নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অভিজিৎ পাল



নাম - অভিজিৎ পাল
বসবাস - যাদবপুর, কলকাতা।
বর্তমানে - কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ ও 'কথামৃত' বিষয়ে গবেষণারত।

প্রশ্ন :১:- আপনার কাছে কবিতা কি ? 

উঃ কবিতা একটি বিমূর্ত সত্তা। তাকে লালন করতে হয়। সঠিক পরিমার্জন ও পরিশোধন কবিতাকে তন্বী করে। আমার কাছে কবিতা কি তা আমি জানি না। বলতে পারি একটা স্বতন্ত্র ও বিশেষ ভালো লাগার ক্ষেত্র। 

প্রশ্ন  ২:- আপনার প্রিয় কবি কে ? আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ? 
উঃ প্রিয় কবি অনেকেই। কোনো নির্দিষ্ট একজন নয়। মনের অবস্থা অনুযায়ী কবিতা ভালো লাগে। সেই মতো কবিকে। এক কবির সব কবিতা ভালো লাগবে, তার কোনো মানে নেই।

অনুপ্রেরণা হিসেবে চিহ্নিত করবো আমাদের স্কুলের শিক্ষক দীপক হালদারকে। তিনি সত্তরের দশকের যশস্বী কবি ও গদ্যকার। তিনিই ঠিক ভাবে কবিতাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। তাঁর লেখায় অদ্ভুত একটা অনুভূতি তৈরি হতো স্কুলজীবনে। বাংলা স্যার হিসেবে একজন কবিকে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমাদের।

 প্রশ্ন ৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ? 

উঃ এটি একটি ভয়ঙ্কর প্রশ্ন। আমি না লিখলেও বাংলা সাহিত্যের কিছু হানি হবে না। আমার লেখা বা না লেখা দিয়ে কারো কিছু যায় আসে না। সত্যি বলতে কি আমি কেন লিখি তাই জানি না। শুধু বলবো নিজে লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। ২০০৭ থেকে অনেক ছোট-বড় কাগজে লিখেছি। একটি-দুটি পাঠক হলেও আশা করি তৈরি হয়েছে। হয়তো বা নিজের জন্যই লিখি।

  প্রশ্ন  ৪:- আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত) 

উঃ প্রথম কবিতার নাম মনে নেই। বিষয় ছিল শ্রীমা সারদা দেবী। শুধু মনে আছে স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল।

২০১৬তে প্রকাশিত হয়েছে 'আমার শ্যাডোগ্রাফি'। প্রায় নিঃশেষিত হয়ে এসেছে। অনেক পাঠক কিনেছিলেন। আরেকটি বইয়ের কাজ ও কথা চলছে। আমার গবেষণার কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন একটি সংস্থা। গদ্যকবিতা নিয়ে আগামী বইটি প্রকাশ হবে

  প্রশ্ন ৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ? 

উঃ আমি মনে করি সব কবিতা সবার জন্য উন্মুক্ত না। তাই সম্পর্কটি পাঠক তৈরি করেন তার রুচি, পাঠের অভ্যাস প্রভৃতির উপর নির্ভর করে।
     
(সমস্ত বক্তব্যের অনুলিখন করেছেন সুমন পাত্র, তাকে ধন্যবাদ জানাই)




কবিতা 
******
রাই-কৃষ্ণ পদাবলী 
*****************



রাধার বুক চিরে বেড়িয়ে আসে চেনা জানা একটা ব্যথা।
 বিরলে বসে একা পড়তে থাকে ভাবী জীবনের পাঠ। 
ধ্যানবৎ স্থির হয়ে আকাশের ঔদার্য দেখে। 
সেখানে লেগে রয়েছে লাম্পট্যের ঘনরঙ। 
স্থির চোখে একা দেখে মেঘের যাপনকলা। 
যোগিনীর মতো স্থিতধী হয়ে ওঠে গৈরিক আবহ। 
খাদ্য বস্ত্র পরিবারের জৈবিক চাহিদা মুছে আসছে ক্যানভাসে। ত্রস্ত বেণীর থেকে খসে পড়ে বেদনাকাতর ফুলের আলপনা। কেশের মধ্যে কেশবের রঙ খুঁজতে চেষ্টা করে একাকিনী। 
মরে শুধুই মরে। 
পোষা ময়ূরের গলায় আদরের আকাশী নীল স্বপ্ন সাজায়। 
দূর থেকে এক অননুমোদিত কৃষ্ণাতুরার ছবি আঁকে চণ্ডিদাস।


                      (২)

সখীসম্মুখে চেনা কথাগুলোর ব্যাখ্যানের 
পর সামনে এসে দাঁড়ায় প্রশ্নচিহ্ন। 
অনুভূতি বিবর্তিত হয়। 
নতুন ভাবনার মতো প্লট বদলে 
যায় ক্রমশ আকাশের ছন্দে। 
আজীবন চেয়ে দেখব আমি, 
আজীবন শুনব আদিম প্রেম জড়ানো ধ্বনিগুচ্ছ।
 শুধু অতৃপ্তি আর অতৃপ্তি বাঁধব আমার দু'হাতে।
 এখনও বাসন্তী রাত কাটে অজস্র ক্রীয়াকৌতুকে। 
                  বদলে উঠি প্রতিদিন।
 লক্ষ লক্ষ যুগ অতিক্রম করেও 
একটা অজানা অতৃপ্তি জমে থাকে বুকের ভিতর।
 সংজ্ঞা বদলে আসে প্রেমানুসঙ্গের। 
কুঞ্জবনে পাহাড়া দেয় কবিবল্লভ। 
নীচু স্বরে সহমত জানায়।


                              (৩)


ঘরের দরজা কঠিন হয়ে আসছে। 
নেমে আসছে অধরা মাধুকরী মাখানো বৃষ্টির দল।
 দুর্গম পথ হাঁটি অভিসারে। 
একা কৃষ্ণাভিমুখে।
 নীলাম্বরে আবৃত হই। 
মিশে যাই বর্ষার ক্যানভাসে।
 নির্দিষ্ট পুরুষ স্বাক্ষরিত চিহ্নায়ক দৃশ্যে
 অপেক্ষা করে হ্রদের ধারে।
 শঙ্কিত হয়ে উঠি। আকাশ কেঁপে ওঠে ভয়ে।
 ধাঁ ধাঁ লাগে আলোর। 
ধুলোর সাথে মিশিয়ে ফেলি আমার মৃত্যুমুখীচেতনা। 
কবি গোবিন্দদাস পথ চেনায়।
 ক্ষীপ্র বাণ হয়ে উঠি।

      
                        (৪)




মায়াজাল আঁকো নারীর সম্মুখে। 
সম্পর্কের ঘোষণাহীন ফাঁদ পাতো। 
বিরামহীন আভিজাত্যের সঙ্গে 
বৈপরীত্য সাজাই ঘর-বাহির, 
আপন-পর, রাত-দিনের সংজ্ঞায়। 
বদলে ফেলি সব, সব কিছু। 
চেষ্টা করি প্রেমজ আনন্দবিহারে সমাহিত হতে। 
নদীর বুকে ভেসে যায় শ্যাওলার দাম্পত্য। 
ভয় নেমে আসে , এক অজানা অতৃপ্তি ভয়। 
আমিও শ্যাওলার মতো বিচ্যূত হয়ে চলেছি গহনের পথে। কঠোরতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো সামনে। 
মৃত্যুমুখী শরীরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকো স্থবিরতা মেখে।
 দ্বিজ চণ্ডিদাসকে সাক্ষি রেখে আমি মৃত্যুবিলাসী হতে চাই।



                          (৫)



সখির সামনে মেলে বসি দুঃখীর ইমান। 
ভরা বর্ষা মাখানো ভাদ্রদিনে শূন্য হয়ে আসছে গেহ।
 চিত্রকল্পে জমে উঠছে মেঘ। 
আকাশ বাতাস ব্যাপ্ত হয়ে নেমে আসছে শরীরে। 
প্রবাসী কৃষ্ণের অপেক্ষা করি। 
খেদ জমে ক্যানভাস জুড়ে। 
বর্ষার দৃশ্য মনে উঠেই নেমে যেতে চায়। 
ময়ূরের সোহাগ দেখি। মেতে ওঠে দাদুরী।
 ডাহুকীর হাতে তুলে দিতে থাকি 
আমার দুঃখিনী বর্ণমালাদের। 
বুকে জমে ওঠে কষ্ট। 
অন্ধকার আর অন্ধকার জমে। 
দিগন্তে লেগে থাকে গোঙানীর দাগ। 
বিদ্যাপতি এসে সান্ত্বনা মাখানো 
বাক্যিক বিন্যাস সাজায়। 
...............................................................

কোন মন্তব্য নেই: