুজনই।
সম্পর্কের ১বছর হলো যেদিন ,সেদিন সাগর নীল পাঞ্জাবি আর নদী গোলাপি শাড়ী পরে এসেছিল।দুজনে বসে কথা বার্তা চলছে এমন সময় হঠাৎ করে আনমনা হয়ে সাগর আওড়াতে খাকে জীবনানন্দ দাশের "বনলতা সেন"
"..........হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি.......
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন..."
এই একবছরে কত যে কবিতা শুনিয়েছে সে নদীকে একমাত্র হিজল গাছটি ছাড়া কেউ জানে না। এই তো কবে যেন ঠিক মনে পড়ছে না সেদিন সাগর Robert Browning এর .."Meeting at Night" কবিতাটা নদীর চোখে চোখ রেখে বলেছিলো।
".....and a voice less loud,though its joys and fears,
Than the two hearts beating each to each!"
কবিতা যখন থামল নদী তখন বিভৎ্স মায়া নিয়ে সাগরের দিকে চেয়েছিল।একদিন সাগর নদীকে বলেছিলো যে তাকে সে বিশ্ব কবিতা দিবসে এক গুচ্ছ কবিতা শোনাবে।২১শে মার্চ কথা মতোই এসে নদী সাগরের অপেক্ষায় বসে ছিল হিজল গাছের নিচে।কিছুক্ষন পর ফোন আসে নদীর কাছে।ফোনের ওপার থেকে জানান দেয় সাগরের একসিডেন্ট হয়েছে।
(৭ দিন পর)
সাদা কাপড় পরে একটা মেয়ে গাছের নিচে বসে আছে।মুখটি এখন তার দারুন মায়া,দেখলেই যেন কান্না পাবে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে।আর বিড়বিড় করে একরাশ কবিতা হেসে হেসে শুনিয়ে যাচ্ছে কাকে যেন? আর অস্থির আশা নিয়ে সাগরকে জিজ্ঞেস করছে 'ভালো হচ্ছে তো?' কিন্তু শুনবে কে তার কবিতা?সাগর ? সেতো বেঁচে নেই। যে কবিতার কোনো শ্রোতা নেই,আবৃতি শুনে বাহবা দেবার কেউ নেই।সেই কবিতা আবৃত্তি শুনে কে তাকে উত্তর দেবে যে ভালো না খারাপ হয়েছে।এভাবেই প্রতিদিন দিশাহীন নদী যার সামনে একরাশ কবিতা আওড়িয়ে যাচ্ছে সে এক স্থির শান্ত শীতল হিজল গাছের ছায়া । হ্যাঁ হিজল গাছের ছায়া।
"কোনও একদিন ফিরে এসো,যে কোন
একদিন যেদিন খুশি....
.....
আমি খুব বেশী চাইছি বলে
আমি চাইলে কখনও তুমি না দিয়ে
থাকোনি।(তসলিমা নাসরিন)।।
~~সমাপ্ত~~
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন