নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আলো ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়








।। পঁচিশ ।।


          অনেক বছর পরে ছোটবেলার হাত ধরে একটু বেরিয়েছিলাম আমার জন্মগ্রামের রাস্তা দিয়ে। আমি পায়ে পায়ে পথ ভুল করছি। কিছুতেই একটানা পথ চলতে পারছি না। কতবার যে থামতে হচ্ছে তা গুণে শেষ করা যাবে না। ভাগ্যিস ও সামনে ছিল তাই, না হলে যে কি হতো! নিজস্বতাকে কি কেউ এইভাবে খেয়ে নিতে পারে ? কিছুতেই চিনতে পারছিলাম না। শুধু বাড়ি আর বাড়ি। একটা গাছ নেই। ছোটবেলায় যাদেরকে খুব কাছ থেকে চিনতাম তারা আজ একজনও নেই। পথের মেজাজটাই নষ্ট হয়ে গেছে। কতবার এই পথ ধরে হেঁটে গেছি। কত কষ্টয় গাছের নিচে এসে দাঁড়িয়েছি। কখনও বসেও পড়েছি। গাছকে জড়িয়ে সামনে তাকিয়েছি। প্রখর দুপুরে গাছ প্রকৃত পিতার মতো বিছিয়ে দিয়েছে তার ছায়া। আজ কোথায় তারা! মনে আজ স্বজন হারানোর বেদনা। যেদিকেই তাকাই সারি সারি বাড়ির বন্ধ দরজা। চারিদিকে শুধু সন্দেহ আর বিদ্বেষের বিষবাষ্প। মানুষগুলোও কত বদলে গেছে। এদের একজনকেও আমি ঠিক চিনি না। আগে রাস্তায় দাঁড়ালে কত লোক হাত বাড়াত। এখন সব জানলা দরজা বন্ধ। কোনো কোনো বাড়ির অনেক উঁচুতে একটা জানলা হয়ত খোলা। তাও সেখানে কোনো মুখ নেই। অন্ধকারের মতো একটা গর্ত হয়ে আছে।



।। ছাব্বিশ ।।


          জীবনের অনেকটা সময় আমার বিভিন্ন রেল স্টেশনে কেটে গেল। গ্রীষ্মের দুপুরগুলো তো অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। একা একা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছি। কেন এত ভালো লাগে রেল স্টেশন ? অনেক প্রশ্ন করেছি নিজেকে, কোনো উত্তর পাই নি। আজ বুঝতে পারি সে কেন এত প্রিয়। ছোটবেলা থেকে একা একাই থেকেছি নিজের মনে। কাউকে কখনও বিরক্ত করি নি। ছোটবেলায় জ্বর হলে সকলেই মাকে খোঁজে। আমি একা একা বিছানায় শুয়ে থাকতাম। মায়ের এই নিয়ে একটা কষ্ট ছিল। আসলে আমি চাইতাম না আমাকে নিয়ে সবাই খুব বেশি ভাবুক। আজও এই স্বভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় নি। আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। মানুষকে ভাবিয়ে তোলার মতো কোনো কাজই আমি করে উঠতে পারি নি।
          রেল স্টেশনে বসলে আমার মনে হয়, পৃথিবীর অনেক কিছু থেকে যেন নিজেকে বার করে আনতে পেরেছি। মুক্ত বিহঙ্গের মতো আমি তখন নিজের মনে উড়ে বেড়াতে পারি।



(চলবে....)

কোন মন্তব্য নেই: